#অন্যরকম তুমি
#তানিশা সুলতানা
#পর্ব ৪৯
সিফাত বাড়িতে এসেছিলো এক বুক আশা নিয়ে। ভেবেছিলো সব কিছু মিটমাট হয়ে গেছে। বাবা মা আলাদা করবে না ওদের এটাই বিশ্বাস ছিলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানসম্মানটাই আগে। কিন্তু বোকা সিফাত এক বারও ভাবলো না মধ্যবিত্তদের আত্মসম্মানও বেশি।
হাতে এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ। কখনো সিমিকে ফুল দেওয়া হয় নি। সিমিকে নিয়ে কখনো ঘুরতে যাওয়া হয় নি। ওই তো কলেজের মাঠ, শিশুপার্ক আর বেড রুম এই তো।
কখনো মেয়েটার অভিমান শোনা হয় নি। কখনো ভালোবেসে খোঁপায় বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে দেওয়া হয় নি। মেয়েটা একা একা রান্না করেছে কখনো ঘুম ছেড়ে উঠে মেয়েটাকে সাহায্য করে নি।
মেয়েটার ঘামে ভেজা মুখটা দেখা হয় নি।
জীবনটা সুন্দর। কিন্তু সেটা উপভোগ করতে জানতে হয়। জীবনকে তুমি যেভাবে সাজাবে জীবনটা ঠিক সেভাবেই রঙিন হবে।
সাদি আর ছোঁয়াকে দেখে খুব ভালো লাগে সিফাতের। কতো বুঝে দুজন দুজনকে। কত সুন্দর জীবন ওদের। সিফাত চাইলে তো ওর জীবনটা ওদের থেকেও বেশি সুন্দর হতো।
সিমির উঁচু পেটটা উপভোগ করতে পারতো সিফাত। সিমি যখন উঁচু পেটটা ধরে একটু একটু করে হাঁটতো তখন তো সিফাত নিজের হাতটা এগিয়ে দিতে পারতো।
হাত ধরে খানিকটা পথ এগিয়ে দিতে পারতো।
কিন্তু তা না করে মাঝ পথে মেয়েটার হাত ছেড়ে দিয়েছে। শূন্যে ভাসিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা। এখন সময় এসেছে সব ভুল সুধরে নেওয়ার। এক ফোঁটা পানি পড়তে দেবে না সিমির চোখ থেকে। বাকিটা জীবন বুকের সাথে আগলে রাখবে।
সিফাত হাসিমাখা মুখ নিয়ে দরজার কলিং বেল বাজায়। হাসফাস করছে সিফাত। দরজা খুলতে লেট কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। অথচ অন্য দিন তিন চার বার কলিং বেল বাজার পরেও দরজা না খুললে সিফাতের মনে হতো হয়ত সবাই ব্যস্ত।
দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজাতে যেতেই থমথমে মুখে দরজা খুলে দেয় তনু। তনুর চোখ মুখ ফুলে গেছে। এখনো চোখের পাঁপড়ি গুলো ভিজে জাবুথাবু হয়ে আছে।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠে সিফাতের। খুব খারাপ কিছু হয়েছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।
তনু সিফাতের হাতের দিকে তাকায়। হাতে কাঠ গোলাপ দেখে বুকটা হু হু করে ওঠে তনুর। ভাই যে সিমির জন্য এনেছে এটা জানা তনুর।
“সব শেষ হয়ে গেছে দাভাই
হু হু কেঁদে সিফাতের বুকের ওপর মাথা রাখে তনু।
সিফাতের হাত থেকে ফুল গুলো পড়ে যায়। দুই হাতে তনুকে আগলে নেয়।
” পরিকে আর কখনো দেবে না ওরা। তুই বাঁচবি কিভাবে দাভাই।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তনু। সিফাতের চোখেও পানি টলমল করছে।
“পরির জামাটাও খুলে রেখে গেছে। ছোট ভাবিকেও নিয়ে যাবে বলেছে।
সিফাত বুক থেকে তনুর মাথাটা তুলে। দুই হাতে চোখের পানি মুছে নেয়। তনু ফুঁপিয়েই যাচ্ছে।
” কাঁদিস না বোন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সিফাত বা হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
রুমে গিয়ে ধাপ করে দরজা আটলে দরজায় ঠেস দিয়ে বসে পড়ে।
তারপর হু হু করে কেঁদে ওঠে।
“এটা কি হয়ো গেলো?
সাদি ছোঁয়াকে নিয়ে পার্কে এসেছে। কেনো নিয়ে এসেছে ছোঁয়া জানে না। জানতেও চায় না। এউ মুহুর্তে ভীষণ রেগে আছে ছোঁয়া। সাদি কি করে ড্রেসের দাম জানলো? আবার বলে কি না “আমি মেঘাকে নিয়ে ঘুরতে যায় নি”
বেপারটা এমন হলো “ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা নি”
ছোঁয়ার তো মাথাতেই ছিলো এই কথা। ছোঁয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনোই সাদির সাথে কথা বলবে না। করুক অন্য মেয়েদের সাথে নিকনিক। তাতে ছোঁয়ার কি?
হুহহহহহ ছোঁয়া পেছনে ঘোরার ছেলেও অভাব নেই।
কড়ই গাছের নিয়ে ইট সিমেন্টের ব্রেঞ্চে বসে আছে ছোঁয়া। তার পাশেই সাদি বসেছে। ছোঁয়ার হাতে সেই ড্রেসের প্যাকেট। সাদি ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলে বিল দিয়েছে। এ নিয়ে ছোঁয়া একটা কথাও বলে নি। আর বলবেও না।
“ওয়েদারটা দারুণ বলো?
সাদি ছোঁয়ার সাথে একটু ঘেসে বসে বলে। ছোঁয়া কিছুই বলে না। এক মনে ঘাস ছিঁড়তে থাকে।
“একটা ঘটনা শুনবে? বেলি ফুলের মালা আর ওই ওড়নার ঘটনা?
সাদির কথায় চট করে ছোঁয়া তাকায় সাদির দিকে। সাদি মুচকি হেসে ছোঁয়ার হাত জড়িয়ে ধরে।
” আজকে আমার জীবনের স্পেশাল দিন। অনেক সারপ্রাইজ আছে তোমার জন।
ছোঁয়া মন দিয়ে শুনছে। কিন্তু কিছু বলে না।
“তোমার বোনদের সাথে একটা মেয়ে পড়তো।নাম মিথি। দারুণ চঞ্চল আর হাসিখুশি ছিলো মেয়েটা। আমাকে খুব ভালোবাসতো। খুব মানে খুব। ভীষণ পাগলামি ছিলো মেয়েটার মধ্যে।
জানো প্রতিদিন সবার আগে ক্লাসে এসে টেবিলের ওপর বেলি ফুলের মালা রেখে যেতো।
প্রথম প্রথন আমি ফেলে দিতাম। আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করলো বেলি ফুলকে।
আমি আগে থেকেই জানতাম মালাটা মিথি রাখে। মিথিও জানে যে আমি জানি।
আস্তে আস্তে বেপারটা পুরো কলেজ ছড়িয়ে গেলো। কানাঘুষা শুরু হলো। কিন্তু ফুলের মালা রাখতে ভুলতো না মেয়েটা।
তবে কখনো আমার সামনে এসে কথা বলে নি। আমিও বলার প্রয়োজন মনে করি নি।
তারপর একদিন মেয়েটা খুব অস্বাভাবিক একটা কাজ করে বসলো। ভরা কলেজের মাঠে প্রপোজ করে দিলো আমায়। আর আমি সেদিনই জানতে পেরেছিলাম আমার ভাইয়ের কাহিনি। ভীষণ রেগে ছিলাম।
সেই রাগ আর মিথি প্রপোজ করা দুটো রাগ মিশিয়ে পর পর দুটো চর বসিয়ে দেই মিথির গালে।
মেয়েটা গালে হাত দিয়ে লাল লাল চোখ জোড়া দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিলো ” আর কখনো আসবো না আপনার সামনে”
থামে সাদি। ছোঁয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদির দিকে। সাদির চোখে পানি। কাঁদছে সাদি? ওই মেয়েটার জন্য?
ছোঁয়ার হাতটা আরও একটু শক্ত করে মুঠো করে ধরে সাদি।
“ভালো লাগা ভালোবাসাটা ভেতর থেকে আসে। চাইলে জোর করে আমি ভালো লাগাতে পারি না। মিথিকে আমার ভালো লাগতো এটা আমি অস্বীকার করবো না। কিন্তু ভালোবাসতে পারি নি।
“এখন কোথায় মিথি?
ছোঁয়া ধরে আসা গলায় বলে। সাদি চোখ বন্ধ করে নেয়।
” নেই
অস্পষ্ট স্বরে বলে সাদি। চমকে ওঠে ছোঁয়া।
“নেই মানে?
বিচলিত হয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নেয়।
” অন্য এক সময় বলবো। আজকে আমার আর তোমার দিন। চাইছি না মুড অফ করতে।
সাদি মুচকি হেসে বলে। ছোঁয়া আর কিছুই বলে না। চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদির ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ইভার কল।
“কতদূর?
সাদি রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করে।
” ভাইরে ভাই। এত এত সাজানো যায়? বাই দ্যা ওয়ে বাসরঘরও সাজবো না কি?
রোমাঞ্চ টোমাঞ্চ করবি না কি? অবশ্য তা আগেই করে নিয়েছিস।
“সাট আপ ইভা। আমাদের এখনো বাসর হয় নি।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
” বলিস কি? তুই আমিষ হস নি?
ইভা অবাক হয়ে বলে।
“রাখ তুই। আসছি আমরা।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। প্রচন্ড তারাহুরো নিয়ে লিখেছি।