#অন্যরকম তুমি .
#পর্ব ৩২
#তানিশা সুলতানা
“মা একটা কথা বলি?
সিমি পরির মাথায় হালকা সরিষার তৈল ছোঁয়াচ্ছিলো। তখন পরি বলে।
সিমি এক পলক তাকায় পরির মুখের দিকে। ঠোঁট উল্টে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে। কোঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বেশ কিউট লাগছে। সিমি ভেবেছিলো বেশ অনেকখন পরির সামনে রেগে থাকবে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।
সিমি মুচকি হেসে পরির কপলে চুমু খায়।
” বলো
“একটা টাইট হাগ দেবে?
” তোমাকে?
ভ্রু কুচকে বলে সিমি।
“নাহহহ। বাবাকে।
এক গাল হেসে বলে পরি। সিমির হাসি মুখটা চুপসে যায়। যা দেখে পরি ভয় পেয়ে যায়। ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলে। সিমি ঘাবড়ে যায়।
” মা কাঁদছো কেনো? বকি নি তো তোমায়?
বিচলিত হয়ে বলে সিমি।
“বাবা টাইট হাগ না দিলে আমি কান্না থামাবো না।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে পরি।
সিমি দাঁত কটমট করে।
” ড্রামাবাজ বাবার ড্রামাবাজ মেয়ে।
ডাক তোর বাবাকে। আজকে তার এক দিন কি আমার যতদিন লাগে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলপ সিমি।
পরির কান্না শেষ। এক গাল হেসে। এক দৌড়ে চলে যায় বাবাকে ডাকতে। সিমি পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মিনিট পেরনের আগেই সিফাতকে নিয়ে হাজির। সিফাত লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।
সিমি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।
“পরি যা করার তাড়াতাড়ি করতে বলো। আমার আবার কাজ আছে।
ভাব দেখিয়ে শার্টের কলার পেছনে ঢেলে বলে সিফাত।
সিমির গা জ্বলে যায়। এই লোকটাকে দু’চোখে সজ্জ হয় না। ইসস কবে যে এই লোকটার মুখ দেখার হস্ত থেকে রহ্মা পাবে।
” মা তাড়াতাড়ি হাগ দাগ। বাবা আমার জন্য চকলেট আনতে যাবে।
পরি সামনে পরে থাকা চুল গুলো ঝাড়া দিয়ে পেছনে নিয়ে সিফাতের মতো ভাব দেখিয়ে বলে। সিমির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
চেহারা বাবার মতো হয়ে স্বভাবটা মায়ের মতো হলো না কেনো? এটাই এখন অফসোস হচ্ছে সিমি।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সিফাতের দিকে। সিফাতের ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। সিমি সিফাতের হাসি দেখে তাচ্ছিল্য হাসে।
পরি খুশিতে লাফাচ্ছে। পরির খুশি দেখে সিমির প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে সিফাতকে। সিফাত চোখ বন্ধ করে ফেলে। সিফাতের বুকে নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয় সিমি।
পরি দৌড়ে এসে দুজনের পা জড়িয়ে ধরে। সিফাত আর সিমি নিচু হয়ে বসে। পরি আর সিমিকে জড়িয়ে ধরে সিফাত। পরি দুজনের কপালে চুমু খায়।
“এটা শুধুমাত্র আমার মেয়ের ইচ্ছে। এতে আমার মনের কোনো সায় না।
সিমি সিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে। সিফাতের ঠোঁট থেকো হাসি গায়েব হয়ে যায়।
” মেয়ের খুশির জন্যই না হয় এই পাপীকে হ্মমা করে দাও
করুন গলায় বলে সিফাত।
“নাইস জোকস
সিমি তাচ্ছিল্য হেসে বলে।
” পরি মা এবার হয়েছে? চলো গোছল করবে।
সিমি সিফাতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে।
“মা বাবাকে গোছল করিয়ে দেবে না?
পরির কথা শুনে সিফাত বিষম খায়। সিমি পরির গালে আলতো করে হাত রাখে।
“শুধু গোছল না তুমি চাইলে তোমার বাবাকে পটি করিয়েও দেবো।
সিফাত বড় বড় চোখ করে তাকায় সিমির দিকে।
” আমি আসছি
বলেই সিফাত চলে যায়। সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পরিকে গোছল করাতে নিয়ে যায়।
প্রভা ছোঁয়ার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। সাদি ওর বর এটা এতদিন কেনো বললো না?
ছোঁয়া একটু পর পর হাই তুলছে। বাংলা স্যার ক্লাস নিচ্ছে। ছোঁয়া আর প্রভা সবার পেছনের ছিটে বসেছে। সামনে বসে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতে বোরিং লাগে।
” সাদি ভাইয়া বাড়িতে তোকে কি বলে ডাকে রে?
প্রভা ছোঁয়ার এক হাত জড়িয়ে বলে।
“ইস্টুপিট ইডিয়েট গাঁধা আরও আছে।
” এগুলো বলে কেনো ডাকে?
“অতিরিক্ত ভালোবাসে তো তাই।
” ওহহহ
তাহলে বিয়ের পর আমিও আমার বরকে বলবো এসব বলে ডাকতে।
লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে প্রভা।
“আচ্ছা বলিস
ছোঁয়া প্রভার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। এতো গাঁধা কেনো মেয়েটা?
ছুটির পর স্কুলের গেটের সামনে যেতেই দেখতে পায় সাদি দাঁড়িয়ে আছে। আজকে শুধু সাদির সাথে মেঘা না ইভাও আছে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়৷ দুই দুইটা মেয়ে নিয়ে ঘুরে ভাবা যায়?
ছোঁয়া কাছাকাছি আসতেই ইভা এক দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে।
” কেমন আছো কিউট সুইট ভাবি।
ছোঁয়ার গাল টেনে দিয়ে বলে ইভা।
“এই তো ভালো। আপনি?
ছোঁয়া একটু হেসে বলে।
” আমিও ভালো।
ছোঁয়া আর ইভা সাদির কাছে এসে দাঁড়ায়। মেঘা মুখ বাঁকায়। ছোঁয়াকে যে ওর পছন্দ না এটা ছোঁয়া বেশ বুঝতে পারে।
“ভাইয়া আপনার ফুল।
বয়স আট নয় হবে। একটা মেয়ে সাদির দিকে বেলি ফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বলে। সাদি বিনা বাক্যে ফুলের মালা নেয়। আর মেয়েটা চলে যায়।
মেয়েটাকে দেখে তো ফুল বিক্রেতা মনে হয় না। যথেষ্ট ভদ্র ফ্যামেলির মেয়ে বলেই মনে হয়। আর সাদি টাকাও দিলো না।
কে এই মেয়ে? প্রতিদিন কি এই মেয়েটাই ফুল দেয় সাদিকে? কেনো দেয়? ফুল নিয়ে সাদি হাসলো না কেনো?
ছোঁয়া সাদির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে ভাবছে।
” এই ছোঁয়া ভাইয়া এখন তোকে ফুলের মালা দিয়ে প্রপোজ করবে। হাউ রোমান্টিক।
প্রভা ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। ছোঁয়া চোখ পাকিয়ে তাকায় প্রভার দিকে আর প্রভা চুপসে যায়।
“সাদি মেয়েটা এখনো তোকে ফুল দেয়?
ইভা অবাক হয়ে বলে
” হুমম মাঝেমধ্যে দেয়।
“বেপারটা তো খুব ইন্টারেস্টিং।
” আমার লেট হচ্ছে।
সাদি গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। মেঘা গিয়ে সাদির পাশে বসতে নেয়।
“মেঘা তুমি পেছনে বসো।
মেঘা সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে গিয়ে বসে।
প্রভা আর ইভাও পেছনে বসে। ছোঁয়া এখনো দাঁড়িয়ে। মনের মধ্যে ফুলের বিষয়টা ঘুরপাক খাচ্ছে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়।
” পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করার কথা ভাবছো নিশ্চয়?
সাদি বলে ওঠে। ছোঁয়া চমকে সাদির দিকে তাকায়।
মুখ বাঁকিয়ে সাদির পাশে বসে পড়ে।
ইভা আর প্রভা গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে। ছোঁয়া আড়চোখে সাদির দিকে তাকাচ্ছে।
“ফুল নিয়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন থাকলে সেটা এখনই ঝেড়ে ফেলো। এটা আমার পারসোনাল। তবে এটা শিওর থাকো এই ফুলের মালা তোমার আর আমার সম্পর্কটাকে কখনোই ফাটল ধরাবে না। এটা কোনো সিরিয়াস বিষয় না।
আশা করি এটা কে ইসু করে আবার ডিভোর্স পেপার বানাতে যাবে।
মন দিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে সাদি৷ ছোঁয়া ঠোঁট টিপে হাসে। সাদি যে ডিভোর্সে ভয় পাচ্ছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।
” ভাবছি আমিও প্রতিদিন ওই ছেলেটার থেকে ফুল নেবো।
ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাদি গাড়ি ব্রেক করে।
সবাই ভ্রু কুচকে তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখ বন্ধ করে মাথা ঝুঁকে বসে আছে।
“সাদি ঠিক আছিস তুই?
ইভা সাদির গায়ে হাত দিয়ে বলে। রীতিমতো ঘামছে সাদি। নীল শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি হয়ে গেলো?
ছোঁয়া ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে?
সাদি কথা বলছে না। শুধু জোরে জোরে শ্বাস টানছে।
” এই সাদি?
খারাপ লাগছে?
ইভা সাদির কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
ছোঁয়া এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। টেনে হিঁচড়ে হিজাবটা খুলে সাদি মুখ মুছিয়ে দেয়।
“ককি হয়েছে আপনার?
কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না ছোঁয়া।
সাদি চোখ বন্ধ করে বুক ভরো শ্বাস টেনে ঘাড় বাঁকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” আমি ঠিক আছি।
ছোট করে বলে সাদি। ইভা বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। মেঘা আর প্রভাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু ছোঁয়া কেঁদেই যাচ্ছে। উনি সুস্থ থাকলে এভাবে কেনো কথা বললো?
চলবে……..