#এক কাপ চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ৭
(১৯)
সামিনার এমন বেয়াদবিতে তার গালে কষিয়ে থাপ্পড় দিয়েছে তাশদীদের মা।
মা যেমনি হোক না কেন, সে নিজের সন্তানের জন্য অন্যের সন্তানের মৃত্যু কামনা করতে পারে না।
স্নেহার কিছুতে কমতি রাখেনি কেউ।বাবা নেই বলে সবাই আরো বেশিই আদরে রেখেছে তাকে।
যেখানে স্নেহা তাদের কাছে এতটা প্রিয়, ইখুমের সন্তান অবশ্যই সমান প্রিয়।
সামিনা অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তার অসহায়ত্ব কারোর মনে কোনো দাগ কাটছে না।
তাশদীদের মা বলল,
“রাশেদের সাথে তুই বেরিয়া যা বাজারি মেয়ে ছেলে।এই বাড়ির মেয়েকে নিতে পারবি না।”
“আমার সন্তান।আমি নিয়ে যাবো।”
“আমরা না দিলে পারবি না।দুই দিন পর যখন রাশেদের থেকে তোর মন উঠে যাবে তুই তখন আবার অন্যের পিছন ধরবি।আর মেয়ের কপাল পুড়াবি?তা দিবো না।এই বাড়ির মেয়ে বউরা অনেক সম্মানের।”
“আমি থানা পুলিশ করবো।গলায় দড়ি দিবো।”
“যা ইচ্ছা কর। আর এই রাশেদ। তুই আজ ইখুমের ক্ষতি চাইছিস না?এই ইখুমের জন্য তুই কাঁদবি।তোর মুখের দিকেও সেদিন ও ফিরে চাইবো না।মরার আগে তুই পানিও যেন না পাস। আমি তো অভি…….”
ইখুম দৌড়ে এসে তার বড় জায়ের মুখে হাত দিয়ে বলল,
“তুমি মা তুল্য। অভিশাপ দিলে লেগে যাবে। অভিশাপ দিও না।”
“এত কিছু পরেও?”
“উনার যা সিদ্ধান্ত উনি নিয়েছেন উনার সিদ্ধান্ত মতে আমি যে চলতে বাধ্য তা কিন্তু নয়। আমি চলবো আমার মতো।ভাঙ্গন যেখানে নিশ্চিত সমোঝোতা তখন বিদ্রুপের হাসি।”
(২০)
সামিনার ঘরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে কাজের মেয়ে জলি বসলো ফ্লোরে। নাম জুলেখা, শহরে এসে নাম বদলে হয়েছে জুলি।অসম্ভব ধূর্ত একজন মহিলা।যার কাজ এর কথা ওর কাছে লাগানো। সে ফিসফিস করে বলল,
“মাথা কি গেছে আফনের?কি করেন?এই বাড়িত থন গেলে আর কিছুই পাইবেন না।সম্পত্তি এহনো বড় ভাইয়ের নামে।যা ভাবসাব তার দুই পোলার একজন রে দিয়াই সাগরিকারে রাখবো।”
“তাতে আমার কী?”
“আমার মন কয় ইখুমের পোলা হইবো।পোলার আইন আলাদা।আপনার মাইয়ারে না দিলে পাবো না কিন্তু ইখুমের পোলা হইলে কী হবো ভাবছেন?”
“আমার স্নেহাকে তারা ঠকাবে না।”
“ভুল কইলেন। এমনিতেই ছোড ভাইয়ের ভাগ নিয়া যাবো কইছে, সাগরিকারে এই বাড়িত রাখলে বড় ভাইয়ের থাকবো।আপনার মাইয়্যা বড় না যে কারো গলায় ঝুলাইবেন।তাই যা করেন চিন্তা কইরা কইরেন।”
“স্বামী সুখ কী! তুই বুঝবি না।টাকা সব কিছুই দেয় না।”
“জামাই থাইকা কি হয়?যদি পয়সা না থাকে?আমার কওয়া দরকার কইলাম। বাকীটা আপনি বুঝেন।”
জুলি চলে গেল।সামিনা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে রাশেদকে কল দিয়ে বলল,
“যাওয়ার ব্যবস্থা করিয়ো না।আমরা এখানেই থাকবো।কোথাও যাচ্ছি না।”
(২১)
“বিয়ের কথা বলতেই তোমার এত জ্বর আসে কেন?”
বার তিনেক হাঁচি দিয়ে টিস্যুতে নাক মুছে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে সাগরিকা।বিগত পাঁচ বছর ধরেই তার সাথে এমন হয়ে আসছে।
তার ধারণা তার উপর আশিক জীননাথের নজর আছে। যে জীন কোনো রমনীর দিকে নজর দিলে তার বিয়ে হতে দেয় না, তাদের বিভিন্ন সমস্যা করে। এই সম্পর্কে অনেক কিছু সাগরিকা গুগলে দেখেছে।
এই জীন যখন আসে তখন শরীরে ছাপ রেখে যায়।
এমন নয় যে সাগরিকার শরীরে খুব দাগ আছে কিন্তু মাঝেমধ্যে সাগরিকা উপস্তিতি বেশ বুঝতে পারে। এবং যতবার আসে ততবার সাগরিকা তার পায়ে বিভিন্ন জিনিস পায়।
প্রথম যেদিন বুঝেছিল সেদিন পেয়েছিল এক জোড়া নুপুর। সাদা রঙের পাথরের নুপুর। পায়ে দিলেও বাজতো না।সাগরিকা অবাক হলেও ভেবেছিল তার বাবা এনেছে কিন্তু উনাকে জিজ্ঞেস করার পর না করেছিল।
এর পর থেকে সাত চল্লিশ জোড়া নুপুর সে পেয়েছে। একটার থেকে অন্যটা বেশি সুন্দর।এত সুন্দর সুন্দর নকশা করা নুপুরগুলো জীনের রাজ্য থেকেই যে আসে এটা তাকে তার বান্ধুবী বলেছে।সেই প্রথম বলেছিল এই আশিক জীনের কথা।
জ্বরে সাগরিকা গা পুড়ে যাচ্ছে৷ ইখুমের হাতে তার মা দই ভাত পাঠিয়েছে। ইখুমকে সাগরিকা কিংবা অন্য বাচ্চারা যেমন মানে তেমনি এই বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষকে সে সম্মান করে৷ সবার সাথেই তার ভাব। ইখুম যখন লাল টকটকে শাড়ি পরে চুল খুলে রাখে তখন তার মুখ দেখে মনে হয় কোনো এক প্রতিমা, শিল্পী যেন খুব নিখুঁত করে ফুটিয়ে তুলেছে তার রূপকে।
ইখুম সাগরিকা,তুলি এবং স্নেহাকে খাইয়ে দিচ্ছে।স্নেহা লাল রঙের একটা ফ্রক পরেছে। দুলে দুলে নাঁচছে আবার দৌড়ে এসে ইখুমের থেকে খাবার নিচ্ছে। তুলি এমন দেখে মুখ ফসকে বলেই ফেলল,
“রাঙ্গাবৌ তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে স্নেহাকে এত আদর করে খাওয়াতো না।বরঙ সে তার চোখের বিষ হয়ে থাকতো আর তুমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছো।”
“ওর কী দোষ? ফুলের মতো একটা বাচ্চা। ওকে হিংসের কি আছে?”
“অথচ মেঝ মামি?তোমার পেটের বাচ্চার সাথেই হিংসে করছে।”
“বাদ দাও। যা করছিলে তাই করো তো!আর শাড়ি পছন্দ হলো?”
সাগরিকা ইখুমের হাত ধরে তাকে জিজ্ঞেস করলো
“তুমি বাবা বাড়ি চলে যাবে?”
“না, বড় ভাইজান বলেছেন এখন না। বাবু হওয়ার সময় একবারে যেতে। তবে বেশি মন খারাপ হলে যেতে পারি। কিন্তু তোমার জ্বর আর সামনে বিয়ে তাই বাদ দিলাম।”
“আমার আর জ্বর। এ জ্বর এখন ডাল ভাত। আমারো অঙ্গেরও জ্বর যে নামাইতে পারবে
সোনার এই যৌবন খানি দান করিবো তারে।”
সাগরিকার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠেছে ইখুম।হাসি হাসি মুখে বলল,
“তোমার সেই আশিক জীন এই বাড়িতেই থাকে। জ্বর নামাতে তাকে কিছুই নয় তোমার দিকে তাকালেই হবে। বলবো না কী তাকে?”
“না। আমি বিয়েই করবো না।আমার বিয়েই হবে না।দেখিও।”
“আচ্ছা তোমাকে দিবো তো বিয়ে। একটু সবুর করো তো!”
স্নেহা হুট করে বলে উঠলো,
“আম্মুর মতো দুইটা বিয়ে। আম্মুর যেমন দুইটা বিয়ে হয়েছে তেমন?দুই বার?”
স্নেহার কথায় হচকচিয়ে উঠেছে ইখুম।দুই বার বিয়ে মানে?মুখে প্রকাশ না করলেও তার মনে জমাট বাধতে শুরু করেছে এক অজানা এক ভয়। ম্লান, ভয় মিশ্রিত কন্ঠে ইখুম জিজ্ঞেস করলো,
“দুই বিয়ে মানে?স্নেহা মা কি বলছো?দুই বিয়ে হয় না কী?”
“হয় তো!আম্মুর হয়েছে। একটা আমার বাবার সাথে আরেকটা…..
চলবে …