#এক কাপ চা
পর্ব ৩২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৯৪)
থরথর করে কাঁপছে ইখুম।তার সামনে পড়ে থাকা মানুষটা মরে গেছে না বেঁচে আছে সে জানে না।
ফ্লোরে রক্ত ছড়িয়ে আছে। রক্ত দেখে গা গুলিয়ে উঠলো ইখুমের। তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভব করলো সে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো তার পা বেয়ে গড়িয়ে আসছে হালকা রক্তের ধারা।
ইখুম কোনো কিছু ভাবতে না পেরে দুই পা পিছিয়ে আসে কিন্তু তার বিবেক বলছে এখন তার উচিৎ তার শাশুড়ি মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে তাকে সাহায্য করা।
হুট করেই এত রক্ত দেখে ইখুম ঘাবড়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠলো। পাশ টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ইখুম সবাইকে ডাকলো।
রাশেদ ওরা যখন ফিরে এলো তখন ইখুমকে বসে ব্যথায় কাতরাতে দেখে তার কাছে ছুটে এলো। ইখুম হাত ইশারায় তার শাশুড়ি কে দেখিয়ে দিয়ে তার কাছে যেতে বলেই জ্ঞান হারায়।
পরপর দুজন কে জখম অবস্থায় দেখে বাড়ির সবাই কী করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।দ্রুত এম্বুল্যান্সে করে তারা রওনা দিলো শহরের দিকে।
(৯৫)
হাসপাতালে ইখুমের মাথার কাছটায় বসে আছে সাগরিকা।তার বাচ্চাটা কেমন আছে জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে।
পেটের দিকটায় হাত দিতেই অনুভব করলো তার পেট নিচু হয়ে আছে। অথচ সাত মাসের ভরা পেটে এমন হওয়ার কথা না।অন্য হাতে থাকা ক্যানোলায় টান লাগলেও সে উঠে বসতে চাইলো।
মরিয়া হয়ে কেঁদে উঠলো সে কারণ সে বুঝতে পেরেছে তার পেটে থাকা সন্তান আর নেই।
সাগরিকা তন্দ্রাঘোরে ছিল কিন্তু ইখুমের শব্দে উঠে বসতেই সে দেখলো ইখুম পাগলের মতোন করছে। ঘন্টা কয়েক আগেই তার সি সেকশন হয়েছে।
প্রচুর ব্লিডিং হওয়াতে ইখুম ক্লান্ত তাছাড়া সি সেকশনের পর তার কিছু জটিলতাও আছে।
সাগরিকা দ্রুত এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেও কাজ হলো না।পাগলের প্রলাপ করছে সে।
সাগরিকা তাকে শক্ত জড়িয়ে ধরে বলল,
“রাঙামা!রাঙামা! শান্ত হও। তুমি ঠিক আছো। কিছু হয় নি। “
“আমার বাচ্চাটা! আমার বাচ্চাটা কই রে সাগরিকা? আমি সত্যি খারাপ মা। নিজের বাচ্চাটাকে সামলে নিতে পারলাম না?জন্মের পর দিন দাদাকে খেয়েছি, বাবার ক্ষতি হয়েছে,তোর চাচার জীবনে অশান্তির কারণ আমি আর আজ?
আজ আমি আমার নিজের সন্তানকে খেয়ে বসে আছি। আমি সত্যি রাক্ষসী। না হলে এত এত মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারার থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো।
আমি শেষ অবধি নিজের সন্তানকে খেয়ে ফেললাম?”
“আস্তে আস্তে। শান্ত হও রাঙা মা, শান্ত হও। কী সব বলছো?হায়াত -মৃত্যু সব আল্লাহ্ তালার হাতে।
আর রইল কথা আমাদের পিচ্চির?দেখো আমার দিকে দেখো!
এই এত্তুনি একটা বিলাইয়ের বাচ্চার মতোন পিচ্চি বাচ্চা হয়েছে তোমার। এত্তুনি। কিন্তু…..”
“কিন্তু?”
“আমার কোলে দেয়নি।ডক্টর কারোর কোলেই দেয়নি। প্রি-ম্যাচিউর বেবি তাই অবজারভেশনে রেখেছে।”
সাগরিকার কথায় ইখুমের দুই চোখ আনন্দে ভরে উঠেছে।
সে দুই হাতে ইখুমের হাত ধরে বলল,
“সোনাই বেঁচে আছে?”
“হ্যাঁ, আছে। আর তোমাকেও ওর জন্য সুস্থ থাকতে হবে।”
“আমাকে নিয়ে চল।”
“না, এখন না।তুমি এই সোনাইকে অনেক যুদ্ধ করে জন্ম দিয়েছো।আর তোমার যোদ্ধা ছেলে এখন নিজের লড়াই একাই করছে তোমার কোলে আসার জন্য। তোমার নিজের উচিৎ ছেলের জন্য নিজেকে শক্ত রাখা।একটু বিশ্রাম নাও।দেখো হাত ফুলেছে তোমার। স্যালাইন যেতে দাও তো।”
“আর মা?”
“দশটা শয়তান মরে একটা সাহেরা বানুর জন্ম। বুঝলা?শয়তানের জান, কিছুই হবে না।আই সি ইউ তে আছে। সুস্থ হয়ে যাবে।”
“ছি এভাবে কেউ বলে?তোমার দাদী সাগরিকা।”
“আচ্ছা সরি। আচ্ছা রাঙামা।জানো তুমি?চাচ্চু আজ হাউমাউ করে কেঁদেছে।”
“কেন?”
“তুমি জ্ঞানহীন আর দাদুর এই অবস্থা।সব মিলিয়ে সে কী কান্না।দাদুর সাথে আসেনি এসেছে তোমার সাথে। জানো কী বলছিল?”
“কী?”
“মায়ের সাথে তোমরা সবাই আছো। সবাই যাচ্ছো আমার ইখুমের সাথে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ওর সাথেই যাবো।আমার হাত ধরেই মেয়েটা এসেছিল আর আমি ওকে এখন অন্তত এখন ছাড়তে পারবো না।আমাকে তোমরা মাফ করো।”
“বুঝলাম।”
“আমি অনেক ছোটো তোমার থেকে। সম্পর্কের এত কিছু বুঝি না।কিন্তু যা বুঝি তা হচ্ছে অনেক তো মান অভিমান হয়েছে এবার না হয় সব চুকিয়ে ফেলো।”
“তুমি বুঝবে না। আরেকটু বড় হও।”
“সম্পর্ক বুঝতে বড় হতে হয় না।বয়সে বড় হলেই সবাই সবটা বুঝে না। তাহলে আমার দাদী এমন কিছু করতে পারতো না।”
সম্পর্ক একটা চারা গাছের মতোন। চারা গাছ বেড়ে উঠার জন্য যেমন প্রয়োজন হয় আলো পানি বাতাসের ঠিক তেমন সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় কেয়ার, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, আর ভালোবাসার।”
(৯৬)
ক্লান্তিকর দিন কাটিয়ে তাশদীদ বাসায় ফিরেই সাগরিকাকে কাছে টেনে নিলো। বাসায় ফিরে আসার আগে সাগরিকা বেশ দুই মন দুই দশায় ছিল।কারণ সে বাসায় ফিরে কার রুমে যাবে? একদিকে তার রুম যেখানে সব জিনিসপত্র রাখা অন্য দিকে তাশদীদের রুম। বৈধ ভাবে ঘরটা তার হওয়ার কথা।কিন্তু বাসায় ফিরে যখন সবাই যার যার ঘরে চলে গেল সাগরিকা তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসেছিল সবাই ফিরে এসে। সবাই ঘরে চলে গেলেও তাশদীদ বসে ছিল।উপরে যাওয়ার আগে তাশদীদ সাগরিকাকে বলল,
“দ্রুত রুমে আয় আমি অপেক্ষা করছি।”
রুমে ফিরে আসার পর সাগরিকা দাঁড়িয়েই আছে এদিকে তাশদীদ বিছানায় বসে মাথা রেখেছে সাগরিকার বুকে।
তাশদীদ উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাস সাগরিকার শরীরে যেন জ্বলন্ত সিগারেট। হাত শক্ত করে সে নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে।
“তুই কী জানিস? তোর শরীরের এই স্মেল আমাকে কতটা শান্তি দেয়?কতটা কান্তি ছাড়িয়ে দেয়?”
তাশদীদের কন্ঠে কিছু একটা ছিল।ঘোর গ্রস্ত হাতে সাগরিকা তাশদীদের মাথায় হাত রেখে বলল,
“আগেও বুঝ পেয়েছেন?”
“অনেক বার। আমার প্রতিটা প্রেজেন্টেশনের আগে, কিংবা যখন যখন তুই পাগলামো করেছিস প্রতিটি রাতে। কিন্তু তুই তো ঘুমিয়ে কাঁদা থাকতি।”
সাগরিকা তাশদীদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“ছি অশ্লীল! আপনি প্রতি বার?এইখানে?”
“স্মেল নিতে হলে পায়ের থেকেও নেওয়া যায়।”
“আর নুপুর?”
তাশদীদ হাই তোলার ভঙ্গি করে বলল,
“ক্লোজেট খুলে দেখ আরো পাবি।”
বলেই পুনরায় তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
“চুল টেনে দে, আর আমি ঘুমালে ডাকবি না।দাঁড়িয়েই থাকবি।আমার টেনশন এখনো
রিলিজ হয়নি।সময় লাগবে।”
কিন্তু কিছুক্ষণ পরে নিচ থেকে চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছিলো।কারণ জুলি বলছে
রাশেদের মা কে ইখুম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে আর নিজে বাঁচার জন্য দৌড়ে পালাতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পাইছে। সে নিজের চোখে দেখছে।
চলবে ….