#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৫০
#তানিশা সুলতানা
পরি বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে দিছে। কিছুতেই থাকবে না এখানে। সিমি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে পরির কান্না দেখেও কিন্তু বলছে না। যেনো ও পরির কান্না শুনতেই পাচ্ছে না। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে পরির। এখন আর কান্না আসতেছে না। শুধু ফুঁপিয়েই যাচ্ছে।
একটু কাঁদলেই পরির জ্বর চলে আসে। আর আজ সেখানে অনেকখন যাবত কান্না করেই যাচ্ছে।
অবশেষে সিমির ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা চার্জে বসানো ছিলো। রিংটোন পরির কানে আসতেই পরির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তারাহুরো করে ফোনটা রিসিভ করে।
“বাবা আমাকে নিয়ে যাও
ফুঁপিয়ে বলে ওঠে পরি। সিফাতের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। মেয়ের কন্ঠ শুনেই বুঝে গেছে মেয়েটা অনেকখন যাবত কান্না করছে।
“কান্না কেনো করছো মামনি?
শান্ত গলায় বলে সিফাত।
” তো কাঁদবো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না।
চেঁচিয়ে বলে ওঠে পরি। সিমি হকচকিয়ে উঠে বসে। পরির কানে ফোন দেখে বুঝতে বাকি নেই পরি সিফাতের সাথে কথা বলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয় সিমি।
“মা আস্তে কথা বলো।
সিফাত বলে
“মা কে কল করছে?
সিমি জিজ্ঞেস করে।
পরি কান্না ভেজা চোখে তাকায় সিমির দিকে। সিমি পরির চোখের পানি মুছে দেয় আলতো করে। তারপর ঘাড় ওবদি পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে একটু ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
” বাবা কল দিছে।
পরি বলে।
সিমি পরির হাত থেকে ফোনটা নেয়। তারপর পরিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
“হেলো
চোখ দুটো বন্ধ করে বলে সিমি।
” পরি কাঁদছে কেনো?
শক্ত গলায় বলে সিফাত।
“কাঁদবে না? বশ করে নিয়েছেন তো।
সিমি তাচ্ছিল্য হেসে বলে।
সিফাত মুচকি হাসে।
” তোমাকে কেনো বশ করতে পারছি না বল তো?
“আর কখনো কল করবেন না আপনি।
সিমি চোয়াল শক্ত করে বলে।
” এত দিন তো কল করি নি। এখন কেনো করি?
কারণ আমার মেয়ে তোমার কাছে। আবারও আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও আমি কল করবো না।
সিফাতের কথা শুনে মনটা ভেঙে চুরে যায় সিমির। সত্যিই সিফাতের মনে একটুও ভালোবাসা নেই সিমির জন্য। থাকলে এমনটা বলতো না। অথচ সিমি এতখন কত কিছুই না ভেবেছে।
নিজের ভাবনায় নিজেরই রাগ হয় সিমির।
“রেগে যাচ্ছেন কেনো ম্যাডাম? এখনো তো রেগে যাওয়ার মতো কিছুই বলি নি। আমার মেয়েকে ফেরত চাই আমার।
চোয়াল শক্ত করে বলে সিফাত।
” মেয়ে আপনার একার না?
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে। সিফাত খিলখিল করো হেসে ওঠে। চমকে যায় সিমি। পাগলের মতো হাসছে কেনো লোকটা?
“তো মেয়ে নিয়ে চলে এসো।
হাসি থামিয়ে বলে সিফাত।
” ইডিয়েট
দাঁত কটমট করে বলে সিমি।
“ডিভোর্স কিন্তু এখনো আমাদের হয় নি।
সিফাত খুব শীতল গলায় বলে। চমকে ওঠে সিমি। কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে সিফাত কল কেটে দেয়।
বাড়ির ভেতরে পা রাখতেই চমকে ওঠে ছোঁয়া। পুরো বাড়িটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সাদিটাও পেছন থেকে উধাও। কোথায় গেলো?
একটু একটু ভয় করছে ছোঁয়ার। রাত প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই হয়ত বারোটা বেজেও গেছে৷ এত সময় বাড়ির সামনে বাগানে ছোঁয়াকে নিয়ে বসে ছিলো সাদি। ছোঁয়াও কারণ জিজ্ঞেস করে নি।
তারপর হঠাৎ ঘড়ি দেখে উঠে দাঁড়ায় আর ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে চলো বলেই সরাসরি রুমে নিয়ে আসে।
আর এখন তার খবরই নেই। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে।
” সাদু আপনি কই গেলেন?
কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকে ছোঁয়া। কিন্তু কোনো শব্দ নেই। অন্ধকারে পা ও বাড়াতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানছে ছোঁয়া।
হঠাৎ লাইট জ্বলে ওঠে। হকচকিয়ে যায় ছোঁয়া। বুকে থু থু দিয়ে রুমে দিকে তাকায়৷ পুরো রুমটা বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো। আর ছোঁয়ার ঠিক সামনে সুন্দর একটা কেক। অবাক হয়ে যায় ছোঁয়া। এসব কিসের জন্য বুঝতে পারছে না।
শুধু চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে ছোঁয়া। প্রতিটি বেলুনে Happy Birthday Shoya লিখা। দুই গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
“happy birthday কলিজা।
সাদি হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে। ছোঁয়া ফুল গুলো হাতে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদিও দুই হাতে আগলে নেয় ছোঁয়া।
” থ্যাংক ইউ সো মাচ
ছোঁয়া খুশি হয়ে বলে।
“আমরা আমরাই তো।
সাদি ছোঁয়াকে ছাড়িয়ে ছোঁয়ার দুই গালে হাত দেয়।
” আজকেই বাড়িতে চলে যেতাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে। কিন্তু তুমিই চলে এসে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে।
ছোঁয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে সাদি৷ ছোঁয়া মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“ড্রেস পাল্টে এসো। আমার বন্ধুরা ওয়েট করছে।
ছোঁয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে সাদি। তারপর ছেড়ে দেয়।
ছোঁয়া খাটের ওপর থেকে নিজের কেনা ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে যায় সাদি হাত টেনে ধরে।
ভ্রু কুচকে সাদির দিকে তাকায় ছোঁয়া।
” কি হলো?
“এটা পড়ো না।
সাদি মাথা চুলকে বলে। ছোঁয়ার শান্ত শিষ্ট মুখটা হঠাৎ রাগে আগুন হয়ে যায়।
” কেনো?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“ওরা চলে গেলে পইড়ো না। শুধু আমি দেখবো। ওদের দেখাতে চাইছি না বউয়ের হটনেস।
সাদি ছোঁয়ার গাল টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলে। ছোঁয়া ভেংচি কাটে। সাদি কাবাড থেকে একটা প্যাকেট এনে ছোঁয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়।
চোখের ইশারায় ছোঁয়াকে যেতে বলে। ছোঁয়া আবারও সাদিকে ভেংচি কেটে চলে যায়।
দশ মিনিট পরেই ছোঁয়া বেরিয়ে আসে। পরনে কালো গাউন। সাদিও কালো শার্ট পড়েছে। ছোঁয়া বেরুনোর পর দেখতে পায় রুমে দুইজন ছেলে আর ইভা কেট সাজাচ্ছে।
ছোঁয়া মুচকি হেসে এগিয়ে যায়। সাদি ছোঁয়াকে ছেলে দুজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর সবাই মিলে ঘিড়ে দাঁড়ায় ওদের। ছোঁয়া কেক কেটে সাদিকে প্রথমে খাইয়ে দেয়। সাদিও খাইয়ে দেয়। তারপর সবাইকেই খাইয়ে দেয়। এইটুকু সময়ে ছেলে দুটো রাকিব আর কবিরের সাথে বোন পাতিয়ে ফেলেছে ছোঁয়া।
তারপর সবাই মিলে কেক খাওয়া শেষ করে ডাইনিং এ চলে যায়। বিরিয়ানি অর্ডার করা হয়েছিলো। কবির রাকিব আর সাদি বিরিয়ানি খাচ্ছে।
ইভা ছোঁয়া নিয়ে রুমে চলে গেছে আর দরজাটাও বন্ধ করে দিয়েছে। ভেতরে কি হচ্ছে ওরা কেউ জানে না।
ওদের খাওয়া শেষ হতেই ইভা বেরিয়ে আসে। কিন্তু ছোঁয়া আসে না।
“আমার বউকে কোথায় রেখে আসলি?
সাদি টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে।
“একটু পরেই দেখতে পাবি। আমরা এখন যাচ্ছি।
চল চল তোরা।
ইভা ওদের তাড়া দিয়ে বলে। সাদির সন্দেহ হয়। কি একটা গন্ডগোল পাকিয়েছে এরা। কিন্তু কি গন্ডগোল এটাই বুঝতে পারছে না
অবশেষে চলে যায় ওরা। ইভা সাদিকে চোখ টিপ দেয়। সাদির টেনশন আরও বেরে যায়। কি হতে চলেছে?
দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এক দৌড়ে রুমে চলে যায় সাদি। দরজা খুলতেই চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় সাদির। অগানোর কথা ভুলে গেছে। এটা কি দেখছে?
চলবে…