ভাবীর সংসার সিজন ২ পর্ব ৮
আবিদ জানালার দিকে তাকিয়ে দুটি শালিক পাখিকে দেখছে, পাশাপাশি বসে আছে, পাশের বিল্ডিং এর বারান্দার গ্রীলে। আরও কয়েকটি পাখি উড়ছে, কিচির মিচির একটা শব্দ হচ্ছে! চমৎকার বাতাস ও বইছে। বেশ সুন্দর একটা সকাল।
ঘড়িতে ভোর পাঁচ টা সাতাশ বাজে। ফযরের আযান হয়েছে, আধা ঘন্টা আগে। নামায পড়ে, আবিদ জানালার পাশে বসেছে।
পলি এক কাপ লেবু পানি, মধু দিয়ে নিয়ে এসেছে৷ পলির মাথায় নামাযের ওড়না। পলিকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে!
পলি বললো, লেবু পানি টা খেয়ে নাও, লেবুর রসে ভিটামিন সি আছে। তাছাড়া ঘা টা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
– ঘা শুকিয়ে কি হবে পলি? আমি তো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত!
– গতকাল রাত থেকে তোমাকে বলছি, মন ভেঙে গেলে হয়না। মন শক্ত কর, আর আমি তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি যেতে দিচ্ছেনা। এরকম কথা, আর কোন সময় বলবেনা।
আবিদ হঠাৎ পলির হাত ধরে বললো আমাকে মাফ করে দিও পলি।
– এসব কি বলছো?
– কাল সারাটা রাত ভেবেছি, আমি কখনো তোমাকে, তোমার মতো সুখ দিতে পারিনি।
– কে বলেছে।
– আমি বলছি।
– আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
– তুমি বিয়ের পর, সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকতে, এতো চঞ্চল একটা মেয়ে, একদম চুপ হয়ে গেলে আমার জন্য! সবাই আমাকে কিপটা বলে, কিন্তু এতো অল্প আয়ে, সংসার করতে, এছাড়া আমার কাছে আর কোন পথ নেই। চট্টগ্রাম থেকেও কখনো কক্সবাজার নিয়ে যেতে পারিনি। কলি এসে নিয়ে গেল। মন মতো উপহার, একটু বেড়ানো কিছুই পারিনি।
– আমার কোন আফসোস নেই।
– আমার আছে পলি, কারণ আমি হয়তো একটু চেষ্টা করলে মাসে না হউক বছরে একবার তোমাকে নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে দূরে যেতে পারতাম!
– এসব বাদ দাও, ঘুমাও। দশটায় ডাক্তারে যেতে হবে।
– আজ, আমি যেতে চাচ্চি না পলি। আজ আমার মন টা খুব অস্থির হয়ে আছে। আজ, আমি একটু আজিমপুর কবর স্থানে যাবো, আব্বাকে নিয়ে, আম্মার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসবো।
– আজ, ডাক্তারে যেতে হবে।
– হায়াত থাকলে, হয়তো বাঁচবো নয়তো একদিন পিছিয়ে গেলে কিছু হবেনা। আজ, আমার চেয়ে এই শালিক পাখিকে বেশি সুখী মনে হচ্ছে, তারা দেখো, আনন্দে দুজন এক সাথে বসে আছে।
– তুমি প্লিজ….
– পলি, আমি আজ আম্মার কাছে যাবো। আমাকে আর কিছু বলবেনা প্লিজ।
পলি আর কথা বাড়ায়নি, চুপচাপ আবিদ, চিরকাল মায়ের খুব বাধ্য এবং ভালো ছেলে ছিল। মায়ের মৃত্যুর পর, দীর্ঘ এক মাস সে ঠিকমতো ঘুমায় নি, খায় নি। বার বার বলেছে, আনার আম্মা এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন, কিছুই করতে পারলাম না পলি!
গতকাল রাতে তানিম-তালহা বাবাকে চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেছে। বলায় কোন ত্রুটি ছিল না, তবুও লোক টা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। পলি যত বার চোখ খুলেছে, দেখেছে৷ উদাস ভাবে, রাস্তার নিয়ন বাতির দিকে তাকিয়ে আছে সে! তার শরীরে ক্যান্সারের জীবানু, এটা সে একদম মানতে পারছেনা।
মৃত্যু ভয় তাকে ঘিরে ফেলেছে, গত চব্বিশ ঘন্টায়। প্রফেসর সাহেব কে জানানো হয়নি এখনো, তিনি শুনে যে কত কষ্ট পাবেন! ভাবতেই গা কাটা দিয়ে উঠছে পলির।
পলির গাল বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে, সত্যি কি তার আবিদ কে সে বাঁচাতে পারবেনা! তার মায়াবী সংসার,এভাবেই এলোমেলো হয়ে যাবে! কোন অংক আজ মিলছেনা, সব কিছু যেন কঠিন থেকে কঠিনতর লাগছে……
আন্নামা চৌধুরী।
বি.দ্র:
প্রিয় পাঠক,
এই গল্প শেষ হবে কোন এক বইয়ের শেষ পৃষ্টায়, ততো দিন আপনাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আরেকটি অনুরোধ কেউ প্লিজ কপি করে গল্পটি নিজের নামে বিভিন্ন পেইজে দিবেন না।
আমার গল্পের সিজন ০৩, কিংবা এই গল্পের চরিত্র নিয়ে কেউ গল্প লিখবেন না। নিজের যোগ্যতায় দুই লাইন লিখা ও অনেক সম্মানের ও আনন্দের। আশা করি, সবাই আমার সাথেই থাকবেন।
এই আট পর্ব কেমন লেগেছে, জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন, নতুন গল্প আসছে, খুব শীঘ্রই।
ধন্যবাদ।