ভাড়াটিয়া পর্ব ১৬
শ্যামলি পরিবহনের একজন ক্যামেরাম্যান উঠে দাঁড়াল। ইসমাইল লোকটার আওয়াজ শুনে কাছে এগিয়ে গেল।
ক্যামেরার ভিডিওতে রাশিদা বেগম নামের মহিলা কে দেখা যাচ্ছে।
উনি বসে আছেন ঢাকা-রাজশাহির শ্যামলি পরিবহনের একটা বাসে। সিট নাম্বার ফোর ডি।
মামুন এবার উঠে দাঁড়িয়ে সামনে আসল। সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ দিলো।
সবাই বের হয়ে গেল। শুধু শ্যামলি পরিবহনের ক্যামেরাম্যান কে থাকতে বলা হলো।
আর কয়েকবার ভিডিওটা চালিয়ে দেখে নিল মামুন। এটাই সুইটির সাথে পাওয়া মহিলার ছবি। যার নাম রাশিদা বেগম। অবশ্য এটা ওনার আসল নাম কি-না কে জানে? এদের নাম তো আর একটা থাকে না!
মামুন বলল, “টিকিট কাটার সময় আপনারা যাত্রীর মোবাইল নাম্বার এন্টি করেন না?”
ইমতিয়াজ বলল,” জি, স্যার। টিকিট কাটার জন্য যাত্রীর মোবাইল নাম্বার নেয়া হয়।”
শ্যামলি পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল। রাশিদা বেগমের কোনো মোবাইল নাম্বার নেই! কাউন্টারের লোকটা কিছুই বলতে পারল না। কী করে মোবাইল নাম্বার ছাড়া টিকিট কেটেছে।
কাউন্টারের লোকটা বলল, স্যার মহিলা বলেছেন,” ওনার সাথে কোনো মোবাইল নাই।”
“টিকিটে নাম কী লেখা হয়েছে? “
কাউন্টারের লোকটা চেক করে জানাল। “নাম রাশিদা বেগম দেয়া হয়েছে স্যার।”
মামুন বলল,” এই গাড়ির সুপারভাইজার কে ছিলো?”
কাউন্টার থেকে জানাল,” লতিফ।”
“লতিফ এখন কোথায় আছে?”
“আমি জানি না স্যার।”
ইমতিয়াজ বলল,” স্যার আপনারা আমার অফিসে এসে বসেন। আমি লতিফ কে আনার ব্যবস্থা করছি।”
অফিস রুমে এসে বসে আছে মামুনরা। অফিসের সহকারী মঞ্জু নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। শাহাদাত কে দেখা বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ড বিরক্ত! জয়ী আর ইসমাইল বসে গল্প করছে। মামুন গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
এতটুকু বুঝা যাচ্ছে। রাশিদা নামে এই মহিলা রাজশাহী গেছেন। রাজশাহী কোনো ছোটো-খাটো জায়গা না। কোন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে বসে আছে কে জানে?
সুপারভাইজার লোকটার কাছে থেকে জানা যাবে কোন স্টেশনে নেমেছে। যদি তার মনে থাকে।
তিনটা বেজে গেছে। এখনো পর্যন্ত লাঞ্চ করা হয়নি। শাহাদাত প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হয়ে বসে আছে। ক্ষুধা তার মোটেই সহ্য হয় না। এখানে আসার পর কয়েক গ্লাস পানি আর দুইকাপ চা খাওয়া হয়েছে। ক্ষুধা অবশ্য মামুনের লেগেছে। কিন্তু কিছু বলছে না। কাজটা শেষ না করে উঠা ঠিক হবে না।
অবশ্য এখানে কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়। সুপারভাইজারের সাথে কথা বলার পর যেতে হবে।
ইমতিয়াজ ফিরে এলো ঘন্টাখানেক পরে সাথে লতিফ নামের সুপারভাইজার। ইমতিয়াজ এসেই বলল, “স্যার, লাঞ্চের সময় হয়েছে অনেক আগে। কিছু খেয়ে নিলে ভালো হতো না?”
মামুন কিছু বলল না। একটু হেসে বলল, “সুপারভাইজার কে পাওয়া গেছে”
“জি,স্যার এই হলো সেই সুপারভাইজার লতিফ।”
লতিফ কে একটু ভিতু মনে হচ্ছে। কেমন আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইমতিয়াজ পরিচয় বলার পর। সামনে এসে সালাম দিলো।
মামুন ছেলেটার দিকে তাকাল। একটু গভীরভাবে দেখে নিলো। পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে। লম্বায় পাঁচ ফুট সাত আট ইঞ্চি হবে। একটু ময়লা গায়ের রং। নীচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মামুন লতিফের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শুক্রবার ১২৯৫৭৩ নাম্বার গাড়িটা নিয়ে রাজশাহী গিয়েছিলেন? “
“জি, স্যার।”
ইসমাইল ল্যাপটপে রাশিদা বেগমে ছবিটা বের করল।
“দেখুন তো মহিলা কে চিনেন কি-না?”
লতিফ অনেকটা সময় ধরে ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইল। চিনতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।
ইসমাইল বলল, “এই মহিলা শুক্রবার আপনার বাসে রাজশাহী গেছেন। ওনার সিট নাম্বার ছিলো ফোর ডি। এবার চিনতে পারছেন?”
একটা ছোটো শ্বাস ছেড়ে লতিফ বলল, “হ্যাঁ, মনে পড়ছে স্যার।”
“গুড। এবার বলেন তো এই মহিলা কোন স্টেশনে নেমেছে? “
লতিফ কে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। সে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিছুটা সময় ভেবে বলল,” স্যার বিনোদনপুর স্টেশনে নেমেছে। “
ইসমাইল লতিফের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শিউর? “
“জি,স্যার।”
“কী করে শিউর হচ্ছেন? “
“স্যার, উনি বারবার আমাকে বিনোদনপুর স্টেশন আসছে কিনা জিজ্ঞেস করেছেন। তাই মনে আছে।”
“কয়টার সময় নামিয়ে দিয়েছেন?”
“স্যার রার দশটার দিকে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান।”
মামুন উঠে দাঁড়াল।
ইমতিয়াজ বলল,”স্যার লাঞ্চটা করে যান।”
মামুন ইমতিয়াজের দিকে আলগা হাসি দিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”
ইমতিয়াজ কী বলবে বুঝতে পারছে না! এই মানুষ অন্যরকম। অন্য পুলিশের মতো না। তাই কিছু না বলে হালকা হাসি দিলো।
একটা রেস্টুরেন্টে আসল চারজন। একটা টেবিলে বসেছে। ওয়েটার কে ভাত দিতে বলল মামুন।
জয়ী বলল, “রাজশাহী যেতে হবে স্যার?”
“এ ছাড়া উপায় তো নেই জয়ী! অবশ্য বলা যাচ্ছে না। বিনোদনপুরে পাওয়া যাবে কি-না। দেখা যাক কী হয়। ইসমাইল তুমি একটা প্লান করে ফেল।”
ইসমাইল বলল,” মোবাইল নাম্বারটা থাকলে ট্রেস করাটা সহজ হতো স্যার।”
শাহাদাত বলল, “ক্রাইম সিরিয়াল দেখে অপরাধীরা অনেক কিছুই এখন জানে। কী করে পুলিশ ওদের ধরে! তাই আগ থেকেই সাবধান হয়ে যায়।”
ইসমাইল বলল, “কিছু ভুল তো করেই। “
“বেশি সর্তক হয়ে সাধারণ জিনিস মনে থাকে না। এখনকার অপরাধীরা সাধারণ ভুল করে।”
ওয়েটার সাদা ভাত নিয়ে এসেছে। সাথে কয়েকপ্রকার ভাজি। সবাই প্লেটে ভাত তুলে নিলো।
ওয়েটার বলল, “কী তরকারি দিবো স্যার?”
শাহাদাত বলল,” আমাকে গরু দে। ভালো দেখে দিবি।”
মামুন মনে হয় সবজি দিয়েই খাবে। জয়ী আর ইসমাইল মুরগির মাংস নিলো।
রাজশাহী তে জয়ী প্রথম এসেছে। এই শহরটা বেশ সাজানো গুছানো। ঢাকার মতো নোংরা না। খুব ভালো লাগছে ওর। মামুন অবশ্য কয়েকবার এসেছে রাজশাহীতে।
চলবে–
Nabil Mahmud