#অন্যরকম তুমি
পর্ব ১৮
#তানিশা সুলতানা
আরও একটা চর পরলো ছোঁয়ার গালে। গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া সাদির দিকে। যেনো এখনই সাদিকে গিলে খাবে। সাদির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
ছোঁয়ার থেকে ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা ভরে চেন আটকে আবারো ছোঁয়ার হাতে দিয়ে দেয় ব্যাগ। ছোঁয়া রাগে থরথর করে কাঁপছে। গালটা আবারও লাল হয়ে উঠেছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
“এবার যাও।
ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে বলে সাদি।
” বজ্জাত লোক। আমার সাথে অধিকার খাটাতে আসবেন না একদম। জাস্ট অসয্য লাগে আপনাকে। জোর করে আপনার ঘাড়ে চাপি নি আমি।
চিৎকার করে বলে ছোঁয়া।
ছোঁয়া সাদির গায়ে ব্যাগটা ছুড়ে মারে। ড্রেসিং টেবিলের সব জিনিসপত্র ফেলে দেয়। বিছানা চাদর বালিশের কাবার সব খুলে ফেলে দেয়। টেবিল থেকে সাদির বই প্রয়োজনীয় সব জিনিস ফেলে দেয়। তবুও যেনো রাগ কমছে না। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁপছে।
সাদি বুকে হাত গুঁজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে দেখছে ছোঁয়াকে।
” শেষ?
ক্লান্ত হয়ে ছোঁয়া বসে পড়াতে সাদি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা। ছোঁয়া ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস টেনে সাদির দিকে তাকায়।
তারপর দুই হাতে মাথা চেপে ধরে ফ্লোর হাঁটু মুরে বসে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
এই লোকটা এমন কেনো? এতো অদ্ভুত কেনো লোকটা?
কেনো এমন করে? থাকবে না ছোঁয়া। কিছুতেই থাকবে না।
“কান্নাকাটি শেষ হলে রুমটা আবার আগের মতো করে দেবে।
সাদি গালে হাত বুলিয়ে বলে।
” ফাজিল ছেলে। তুই একদম কথা বলবি না আমার সাথে।
দুই হাত চুল খামচে ধরে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে ছোঁয়া। সাদি চোখ বড়বড় করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
তখনই দরজায় নক করে সিমি। যদিও দরজাটা বন্ধ না। তবুও নক করে।
” তুমি ভাইয়াকে সাথে নিয়ে শপিং এ যাও। তোমার বোন যাবে না।
সাদি না তাকিয়েই বলে দেয়।
সিমি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায় সাদির ঠিক সাইডে।
“না মানে ও তো বলেছিলো যাবে?
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সিমি। ছোঁয়া যে কাঁদছে এটা বুঝেছে। এদের মধ্যে যে ঝামেলা হয়েছে এটাও বুঝেছে সিমি। তবুও এসব নিয়ে কিছু বলতে চায় না। ওরা স্বামী স্ত্রী। এটা ওদের পারসোনাল মেটার।
‘তখন বলেছিলো। এখন আমি বলছি।
সাদি বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে।
” আপি আমি এখানে থাকবো না৷ প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও না।
ছোঁয়া করুন দৃষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে।
বুকটা ধক করে ওঠে সিমির। গালটা লাল হয়ে আছে ছোঁয়ার। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে সিমি।
“তুমি যাও সিমি।
তুমি নিশ্চয় বুঝো আমাদের বেপারটা একদমই পারসোনাল।
সিমি ধীর পায়ে বেরিয়ে যায়। সিমি চলে যেতেই ছোঁয়া হাতের কাছে থালা শেম্পুর বোতলটা সাদির দিকে ছুঁড়ে মেরে বেলকনিতে চলে যায়৷ এই লোকটার মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করে না। বজ্জাত লোক।
সাদি পুরো রুমে চোখ বুলায়। যা ইচ্ছে কান্ড করেছে রুম টার। এরকম অগোছালো একদম পছন্দ না সাদির।
” কপালে জুটিয়ে দিয়েছে একটা ইডিয়েট। কি করে ট্রলারেট করবো একে?
পাগল হয়ে যাবো আমি।
বিরবির করে বলে সাদি।
খাটের তলা গেলে ফোনটা কুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি।
সিমি পরিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে পরিকে। আর মনটা ছোঁয়ার জন্য হু হু করছে। নিশ্চিতে সাদির স্যার একজন ভালো মানুষ। কখনো কোনো খুত পায় নি এই লোকটার। কিন্তু তাহলে কেনো ছোঁয়া সুখি না?
” তোমার কষ্ট হবে। আমি হেঁটেই যেতে পারবো।
অস্ফুটস্বরে বলে পরি।
মৃদু হাসে সিমি। পরির মাথায় চুমু খায়।
“তোমাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখতে আমার কষ্ট হয় না সোনা। শান্তি লাগে।
সিফাত ওদের পেছনেই ছিলো। একদম ওদের একা ছাড়তে চায় না ও।
” পরিকে আমি নিচ্ছি।
সিমি কিছু বলে না। হাতটা আলগা করে দেয়। সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়।
রিক্সা নেয় ওরা। শপিং মলের সামনেই হিমু দাঁড়িয়ে ছিলো। হিমুকে দেখে সিফাতের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর সিমির মুখে হাসি ফুটে।
রিক্সা থেকে নামতেই সিমি এক দৌড়ে হিমুর কাছে চলে যায়। আর সিফাত ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরি সিফাতের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
“মামা ভাড়াটা দিন।
রিক্সা ওয়ালার কথায় চমকে ওঠে সিফাত। পকেট থেকো পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দেয় রিক্সাওয়ালাকে।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে গেছে ছোঁয়ার। মাথা ব্যাথা করছে। চোখ দুটো জ্বলছে। অসয্য লাগছে। ফ্লোরেই গা এলিয়ে দেয়। বসে থাকাটাও দুষ্কর হয়ে গেছে।
সাদি ঘন্টা খানিক পরেই বাড়ি চলে আসে। রান্না করতে হবে। বাইরের খাবার খেতে পারে না সাদি।
রুমে এসে বিরক্ত হয়। এখনো একি রকমই আছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। এখন যে ওকেই এগুলো ঠিক করতে হবে এটা ভালোই বুঝতে পারছে।
ভীষণ গরম পড়েছে। বাইরে থেকে আসাতে পড়নের শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে৷ শার্টটা খুলে রুম গোছাতে শুরু করে সাদি।
এই ছিলো কপালে?
রুম গোছানো শেষ হলে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় দুই ডন্ড বসে জিরিয়ে নেয়। তারপর মনে পড়ে ইডিয়েট টা কোথায় গেছে?
কপালে ভাজ পড়ে সাদির। গেলো কোথায়?
বেলকনিতে যায় সাদি। ছোঁয়াকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে। ডান পাশের গালটা অসম্ভব লাল হয়ে আছে। এই নিয়ে দুই দিন মেয়েটার গায়ে হাত তুললো সাদি।
মনের মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করে সাদির।
” এই মেয়ে উঠো?
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে ডাকে। কিন্তু ছোঁয়ার কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার ছোঁয়ার হাত দরে সাদি। আর চমকে ওঠে। গা টা অসম্ভব গরম।
কোলে তুলে নেয় সাদি। রুমে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দেয়।
“ইডিয়েট একটা
বিরবির করে বলে সাদি।
তারপর ড্রয়ার খুলে ঔষধ নেয়। ছোঁয়াকে আধশোয়া করে ঔষধ খাইয়ে দেয়। আলমারি থেকে কম্বল বের করে ছোঁয়ার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। এই মুহুর্তে লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়া দরকার।
চলবে…….