#অন্যরকম তুমি পর্ব ৫২
#তানিশা সুলতানা
দুই তালা একটা বাড়ির সামনে এনে গাড়ি দাঁড় করায় সিফাত। সিমি পরির গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গাড়ি থামতেই পিটপিট করে চোখ খুলে। গাড়ির কাচটা নামিয়ে দেয় সিফাত। বাইরের দিকে তাকাতেই ভ্রু কুচকে যায় সিমির।
এখন তো ওদের হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ। তা না করে এই বাড়ির সামনে কেনো নিয়ে এসেছে সিফাত। রাগ হয় সিমির। চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“এখানে কেনো আনলেন?
সিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
” এখানেই আছে সব সমস্যার সমাধান।
চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টেনে বলে সিফাত।
“আমি সমস্যা সমাধান করতে আসি নি। মেয়েকে চিকিৎসা করাতে এসেছি। আমার মেয়েটা জ্বরে বেহুশ।
সিমি চিৎকার করে বলে। ঘুমন্ত পরি কেঁপে ওঠে।
” তুমি বোধহয় খেয়াল করো নি। পরির জ্বর কমে গেছে।
সিফাত আলতো হেসে বলে। সিমি থমথমে খেয়ে যায়। পরির কপালে হাত দেয়। সত্যিই জ্বর কমে গেছে। কিন্তু কি করে?
চোখ নামিয়ে নেয় সিমি।
“পরি এমনই। ঔষধ খাওয়াতে হয় না ওকে তেমন একটা।
সিমি উওরে কিছু বলে না চুপ করে থাকে।
” আচ্ছা সিমি কখনো তো আমায় জিজ্ঞেস করলে না আমি কি করে পরিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেলাম? কি করো জানলাম তোমার ডেলিভারি ওই দিনই হচ্ছে? জানতে পারলাম কি করে? এটাই আমাদের ছোট্ট পরি? এত এত বাচ্চার মধ্যে?
খুব শান্ত গলায় বলে সিফাত। সিমি চমকে ওঠে। কেনো পুরনো কথা উঠছে? কেনো এসব বলছে সিফাত?
চোখ দুটো ভিজে ওঠে সিমির।
“পরিকে আমি চুরি করে আনি নি। হাসপাতাল থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলে যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখান আমার হাতে পরিকে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর বলা হয়েছিলো পরিকে আমি না নিয়ে গেলে ওর স্থান হবে অনাথ আশ্রয়।
দুই হাত বুকে গুঁজে একদমে বলে সিফাত। সিমি বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে। কি বলছে এসব? সিফাত যে মিথ্যে বলছে এটা শিওর সিমি। তাই অনুভূতি হচ্ছে না। বরং রাগ হচ্ছে।
” আমি মিথ্যে বলছি এটাই ভাবছো? এতোটা অবিশ্বাস?
তাচ্ছিল্য হাসে সিফাত।
“জানো তো সিমি যদি আমার মেয়েকে নিয়ে টানাটানি না লাগতো তাহলে কখনোই আমি প্রুফ দিতাম না।
কেনো বল তো?
থাক সেটা তোমার জানতে হবে না।
বুক ভরে শ্বাস নেয় সিফাত। তারপর সিমির দিকে তাকায়।
প্রুফ দেবো আজকে আমি।
চলো আমার সাথে।
সিমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে৷ সিফাত আসলে কি করতে চাইছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। তবে সিফাত যাই করুক না কেনো সিমির তাতে কোনো ইন্টারেস্টি নেই। যা খুশি করুক। নিজের জায়গায় শক্ত সিমি।সিদ্ধান্তের নরচর করবে না।
আত্মসম্মানটা সবার আগে।
কোনো প্রুফ বা কোনো কিছুই সিমিকে টলাতে পারবে না।
গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সিফাত। সিমির পাশে এসে দরজা খুলে দিয়ে সিমির কোল থেকে পরিকে টেনে নিয়ে নেয়।
সিমি শক্ত চোখে তাকায় সিফাতের দিকে। খুব যত্ন করে মেয়ের কপালে চুমু খায় সিফাত।
তারপর সিমির বা হাতটা ধরে নামতে সাহায্য করে।
” আত্মসম্মান তাই না?
ভালোবাসার হ্মেএে না আত্মসম্মান টিকে না। একটুখানি আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে যদি ভালোবাসার মানুষটির সারাজীবন পাশে পাওয়া যায়। তাহলে এটা দোষের নয়। আর আত্মসম্মান ধরে রেখে ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে সারাজীবন তার স্মৃতি মনে করে নিরবে কেঁদেই যদি যেতে হয়। তাহলে তুমি করলেটা কি জীবনে?
না পারলে নিজে ভালো থাকতে আর না পারলো তোমার আত্মসম্মান তোমায় ভালো রাখতে। টোটাল লসটা তোমারই হলো।
দুই দিনের জীবন আমাদের। এই দুটো দিনই কেনো কষ্টে কাটাবো?
সিফাত সিমির হাত ধরে বাড়িটার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে। সিমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিফাতের মুখের দিকে। এতো শক্ত কথার মানে খুঁজে পাচ্ছে না সিমি৷ বা লোকটা জানলোই বা কি করে সিমি আত্মসম্মানের কথা ভাবছে?
“এখানে একহাজার তিনশত পাঁচটা ফুল আছে।
সিফাত ছোঁয়ার কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় ছোঁয়া। লোকটার হলো টা কি? এত ঘেসাঘেসি করছে কেনো? মনে মনে বিরক্ত হয় ছোঁয়া।
” এএটা বলতে এতো ঘেসাঘোসি করতে হবে কেনো?
জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি ঠোঁট চিপে হাসি আটকায়।
আরও একটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। কাঁধ থেকে থুতনি সরিয়ে গলায় রাখে। সাথে সাথে ছোঁয়া দ্রুত গতিতে সাদির দিকে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
হাত পা কাঁপছে চোখ খোলাও দায় হয়ে উঠেছে।
সাদি ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আরেক হাত কোমরে।
“কি হলো?
সাদি বলে। ছোঁয়া উওর দেয় না। এক হাত দিয়েই সাদির শার্টের দুটো বোতাম খুলে দেয় ধীরে সুস্থে। সাদির বুকের লোম গুলো বরাবরই ছোঁয়ার পছন্দ। অনেক ইচ্ছেও ছিলো লোম গুলো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সাহস হয় নি বা সুযোগও হয় নি। তাই আজকের সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইছে না ছোঁয়া।
সাদিও চুপচাপ ছোঁয়ার কারসাজি বোঝার চেষ্টা করছে।
বোতাম খোলা শেষ হতেই ছোঁয়া নাক ডুবিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে সাদির শরীর থেকে। কই এই ঘ্রান তো ছোঁয়া আগে পায় নি। আর পাবেই কি করে কখনো এতো কাছে আসা হয় নি।
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ঘ্রাণ নেয় ছোঁয়া। তারপর পরপর কয়েকটা চুমু খায় বুকে। এখন তো চোখ খুলতেই ভুলে গেছে ছোঁয়া। কি করে তাকাবে লোকটার দিকে? লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে। আবেগের বসে কি করে ফেললো এটা?
সাদি দুই হাতে ছোঁয়ার মুখটা উঁচু করে তুলে৷ চোখটা আরও একটুও খিঁচে নেয় ছোঁয়া।
সাদি ফু দেয় ছোঁয়ার মুখে। ছোঁয়া কপাল কুচকে ফেলে।
সাদি মুচকি হেসে ছোঁয়ার নাকে নাক ঘসে ওষ্ঠাদয়ে নিজের ওষ্ঠাদ্বয় মিলিয়ে দেয়। ধপ করে চোখ খুলে ফেলে ছোঁয়া। কি হচ্ছে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। ছোটাছুটি করেও লাভ হয় না। হনুমানটা বাঘের মতো ধরে আছে।
কয়েক মিনিট পরে সাদি ছাড়তেই ছোঁয়া কয়েক হাত পিছিয়ে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। দমটাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো। এতখনে শ্বাস আটকে ছিলো কি করে ছোঁয়া এটাই ভাবছে?
সাদি ছোঁয়ার মাথায় চাটি মারে।
“ইডিয়েট কিসটাও করতে জানে না।
ছোঁয়া লজ্জা সরম ভুলে কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে। সাদি ছোঁয়ার মতো করে ভেংচি কাটে।
” চেঞ্জ করে আসো। এই ড্রেস পড়ার বয়স তোমার এখনো হয় নি৷ ফিটার কিনে দিতে হবে তোমায়। ইডিয়েট
সাদি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়ার এবার কান্না পাচ্ছে। এভাবে বলতে পারলো? একটা বার তো বলতে পারতো “ছোঁয়া তোমাকে দারুণ লাগছে। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি “
বললে কি ভুমিকম্প হয়ে যেতো নাকি?
খারাপ লোক একটা।
ছোঁয়া ড্রেস চেঞ্জ করবে না। একদমই না। বরং এখন শাড়ি পড়বে। মোটামুটি আজকে “আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ” কথাটা সাদির মুখ থেকে শুনেই ছাড়বে।
শাড়িতে না বললে অন্য কিছু ট্রাই করবে। থেমে থাকার মেয়ে ছোঁয়া না। শেষমেশ না বললে চুল ছিঁড়বে সাদির।
চলবে……