#অন্যরকম তুমি
পর্ব ২০
#তানিশা সুলতানা
ছোঁয়া নাক টানছে আর খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে শব্দ করেও কেঁদে উঠছে। পরিও খাচ্ছে আর ছোঁয়া দিকে তাকাচ্ছে। ছোঁয়া একটু শান্তনা দেবে তারও সাহস জোগাতে পারছে না।
সাদি চোখ মুখ শক্ত করে একবার ছোঁয়ার মুখে ভাত দিচ্ছে তো আরেক বার পরির মুখে।
তখন সাদির এক ধমকে ছোঁয়া সোজা হয়ে বসে পড়েছিলো। আর পরিও উঠে যায়। তারপর দুটোকে আরেকটা ধমক দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায়। দুজনই কেঁদে ফেলে। ভয়ে তারাহুরো করে হাত মুখ ধুয়ে আবার এসে জায়গা মতো বসে পড়ে।
সাদি পরির গালে একটা চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ব্যাচ পরির কান্না শেষ। কিন্তু ছোঁয়াকে আর বাপ্পি দেয় না তাই ছোঁয়ার কান্নাও থামে না।
অনেকখন যাবত পরি পেটের মধ্যে একটা কথা রেখে খাচ্ছে। কথাটা বের হতে চাচ্ছে কিন্তু ভয়ে বের করতে পারছে না। কিন্তু এখন আর রাখতে পারছে না।
পরি ছোঁয়ার পাশ থেকে উঠে এসে সাদির কোলে বসে।
“পাপা তুমি আমাকে কিসি দিলে তো মাম্মাকে দিলে না কেনো?
সাদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে পরি।
সাদি এক টুকরো আলু ছোঁয়ার মুখে পুরে দিয়ে পরির দিকে তাকায়।
” কেনো দিলাম না?
সাদি ভ্রু কুচকে বলে।
“হুমম কোনো দিলে না? আমাকেও ধমক দিলে আবার আদর করে দিলে। মাম্মাকে তো থাপ্পড়ও মেরেছো আর ধমক। তো মাম্মাকে আদর করে দাও।
ছোঁয়া চোখের পানি মুছে মুখ বাঁকায়। সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়। অনু সূচনা হয়। গালটা এখনো অসম্ভব লাল। আবার জ্বর এসে গেছে সেটা ফ্যাকাশে মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো লাল করে ফেলেছে। না কি জ্বরের জন্যই চোখ দুটো লাল?
” তুই ও যে কি বলিস না? উনি হলেই হনুমান, সাদা বিলাই। আমাকে কিসি দেবে? হুহহহহহ
পারে তো আরও দুই চারটা থাপ্পড় দিয়ে আমাকে কোমায় পাঠিয়ে দেয়।
রাগে ফুসফুস করতে করতে নাক টেনে বলে ছোঁয়া।
সাদি পরির মুখের সামনে খাবার নিতেই মুখ ফিরিয়ে নেয়।
“আর খাবো না।
সাদি ছোঁয়ার মুখের সামনে খাবার নেয়। ছোঁয়াও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
” শুয়ে পড়ো। আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।
সাদি পরিকে কোল থেকে নামিয়ে প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে করতে কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে। পরি সাদির ফোন নিয়ে গেমস খেলা শুরু করে।
“আমিও থাকবো না। চলে যাবো। আপির বিয়ের সময় একটা সুন্দর ছেলে খুঁজে প্রেম করবো। তারপর তার সাথে পালিয়ে যাবো। সে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। মারবে না।
ছোঁয়া একা একাই বলতে থাকে।
সাদি রুমে ঢুকে ছোঁয়ার কথা গুলো শুনতে পায়। কিছুই বলে না।
” তোমার ঔষধ।
ছোঁয়ার পাশে বসে বলে সাদি। ছোঁয়া কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“এই মেয়ে উঠবে না কি থাপ্পড় খাবে?
আবারও ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। হুরমুর করে উঠে বসে। আবারও কান্না চলে আসে।
সাদি ঔষধ ঢুকিয়ে দেয় মুখে। তারপর পানিও খাইয়ে দেয়।
পানির গ্লাসটা সাইডে রেখে পা টানটান করে বসে।
” শুয়ে পড়ো
কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে সেটা অপেন করতে করতে বলে সাদি।
ছোঁয়া বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়ে।
সিমি রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভালো করে চোখ মুখ মুছে নেয়। হিমুর সামনে ওভারে কান্না করাতে এখন এমন খারাপ লাগছে। নিজের দুর্বলতা কাউকে দেখাতে চায় না ও। কিন্তু হিমু ছেলেটাই এমন। কিছু বলার আগেই বুঝে যায়। বারো বছর যাবত এক সাথে আছে দুজন। জীবনের এমন কোনো খুটিনাটি ঘটনা নেই যা হিমুর সাথে শেয়ার করা হয় নি।
বাসায় ঢুকে সরাসরি সিফাতের রুমে চলে যায় সিমি। সিফাত উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো। খট করে দরজা খোলার আওয়াজে এক লাফে উঠে বসে। চোখ দুটো ফোলা ফোলা চুল গুলো এলোমেলো। কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে সিফাতকে।
সিমিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে সিফাত।
“ভেতরে এসো।
এলোমেলো বিছানাটা একটু ঠিক করার চেষ্টা করে সিফাত।
” আপনি বিয়ে করেছেন?
সিমি সিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
সিফাত চমকে ওঠে। বড়বড় চোখ করে তাকায় সিমির দিকে। হঠাৎ এই প্রশ্ন করার মানে বুঝতে পারছে না।
“নাহহহ
মাথা নিচু করে বলে সিফাত। সিমির মুখটা চকচক করে ওঠে।
” সিটি হাসপাতাল চিনেন?
প্রবল উত্তেজিত হয়ে সিফাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলে সিমি।
“হুমমম। সেখানকার প্রায় ডাক্তারই আমার চেনা।
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সিফাতের গালে একটা চর পড়ে। গালে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে তাকায় সিমির দিকে। সিমি রাগে থরথর করে কাঁপছে। চোখে পানি টলমল করছে।
” এতটা বাজে আপনি? এতোটা খারাপ? কেনো?
কেনো করলেন এমনটা? খুব হ্মতি করেছিলাম আপনার?
শান্ত গলায় কাঁদতে কাঁদতে বলে সিমি। সিফাত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“অনেক কিছু বলার ছিলো আপনাকে। অনেক অনেক কথা। যেদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন ” সিমি আমার মা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে না। আমাকে ভুলে যাও”
সেদিনই বুঝে গেছিলাম আপনি একটা কাপুরুষ।
লম্বা দম নেয় সিমি। চোখের পানি মুছে নেয়।
“আমি তো কাপুরুষ। তো তুমি তো খুব ভালো। এতো ভালো মানুষ কি করে নিজের সন্তানের কথা ভুলে অন্য ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়?
গর্জে উঠে বলে সিফাত। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলেছে। চোখ থেকে আগুন ঝড়ছে।
সিটির মাথা ঘুরে উঠে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টানে। নিজেকে কন্ট্রোল করে।
এটা ছোঁয়ার স্বামীর বাড়ি। এখানে কেনো সিনক্রিয়েট করলে তার দায় পড়বে ছোঁয়ার ঘাড়ে। সেটা সিমি চায় না।
” কোনো রকমের সিনক্রিয়েট ছাড়া আমি আমার মেয়েকে নিয়ে কাল চলে যাবো। আমি চাইছি না আমার মতো আপনার ফ্যামেলিও আপনাকে কাপুরুষ ভাবুক। আর এটাও চাইছি না আমার মেয়ে জানুক তার বাবা ঠিক কতটা নোংরা।
সিমি চলে যেতে নেয়।
“কিন্তু আমি চাইছি আমার আর তোমার মাঝে যা হয়েছে সবটা সবাই জানুক। তারপর তারাই ডিসাইড করবে তুমি
সিমি সিফাতের কথা শেষ করতে দেয় না।
হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় সিফাতকে।
” লাইফ আমার। তাই আমিই ডিসাইড করবো।
সিমি বেরিয়ে যায়। সিফাত বাঁকা হাসে।
ছোঁয়ার মাথা ব্যাথায় টিকতে পারছে না। এপাশ ওপাশ করছে আর কাঁদছে। এটাই ছোঁয়া স্বভাব। একটু ব্যাথা পেলে বা খারাপ লাগলেই কান্না শুরু করে দেয়।
ছোঁয়ার মোচরামুচরিতে সাদি বসে থাকতে পারছে না। একই বিছানায় এক জন ছটফট করলে অন্য জন কি শান্তিতে থাকতে পারে?
“কি হয়েছে?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ছোঁয়াকে।
ছোঁয়ার উওর দেয় না। এক হাত দিয়ে কপাল টিপতে থাকে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছোঁয়ার কপালে হাত রাখে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। চোখ মেলে তাকায় সাদির দিকে। সাদি এক মনে ল্যাপটপ দেখছে আর আরেক হাত দিয়ে ছোঁয়ার কপালে টিপে দিচ্ছে। এক রাশ ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় ছোঁয়ার মনে। মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলে। খুব ভালো লাগছে।
আরও একটু সাদির দিকে ঘেসে শয়। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। কিন্তু ছোঁয়ার বন্ধ চোখ দেখে কিছু বলে না।
“আমি না ক্রাশ খাইছি।
ছোঁয়া মিষ্টি হেসে চোখ বন্ধ রেখেই বলে।
” মাম্মা আমিও খাবো। কোথায় দাও।
পুরি ফোন ফেলে এক লাফে ছোঁয়ার কাছে এসে বলে। ছোঁয়া ধপ করে চোখ খুলে। সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“মা চেপে ধরো তোমার মাম্মাকে। ক্রাশ না দেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।
সাদি গালে হাত দিয়ে ল্যাপটপের স্কিনে চোখ রেখে বলে।
ছোঁয়া দাঁত কটমট করে তাকায় সাদির দিকে। বজ্জাত লোক। দিলো তো ফাঁসিয়ে।
” ও মাম্মা দাও না। একটুখানি খাবো। দাও না
পরি ছোঁয়ার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে।
ছোঁয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। পরির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“মাম্মা না দিলে আমি কেঁদে ফেলবো।
বলেই কান্না করে দেয় পরি।
” মা জোরে জোরে কাঁদো। তাই দেবে
সাদির উসকানিকে পরি আরও জোরে কেঁদে ওঠে।
চলবে
.