#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৪৮
#তানিশা সুলতানা
“মারছো কেনো?
সাদি ছোঁয়ার দুই হাত মুঠো করে ধরে ব্যাথাতুল কন্ঠে বলে৷ ছোঁয়া রাগে ফুসফুস করছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। এই মুহুর্তে সাদিকে তাজা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার।
সাদি হাত ধরে থামাতেই রাগটা আরও বেরে গেছে।
” হাত ছাড়ুন।
গম্ভীর গলায় বলে। সাদি হাত ছেড়ে দেয়৷ ছোঁয়া চিমটি কেটে দেয় সাদির হাতে। ব্যাথায় “আহহহ করে ওঠে সাদি।
ছোঁয়া সাদির থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
এতখনে সবটা ক্লিয়ার ছোঁয়ার কাছে। বাইরে দারোয়ান কেনো ছিলো এটাও পানির মতো পরিষ্কার। এটা অফিসে এখানে এসব ড্রেস এলাও না। এটা জানে ছোঁয়া। বস দেখলে চাকরি খেয়ে নেবে।তাই দারোয়ার দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। যাতে দারোয়ান কাউকে ভেতরে ঢুকতে না দেয়। আর মেঘা আরামসে সাদিকে পটাতে পারে।
সাদিটাই কি বুদ্ধুরাম বসকে কম্পেলেন না করে আরামসে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য যাবে নাই বা কেনো? ফ্রীতে শরীর দেখতে পেলো। কত মজা পেলো। আজকে ছোঁয়া জন্মের ঠ্যাং দেখিয়ে দেবে।
ছোঁয়া এক ঝটকায় সাদির থেকে দুরে সরে আসে। ঘাবড়ে যায় সাদি। একটু নরে চরে বসে। ছোঁয়া সাদির সামনা সামনি এসে দাঁড়ায়।
” মেঘার ড্রেসের দাম কত?
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। হাত পা কাঁপছে।
“বলেন?
সাদিকে চুপ থাকতে দেখে বলে ছোঁয়া।
” ককত আর হবে? তিন চার হাজার
সাদি ভয়ে ভয়ে বলে। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
“ওহহহহ হো দামটাও জানেন?
বাই এনি চান্স ড্রেসটা আপনি কিনে দেন নি তো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়া। সাদি মাথায় হাত দেয়৷ ভয়ে ঢোক গিলে। এই মুহুর্তে এই মেয়েটাকে সাংঘাতিক মনে হচ্ছে না, চরম সাংঘাতিক মনে হচ্ছে। কে বলবে এর পনেরো বছর বয়স? একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক স্ত্রী মনে হচ্ছে।
“আপনি কিনে দিছেন। এটা হান্ডের্ট পারসেন্ট শিওর আমি। ফ্রী তে ঠ্যাং দেখতে পারলেন। দারুণ ব্যাপার। আরও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে?
কোনো বেপার না। দেখাবো আপনাকে।
একদমে বলে ছোঁয়া। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ছোঁয়াকে টেনে এনে পাশের চেয়ারে বসায়। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া সাদির দিকে কটমট চাহনিতে এক পলক তাকিয়ে
পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঠাস করে ফেলে দেয়। চোখের পলকে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় কাঁচের গ্লাসটা। সাদি হতদম্ভ হয়ে যায়। সামান্য কল রিসিভ না করার জন্য এতকিছু হবে আগে জানলে কখনোই এমনটা করতো না।
ছোঁয়া দুই হাতে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুখন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাগ কমানোর চেষ্টা যাকে বলে।
অতঃপর চুল ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। সাদি দেখছে শুধু ছোঁয়াকে।
“চলুন
ছোঁয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
” কোথায় যাবো?
সাদি বলে।
“গেলেই দেখতে পাবেন।
ছোঁয়া সাদির হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে যায়। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যেতে থাকে।
রাস্তায় বেরিয়ে রিকশা ডাকে ছোঁয়া।
” গাড়ি নিয়ে যাই?
সাদি আমতা আমতা করে বলে। ছোঁয়া কঠিন চাহনিতে তাকায়। চুপ হয়ে যায় সাদি।
রিকশা আসতেই ছোঁয়া উঠি পড়ে। সাদিও ছোঁয়ার পেছন পেছন উঠে। নিউ মার্কেটে যেতে বলে ছোঁয়া রিকশা মামাকে।
সাদি বোঝার চেষ্টা করছে ওখানে যাবে কেনো?
“আমি যে বাচ্চা মানুষ। পড়ে যেতে পারি। সেদিকে খেয়াল নেই আপনার? না কি সব খেয়াল ওই মেঘা ডাইনির দিকে।
রাস্তার পাশে দোকান পাটের দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে ছোঁয়া। সাদি চমকে ওঠে। এখন ঠিক কি করা উচিৎ বা কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছে না। যদি আবার উল্টোটা বুঝে উল্টো রিয়াকশন দেয়। তাহলে মুশকিল।
” ওই সাদুর বাচ্চা
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে। সাদি ছোঁয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে।
ছোঁয়া কিছু না বলে চুপ থাকে। সাদি উসখুস করছে ছোঁয়াকে মানানোর জন্য। কিন্তু কি থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না
“এত অভিমানী কেনো তুমি? বোঝো না কেনো? সাদমান চৌধুরী নজর এই পিচ্চি ইডিয়েটটার মাঝেই আটকে আছে। এখন কেউ ঠ্যাং বের করে সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করলেও সেদিকে চোখ যায় না।
সাদি ছোঁয়ার আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল গলিয়ে দিয়ে বলে।
ছোঁয়া মুখ বাঁ কায়।
“চেনা আছে আপনাকে। মেঘার সাথে ছিলেন বলে আমার ফোনটাও রিসিভ করছিলেন না।
বলতে বলতে গলা ধরে আসে ছোঁয়ার। সাদি ছোঁয়ার কাঁধ জড়িয়ে একটু চেপে বসে।
ছোঁয়া সাদির বুকের ওপর মাথাটা রাখে।
” আসলে আমি
সাদিকে বলতে না দিয়ে সাদির ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখে ছোঁয়া। বা হাতে উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয় গড়ানোর আগেই।
“কোনো এক্সকিউজ চাই নি আমি।
” কেউ ব্যস্ত না। কথা বলার জন্য ইচ্ছে দরকার হয়। ইচ্ছে নেই এটাকে ব্যস্ত ছিলাম বানিয়ে দিবেন না প্লিজ।”
সাদি আর বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পায় না। খুব অন্যায় করে ফেলেছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।
“ভাই এটা বললেন না।
সোহেল চৌ শফিকুলের হাত অরে বলে। শফিকুল হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” আপনার মেয়ের সাথে এমনটা হলে কি করতেন আপনি? পারতেন সবটা মেনে নিতে?
পারতেন না। আমিও পারছি না। আমি গরিব হতে পারি কিন্তু কখনো মেয়েদের এতটুকু কষ্ট পেতে দেয় নি।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মেয়ে দুটোকে মানুষ করেছি। সব চাওয়া পূরণ করেছি। কিন্তু হয়ত কোনো পাপ করেছি বা ওদের আপন হতে পারি নি৷ তাই আমার সিমি মা নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নিয়েছিলো।
ওরা আমাকে ফেলে দিতেই পারে। কিন্তু আমি তো বাবা। আমি পারবো না।
সিমির বুক কেঁপে ওঠে। বাবা যে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। চোখোর পানি বাঁধ মানছে না সিমির। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। শফিকুলের চোখের কোনেও পানি।
সোহেল চৌধুরী আর কোনো কথা বলার সাহস পায় না। বলবেও বা কি?
শফিকুল পরির গায়ের জামা খুলে দিয়ে পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। নাজমা বেগমও স্বামীর পেছন পেছন চলে যায়। সিমি সাবিনা বেগমের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাবা মায়ের পেছনে চলে যায়।
এই বাড়ির এক টুকরো সুতোও তিনি নেবেন না। ছোঁয়া আসলেও ছোঁয়াকে নিয়ে যাবে। বড় এমন ছোট ভাই নিশ্চয় এমনি হবে। একই রক্ত বইছে দুজনের শরীরে। দুই মেয়েরই একই অবস্থা তিনি হতে দেবেন না ছোঁয়া অনেকটা ছোট। বসয় বাড়ার সাথে সাথে সবটা ভুলে যাবে। নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে যাবে।
সারাজীবন সুখে থাকার জন্য এইটুকু ত্যাগ করায় যায়।
সবাই হতাশ হয়ে বসে পড়ে। কি হয়ে গেলো এটা? ছোঁয়া কেও নিয়ে যাবে? কিভাবে কাটাবে ওনাকে?
নিউমার্কেটে গিয়ে শর্ট ফ্রক কিনে ছোঁয়া। সাদি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। কি আর বলবে?
কিছু বললেই তো ফুস করে ফনা তুলে উঠবে। কামড়ে টামড়ে দিলে আবার ঝামেলা। মানুষকে মুখ দেখাতে পারবে না।
আরেক দিকে চিন্তা হচ্ছে। রাতে তো এক সাথেই থাকতে হবে। তখন যদি এই রকম হট হট গ্রীষ্মকাল সেজে সামনে আসে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শুকনো ঢোক গিলে সাদি। গলা শুকিয়ে আসছে। তুফান যে আসতে চলেছে সেটা আর জানা বাকি নেই।
কিন্তু এই তুফান থেকে রেহাই পাবে কি করে?
“ড্রেস টার দাম সত্যিই তিন হাজার নিলো। তারমানে আবার ধারনা ঠিক।
সাদির পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কটমট করে ফিসফিসিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি দুই হাতে মাথার চুল খামচে ধরে। বলার মতো কিছুই নেই। যা বলবে সেটারই উল্টো মিনিং খুঁজে বের করবে।
” ম্যাম টাকা।
দোকানদার প্যাকেট করে এগিয়ে দিয়ে বলে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে। সাদি পকেটে হাত দিয়ে দেখে ক্যাশ নেই। এখন কি করবে সাদি? ছোঁয়া এবার নিশ্চয় বলবে মেঘার সাথে ঘুরতে গিয়ে টাকা শেষ করছেন?
আল্লাহ বাঁচাও
সাদি মনে মনে বলে চোরের মতো তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“বিশ্বাস কর। আমি মেঘাকে নিয়ে ঘুরতে যায় নি।
সাদি দুই কানে হাত দিয়ে বলে।
চলবে…।।