#অন্যরকম তুমি
পর্ব ১৫
#তানিশা সুলতানা
চার বছর সিমিকে দেখলো সিফাত। হার্ট বিট লাফাচ্ছে রীতিমতো। হাত পা কাঁপছে। নীল রংয়ের গাউনে একদম সিদ্ধ লাগছে মেয়েটাকে।
কে বলবে এই মেয়ে একটা বাচ্চার মা?
রাস্তার এক পাশে সিফাত দাঁড়িয়ে আছে অন্য পাশে সিমি। সিফাতের দৃষ্টি সিমির দিকে। আর সিমির দৃষ্টি এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। ঠোঁটে কোণে এক চিলতে হাস। এক হাতে জড়িয়ে আছে সুদর্শন একটা ছেলের হাত। ছেলেটার চোখে মুখেও পরম তৃপ্তি।
ছেলেটাও মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে। কিন্তু সিমির সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার মতো কথা বলেই যাচ্ছে।
সিফাতের বুকের বা পাশটায় চিনচিন করছে। মারাক্তক ব্যাথা করছে। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এই ছেলেটাই সেই যার সাথে সিটির বিয়ে হয়েছে।
চোখে বড্ড জ্বালা করছে। এই দৃশ্যটা সয্য করার মতো না। বুক ফেটে যাচ্ছে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সিফাত। ডানে বামে তাকিয়ে গাড়ির অবস্থান বুঝে সাবধানে রাস্তা পার হয়ে সিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সিমিও এক পলক তাকায়। ধক করে ওঠে সিফাতের বুকের ভেতর টা।
ভেবেছিলো সিমি কান্না করে ফেলবে। লাল হয়ে যাবে সিমির ওই কাজল কালো ডাগর ডাগর আঁখি দুটো। জাপ্টে জড়িয়ে ধরবে সিফাতকে।
শেষবার দেখা হওয়ার মতো করে বলবে
“প্লিজ সিফাত আমাকে ছেড়ে দিও না। আমি বাঁচতে পারবো না।
কিন্তু তার কিছুই হলো না। সিমিকে দেখে মনে হচ্ছে ও চিনেই না সিফাতকে।
” কি ভাই? কিছু বলবেন?
সিমির পাশে থাকা ছেলেটা সিফাতকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে।
সিফাত মাথা নিচু করে ফেলে।
“ছোঁয়া পাঠিয়েছে আমায়।
আমতা আমতা করে বলে সিফাত।
” ওহহ আচ্ছা।
সিমি ওনার সাথে যাও। পৌঁছে ফোন দিবা আমায়। একদম একা একা শপিং করতে বের হবা না। আমাকে কল করবে। ওকে?
শাসনের সুরে বলে হিমু নামের ছেলেটা।
সিমি আলতো হেসে ছেলেটার পরিপাটি করে রাখা চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে “আচ্ছা ” বলে।
হিমু কপাট রাগ দেখায় সিমি ফিক করে হেসে ফেলে। সাথে সাথে হিমুও হেসে ফেলে।
“পাগলীটা
সিমির নাক টেনে বলে হিমু।
” আসছি
বলেই সিমি আগে আগে হাঁটা শুরু করে। সিফাত এক পলক হিমুর দিকে তাকিয়ে সিমির পিছনে হাঁটতে থাকে।
নিসন্দেহে হিমু সিফাতের থেকে অনেক গুন বেশি হ্যান্ডসাম। সিমিকে ওর সাথে মানায়ও ভালো। ভুলে যাওয়াটা সহজই।
“এই যে মিস্টার এতো স্লো কেনো আপনি? তাড়াতাড়ি হাঁটুন। কোন দিকে যাবো বলুন?
সিমি পেছনে ঘুরে কোমরে হাত দিয়ে বলে। সিফাত মাথা চুলাতে তারাতাড়ি হেঁটে সিমির পাশাপাশি দাঁড়ায়।
” ররিক্সা নেবো?
সিফাত রিনরিনিয়ে বলে।
“তো কি হেঁটে যাবো?
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে সিমি।
সিফাত রিক্সা ডাকে। সিমি আগে আগেই উঠে পড়ে। সিফাতও বসে সিমির পাশে।
রিক্সা চলতে শুরু করে। সিফাত তাকিয়ে থাকে সিমির দিকে।
” ভুলে গেছো?
সিফাত প্রশ্ন করে। সিমি আলতো হাসে। মুখের ওপর পরে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে নেয়।
“নাহহহ
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে সিমি।
” এখনো আমার সন্তানকে আমি ভুলতে পারি নি।
সিফাত আবারও মাথা নিচু করে।
“আমি কি করতাম আমি তো
সিফাত বলতে যায়।
” আপনাকে ভুলে গেছি। মনে করতেও চাই না।
সিফাতের মুখের কথা মুখেই থেকে যায়। করুন চোখে তাকিয়ে থাকে সিমির মুখের দিকে।
সাদি ইমপটেন্ট ফাইলটাই ফেলে গেছে বাসায়। গাড়িতে নিয়ে মনে হয়েছে ফাইল নেই। ভীষণ বিরক্ত লাগছে। এখন আবার বাসায় যেতে হবে।
পরির ডাকে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। বাচ্চাটা সকাল থেকে কিছুই খায় নি। কে খাওয়াবে? সিফাত তো চলে গেছে সিমিকে আনতে। ছোঁয়ার এবার নিজের ওপর চরম বিরক্ত লাগছে। একটু তো ভাবা উচিৎ ছিলো পরির কথা।
পরি কেঁদেই যাচ্ছে। ছোঁয়া তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে দেখে টেবিলের ওপরে থাকা দুধের গ্লাস থেকে দুধ খাচ্ছে পরি। মুচকি হাসে ছোঁয়া।
যে বয়সে বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে বায়না করে। সেই বয়সেই মেয়েটা নিজে নিজে খেতে শিখে গেছে। এটাকেই হয়ত পরিস্থিতি বলে।
ছোঁয়া এবার পরিকে কোলে করে বেলকনিতে যায়। খিধে নেই। রান্না তো আর করে নি। সাদি নিশ্চয় আর ওর জন্য রান্না করে রেখে যাবে না?
বেলকনিতে গিয়েই মন ভালো হয়ে যায় ছোঁয়া। পাশের বেলকনিতে নানা রকমের ফুল ফুটে আছে। ইচ্ছে করছে সব গুলো ফুল ছিঁড়ে নিতে।
কিন্তু ধরা পড়লে তো মারা পড়তে হবে।
কিন্তু তারপর যেটা দেখলো সেটা দেখে ছোঁয়ার নিজেকে সামনে রাখা দায় হয়ে গেছে।
বড় প্লেটে করে গোটা কয়েক আমের মোরব্বা। রোদে শুকতে দিছে। বেলকনির রেলিং এর ওপর।
দেখেই জিভে পানি চলে আসে ছোঁয়ার। পরিও বায়না ধরে খাবে।
ছোঁয়া পরিকেন নামিয়ে আগে গুনে নেয় কয়টা আছে।
মোট বারো টুকরো।এর মধ্যে থেকে দুই চার টুকরো সরালে কেউ বুঝবে না।
এক দৌড়ে কিচেন থেকে বাটি এনে টপাটপ চার পিছ নিয়ে নেয়। তার আস্ত একটা গোলাপের টিপ নিয়ে রুমে চলে আসে। আর বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেয়। যাতে সন্দেহ না করে।
গোলাপের টপটা খাটের তলায় লুকিয়ে রাখে। আজকে দোকান থেকে কালো রং কিনে এনে টপটাকে কালো রংয়ে রাঙিয়ে দেবে তারপর আর কেউ চিনতে পারবে না।
পরিকে কুটি কুটি করে হেসে যাচ্ছে। ছোঁয়াও হাসছে। পরিকে সাথে নিয়ে এই প্রথম চুরি।
“কি বাঁদরামি করেছো?
সাদি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলে। ছোঁয়া চমকে ওঠে। কিন্তু এখন ভরকালে চলবে না। ম্যানেজ করতে হবে। দেখে ফেললে আর খাওয়া হবে না। ফেতর দিয়ে দেবে।
” বাহহহ আমার বরটাকে তো একদম রসগোল্লার মতো লাগছে।
সাদির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ছোঁয়া।
সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে। হলোটা কি এর?
“ভেবেছিলাম নেইমার ছাড়া আর কাউকে মনের ভাগ দেবো না। কিন্তু আপনি যেভাবে হট হট গ্রীষ্ম কাল সেজে থাকেন। যখন তখন মনটা ভাগ হয়ে যাবে।
সাদির সামনা সামনি দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে সাদির দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে ছোঁয়া।
এক লাফে দুরে সরে যায় সাদি। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেছে।
” দুরে থাকো
ধমক দিয়ে বলে সাদি। চোখ মুখ শক্ত করে ফেলেছে। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। এবার কি দুই চারটা থাপ্পড় পড়বে না কি গালে। পরি বিছানায় গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।
“এমন করেন কেন জামাই? শাশুড়ী বলেছে আপনাকে চুম্মা দিতে। শাশুড়ীর কথা না শুনলে আমাকে তো আস্ত চিবিয়ে খাবে।
মুখ গোমড়া করে বলে ছোঁয়া।
এখানে আর এক মুহুর্ত থাকাও সেফ না। এই মেয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
সাদি কপালের হাত বুলিয়ে ছোঁয়াকে পাশ কাটিয়ে বিছানার কাছে যায়। ফাইলটা হাতে নেয়। আর তখনই বুঝতে পারে পরির পেছনে কিছু একটা আছে।
” মামানি তোমার পেছনে কি?
ছোঁয়া এক দৌড়ে এসে সাদির সামনে দাঁড়ায়।
“পরির পেছনে কিছুই নেই। আপনার সামনে আমি আছি। আপনার একমাত্র মিষ্টি বউ। দেখুন?
এক গাল হেসে বলে ছোঁয়া।
” ইডিয়েট
বিরবির করতে করতে চলে যায় সাদি। সাদি যেতেই ছোঁয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়।
“যাক বাবা বেঁচে গেছি।
চলবে……….