#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৫৩ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা
কালো শিল্কের পাতলা ছিলছিলে শাড়ি সাথে হাতা কাটা ব্লাউজ। চুল গুলো আধখোপা করে বেঁধেছে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। চোখে মোটা করে কালো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ছোঁয়া। পারফেক্ট। বেশ লজ্জা লাগছে। সিনেমার হিরোইনরা এভাবে কি করে শুটিং করে কে জানে?
ছোঁয়ার তো নিজের বরের সামনে যেতেই লজ্জা লাগছে।
ইউটিউব দেখে একদম হিরোইনদের মতো করেই শাড়ি পড়ে নিয়েছে।
ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই খট করে দরজা খুলে যায়। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
সাদি দরজা আটকে পেছনে ঘুরতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে? এই মেয়ের হয়েছে কি আজ?
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা খাটের পাশে থাকা টেবিলে রেখে দেয়।
“এএসব কি পড়েছো?
শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে সাদি। ছোঁয়া পিটপিট করে চোখ খুলে। আয়নার মধ্যেই তাকায় সাদির দিকে।
” ভালো লাগছে না আমায়?
ছোঁয়া চোখ নামিয়ে রিনরিনিয়ে বলে।
সাদি শক্ত কিছু বলতে গিয়েও পারে না। সত্যি বলতে অসম্ভব লাগছে ছোঁয়াকে। সাদির চোখ ফেরানো দায় হয়ে গেছে।
“পাগল করেই ছাড়লে আমায়।
বুকের বা পাশে হাত দিয়ে নেশাতুল গলায় বলে সাদি। ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। আর সারা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারন করে।
সাদি ধীর পায়ে এগিয়ে ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়ায়। চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।
“খাবে না?
ছোঁয়া মাথা নারায়। সাদি ছোঁয়ার বা হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে নেয়৷ ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে সাদির অগোচরে।
ছোঁয়াকে খাটে বসিয়ে দেয় সাদি। নিজেও পাশে বসে পড়ে। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ছোঁয়ার মুখে খাবার তুলে দেয়। ছোঁয়াও কোনো রকম বায়না ছাড়া খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষে সাদি হাত ধুয়ে প্লেট রেখে আসে। ছোঁয়া ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরপর কি হবে?
সাদি ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। ছোঁয়া এক পলক সাদির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
” আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ছোঁয়া।
চমকে ওঠে সাদি। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে। এই প্রথমবার সাদি ছোঁয়ার নাম বললো। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পাঁচটা শব্দ শুনে কান জুড়িয়ে গেছে।
আবেগ প্রবল হয়ে ছোঁয়া ঝাপিয়ে পড়ে সাদির বুকে। সাদিও দুই হাতে আগলে নেয় ছোঁয়াকে।
“আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।
ছোঁয়া সাদির বুকে নাক ঘসে বলে।
“শুধু মুখে বললে হবে? ভালোবেসেও তো দেখাতে হবে। তাই না?
ছোঁয়ার কানে ফিসফিস করে বলে সাদি।
অনেক দিন পরে হিমুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সিমি। হিমুকে চেনাই যাচ্ছে না। দাঁড়ি গুলো বড়বড় হয়ে গেছে। চুল গুলো বাবড়ির মতো হয়ে আছে। চোখ দুটো শুকিয়ে গেছে। ফর্সা মানুষ কালো হয়ে গেছে।
এক দৃষ্টিতে হিমু সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমিও পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
“হিমু কেনো তুমি সেদিন ছোট্ট পরিকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে?
সিফাত ওদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হিমুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
হিমু মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ দুটো ছলছল করছে ছেলেটার।
সিমি শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
” বলো হিমু।
সিফাত শান্ত গলায় আবারও বলে।
“সিমির জন্য।
বুক ভরে শ্বাস টেনে বলে হিমু।
সিমি ভ্রু কুচকে তাকায় হিমুর দিকে। সিফাত তাচ্ছিল্য হাসে।
“আপনি ছিলেন না। সিমি একা একা পারতো না বাচ্চাটাকে বড় করতে। আর তাছাড়া বাবুটা থাকলে সিমি কখনোই আমাকে মেনে নিতে পারতো না।
হিমুর গলা ধরে আসছে। সিমি বড়বড় চোখ করে তাকায় হিমুর দিকে।
হিমু সিফাতকে ডিঙিয়ে সিমির মুখোমুখি দাঁড়ায়।
” সব কিছুই ঠিকঠাক ছিলো সিমি। কিন্তু বিশ্বাস করো সিফাতের সাথে তোমাকে সয্য করতে পারতাম না আমি। মনে মনে সব সময় প্রে করতাম যাতে তোমারা আলাদা হয়ে যাও। তোমাদের ঝামেলা হোক।
থামে হিমু। সিমি হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
“সিফাত সন্দেহ করতো তোমাকে আর আমাকে। আমি এটা বুঝতে পারতাম তাই একটু বেশিই মিশতাম তোমার সাথে। সিফাতের সন্দেহ বাড়তে থাকে আর তোমাদের দুরত্ব।
তোমাদের ধয্য কম। ইগো বেশি৷ কেউ কারো কাছে ছোট হতে চাও না। সিফাত যদি কখনো তোমায় জিজ্ঞেস করতো ” সিমি তুমি কেনো হিমুর সাথে বেশি মিশো?”
সিফাত এটা না করে তোমাকে জেলাসি করানোর জন্য অন্য মেয়ের সাথে মিশতে শুরু করলো।
সন্দেহ ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকে। একটা পর্যায় ডিভোর্স পেপার।
খুব ভালোই লাগছিলো আমায়। কিন্তু যখন জানতে পারলাম তুমি প্রেগন্যান্ট। আকাশ ভেঙে পড়েছিলো মাথায়।
জানো সিমি সিফাতও আমাকে বিশ্বাস করে তোমার খবর জানতে চাইতো আমার থেকে। আর আমিও ওকে বলতাম কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে নিচ্ছি আমরা।
ধপ করে বসে পড়ে সিমি। শূন্য লাগছে চারপাশ। এটা কি হচ্ছে?
চলবে……………