থ্রিলার নভেম্বর রেইন
২য় পর্ব
বাসার সোফায় আরাম করে বসে খবর দেখছিলাম টিভিতে। গাজীপুরের এক বাসা থেকে তিন মৃতদেহ উদ্ধার ঘটনার আপডেট দেখাচ্ছে। বাসায় চারজন মানুষ ছিল, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে একমাত্র জীবিত রিমা নামের যে মেয়েকে এরেস্ট করা হয়েছিল সেই মেয়ের কাছ থেকে কোন তথ্য এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তারা ধারনা করছে ওই মেয়ের কাছেই তিনটা মানুষের মৃত্যুর আসল কারন বের করা যাবে। আমারও তাই ধারনা।
মিলিকে বললাম, মাঝে মাঝে পুলিশ যে কি হাস্যকর কথা বলে। আরে, এক ঘরের মধ্যে চারজন লোক এক সঙ্গে রাত কাটিয়েছে, সকাল বেলা দেখা গেল তারমধ্যে তিনজনই মারা গেছে , এটাতো পানির মতো পরিষ্কার যে বেঁচে আছে সে জানে অন্যরা কিভাবে মারা গেছে, এটা আবার ধারনা করতে হয় নাকি ? শতকরা নব্বই ভাগ সম্ভাবনা ঐ লোকই বাকি তিনজনের মৃত্যুর কারন।
মিলি বলল, উঁহু ! আমার মনে হচ্ছে ব্যাপার এতো সহজ না। রিমা নামের ওই মেয়ে খুনি নাও হতে পারে। একটা মেয়ের পক্ষে এতোগুলো মানুষকে একা খুন করা অসম্ভব। এমনও হতে পারে এটা খুনই না। কোন হোটেল থেকে পচা খাবার এনে খেয়ে মারা গেছে। আজকাল অনেকে বিষাক্ত মদ খেয়েও মারা যায়, সেটাও হতে পারে এখানে।
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম এই সময় ফোন বাজল। গুলজার আংকেলের ফোন,
ইমন তুমি কি বের হতে পারবা আমার সঙ্গে? বিকেলের দিকে একটু গাজীপুর যেতে হবে। ওইখানে এক বাসায় তিনজন লোক মারা গেছে, সেখানে যেতে হবে।
ছুটির দিন ছিল। বিকেলে তেমন কোন কাজও নেই। আমি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম। মিলি শুনে প্রথমে একটু গাইগুই করছিল, তার ইচ্ছা ছিল বিকেলে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে কিন্তু আসলেই মেয়েটা খুনি কিনা সেটা জানার আগ্রহে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল আমাকে যেতে দিতে।
.
বিকেলে গাজীপুর যেতে যেতে আমি ঘটনাটা শুনছিলাম গুলজার আংকেলের কাছ থেকে।
রিটায়ার্ড জাজ আনোয়ার হোসেনকে ভাল করেই চেনেন গুলজার হোসেন, ভীষন রকম সৎ একজন বিচারক ছিলেন, চাকরি জীবনে কয়েকবার দেখা হয়েছে। সৎ মানুষগুলোর সাথে গুলজার হোসেন চট করে অন্তরঙ্গ হয়ে যান। তাই আনোয়ার হোসেনের ফোন পেয়ে তিনি আর দ্বিধা করেন নি। সাহায্য করতে রাজি হয়ে গেছেন। তবে যদি সাহায্য করার মতো কিছু থাকে। পুলিশ বলছে খাবারে বিষ ছিল । পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট হাতে না পেলে বোঝা যাবে না ঠিক কি খাবারে কি ধরনের বিষ ছিল। অবশ্য ওই বাসার ফ্রিজে এবং বাইরে থাকা সব খাবার টেস্ট করার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা হবে কোন খাবারে বিষ আছে কিনা।
গাজীপুরে ছায়াবিথি এলাকায় তিনতলা এক বাসার দোতলায় ঘটেছে ঘটনা। গিয়ে দেখি বাসার বাইরে মানুষের ভীড়। সাংবাদিক পুলিশ তো আছেই। গুলজার হোসেন পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে নিজের পরিচয় দিলেন। ঢাকায় গুলজার আংকেলের এক পরিচিত ডি আইজি আগে থেকেই এখানকার অফিসারদের ফোন করে রেখেছিলেন। তারা গুলজার আংকেলের পরিচয় পেয়ে আমাদের ভিতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
দোতলার বাসায় গিয়ে ভিতরে ঢুকলাম আমরা। বড় বড় তিন রুম , ড্রয়িং ডাইনিং নিয়ে বেশ বড় ফ্ল্যাট। একটা রুম দেখলাম সাজানো। রুমের ভিতরের খাটও ফুল দিয়ে সাজানো। মনে হচ্ছে কারও বাসর রাত হয়েছে এখানে। সাথে থাকা পুলিশ জানালো এই রুমে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। ড্রয়িং রুমে পাওয়া গেছে দুইজনের লাশ। যে মেয়েটা জীবত ছিল সে-ই নাকি পুলিশকে ফোন করে আজ সকালে খবর দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ আসলে কেউ দরজা খুলে দেয় নি। দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে হয়েছে। পরে ভিতরের এই ঘরে মেয়েটাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে।
গুলজার আংকেল ঘুরেফিরে ঘরগুলো দেখলেন। বাসর সাজানো রুমটা দক্ষিণ দিকে , একটা জানালা আছে রুমে। প্রতিটা রুমের দরজা খুললে ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম। বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে করা। ড্রয়িং রুমটা গোছানো, স্মার্ট টিভি, সিডি প্লেয়ার সুন্দর করে ওপেন ক্যাবিনেটে সাজানো। একটা বুক শেলফ দেখা যাচ্ছে। কিছু বড় ফ্লাওয়ার ভাস। ফ্ল্যাটের মালিক শৌখিন ছিল বোঝা যায়।
গুলজার আংকেল কিছুক্ষণ পর বললেন, চল এখানে আর কিছু দেখার নেই। বাইরে গিয়ে দাঁড়াই।
আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম। তিনতলা বিল্ডিং টার চারপাশে গাছপালা। একটা আমগাছের মোটা ডাল দেখলাম দোতলার বারান্দার খুব কাছ দিয়ে চলে গেছে। বারান্দাটা বড়, দুইটা দরজা দেখা যাচ্ছে বারান্দায়। অর্থাৎ ওই বারান্দা দিয়ে দুইটা রুমে ঢোকা যায়। খেয়াল করে দেখলাম একটা দরজা দিয়ে বাসর ঘরে ঢোকা সম্ভব। গুলজার আংকেল আম গাছটা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। কয়েকবার মাথা নেড়ে কি যেন একা একাই ভাবলেন। আমি অবশ্য আম গাছটার কোন বিশেষত্ব দেখলাম না, ওই ডালটা বাদে। ডালটা বেয়ে দোতলার ওই বারান্দায় যাওয়া সম্ভব, যদি কেউ ভালোভাবে গাছ বাইতে পারে। বিল্ডিং টা একবার চক্কর দিয়ে গুলজার আংকেল থেকে সরে এলেন।
কিছুক্ষন পর ওখান থেকে আমরা গাজীপুর থানায় গেলাম। ওসি সাহেবকে আগেই গুলজার হোসেনের পরিচয় দিয়ে রাখা হয়েছে। ভদ্রলোক বেশ খাতির করলেন আমাদের। রিমা ওখানে নেই। তাকে জেলখানার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুনলাম মেয়েটার মাঝে মাঝে নার্ভাস ব্রেক ডাউন হচ্ছে। হাউমাউ করে কাঁদছে। খুবই স্বভাবিক ব্যাপার। ভয়ংকর একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে সন্দেহ নাই।
গুলজার আংকেল জিজ্ঞেস করলেন, ওই বাসায় ফোর্সের কে কে গিয়েছিল?
ওসি সেকেন্ড অফিসারকে ডাক দিলেন। বললেন, স্যার মেয়েটা ৯৯৯ ফোন দিয়েছিল, পরে ইন্সপেক্টর ইমরুল ফোর্স নিয়ে গিয়েছিল ফোন পেয়ে।
সেকেন্ড অফিসার ইন্সপেক্টর ইমরুল এসে দাঁড়াল। ওসি তাকে বসতে বললেন। ইমরুলের বয়স ত্রিশের আশেপাশে। বেশ লম্বা, শক্ত পক্ত গড়ন। দেখে বেশ বুদ্ধিমান মনে হয়।
গুলজার আংকেল বললেন, ইমরুল আপনি কি দরজা ভেঙ্গে ঢুকেছিলেন?
-জ্বী স্যার। দরজা নক করলাম অনেকক্ষন ধরে, কেউ খুলল না। পরে মেয়েটার নম্বরে ফোন দিয়ে দেখি ভিতরে মোবাইলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা ফোন ধরছে না। পরে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকেছি।
–ভিতরে কি কি দেখেছেন মনে আছে?
ইমরুল সাহেব পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ভিডিও চালিয়ে দিলেন। রুমের ভিডিও করে রেখেছেন।
ভিডিও দেখে শিউরে উঠলাম আমি। সোফার উপর একজন পুরুষ আর একজন মহিলা এলিয়ে শুয়ে আছে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেঁচে নেই কেউ। রুমের চারপাশ অগোছালো। টেবিলের উপর চায়ের কাপ উল্টে চা পড়ে আছে। পানির বোতল, একটা হাফপ্লেটে বিস্কুট, চানাচুর রাখা। ভিডিওতে হালকা মিউজিকের শব্দ ছিল এতক্ষণ, এক পুলিশ এগিয়ে গিয়ে সুইস টিপে সিডি প্লেয়ার বন্ধ করল। বোঝা গেল সারা রাত গান বেজেছে সিডি প্লেয়ারে। এরপর ভিডিও পরের রুমে এগিয়ে গেল। বাসর রুমে খাটের পাশে নীচে একজন পুরুষ পরে আছে, তার উপর নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে লাল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে। সবকটা রুম একবার করে ঘুরে ভিডিও শেষ হয়ে গেল। অন্য রুম গুলোতে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু ছিল না।
গুলজার আংকেল গভীর মনযোগ দিয়ে ভিডিও দেখছিলেন। ভিডিও শেষ হতে বললেন, লাশগুলো কোথায়? পোস্ট মার্টেম করতে দিয়েছো?
ওসি মাথা নাড়লেন। জ্বী স্যার। লাশকাটা ঘরে আছে লাশগুলো। দেখবেন?
গুলজার আংকেল মাথা নাড়লেন , নাহ! আমি একটু রিমা মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাই। মেয়েটা যেভাবে সেজেছে তাতে মনে হচ্ছে সে তার বন্ধুকে বিয়ে করে বাসর করতে এসেছিল।
ওসি একটু মাথা চুলকে বলল, সে রকমই এখন লাগছে স্যার। কিন্তু এই তিনখুনের সাথে সে জড়িয়ে যাচ্ছে । তার পার্সে একটা ছোট বিষের শিশি পেয়েছি, শিশিতে অল্প বিষ ছিল তখনও। ল্যাবে পরীক্ষা করিয়েছি, সায়ানাইড। যারা মারা গেছে , ধারনা করছি ওরা বিষক্রিয়ায়ই মারা গেছে। কোন খাবারে নিশ্চয়ই সায়ানাইড মেশানো হয়েছিল। মেয়েটাকে নির্দোষ ভাবা কঠিন।
গুলজার আংকেল কিছু বললেন না।
ওসি আবার বললেন, রিমাকে জেলখানার হাসপাতালে রাখা হয়েছে আপাতত। চলেন স্যার, যাই।
.
আমরা জেলখানার হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। হাসপাতালের হাজতীদের কেবিনে ঢুকে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। অল্প বয়সী একটা মেয়ে এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন বয়স্ক একজন ভদ্রলোক।
বুঝলাম রিমার বাবা রিটায়ার্ড জাজ আনোয়ার হোসেন তার মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ভদ্রলোক আমাদের দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
–গুলজার তুমি আসছ আমি ভীষণ কৃতজ্ঞবোধ করছি। কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দেব।
গুলজার আংকেল জাজ সাহেবের কাছে গিয়ে তার গাঁয়ে হাত রাখলেন, স্যার আপনি একদম ঘাবড়াবেন না, শান্ত হোন। রিমাকে এই ঝামালা থেকে আমরা বের করে ফেলব। চিন্তা করবেন না।
এরপর গুলজার আংকেল বসে রিমার দিকে তাকালেন।
বললেন, মা তুমি একদম চিন্তা করোনা, শান্ত থাক। আমাকে পুরো ঘটনাগুলো আবার খুলে বল। আস্তে আস্তে। তুমি কি তোমার বন্ধুকে বিয়ে করতে এসেছিলে এই বাসায়?
রিমা মাথা নাড়ল। — না আংকেল, আমরা বিয়ে করেই এখানে এসেছিলাম।
–কোথায় বিয়ে করেছিলে? ঢাকায়? সাক্ষী কে কে ছিল?
রিমা একটু চুপ করে থেকে চোখের পানি মুছল হাত দিয়ে। বলল, জ্বী আংকেল ঢাকায়। মগ বাজার রেল ক্রসিং এর কাজী অফিসে বিয়ে করেছি। আসিফের দুই বন্ধু ছিল বিয়ের স্বাক্ষী।
এই সময় ওসি বললেন, কাজী অফিসে কি তুমি নিজে গিয়েছিলে? ওই যে ওয়ারলেসের কাছে দোতলায় যে কাজী অফিস, ওইটা?
রিমা মাথা নাড়ল। হ্যাঁ ওইটাই।
গুলজার আংকেল বললেন, তুমি ধীরে ধীরে ওইদিনের ঘটনা খুলে বল রিমা। তোমার ভয় নেই। জানি তুমি নির্দোষ। কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমি বের করে ফেলব, সেজন্য তোমার সাহায্য লাগবে।
রিমা ধীরে ধীরে সবঘটনা খুলে বলল। বলা শেষ করে সে উপুর হয়ে কাঁদতে লাগল। তার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
আমার বিশ্বাস দৃঢ হলো, রিমা নিশ্চয়ই এই খুনের সাথে জড়িত না। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কারা? কেন? নাকি খুন হয়নি ওই তিনজন, মারা গেছে অন্য কোনও ভাবে?
.
আমরা রুম থেকে বের হয়ে এলাম। বাইরে শীতের আমেজ নিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। ওসি সাহেব বললেন, স্যার মেয়েটা মিথ্যা বলছে।
গুলজার আংকেল বললেন, কেন সেটা মনে হচ্ছে আপনার?
–স্যার, মগবাজারের ওই কাজী অফিসে লোক পাঠিয়েছিলাম। গতকাল সেখানে এই রকম কোন বিয়ে হয় নি। ইনফ্যাক্ট গত দুই তিনদিন ওই কাজী অফিসে গিয়ে কেউ বিয়ে করে নি।
–অন্য কোন কাজী অফিস হতে পারে না?
–না স্যার। মগবাজারে ওই জায়গায় এখন একটাই কাজী অফিস। আশে পাশে আর কাজী অফিস নেই। তাছাড়া কাজী অফিসের যে বর্ননা মেয়েটা দিয়েছে সেটাও মিলে যায়। কিন্তু বিয়েটা মেলে না।
আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। তাহলে মিথ্যা বলছে রিমা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
.
আর কিছু করার না থাকায় সেদিন আমরা ঢাকা ফিরে এলাম। পরের দুদিন আমি খুবই ব্যস্ত সময় কাটালাম অফিসে। গুলজার আংকেলের সাথে কথা হলো না এই দুই দিন। তৃতীয় দিন সন্ধ্যার পর বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম। নতুন নেয়া প্রজেক্টের কাজ শেষ তাই অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফ্রিরতে পেরেছি আজ। টিভির খবরে দেখলাম রিমা মেয়েটাকে আজ সকালে জামিন দেয়া হয়েছে, সে এখন তার বাবার হেফাজতে। আমি খানিকটা বিস্মিত হলাম। এই রকম ভয়ানক তিনটা খুনের সম্ভাব্য খুনী এতো দ্রুত জামিন পেয়ে যায় সেটা অবাক করার মতো। মিলি অবশ্য অবাক হলো না।
সে বলল, নিশ্চয়ই জাজ সাহেবরা বুঝতে পেরেছেন এই তিন খুনের সাথে রিমি জড়িত না। সে পরিস্থিতির শিকার। তাছাড়া এতো ছোট্ট একটা মেয়ে কোথায় পালাবে? জাজ সাহেবেরও একটা সামাজিক অবস্থান আছে , সব ভেবেই জামিন দিয়েছে কোট । আমি তো কোন অস্বাভাবিকতা দেখি না এতে।
তবু আমার মন খচ খচ করছিল। ভাবলাম যাই একটু গুলজার আংকেল এর কাছ থেকে ঘুরে আসি। দুইদিন কোন খোঁজ খবর নেয়া হয় না। গুলজার আংকেল কতদূর এগুলেন জানা দরকার।
গুলজার আংকেলের বাসায় গিয়ে আমি প্রায় ঘন্টা খানেক আলোচনা করলাম। উনি দেখলাম অনেক পরিশ্রম করেছেন এই দুই দিন। রিমার জামিনের ব্যাপারে বললেন নিয়ম মেনেই সেটা করা হয়েছে।
রাত এগারটার দিকে গুলজার আংকেলের মোবাইলে ধানমন্ডি থানার ওসির ফোন আসল। ওপাশের কথা শুনে গুলজার আংকেল লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, ইমন চল এক্ষুনি, আনোয়ার ভাইয়ের বাসায় যেতে হবে।
পনের মিনিটের মধ্যে আমরা যখন ধানমন্ডিতে রিটায়ার্ড জাজ আনোয়ার হোসেনের ফ্ল্যাটে পৌছালাম, তখন অবশ্য রাত গভীর হয়েছে। সারা রাস্তা গুলজার আংকেল কোন কথা বলেন নি। আমি দুএকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। গুলজার আংকেল আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন।
আমাদের গাড়ি এসে ধানমন্ডিতে জাজ সাহেবের বাসার সামনে থামল। এই এতো রাতেও বাসার সামনে অনেক পুলিশ দেখে আমি একটু বিস্মিত হলাম।
.
গাড়ি থেকে নেমে দেখি টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ হলেই শীত জাঁকিয়ে বসবে সন্দেহ নাই।
গুলজার আংকেলকে ধানমন্ডি থানার ওসি বললেন, স্যার চারতলায় ফ্ল্যাট। চলুন।
আমার তখন সব কিছু একটু অস্বাভাবিক লাগল। কি হয়েছে আসলে?
ওনাদের পিছু পিছু আমি লিফটে উঠে জাজ সাহেবের ফ্ল্যাটে গেলাম। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। একজন পুলিশ বসে আছে সোফায়। আমাদের দেখে উঠে দাঁড়াল। গুলজার আংকেল বেডরুমের দিকে ছুটে গেলেন। তারপর হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন দরজা ধরে। আমি গিয়ে দেখলাম বিছানার উপর শুয়ে আছেন জাজ সাহেব। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানার চাদর। কেউ গলা কেটে খুন করেছে আনোয়ার হোসেনকে। আমার গাঁ কেঁপে উঠল। দরজা ধরে আমি পতন ঠেকালাম। সেই সময় আমার কানে ভেসে এলো রুমে গান বাজছে ,
……… এন্ড ইটস হার্ড টু হোল্ড এ ক্যান্ডেল, ইন দ্যা কোল্ড নভেম্বর রেইন।
কি আশ্চর্য এই সময়ে এই গান বাজাচ্ছে কে? ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝলাম ঘরের ভেতরই একটা সাউন্ড বক্স থেকে আসছে মিউজিক। খুবই মৃদু। গুলজার আংকেল হেঁটে গিয়ে সাউন্ড বক্স অফ করে দিলেন। আমি এদিক ওদিক তাকালাম। রিমা বা মিসেস আনোয়ার হোসেনকে দেখলাম না রুমের কোথাও। নিশ্চয়ই তারা অন্য রুমে আছে। আচ্ছা আনোয়ার হোসেন খুন হওয়ার সময় তারা কোথায় ছিলেন?
লেখক খোন্দকার মেহেদী হাসান
©Khondokar Mahedi Hasan