#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২৪
#M_Sonali
অপারেশনের পুরো ৫ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে চাঁদনীর। জ্ঞান ফিরতেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ওর আব্বু আর আম্মু বসে আছে। কিন্তু কোথাও শ্রাবন নেই। শ্রাবনকে না পেয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে চাঁদনী বলে ওঠে
— আম্মু আব্বু আমি কোথায়? এটা তো মনে হচ্ছে হসপিটাল! আমি হসপিটালে আসলাম কিভাবে আমি তো বাসায় ছিলাম। আর শ্রাবন কোথায় আম্মু? ও তো আমার পাশে ছিল কোথায় গেল। আমি এখানেই বা কি করে এলাম? কি হয়েছিলো আমার?
বৃষ্টিকে উত্তেজিত হতে দেখে বৃষ্টির আম্মু আর আব্বু পাশে এগিয়ে গেলো।তারপর বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বৃষ্টির আম্মু বলল
— শান্ত হও মামনি তোমার অপারেশন হয়েছে তুমি এখন অসুস্থ শান্ত হও নইলে তোমার সমস্যা হতে পারে।
— আমার অপারেশন হয়েছিল! কিন্তু কিসের অপারেশন হয়েছিল আম্মু? কি হয়েছে আমার যে আমার অপারেশন করতে হলো? বলো আমি তো তোমাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা আম্মু।আর আমার স্বামী আমার শ্রাবণ কোথায় ওকে কেন দেখতে পাচ্ছি না আমি?
চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীর আব্বু চাঁদনির কাছে এগিয়ে এসে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— শান্ত হও মামনি শ্রাবণ একটা ভ্যাম্পায়ার ছিল। আর ও ভাম্পায়ার হওয়ায় তোমার পেটে ওর বাচ্চাও ভ্যাম্পায়ার বাচ্চা ছিল। যার কারণে তুমি কয়েকদিন হল এতো অস্বাভাবিক ভাবে খাবার খাচ্ছিলে। সেই বাচ্চাটা তোমার রক্ত চুষে নিচ্ছিল তোমার পেটে থেকে।
আব্বুর কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে চাঁদনী বলল
— কি বল আব্বু আমার পেটে বাচ্চা ছিলো! আমি মা হতে চলেছিলাম! আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম কই আমিতো কিছুই জানতাম না! কোথায় গেল আমার বাচ্চা আমার পেটের বাচ্চা কোথায় গেল আব্বু? আম্মু তুমি কিছু বলো না কেন আমার বাচ্চা কোথায় আম্মু? আর শ্রাবন! শ্রাবন কেন আমায় তখন ইঞ্জেকশন দিয়েছিল শ্রাবন এখন কোথায় আম্মু?
— শ্রাবন তোমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য তোমায় ইনজেকশন দিয়েছিলো। আর সে তার কাজে সফল হয়েছে।তোমার পেটের বাচ্চা পেটেই মারা গেছে। শ্রাবণ তোমায় কখনো ভালবাসেনি, শুধু তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য তোমায় বিয়ে করেছিল শ্রাবন।তারপর যখন জানতে পারলো তোমার পেটে ওর সন্তান তখনই তোমার বাচ্চাটাকে খুন করে চলে গেছে ও।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামল চাঁদনীর আব্বু। আব্বুর কথা শুনে চাঁদনী যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল। চাঁদনী চিৎকার করে বলল
— এ হতে পারে না, এটা কিছুতেই হতে পারে না শ্রাবণ আমার সাথে এত বড় বেইমানি কোনদিনও করতে পারে না। শ্রাবন তো আমায় ভালোবাসে সে কখনো আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারে না। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না আব্বু। আমি শ্রাবনের কাছ থেকে শুনতে চাই ও কোথায় ওকে ডেকে আনো আব্বু আমি ওর মুখ থেকে সব সত্যিটা জানতে চাই।
কথাগুলো বলতে বলতে খুব কান্না করতেছে চাঁদনী। যে কারণে ওর শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়ে গেল। আর ব্লাড প্রেসার প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেল। এটা দেখতে পেয়ে চাঁদনীর আম্মু চিৎকার করে ডাক্তার ও নার্স কে ডাকতে লাগলো।
চাঁদনীর আম্মুর চিৎকার শুনে ডাক্তার ছুটে এলো সাথে দুজন নার্স। তারা এসে চাঁদনীর এমন অবস্থা দেখে চমকে উঠে বলল
— আপনারা প্লিজ বাইরে যান আপনাদের ওনাকে এভাবে উত্তেজিত হতে দেওয়া উচিৎ হয়নি। ওনার অবস্থা এখন খুব ক্রিটিক্যাল আপনারা বাইরে যান আমরা দেখছি কি করা যায়। রোগী এত উত্তেজিত হলে ওনার বড় কোন সমস্যা হয়ে যেতে পারে!
চাঁদনীর অবস্থা দেখে ওর আম্মু আঁচলে মুখ গুঁজে কান্না করতে করতে বাইরে বেরিয়ে আসলো। সাথে চাঁদনীর আব্বুও বেরিয়ে আসলো। বেশ কিছুক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচি করার পর ডাক্তার ও নার্সরা মিলে চাঁদনীকে জোর করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলো। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো চাঁদনী।
,
,
গভীর এক জঙ্গলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কান্না করছে শ্রাবণ। ওর কান্নার গর্জনে যেন সারা জঙ্গল কেঁপে উঠছে বারবার। তবুও যেনো ক্ষান্ত হচ্ছে না একটু শ্রাবন। পাগলের মতো প্রলাপ বকছে আর কান্নায় ভেঙে পড়ছে শ্রাবন। শ্রাবনের এমন অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে শ্রাবণী। ওর যেন চোখের পানির বাঁধ মানছে না। নিজের চোখের সামনে কলিজার ভাইয়ের এত কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারছে না শ্রাবণী। তারপর কান্না করতে করতে মাটিতে হাটু গেড়ে বসে পরল শ্রাবণ। তারপরে দুহাতে মাথায় হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে কান্নাকাটি করতে লাগলো শ্রাবন।তারপর বললো
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও চাঁদ পাখি আমি পারিনি আমার দেওয়া কথা রাখতে। তুমি আমাকে মাফ করে দিও চাঁদপাখি আমি একটা বেইমান তোমার সাথে বেঈমানি করেছি আমি। বিশ্বাস করো আমি কখনো ভাবি নি আমাদের দুজনকে এভাবে আলাদা হয়ে যেতে হবে। আমি তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁচবো চাঁদ পাখি আমি যে মরে যাব ধুকে ধুকে মরে যাব আমি তোমাকে ছাড়া।তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা খুব কষ্টদায়ক আমার। আমি কেন হলাম না একজন সাধারন মানুষ! কেন হলাম এই অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার? ভ্যাম্পায়ার না হলে হয়তো তোমাকে আমার জীবন থেকে হাড়াতে হতো না। আমি তোমাকে চাই চাঁদ পাখি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয় আমার। আমি মরে যাব হ্যা হ্যা আমি মরে যাব আমি আমার জানের সাথে বেঈমানি করেছি আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমি মরে যাব চলে যাব সারা জীবনের মত তোমার জীবন থেকে আর কখনো ফিরবনা আমি তোমার জীবনের অভিশাপ হয়ে।
কথাগুলো বলেই নিজের ছুরির মত ধারালো হাতের নখ গুলো বের করল শ্রাবণ। তারপরে নিজের গলার কাছে ধরলো সেই নক গলা কাটার জন্যে। কিন্তু শ্রাবন যখনি গলায় পোস দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো তখনি শ্রাবনী গিয়ে আটকে দিল। আটকে দিয়ে বললো
— ভাইয়া তুমি এটা কি করছো কি ভাইয়া? এমন পাগলামো করো না ভাইয়া তুমি কেন বুঝতে পারছ না তুমি ছাড়া আমি এতিম হয়ে যাব। আমি কার কাছে থাকবো বলতো তুমি না থাকলে? তুমি কি আমার কথা একটুও ভাববে না ভাইয়া! তাহলে নিজে মরার আগে আমাকে মেরে ফেলো তারপর তুমি মরে যাও। তাহলে আর আমার কোন চিন্তা থাকবে না ভাইয়া। তুমি আমাকে মেরে ফেলো আগে তারপর তুমি নিজে মারো।
শ্রাবণীর কথা শুনে শ্রাবনীকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল শ্রাবণ।শ্রাবনী শ্রাবণ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
— ভাইয়া প্লীজ শান্ত হও আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা কিন্তু কি করবো বলো তোমার ভালোবাসার মানুষ আমার চাঁদপাখির ভালর জন্যই তো ওকে ছেড়ে আমাদের দূরে থাকতে হবে। তুমি কি একবারও ভেবে দেখেছো ভাইয়া আজ যদি তোমার আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে চাঁদের উপর যদি ওই শয়তান ভাম্পায়ার আটক করে তখন ওকে কে বাঁচাবে ওদের হাত থেকে? একবারও কি ভেবে দেখেছো চাঁদনী যখন জানতে পারবে তুমি মারা গেছে তখন ওর কেমন লাগবে? ওকি বেঁচে থাকতে পারবে তোমায় ছাড়া? ভুলে যেও না ভাইয়া তুমি ওকে যতটা ভালোবাসো ওও কিন্তু তোমাকে ততটাই ভালোবাসে। তাইতো তুমি ভ্যাম্পায়ার জেনেও তোমাকে বিয়ে করেছে তোমার সাথে সংসার সাজিয়েছে চাঁদ।তুমি কি চাও তোমার বিরহে সারা জীবন ও ধুকে ধুকে মরুক।
— না না না আমি এমনটা কখনোই চাইনা, আমি চাই আমার চাঁদ যেনো সুখে থাকে যেখানেই থাকে যে ভাবে থাকে ও যেনো সুখে থাকে। ওকে সুখী দেখতে পারলে আমার সুখ। তাইতো আমি ওর আব্বুর কথায় আমি ওকে ছেড়ে চলে এসেছি, ওর আব্বুর কথা মতো নিজের সন্তানকে নিজের হাতে খুন করেছি আমি। তবু আমার জান পাখি ভালো থাকুক।ও সুস্থ থাকলে ভালো থাকলেই আমার সবকিছু পূর্ণতা পাবে। আমার আর কিছু চাইনা তাতে আমার হাজারটা সন্তান বলি দিতে হলেও আমি দিবো।আমার চাঁদপাখি আমার কাছে সবার আগে, ও সুস্থ ও ভালো থাকলেই আমি সুখী।
— তাহলে কেন এমন পাগলামো করছো ভাইয়া! তুমি হয়তো চাঁদের কাছে যাবে না চাঁদের সাথে দেখা করবে না। কিন্তু তুমিতো দূর থেকে ওকে ভালবাসতে পারো ওর দিকে নজর রাখতে পারো। ওর যেনো কোন কিছুতে ক্ষতি না হয় সেটা দেখতে পারো তাই না! তুমি তো তোমার চাঁদনীকে আড়াল থেকে দেখতে পারো তোমার মধ্যে সেই শক্তি রয়েছে। চাঁদনী তোমাকে না দেখলেও তুমি তাকে দেখতে পারবে। তুমি কী এভাবে চাঁদকে ভালবেসে আড়ালে থাকতে পারো না ভাইয়া?
— হ্যাঁ তুই ঠিক বলেছিস শ্রাবণী আমি সত্যিই ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আমি আমার চাঁদনীকে ভালবাসি আমি ওর পাশেই থাকবো ওর আড়ালে থেকে আমি ওকে ভালবেসে যাব। কখনো সামনে যাবো না কিন্তু ওর প্রতি সবসময় আমি নজর রাখব। এটাই হবে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা। অনেক ধন্যবাদ শ্রাবনী আজকে তুই আমায় অনেক বড় ভুল করার হাত থেকে বাঁচালি। এখন তুই না বললে হয়তো অনেক বড় ভুল করে বসতাম আমি।
,
,
সেদিন চাঁদের আব্বু যখন শ্রাবণ শ্রাবণী কে সবকিছু খুলে বলে তখনই শ্রাবণ শ্রাবণী বুঝতে পেরেছিল যে ওরাই সেই ইকবালের সন্তানেরা। যারা মানুষ এবং ভাম্পায়ার মৃশ্রিত সন্তান। যার কারনে ওদের শক্তি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে সবচাইতে বেশি। আর আকাশ হলো চাঁদনীর সেই ভাই।যাকে চাঁদনীর আব্বু জঙ্গলে ফেলে এসেছিলো। এগুলো সব কিছুই শ্রাবণ খুলে বলে চাঁদনীর আব্বুর কাছে। সে সবকিছু শুনে নিজের একমাত্র মেয়ের ভালোর জন্য বলেছিলো
চাঁদনীর বাচ্চাটাকে মেরে ফেলে ওদের চাঁদনীর জীবন থেকে চলে যেতে। শ্রাবনও চাঁদনীর আব্বুর কথায় আর চাঁদনীর ভালর জন্যে সেটাই করে। শ্রাবণ আর শ্রাবণী মিলে আকাশ কেউ সবকিছু বলে দিয়েছে। সব জানার পর আকাশও বেশ কিছুটা ভেঙে পরে ছিল। এসব কথা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল আকাশের। কোন সন্তানই কখনো চায়না তার বাবা-মা তাকে এভাবে জঙ্গলে ফেলে চলে আসুক। এখানে তো আকাশের কোন দোষ ছিল না তাহলে কেন ওকে এভাবে ফেলে দিলো ওর নিজের বাবা! কিন্তু তারপরেও ওর বাবার উপর একটুও রাগ হয়নি আকাশের। তাই আকাশ নিজের কষ্টটা নিজের বুকের মধ্যে চেপে রেখে চলে যায় ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। আকাশের একমাত্র আপনজন এখন শ্রাবণী আর শ্রাবন। আকাশ নিজের চাইতেও বেশি ভালবাসে শ্রাবনীকে আর শ্রাবনীও প্রচণ্ড ভালবাসে আকাশকে,,,,,,,
(আগামি পর্ব গল্পের শেষ পর্ব হবে)
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,