#অন্যরকম তুমি পর্ব ৩১
#তানিশা সুলতানা
গাড়ি থামতেই হুরমুরিয়ে নেমে যায় ছোঁয়া। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাদি চোয়াল শক্ত করে ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রভা নামতে নিলে সাদি ডাকে।
“ভাইয়া কিছু বলবেন?
” ওকে একা ছেড়ো না। সাথে সাথে থাকবে। ভুলভাল কিছু করলে আমাকে কল করবে কেমন?
সাদি প্রভার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
“ঠিক আছে।
প্রভাও নেমে যায়।
ছোঁয়া স্কুলের গেট ওবদি যেতেই একটা ছেলে হাতে লাল গোলাপ নিয়ে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটাকে এক পলক দেখেই ছোঁয়া চিনে ফেলে। এটা তো সেই ছেলে। যাকে কাল কথা শুনিয়েছিলো।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
ছেলেটা রীতিমতো ঘামছে। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করছে। একটু একটু হাত পাও কাঁপছে।
পরনে আকাশি কালার কলেজ ড্রেস কালো প্যান্ট আর সাদা জুতো। কালো একটা ব্যাগ কাঁধে। ক্লিন সেভ করে রাখা দাঁড়ি গুলো হালকা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ফর্সা ছেলেটা। বেশ লম্বা।
ছোঁয়া ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে শুকনো কাশি দেয়। ছেলেটা কেঁপে ওঠে।
” কিছু বলবেন ভাইয়া?
ছোঁয়া কিছুখন ঠোঁট চিপে দাঁড়িয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে।
“না মানে হ্যাঁ
রিনরিনিয়ে বলে ছেলেটা।
সাদি গাড়িতে বসে দেখছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাদি যদি খুব ভুল না করে তাহলে ছেলেটা প্রপোজ করার সাথে সাথেই ছোঁয়া এক্সেপ্ট করবে।
” যাবো না আমরা?
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে মেঘা।
“তোমার লেট হলে যেতে পারো।
সাদি সোজা সাপটা বলে দেয়৷ কাচুমাচু হয়ে যায় মেঘা। ভীষণ লজ্জা পায়।
” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
ছোঁয়া তাড়া দিয়ে বলে। ছেলেটা জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। তারপর বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে বা হাতে লম্বা চুল গুলো পেছনে ঠেলে ডান হাতে থাকা ফুলটা ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। সাদির গাড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে হাসি মুখে ফুল নেয়। ছেলেটা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। পেছনে থাকা ছেলেটার ফ্রেন্ডগুলো শিশ বাজায় আর হাত তালি দিতে থাকে।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। প্রভা যেনো এতখনে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। এতে কিউট করে কেউ প্রপোজ করে। ইচ্ছে করছে ভিডিও করে টিকটিক বানাতে। রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাবে।
প্রভা নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখে না। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভিডিও করতে থাকে।
এবার ছেলেটা নিজের একটা হাত এগিয়ে দেয় ছোঁয়ার দিকে।
“আই লাভ ইউ। আমার বেস্টফ্রেন্ড হবা?
তিন দিন হলো চিনি তোমায়। জানি তুমি আমায় পছন্দ করো না। করার কথাও না। কারণ তুমি আমায় চিনো না। আমি ইমন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের পড়ি। ওই কলেজটাতে।
তিন মাস তোমার বন্ধু হতে চাই। তিনমাস পরে আবারও প্রপোজ করবো। তখন গার্লফ্রেন্ড হবা। তারপর ঠিক চার বছর আবারও প্রপোজ করবো বিয়ের জন্য। তখন বিয়ে করে নেবো।
একদমে বলে ফেলে ইমন। আবারও ভেসে আসে কড়তালি আর শিশের শব্দ। ছোঁয়া মুচকি হেসে ইমনের হাত ধরতে যায়। সাথে সাথে কেউ একজন ছোঁয়ার হাত টেনে নেয়। সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে চমকে ওঠে ছোঁয়া। কেনোনা রক্তচক্ষে সাদি তাকিয়ে আছে।
প্রভা ভিডিও অফ করে এক দৌড়ে গেটের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ইমনের দিকে তাকায়।
” ভাইয়া প্লিজ ওকে কিছু বইলেন না। আমি আপনার বোনকে পছন্দ করি। ও করে না।
ইমন মাথা নিচু করে বলে। সাদি জোরে শ্বাস টানে।
ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ইমনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“ইটস ওকে। তোমার বয়সটাই এমন। কাউকে ভালো লাগবে। তার কথা ভাবতে ভালো লাগবে। প্রপোজ করবে প্রেম করবে। এটা কমন।
বাট তুমি যাকে প্রপোজ করেছো সে একটা পাগল। মাথায় গন্ডগোল আছে।
ছোঁয়া ফুঁসে ওঠে। গাল ফুলিয়ে সাদির দিকে কটমট চোখে তাকায়। ইমন সাদির কথা বোঝায় চেষ্টা করছে।
” ওকে তো সুস্থ মনে হচ্ছে?
আর ও যেমনই হোক আমি
ইমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই থামিয়ে দেয় সাদি।
“ও ম্যারিড। বর আছে ওর। তবুও কেমন তোমার থেকে ফুলটা নিলো। তাহলে কি ও পাগল নয়?
সাদি শান্ত গলায় বলে।
” ও ম্যারিড?
আশ্চর্য হয়ে বলে ইমন।
“হ্যাঁ। আর আমি ওর ভাইয়া নই। বর হই ওর। তো তুমি আমার সামনে ওকে প্রপোজ করছো তোমার ফ্রেন্ডরা সিটি বাজাচ্ছে। এটা আমার ভালো লাগলো না।
তুমি ওকে ডিস্টার্ব করলে বা কেউ ওকে ডিস্টার্ব করলে আমি বাধ্য হবো ওর পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে।
আশা করি বুঝেছো।
সবাই চুপচাপ সাদির কথা শুনছে। মেঘা গাড়িতে বসেই ওদের দেখছে। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে। ইমপটেন্ট মিটিং ফেলে এখানে নাটক করা হচ্ছে। মেঘার হাতে সবটা থাকলে চাকরি থেকে বের করে দিতো সাদিকে।
ছোঁয়া কটমট চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদি ছোঁয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ থেকে ঠুতনিতে নামিয়ে রাখা মাক্স টেনে নাক ওবদি উঠিয়ে দেয়। ছোঁয়া শুধু বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
” এখানে পড়ালেখা করতে এসেছো। রুপ দেখাতে না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি। তারপর ছোঁয়ার মাথায় চাটি মেরে চলে যায়। ছোঁয়া শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
সিমি পরিকে গোছল করানোর জন্য ডাকছে। পরি সিফাতের কাছে। দরজা বন্ধ করে কিছু একটা করছে দুজন। দুই বার এসে ডেকে গেছে সিমি।
“মা ডাকছে তো বাবা। যাবো।
পরি গাল ফুলিয়ে বলে। সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়।
” মা বলছিলাম।
সিফাত আমতা আমতা করে বলে।
“বলো।
পরি সিফাতের চুলে হাত বুলিয়ে বলে।
” তোমার মাকে গিয়ে বলো বাবাকে টাইট একটা হাগ করতে।
“কেনো?
” বলো না মা। তোমাকে এতগুলো চকলেট কিনে দেবো।
“মা বকা দেবে।
” বকা দিলে কান্না করবে। আর আমাকে হাগ না করা পর্যন্ত কান্না থামাবে না। কেমন?
হেসে বলে সিফাত।
“এটা করলে তুমি হাসবে তো?
সিফাতের দুই গালে হাত দিয়ে বলে পরি।
সিফাত মুচকি হেসে পরির কপালে চুমু খায়।
” সব সময় হাসবো। সারাজীবন হাসবো।
“আমি আর তুমি মিলে মা কে আটকে রাখবো। কোথাও যেতে দেবো না।
” হু মা। না থাকলে চাইলে হাত পা বেঁধে রাখবো।
পরি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
চলবে
.