#অন্যরকম তুমি
পর্ব ১৭
#তানিশা সুলতানা
বেলকনিতে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ছোঁয়া। দুই চোখ থেকে অনবরত পানি গড়াচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে এখন হেঁচকি উঠে গেছে। একটু পরপরই ফুঁপিয়ে উঠছে।
ছোঁয়ার কান্নার শব্দ একদম সাদির কানে গিয়ে লাগছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে এরকম ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ কানে লাগার কথা। একটু বেশিই অভিমানি ছোঁয়া। কখনো বাবা মা বোন বকে নি ওকে।
সাদি দুই এক বার ডেকেছে কিন্তু কথা বলে নি। আর বলবেও না কথা। জীবনেও কথা বলবে না ওই সাদা বিলাইয়ের সাথে।
সাহস কত বড় ছোঁয়াকে ধমক দেয়?
সাদিও আর ডাকে না। সব কিছু ই বিরক্ত লাগছে। পাশাপাশি ভীষণ রাগও হচ্ছে। কি একটা ঝামেলায় ফেসে গেছে। এখন কি করা উচিত সেটাও বুঝতে পারছে না। সরি বলার অব্ভাস নেই ওর। আর ওর দৃষ্টিতে ও কোনো ভুল করে নি। প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা পারসোনাল লাইফ থাকে। পারসোনাল জিনিস থাকতে পারে।
বউ বলে সেটা তার সাথে শেয়ার করতে হবে? কেনো? সাদি সেটা পারবে না। কিছু জিনিস বউ কেনো মায়ের সাথেও শেয়ার করতে পারবে না সাদি।
তার মধ্যে এই ওড়নাটা আর বেলি ফুল একটা। ভীষণ পছন্দের এই জিনিস দুটো সাদির। এক প্রকার অভ্যাস এটা সাদির।
আর এই অভ্যাসটা সাদি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না। কখনোই না। সেই দিক থেকে দোষটা ছোঁয়ার। তাই সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না।
রাগে ফুসফুস করছে ছোঁয়া। সাদি বিছানায় গোল হয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। নেহা চলে গেছে।।ফোলা ফোলা লাল চোখ দুটো বড়বড় করে বিরবির করে সাদির গুষ্টি উদ্ধার করছে ছোঁয়া।
ইচ্ছে করছে এখনি এখানে থেকে চলে যেতে। কিন্তু এখন চলে গেলে আপির শপিং করা হবে না। এমনিতেই তো কাল চলে যাবে। একটা রাত কোনো রকমে পার করে দিতে পারবে।
“ছোঁয়া কই তুই?
সিমি ছোঁয়াকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে। বিছানায় সাদিকে দেখে এক প্রকার লাফিয়ে ওঠে সিমি। সাদিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে একদম আশা করে নি সিমিকে। দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায় সিমি। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
” সসস্যার আপনি?
সিমি চোখ দুটো বড়বড় করে বলে।
সিমির গলা পেয়ে ছোঁয়াও বেলকনি থেকে রুমে চলে আসে।
সাদি ল্যাপটপ বন্ধ করে সিমিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। আসলে ঠিক দেখছে কিনা এটাই দেখা।
“আপনি এখানে?
সাদি ভ্রু কুচকে বুকে হাত গুঁজে সিমিকে পাল্টা প্রশ্ন করে।
” আসলে এটা আমার ছোট বোনের স্বামীর ফ্লাইট। ওর কাছেই এসেছি।
রিনরিনিয়ে বলে সিমি।
“আমিই সে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে। আপনাআপনি সিমির ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়। বলছেটা কি উনি? এটা ছোঁয়ার স্বামী? এর সাথে বিয়ে হয়েছে ছোঁয়ার? ভাবা যায়?
ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে সাদির কাছে টিউশনি করতো সিমি। খুব ভালো আইসিটি পড়াতো। সেখান থেকে চিনে সাদিকে।
কিন্তু এই সাদিই যে ছোঁয়ার বর এটা আজকেই জানলো সিমি।
একপলক ছোঁয়ার দিকে তাকায় সিমি।
” পড়ালেখা কেমন চলছে? কোন ইয়ারে এখন?
সাদি জিজ্ঞেস করে।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি এখন।
” কিন্তু আপনার তো এখন অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। পিছিয়ে গেলেন কি করে?
সাদির প্রশ্ন শুনে সিমি মাথা নিচু করে ফেলে। পুরোনো হ্মত আবারও জেগে ওঠে। চোখ দুটো চিকচিক করছে।
“আপি কিছু বলবে?
ছোঁয়া সিমির হাত ধরে বলে।
” হ্যাঁ একটু শপিং মলে যেতে চাইছিলাম।
স্যার ছোঁয়াকে নিয়ে যাবো?
সিমি বলে।
“ওনাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আমি যাবো। ঐনি বলার কে?
ছোঁয়া কঠিন গলায় বলে। সাদি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বিজি হয়ে যায়।
” আপি তুমি যাও। আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
মুচকি হেসে চলে যায় সিমি। ছোঁয়া জিন্স আর লেডিস শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। বাসা থেকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো। এখন থেকে এগুলোই পড়বে।
ছোঁয়া ড্রেস চেঞ্জ করে বের হতেই সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। ছোঁয়া ভেংচি কেটে হিজাব বাঁধতে থাকে।
সিমি পরিকে সাদা একটা ফ্রক পরিয়ে দেয়। এখন নিজে রেডি হবে। তখনই ফোন বেজে ওঠে সিমির। স্কিনে হিমু নামটা জ্বলজ্বল করছে। সিফাতও তখন রুমে ঢুকে পরিকে একটু দেখতে। সকাল থেকে মেয়েটাকে কাছে পাচ্ছে না। একদম সিমির সাথে সেটে আছে।
সিমি মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে।
“রেডি হচ্ছি। এখনই বের হবো।
” কি কালার ড্রেস পড়ছো?
“নীল
বলেই কল কেটে দেয় সিমি।
” মিথ্যে কেনো বললে? তোমার হাতে তো ব্লাক ড্রেস।
সিফাত দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করে। চমকে ওঠে সিমি।
“মিথ্যে বলতে শিখে গেছি তাই।
মুচকি হেসে বলে সিমি।
সিফাত চোখ বন্ধ করে নেয়।
” বাবা আমি তোমার সাথে যাবো না। খালা মনির কাছে থাকবো।
পরিকে সিমির পা জড়িয়ে ধরে অধো অধো গলায় বলে।
“কেনো মা বাবাকে ভালো লাগছে না?
সিফাত চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হেসে বলে।
” লাগছে তো। আমি তোমাদের সাথে এক সাথে থাকতে চাই।
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে পরি। তিন বছরের মেয়ের এই রকম পাকা কথা শুনে সিফাত শব্দ করে হেসে ফেলে।
চোখ খুলে ওদের দিকে এগিয়ে আসে।
সিমি নিচু হয়ে বসে৷ পরির দুই গালে হাত রাখে।
“তোমার বাবাকে মাকে এনে দিতে। যদি খুন টুন না করে থাকে।
বাঁকা চোখে সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে সিমি।
তারপর সিমির চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সিমি।
সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়। কপালে চুমু খায়।
” শোনো মেয়ে
ছোঁয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে সাদি বলে ওঠে। দাঁড়িয়ে যায় ছোঁয়া। সাদি আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে এনে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায় সাদি। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে সাদির মুখের দিকে তাকায়।
“টাকাটা রাখো। কেনাকাটা করবে। টাকা তো নেই নিশ্চয়।
ছোঁয়া সাদির হাত থেকে টাকা নিয়ে সাদির মুখে ছুঁড়ে মারে। সাদি দাঁতে দাঁত চেপে।
“টাকা না থাকলে কিনবো না। তবুও আপনার থেকে টাকা নেবো না। সাহস হয় কি করে আমাকে টাকা দেওয়ার।
আঙুল তুলে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে ছোঁয়া। রাগে সাদির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
” সাহস হয় কি করে আমার মুখের ওপর কথা বলার? থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো।
হাত তুলে চিৎকার করপ বলে সাদি। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ভয়ে বুক ধুপ বুক করছে। হার্ট দ্রুত লাফাচ্ছে।
“টাকা না নিলে এই খান থেকে এক পা এগোতে দেবো না আমি।
টাকা গুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে বলে সাদি।
” আআআমি টাকা নেবো না।
ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে।
“তাহলে যাওয়া হচ্ছে না। আমাকে জেদ দেখানো? মেরে বালি চাপা দিয়ে দেবো ইডিয়েট। একটা উটকো ঝামেলা এসে জুটেছে আমার কপালে। জাস্ট নিতে পারছি না আমি।
ছোঁয়া চোখ খুলে সাদির দিকে তাকায়৷ ওকে উটকো ঝামেলা বলছে?
ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার।
“কালকেই চলে যাচ্ছি আমি। ডিভোর্স পেপারও পাঠিয়ে
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে।
চলবে………..
পর্ব ১৮ -২৭