#ফাবিয়াহ্_মমো
রাতের আকাশ চিড়ে সূর্যের আগমন জানান দিচ্ছে পৃথিবীতে এখন রাত্রি শেষের পর্ব চলছে। জানালার সাথে হেলান দিয়ে গলায় টাওয়েল ঝুলিয়ে কফির প্রতিটি চুমুকে তৃপ্তির বাহিকায় চোখ বন্ধ করছে পূর্ব। কপালের উপর ভেজা চুলগুলো দুখানা ভ্রুতে স্পর্শ খেলায় মত্ত । আকাশে উদীয়মান সূর্য তার ভুবন রাঙানো কমলাবেশ ছেড়ে তেজীয়মান হলুদবর্ণে গা ঢাকছে। পূর্ব কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে বিছানার কাছে চলে আসে, বিছানার পাশে লাগোয়া টেবিলে কফির সাদা মগটা রেখে হাঁটুতে ভর দিয়ে বিছানার উপর ঝুঁকে। ঘুমন্ত পূর্ণতার কপালে উষ্ণতার গভীর ছোঁয়া বসিয়ে চক্ষুজোড়া বন্ধ করলে আকস্মিক স্পর্শে পিটপিট করে তাকায় পূর্ণতা।কম্বলের ভেতর থেকে হাতটা বের করে পূর্বের উন্মুক্ত পিঠের উপর সযতনে রাখে সে। পূর্ব চোখ খুলে কপাল থেকে ঠোঁটে সরিয়ে তৎক্ষণাৎ মৃদ্যু হাসিতে হালকা গলায় বলে উঠে,
– ওহ্ মিসেস? আপনি কি উঠবেন?
পূর্ণতার বলতে ইচ্ছে করছিলো, ‘না একদম উঠবো না। তুমি পাশে থাকো। কালরাতের সেই পূর্ব হয়ে যাও। আমি তাকে নিয়ে দিব্যি ঘুমোতে চাই।’ কথাগুলো অজানা কারনে বলা হলো না এর পরিবর্তে মৃদ্যু গলায় অনেকটা ঘুম জড়ানো কন্ঠে পূর্ণতা বলে উঠলো,
– তুমি আমার আগে উঠলে কি করে? তুমিতো নেশাগ্রস্ত ছিলে।
পূর্ণতা ভেবেছিলো পূর্ব লজ্জা, অপরাধ ও দোষের দায়ে মাথা নিচু করে থাকবে। কিন্তু তা না করে পূর্ব একগাল হাসি দিয়ে বললো,
– আমি সেন্সে ছিলাম পূর্ণ। মাতাল ছিলাম না।
পূর্ণতা রাগে কপাল কুঁচকে মুখে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে বললো,
– তুমি ড্রিঙ্ক করেছো, আমি ওই বিশ্রী গন্ধটা পেয়েছি! ওই ছাইপাঁশ গিলতে তোমার লজ্জা করলো না? এখন আবার মিথ্যে বলছো কেন?
পূর্ব অকপটভাবে উত্তর দিলো,
– লজ্জা?? তা কেনো হবে?
– তুমি আমার সামনে ওটা কি করে খেতে পারলে !
– ওটা আহামরি কিছু ছিলোনা। তুমি চাইলে তোমাকেও খাওয়াতে পারবো। খাবে? আনবো?
পূর্ণতা দাঁতে দাঁত চেপে রাগ গেলার চেষ্টা করছে। কত বড় অসভ্য হলে ওইসব ছাইপাঁশ খাওয়ার জন্য তাগাদা দেয়? কালরাতে যদি কষিয়ে একটা চড় মারতে পারতো!! উফফ…বড্ড ভুল করেছে পূর্ণতা।। মদের উছিলায় একটা ঠাস করে চড় মারা উচিত ছিলো! পূর্ণতা নিজের রাগ দমন করে তিরিক্ষি মেজাজে বললো,
– তুমি খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছো পূর্ব! আমার উপর থেকে এক্ষুনি সরো!
– আমারটাই চোখে পরলো? নিজে যে দিনদিন ফাজিল হচ্ছো সেটা কি চোখে পরেনা? কালরাতে কি করেছো? আমি কিন্তু সেন্স হারাইনি পূর্ণতা। সবই ক্লিয়ার্লি মনে আছে। এখন কথা বাড়িও না উঠো।
– কয়টা বাজে? এমন মিষ্টি সকালে কেউ আগেভাগে উঠে? আমি ঘুমাবো।
– যতটাই বাজুক তুমি উঠো, ফ্রেশ হবে। নাস্তা করবে। এরপর বাড়ি যাবে।
– যেভাবে বলছো মনেহয় তুমি সাথে থাকবেনা? আমি উঠবো না যাও! কি সুন্দর সকাল! আমি ঘুমাবো। উফ! যাও তো!! ভূতের মতো তাকিয়ে থেকো না।
পূর্ব গম্ভীর মুখে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আচমকা ওকে কম্বলসহ পেচিয়ে কোলে তুললো। পূর্ণতা বাধা দেওয়ার সন্ধিক্ষন না পেতেই শেষে হুলস্থুল চেঁচামেচি করলো কিন্তু লাভ হলো শূন্য। পূর্ব ততক্ষণে ওকে ওয়াশরুমে রেখে জামাকাপড় নিয়ে ক্লথ হ্যাঙ্কারে ঝুলিয়ে আদেশ দিলো অতিদ্রুত ফ্রেশ হতে। কথা না শুনলে প্রচুর বকা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এরপর যদি ঘাড়ত্যাড়ামি করে ঘাড়টাই মটকে দিবে বলে হুঙ্কার দেয় পূর্ব। পূর্ণতা নিরুপায় হয়ে আজ্ঞা পালনে উদ্বুদ্ধ হলো। পূর্ব রুমের কেন্দ্রস্থানে দাড়িয়ে পকেটে একহাত গুজে অপরহাতে ফোন বের করে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। ঠিক পাচঁটার দিকে বিজয়ের কল করার কথা ছিলো অথচ ঘড়িতে এখন শোয়া ছয়টা বাজতে চলেছে। ঢাকার পরিস্থিতি কতদূর জঘন্য হয়েছে তা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। কৈলেশকে কল করবে? না, বিজয়ের টাস্কে কৈলেশকে জড়ানো যাবেনা। পূর্ব চুপচাপ রুমের মধ্যে উত্তর টু দক্ষিণ পায়চারী করে বহু চিন্তায় ডুবে আছে। এক. পূর্বের নামে যে কেস দায়ের করা হয়েছে সেটা প্রতিপক্ষ দল ‘উদ্যোগ সংগঠন’ করেনি। দুই. পূর্বের ছয়জন সাঙ্গুর মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছেলে ওমরকে কিডন্যাপ করেছে অজ্ঞাত বাহিনী। তিন. চ্যাটার্জী কিছু না করলে অন্দরের কেউ কাজটা করেছে। সামথিং ইজ ভেরি ফিশি! সামথিং ইজ ভেরি রং! কানে ইয়ারপড ঢুকিয়ে পকেটে ফোন রেখে পূর্ব জানালার ধারে দুহাত রেখে বলে উঠলো,
– আমি ওয়াসিফ পূর্ব বলছি।
– আরে পূর্ব!! কি সৌভাগ্য বলো দেখি? তুমি এই ভোর সকালে কল করবে ভাবতেও পারিনি।
– আপনার ভূমিকা পর্ব শেষ হলে আমি মূল প্লটে ঢুকতে পারি? কথা বাড়াবো না।
– তুমি সবসময় চটজলদি মাইন্ডে থাকো কিভাবে? আমি বাবা পারিনা। আচ্ছা বলো দেখি…কি কথা তোমার।
– আপনি ওমরকে কিডন্যাপ করেছেন? উত্তরটা না বা হ্যাঁ তে বলুন।
– ওমর? ওই বদমাশটা? কি যাচ্ছে তা বলো না তুমি!! আমি কেন বাপু ওই কুয়োকাটা ফাজিলকে কিডন্যাপ করবো?
– আপনি কিডন্যাপ করেননি বলতে চাচ্ছেন?
– কিডন্যাপ কেনো করবো? আমার সম্বন্ধ তো তোমার সাথে। ওদের কেনো তুলবো?
– আমার কিন্তু ঘুরিয়ে বলার স্বভাব নেই চ্যাটার্জী মশাই। লজ্জাবোধ যদি থাকে এক্ষুনি ওকে ছেড়ে দিন!
– আমি ওকে তো তুলিনি ওয়াসিফ পূর্ব। একটু যে ভুল হলো তোমার। আমি তোমার দুআনার সাঙ্গুদের কেনো ধরবো? শুনলাম এখন…
হঠাৎ কথার মাঝখানে বিদ্রুপ ভাবে কেশে উঠলো চ্যাটার্জী। থু করে জানালা দিয়ে একডলা পানের পিক ফেলে বলে উঠলো,
– শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করেছো। তা দাওয়াত দিলে না যে? খুব দুঃখ পেয়েছি বুঝলে।।
পূর্বের বুকটা ধ্বক করে উঠলো কথাটা শুনে। মুখ শক্ত হয়ে থম মেরে কপাল চুলকালো কিছুক্ষণ।। বাতাসের মতো যেভাবে বিয়ের তথ্য ছড়াচ্ছে পূর্ণতার আসল পরিচয় কতদিন গোপন থাকবে কে জানে? পূর্ব ভাবলেশহীন সুরে বললো,
– নিজের ইন্ঞ্জিনে জং ধরে গেলে অন্যের ইন্ঞ্জিনের খোঁজ না করাটাই ভালো।
চ্যাটার্জী মশাই হাসতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেলো। পূর্বের কটাক্ষপূর্ণ কথাবার্তা সত্যি খুব বাজেভাবে লাগে। এভাবেও যে কাউকে বেজ্জত করা যায় ভাববার বিষয় বটে। চ্যাটার্জী নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় সুর তুলে শেষকথাটায় অদ্ভুত হাসি দিলো,
– নিজেরটা জং ধরেছে কিনা সেটা চেক করার জন্য তো অন্যের জিনিসটা দরকার। আমার যে অন্যের পছন্দসই বস্তুগুলো খুব প্রিয়!!
পূর্ব চিৎকার দিয়ে উঠলো,
– চ্যাটার্জীর বাচ্চা! তোর নর্দমার মুখ দিয়ে ভুলেও কিছু বলতে যাবিনা! সাবধান করছি তোকে!
– আহা…আমি তো কিছুই বলিনি বাপু। চেতো কেনো? বউ নাকি রসগোল্লার মতো মিষ্টি। তা কবে দেখা করাবে?
পূর্বের সমস্ত শরীর আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছে। শিরা উপশিরায় রাগের উষ্ণতা টগবগ করে ফুটছে। জানালার বামপাশে উড়ন্ত পর্দাটা একটানে ছিড়ে দুমড়ে মুচড়ে ডলা পাকিয়ে বলে উঠে,
– তুই আমার জিনিসে নজর দিবি আমি তোকে ছেড়ে দিবো ভাবিস? তোর বড় মেয়ে জাহাঙ্গীনগরে না?
ফোনের ওপাশ থেকে এখন আর কোনো শব্দ আসেনা। পূর্ব আকাশের দিকে চোখ রেখে ব্যাঙ্গতার সুরে একফালি হেসে বলে,
– তুই যেমন রাস্তা ধরবি আমিও সেই রাস্তায় পিচ ঢেলে পাকাপোক্ত করবো। সাবধান করে দিচ্ছি! আমাকে তুই খারাপ হতে বাধ্য করিস না চ্যাটার্জী।
এবার যেনো চ্যাটার্জীর রসালো মুখ আরো রসপূর্ণে গদগদ করে উঠলো। বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো,
– তুমি আমাকে ভুল বুঝলে পূর্ব। আমি তোমাকে খুব বুদ্ধিমান ছেলে ভেবেছি। যাহোক, তোমার বউকে নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আজ যে আমাকে আপনি থেকে তুই বললে এটার খেসারত দেওয়া লাগ..
কথা শেষ করতে না দিয়ে পূর্ব কল কেটে ফোন আবার বন্ধ করে দেয়। মিনিট তিনেক স্থির থেকে হঠাৎ একটা ছুড়ি এনে জানালার পাশে শক্ত কাঠের দেয়ালে কোপাতে থাকে। বাঁহাতের ক্ষত সতেজ হয়ে রক্ত গলতে থাকে হাতের ব্যান্ডেজ ভেদ করে। পূর্ণতা প্রথমে মনের ভ্রম ভাবলেও দরজায় কান পেতে যখন রুমের ভেতর থেকে শব্দ পায় অদ্ভুত ভাবে বুকে ধড়ফড় করে উঠে ওর! তাড়াহুড়ো করে মাথায় টাওয়েল পেচিয়ে বেরিয়ে এসে পূর্ণতা হতভম্ব চাহনিতে চোখ বড় করে হা হয়ে যায়। পূর্ব গতকালকের কাটা হাতে ছুড়ি আকড়ে দেয়ালে অনবরত কুপিয়ে যাচ্ছে। সাদা ব্যান্ডেজ শুভ্রবর্ণ ছেড়ে লাল হয়ে লম্বাটে খুলে গেছে। পূর্ণতা একদৌড়ে পূর্বের হাত থেকে ধস্তাধস্তি করে ছুড়ি ছিনিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। কিছু জায়গায় নিজেও ব্যথা পায়, বৃদ্ধাঙ্গুল খানিকটা কেটে যায়। পূর্ব হিংস্ররূপী জন্তুর মতো নিশ্বাস ছাড়ছে। নিশ্বাসের সাথে অদ্ভুত ভয়ংকর শব্দও হচ্ছে। পূর্ণতা কোমরে দুহাত রেখে জোরে জোরে হাপাচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে পূর্বের এমন কি হলো কুলকিনারা ভেবে পাচ্ছেনা। পূর্ব দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে মুখ দুহাতের তালুতে ঢেকে বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ছে। পূর্ণতা ঠোঁটের উপর জমা ঘামগুলো আচঁলে মুছে হাপাতে হাপাতে পূর্বের কাছে এগিয়ে ক্লান্তিকর ভঙ্গিতে ওর বুকে কপাল লাগিয়ে দেয়। অনেকটা অভিমান মেশানো কন্ঠে বলে উঠে,
– তুমি নিজেকে কি ভাবো!
পূর্ব চোখ খুলে ঘাড় নুয়ে পূর্ণতার তোয়ালে পেচানো মাথায় হাত রাখে। স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠে,
– কিছুই না। রাগ উঠেছিলো। আই এম সরি।
পূর্ণতার মাথা থেকে পেচানো তোয়ালেটা খুলে ফেলে পূর্ব। আজ এটুকু প্রমাণিত হলো পূর্ণতার ব্যাপারে সামান্য বাজে কথা সহ্য করতে পারবেনা ও। পূর্ণতার ভেজা চুলগুলো আলগোছে ঠিক করে পিঠ ছেড়ে দিলো পূর্ব। গাল দুটো ধরে বুক থেকে মুখ তুলে নিজের দৃষ্টিতে আবদ্ধ করলো পূর্ণতার ক্ষিপ্ত চোখজোড়া। পূর্ণতা এবার সত্যি ক্ষেপেছে। রাগে মানুষের থুতনি কাঁপে ওরও কাঁপছে। কিন্তু পূর্ণতার থুতনিতে সেই গর্তময় সৌন্দর্য্যটা রাগের বেশভূষায় আরো কয়েকগুণ সৌন্দর্যের লীলায় মোহযুক্ত হয়েছে। পূর্ব ঠোঁট এগিয়ে থুতনি স্পর্শ করতে নিবে হঠাৎ পূর্ণতা মাথা পেছনে নিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। তর্জনী উঠিয়ে ক্রোধপূর্ণ গলায় তীর্যক চাহনিতে বলে উঠে,
– বারবার তোমাকে বোঝানোর বাক্য আমি ব্যয় করবো না! তুমি নিজের রাগকে সংযত করে তবেই আমার কাছে আসবে! কালরাতে তুমি নেশাদ্রব্য খেয়েছো আমি কিচ্ছু বলিনি। যখন যেটা করতে বলেছো আমি করেছি কোনো বাধা দেইনি। আজ এখন এই মূহুর্তে তোমার যে বীভৎস চিত্র আমি দেখলাম তা আমি কখনোই মেনে নিবো না পূর্ব! তুমি ছুড়ি দিয়ে দেয়ালে আঘাত করছিলে কেন?? কি প্রয়োজন ছিলো তোমার? তুমি কি বুঝতে পারো না তোমার এইসব দৃশ্য দেখলে আমি ভয় পাই? শুধু একটা কথাই বলবো, তোমার এই বীভৎস রূপ যদি না পাল্টাও আমি জানিনা আমি তোমার সাথে কেমন খারাপ ব্যবহার করবো! তোমাকে শ্রেয়ার ঘটনায় আমি কিছুই করতে বলিনি। তুমি আমার কাছে এতো বড় সত্য লুকিয়েছিলে আমি কিছুই বলিনি। আমাকে কি তোমার মূর্খ মনে হয়? তোমার পা চাটা মানুষ লাগে? কতবার বোঝাবো আমি একবার তোমার উপর রাগ বারিয়ে দিলে আর কখনোই তোমার সামনে আসবো না। তুমি কি বিশ্বাস করো না আমি পূর্ণতা তোমাকে কষ্ট দিতে পারি? তাহলে সিউর থাকো, তোমার উগ্রপন্থী আচরণ বা রাজনীতির কোন্দলে যদি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হারিয়ে যায় আমিও তোমার জীবন থেকে হামেশার জন্য হারিয়ে যাবো!আমাকে আন্ডার্স্টিমেট করবেনা!
পূর্ণতা আঙ্গুল নামিয়ে লাগেজ থেকে গ্রে কালার শার্ট বের করে পূর্বের দিকে ছুড়ে মারে। হা করে থাকা পূর্বের মুখের উপর শার্টটা বারি খেয়ে ফ্লোরে পরে। পূর্ণতার পরিবর্তিত রূপ দেখে মাঝেমাঝে মারাত্মক আশ্চর্য হয় পূর্ব। নিজেকে তখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, ‘আমি পূর্ণতার এই রূপটা সবসময় কবে পাবো? আমার যে কঠিনচিত্তের পূর্ণতাকে অস্থির লাগে!!’ পূর্ব আড়ালে হেসে ফ্লোর থেকে শার্ট তুলে নেয়। গায়ে শার্ট জড়াতেই অস্ফুট কন্ঠে চাপা আর্তনাদ করে হাতের দিকে দৃষ্টি দেয়, ব্যান্ডেজ ভিজে রক্ত টলটল করছে। আচ্ছা পূর্ণতাকে ব্যান্ডেজ করে দিতে বলবে? উহু, সহনশীল ব্যথা সহ্য করাই উচিত। করুক ব্যথা।
ট্যাক্সি থামতেই পূর্বকে রেখে গটগট করে ভেতরে চলে গেলো পূর্ণতা। পূর্ব ওয়ালেট হাতে ভাড়া দিতে গিয়ে থতমত খেয়ে শেষপর্যন্ত লাগেজ নিয়ে ভেতরে গেলো। বাড়ির বারান্দায় পূর্বিকা, মা, দাদী, সায়মা বসে চা খাচ্ছিলো পূর্ণতাকে দেখে পূর্বিকা আশ্চর্য হয়ে খুশিতে কাপ রেখে এগিয়ে যায়।
– আজ এলে যে? বজ্জাত তো বলে গিয়েছিলো চারদিন থাকবে।
– আপু উনার ইচ্ছাতে আসতে হয়েছে। উনার নাকি ওই পরিবেশ ভালো লাগেনি।
পূর্বিকা একটা বেতের মোড়া এনে ওকে বসতে দিলে দাদী বলে উঠলো,
– আয়াশ দাদু কি অসুস্থ হইছে?
– না দাদী, উনি সুস্থ আছেন।
কথাটুকু শেষ না করতেই চটপট গতিতে লাগেজ হাতে ঢুকলো পূর্ব। পূর্ণতাকে অগ্রাহ্য করে দাদীর কাধে মাথা রেখে হাফ ছাড়ার কন্ঠে বললো,
– বড্ড টায়ার্ড লাগছে দাদী জানো? তোমার হাতের লেবুর শরবতটা খেতে ইচ্ছে করছে। একটু খাওয়াবে?
পূর্ণতা বিরক্ত চেপে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে লাগেজ টেনে যেতে লাগলো। সায়মা এতোক্ষন চুপচাপ ওদের মিয়াবিবির কার্যকলাপ দেখছিলো। শান্ত ভঙ্গিতে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো। দাদী খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
– দাদু? এবার কি বড় দাদী হতে পারবো?
– ছিঃ দাদী, কি যে বলো না!! আমি এখনই তোমার ছেলেকে দাদা হতে দিচ্ছিনা। অপেক্ষা করো অপেক্ষা!! বুঝলে? শরবতটা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করো দাদী। জার্নিতে খুব ক্লান্ত লাগছে।
সায়মা চা-টা শেষ করে কাপটা টেবিলে রেখে পূর্বের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
– পূর্ব? তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
পূর্ব মুখ গোমড়া করে উত্তর দিলো,
– হাতকে জামা পরিয়েছি।। তুই পরাবি?
সায়মা উত্তর শুনে অপমানবোধে নিস্তেজ হলেও দাদী ব্যস্ত হয়ে হাত দেখতেই প্রচণ্ড উৎকন্ঠায় বললো,
– ও মাবুদ! কি সর্বনাশ গো! হাত যে অনেকখানি কেটেছে!! কি করে হলো দাদু?
– দরজার সিটকিনিতে কেটেছে দাদী। টেনশন করছো কেন? আমি একদম ঠিক আছি।
কিছু মানুষের জীবনে স্বল্প কিছু ব্যক্তি থাকে যাদের কাছে খোলাবইয়ের মতো কথা বলা যায়। কিছু বলার না থাকলেও বলার জন্য মন আকুলিবিকুল করে। একটা সাজানো মিথ্যা বলেও তার দৃষ্টি আর্কষনে মন আকুতি জানায়। তার কাছে নিজেকে অন্যতম ভাবাতে ইচ্ছে করে। অদ্ভুত কারনে মন তাকে নিজের করেই রাখতে চায়। সহজ ভাষায় ‘পজেসিভনেস’ বা ‘তুই জাস্ট আমার’ — এরকম একটা মনোভাব হামেশার জন্য মাথার মধ্যে গেঁথে যায়। পূর্ব নিজের ব্যক্তিজীবনে তিনটে মানুষের সাথে পরিমাপ ছাড়া কথা বলে। নিজের বাবা, নিজের দাদী, বর্তমানে নিজের স্ত্রী। সবাই বলে মায়ের সাথে ছেলের সম্পর্ক দৃঢ় এবং বাবার সাথে মেয়ের সম্পর্ক মজবুত হয়ে থাকে। কিন্তু পূর্বের জীবনে সবই হয়েছে উল্টো, উদ্ভট, উটকো। উল্টো হয়েছে এ কারনে মায়ের বদলে বাবার সাথে মিলটা গেঁথেছে। ছেলে ভাইগুলো থাকা সত্ত্বেও একমাত্র বড় বোনের সাথেই বোঝাপড়া সেঁটেছে। বাবার বিরাট ব্যবসা থাকার পরও তার মন মানুষের সেবার জন্য পরে থাকে। পূর্ব দুপুরের খাবার খেতেই ফোন অন করে দেখে অনলাইনে তার ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট কনফার্ম হয়েছে। খাওয়া শেষ করে সবাইকে যাওয়ার ব্যাপারটা জানালে নিমিষেই সবার মুখের আদল অমাবস্যার অন্ধকারে ছেয়ে যায়। পূর্বের বাবা আলাদা করে ডেকে একাকী ভাবে জিজ্ঞেস করে,
– তোর কি কোনো গুরুতর সমস্যা হয়েছে?
– গুরুতর কিনা দেখতে হবে। আগে আমার ঢাকা যাওয়া জরুরী। তুমি নাহয় কালবাদে পরশু সবাইকে গাড়ি করে নিয়ে এসো?
– তুই কি ট্রেনে যাওয়ার চিন্তা করছিস?
– আমি ট্রেনেই যাচ্ছি আব্বু। দুপুর তিনটা পাঁচের টিকিট কনফার্ম। তিস্তা এক্সপ্রেস।
পূর্ব চাটুবাক্য ব্যয় করে বাবাসহ সবাইকে ম্যানেজ করে। গুমোটভরা পরিবেশ এমনভাবে হ্যান্ডেল করে কেউ বুঝতেই পারেনা পূর্ব ভয়ানক একটা অবস্থার দিকে নিপতিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু পূর্ণতার মুখ দেখে কিছুই বলার সাহস পায়না পূর্ব। পূর্ণতা সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও পূর্বের দিকে তাকালে কঠিন করেই তাকায়। পূর্ব নিজের কাপড় আলাদা গোছাতে রুমে চলে আসে। দুই দুটো লাগেজ খুলে সব পোশাক নিয়ে একটা লাগেজভর্তি করতে থাকে।পূর্বের ব্যাগ গোছানো শেষ হলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর দুইটা। ট্রেন যেহেতু তিনটায় এখনই রেডি হওয়া উচিত। পূর্ব ড্রেসিংয়ের সামনে দাড়িয়ে রেডি হওয়া শুরু করে। পূর্ণতা অনেকক্ষন পর কি কাজে যেনো রুমে ঢুকলে পূর্ব আয়নায় তাকিয়ে শার্টের হাতা গুটাতেই বলে উঠে,
– তোমাকে একা রেখে ঢাকা যাচ্ছি দেখে রাগ করেছো?
পূর্ণতা এমন ভাবে সূঁচের ভেতর সুতো ঢুকাচ্ছে যেন এই রুমের মধ্যে ও ছাড়া আর কেউ নেই। পূর্ব বুঝতে পারলো পূর্ণতা ওকে অগ্রাহ্য করার ভালো পরিক্রমায় আছে। পূর্ণতা সূঁচে সুতো ঢুকিয়ে সুতোর শেষপ্রান্তে দুটো গিট মেরে শাড়ির আচঁল সেলাচ্ছে। পূর্ব হঠাৎ ব্যাপারটা লক্ষ করতেই আয়নার দিক থেকে সরে বিছানার সামনে ফ্লোরে বসে দেখলো পূর্ণতার বাদামী শাড়ির আচঁলটায় একপ্রান্ত ছিড়ে গেছে। পূর্ণতা সেটা শান্ত হয়ে সেলাচ্ছে। আশ্চর্যজনক! এতো মজবুত নতুন শাড়ি ছিড়লো কি কিরে?
– পূর্ণ? শাড়ির আচঁল কিভাবে ছিড়লো?
পূর্ণতা সেলাইয়ের গতি বারিয়ে দিলো। পূর্বের কোনো কথার জবাব সে দিবেনা। পূর্ব একই প্রশ্ন কয়েকবার শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেও চতুর্থ বারের প্রশ্নে আকস্মিক রাগে সূচের হাত চেপে ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
– তোমার সমস্যা কি! কিছু জিজ্ঞেস করছি না? শাড়ির আচঁল কি করে ছিড়লো এটুকু প্রশ্নের জবাব দিতে তোমার এতো কুন্ঠা লাগছে?
পূর্ণতা ঠোঁট কামড়ে হাত ঝাঁকি মেরে ছাড়িয়ে নিলো। ঝট করে উঠে পূর্বের পাশ থেকে দাড়িয়ে বললো,
– তুমি নিজের কাজ সম্পর্কে যেমন আমার কাছে বলতে আসো না। আমিও তোমার কাছে এসব ব্যাপারে বলতে যাবো না।
পূর্ব ফ্লোরে বসা অবস্থায় আহত দৃষ্টিতে ওর দিকে মাথা ঘুরিয়ে কোমল কন্ঠে বললো,
– তুমি আমার যাওয়া নিয়ে রেগে আছো?প্লিজ রাগ করো না।
পূর্ণতা ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিতে জোরালো সুরে বলল,
– তোমার চিন্তা আমি মোটেই করছিনা। বিদায় হও চোখের সামনে থেকে!
পূর্ব ফ্লোর থেকে উঠে দাড়িয়ে পূর্ণতার সামনে এসে দু’বাহু ধরে বলে,
– আমি একটু জরুরী কাজে আজই ঢাকা ফিরছি। তুমি সবার সাথে পরশু চলে এসো কেমন? আমি অপেক্ষায় থাকবো। আচঁলটা কি করে ছিড়লো বলো না? নরমাল ভাবে তো ছেড়ার কথা না।
পূর্ণতা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলেও কোনো উত্তর দেয়নি। নিজের দুবাহু থেকে ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে দিলে পূর্ব হাল ছেড়ে লাগেজ টেনে চলে যেতে লাগলো। হঠাৎ কি ভেবে দরজার মুখে থেমে সটান করে দাড়িয়ে পরলো বোঝা গেলো না। পূর্ণতা কপাল কুঁচকে কিছু ভাববে আচমকা এমন অপ্রতিভ কান্ড ঘটলো পূর্ণতা কয়েক পা পিছিয়ে আরেকটুর জন্য উল্টে বিছানার উপর পরলো না।। ধড়ফড়িয়ে মাংশল পিন্ডটা টগবগ গতিতে ছুটছে। কি হলো ওর সাথে? চোখের পাতা খুলেও সে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখছে। পূর্ণতা সৎবিৎ ফিরে পেলে বুঝতে পারলো পূর্বের গায়ের সুগন্ধটা তীব্রভাবে পাচ্ছে। এখন যেনো মনেহচ্ছে নিজের হার্টবিটের সঙ্গে আরেকটা হার্টবিটের ধুকপুক শব্দ সমান তালে অনুভব করছে। কি আশ্চর্য! গাল যে ভেজা ভেজা ঠেকছে!! একটুপর আরো বুঝতে পারলো পূর্ব ঠোঁটজোড়া কঠিন করে চেপে ওর চোখের উপর হাত ঢেকে দিয়েছে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে দিলো কেন? প্রথমবার তো চুমু খাচ্ছে না ও? ওর তো একদম লজ্জা নেই যে চুমু খাওয়ার বেলায় চোখ ঢাকতে হবে! কিছু কি লুকানোর চেষ্টায় আছে? পূর্ব কি কাঁদছে? সেই ভেজা ভাব ওর অশ্রুজল নয়তো? পূর্ণতা অস্থির হয়ে জরিপ চালানোর জন্য কিছু করবে হুট করে শরীরের উপর থেকে সকল ভার সরে গেলো। চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো পূর্ব ওর দিকে পিঠ দিয়ে শার্টের হাতা মুখের কাছে ঘষছে। পূর্ণতা শক্ত হয়ে অটলভাবে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। কেনো যেনো বোধশক্তি লুপ্ত উন্মাদের মতো লাগছে নিজেকে। বদ্ধ উন্মাদ! যার কোনো চিকিৎসা নেই। পূর্বকে শতবার বলার পরও আরেকদফায় সত্য লুকোচ্ছে। পূর্ণতা এখন ক্লান্ত এসবে। আর জিজ্ঞেস করার স্পৃহা নেই, ‘পূর্ব কি হয়েছে তোমার সাথে?’। পূর্ব লাগেজ টেনে চলে গেলো বাইরে আর তাকায়নি পিছনে। পূর্ণতার বুক, গলা অদ্ভুত ভাবে শুকিয়ে আসলো। হঠাৎ কানে গাড়ির শা শা চলন্ত আওয়াজ শুনে শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। চিৎকার করে কাদঁতে পারলে ভালো হতো! কার সাথে সংসার বাধলো যে ওকে নিজের সমস্যা সম্পর্কে কিছুই বলেনা? পূর্ণতা মাথা ধরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলো। ঝিঁঝি পোকার মতো বিশ্রী শব্দ হচ্ছে মাথার ভেতরে। অসহ্য! অসহ্য!অসহ্য অনুভূত হচ্ছে। মানুষ যা চায় তা সে পায়না। যা সে চায়না তা বিশ্রীভাবে পায়।
পূর্ণতা ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। চোখ থেকে ধেয়ে পানি গড়াচ্ছে সেদিকে ধ্যান নেই। এই মানুষটা কখনোই ওকে ঠিক ভাবে বুঝতে পারলো না।আচ্ছা পূর্ব চায় কি? পূর্ণতাকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে কেন হাসফাস অনুভব করে? যোগ্যতাহীন ভাবে পূর্ণতাকে? বহু প্রশ্নমালা উত্তপ্ত মস্তিষ্কে কিলবিল করছে। পূর্ণতা মাথা তুলে চোখ মুছে হাতে ফোন নিয়ে দুঃসময়ের বন্ধুকে কল করে। কানে ফোন লাগিয়ে আচঁলে মুখ চেপে হু হু করে কেদেঁ উঠে। আয়মান সম্ভবত ঘুমে ছিলো পূর্ণতার কল রিসিভ করে ঘুমু কন্ঠেই বললো,
– কিরে ছেড়ি? এখন স্মরন করলি? হানিমুন কেমন কাটে তোর?
.
– এইযে শুনুন? ‘এক্সট্রা’ বগিটা কোনদিকে?
– ইন্জ্ঞিন থেকে চার নাম্বার বগি।
– ওহ্ ধন্যবাদ। আচ্ছা ট্রেন কি আজ লেট করবে?
– লেট না করার সম্ভাবনা বেশি।
– থ্যাংকস।
গ্রামের লোকজন যে এখন শহরমুখী সেটা দেওয়ানগন্জ্ঞ প্ল্যাটফর্মের ভিড়টা বেশ ভালোই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্রীষ্মের ছুটি, শীতের ছুটি, ঈদের ছুটি ছাড়াই আজ প্ল্যাটফর্ম বেশ জমজমাট। পূর্ব লাগেজের হ্যান্ডেল আকড়ে টিকিটে চোখ বুলিয়ে সামনে এগুচ্ছে। বগিটা নজরে পরতেই সে লাগেজসহ কামরায় উঠে নিজের কেবিনে চলে আসে। এ্যাসেসোরিজ সিস্টেমে লাগেজ রেখে দরজা লক করে সিটে গা এলিয়ে এসিতে বাটন টিপে দেয়। শান্তির একটা ঘুম দেওয়া পসিবল না হলেও শান্তির একটা জার্নি করা অবশ্যই সম্ভব। শান্তির ঘুমের জন্য পূর্ণতাকে প্রয়োজন যা এখন অসম্ভব! পূর্ব ফোন বের করে করতেই অজানা কারনে মন উদাস হয়ে যায়। ট্রেনের এমন কেবিনেই তো পূর্ণতার সাথে খুনশুটি শুরু হয়েছিলো তার। হঠাৎ ফিক করে হেসে দেয় পূর্ব। প্রথম প্রথম পূর্ণতাকে বোবা ভেবেছিলো পূর্ব। মিথুন, জাওয়াদ, সায়মা, ফুয়াদ পা কেটে দিয়েছিলো ওর। সেই পা নিয়ে কি হাস্য কান্ড! পুরো কমলাপুর স্টেশনে বহু মানুষের ভিড়ে আশ্চর্যের বস্তু হয়ে সে কোলে করে এনেছিলো পূর্ণতাকে। কিন্তু কে জানতো সেই পূর্ণতাই আজ অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে স্থির হবে? পূর্ব তো বিয়ে করার পক্ষে ছিলো না কখনো! কিভাবে মন বেঁকে গেলো? হঠাৎ বিকট শব্দে মোহভঙ্গ হলে পূর্ব দেখে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দিয়েছে। জানালাটা দুহাতে নামাতে যাবে হঠাৎ মনে হলো বাইরে পরিচিত মুখ যেন দেখেছে। তা কি করে সম্ভব? পূর্ব চটজলদি জানালা উঠিয়ে বাইরে উকি দিলে ট্রেন ততক্ষণে স্পিড বারিয়ে সীমা ছেড়ে চলেছে। ভুল দেখেছে ভেবে জানালা বন্ধ করে এসির পাওয়ারটা আরেকটু বারিয়ে দিলো পূর্ব। কাটায় কাটায় দশ মিনিট যেতেই হঠাৎ কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো। সম্ভবত টিকিট চেকার এসেছে ভেবে পূর্ব পকেট থেকে টিকিট বের করে দরজার হ্যান্ডেল মোচড় মারলো। কে জানতো দরজা খুলে বাইরে তাকালে পূর্ব অবাক হবে? নিজের চোখকেও তার বিশ্বাস করতে হিমশিম খাওয়া লাগবে? পূর্ব কতক্ষণ যাবৎ ওইভাবে হা করে চেয়ে ছিলো বলা যায় না। কিন্তু কোত্থেকে যেনো ছন্দময় সুর ভেসে আসছিলো কানে। ‘ প্রহর শেষে রাঙা আলোয় সেদিন চৈত্রমাস…তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ ‘….
আচ্ছা? মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত ব্যাপারগুলো অদ্ভুত সুখ দেয় কেনো? উত্তর আছে? উহু…উত্তর নেই। ভালোবাসি বলার প্রয়োজন হলেও মাঝেমাঝে বলতে নেই। কিছু ভালোবাসা অব্যক্ত রাখতে হয়, কিছু ভালোবাসা দূর থেকে বোঝাতে হয়। কিছু ভালোবাসা মুঠোয় এনে বুকে স্বপ্ন বুনতে শেখায়। আমিতো আছি পাশে….হারিয়ে যাবো কোথায়??
– ‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক