#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_7
মেঘ আর কিছু বললো না।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।আহান একবার আর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইব করায় মনোযোগ দিলো।
কিছুক্ষন পর মেঘদের গাড়ি গন্ত্যব্যে পৌছে গেলো। গাড়ি থেমে যাওয়ায় মেঘ চোখ খুলে তাকালো।আহান মেঘকে বললো
—-আমরা পৌছে গেছি।
মেঘ মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে ,জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।আর তাকিয়েই চারশো চল্লিশ বোল্টের শক খেলো।
“আহান বললো নামো আমরা এসে গেছি ।”
মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“এসে গেছি মানে কি।এটা তো হসপিটাল না।দেখে তো কারো বাসা মনে হচ্ছে।”
আহান সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে মেঘের পাশের দরজা খুলে বললো
“এটা আমাদের বাসা।আজকে রাতে তুমি এখানেই থাকবে।কালকে খুব সকালে আমরা গিয়ে মিহিরকে রিলিজ করিয়ে আনবো।এখন গাড়ি থেকে নামো।”
” না আমি রাতে এখানে থাকবো না।আমি এখনি হসপিটালে যাবো। “
আহান শক্ত কন্ঠে বললো
“মেঘ তোমাকে আমি গাড়ি থেকে নামতে বলছি। এক্ষনি গাড়ি থেকে নামো নাহয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
মেঘ রেগে চিল্লিয়ে বললো
” বললাম তো আমি হসপিটালে যাবো।”
আহান আরও জোরে চিল্লিয়ে বললো
” শেষ বারের মতো বলছি মেঘ গাড়ি থেকে নামো।তুমি এখন আমাদের বাড়িতে যাবে ।”
মেঘ নামলো না।ওভাবেই চুপ করে বসে রইলো।ওর চোখে পানি চিকচিক করছে,,ভিষন কান্না পাচ্ছে । এই লোকটা এমন কেনো? শুধু কথায় কথায় রাগ দেখায় , ধমক দেয়।বুঝতে পারে না যে মেঘ তাকে ভিষন ভয় পায়।আহান কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর বাকা একটা হাসি দিয়ে মেঘকে কোলে তুলে নিলো। হটাৎ এমন হওয়ায় মেঘ হকচকিয়ে উঠলো।চোখ বড়ো বড়ো করে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“কি করছেন নামান আমকে? কেউ দেখলে কি ভাববে?”
আহান শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
“এতক্ষন ভালো করে বলেছিলাম শুনলে না। তোমাকে তো ভালো ভাবে বললে তুমি বুঝতেই পারো না । তোমাকে তো সবকিছুতে ত্যারামি করতেই হবে।”
মেঘ ছটফট করতে করতে বললো
” ভাইয়া আমাকে নামান প্লিজ ।আমি নিজেই পায়ে হেটে ভিতরে যাচ্ছি। “
কিন্তু আহান মেঘের কোনো কথাই শুনলো না ও মেঘকে কোলে নিয়েই সামনে এগোতে লাগলো ।মেঘ হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে। আহানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ও ওর মতোই হাটতে লাগলো।আহানকে এভাবে একটা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসতে দেখে গার্ডদের চোখ বড় বড় হয়ে হয়ে গেলো।যে ছেলে ঠিকভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলে না।সে একটা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসছে ।এটা যেনো রাতের আকাশে সূর্য দেখার মতো ঘটনা।একজন গার্ড এগিয়ে এসে আহানের সামনে দাড়িয়ে জিঙ্গেস করলো
“এনি প্রভলেম স্যার?”
আহান সাভাবিক ভাবেই বললো
” নো প্রভলেম। আপনি একটা কাজ করুন গাড়ির পিছনে কিছু ব্যাগ রাখা আছে, গাড়িটা পার্ক করে ,ব্যাগ গুলো ভিতরে নিয়ে আসুন।”
গার্ডও ওকে স্যার বলে গাড়ির দিকে চলে গেলো।আহান আবার সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।
আহানদের বাসার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন আহাদ খান ,মোনা খান, মিরা রহমান , আজম রহমান। শিহাব রহমান আর সাথি রহমান সিলেট চলে গেছেন।পাচদিন আগে আজম রহমান, মিরা রহমান, শিহাব রহমান, সাথী রহমান সিলেট গিয়েছিলো ।ওখানের সবকিছু গুছিয়ে মিরা রহমানদের বাকি জিনিস পএ নিয়ে মিরা রহমান আর আজম রহমান দুইদিন পরই ঢাকা এসে পড়েছিলেন বরাবরের জন্য ।শিহাব রহমানের জরুরি কাজ থাকায় শিহাব রহমান আর সাথি রহমান আসতে পারেননি। বলেছেন পড়ে এসে আবার সবার সাথে দেখা করে যাবেন। মিরা রহমানদের আনা জিনিস পএ সব ওনাদের নতুন বাড়িতে শিফট করা হয়ে গেছে।কালকে মিহিরকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে ওনারা সবাই ওই বাড়িতে যাবেন। চায়ে চুমুক দিয়ে মোনা খান বললো
“আহান তো বললো মেঘকে নিয়ে আসছে। সাড়ে এগারোটা বাজে এখনো আসলো না কেনো ।তাহলে কি মেঘকে রাজি করাতে পারেনি।”
আহাদ খান মুচকি হেসে বললো
” তুমি তোমার ছেলেকে চেনো মোনা ,যখন একবার বলেছে মেঘকে নিয়ে আসবে তখন যেভাবেই হোক নিয়ে আসবে।”
আজম রহমান আহাদ খানকে উদ্যেশ্য করে বললো
“তুই আমার মেয়েকে চিনিশ না । ওকে যতটা ভদ্র দেখতে তারথেকে দুইগুন ঘ্যাড়ত্যাড়া।বিশেষ করে যাকে ও পছন্দ করে না তার কথা জিবনেও শুনবে না ।তাই আহানের কথা না শোনারই চান্স কম।”
আহাদ খান একটু ভাব নিয়ে বললো
” দেখা যাক কি হয়।”
মোনা খান উদাশ গলায় বললেন
” আহান যদি মেঘকে নিয়ে আসতে পারে আমার থেকে বেশি খুসি কেউ হবে না। আজ বারো দিন যাবোত মেয়েটা হসপিটালে আছে। মেঘ তো মিহিরের অপারেশনের দুই পরই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আর এই দশ দিন নিজের হাতে মিহিরের সেবা করেছে।মিহিরকে খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে ওর ঔষধ খাওয়ানো সব নিজের হাতে করেছে । ভাইকে ছেড়ে কোথাও একটুর জন্যও বের হয়নি।সারা রাত জেগে মিহিরের খেয়াল রেখেছে একটুর জন্যও ঘুমায়নি ।যদি রাএে মিহিরের কস্ট হয় আর ও যদি ঘুম থেকে উঠতে না পারে সেইজন্য।”
কথাটা বলেই মোনা খান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ওনাদের কথার মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো। ওনারা সবাই দরজার দিকে তাকালেন। মিরা রহমান বললো
——–“ওইতো ওরা মনে হয় এসে গেছে।”
একজন মহিলা র্সাভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আহান মেঘকে নিয়ে বাসার ভিতরে ডুকলো। মোনা খান, মিরা রহমান, আহাদ খান, আজম রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে গেলেন।ওনারা সবাই বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছেন আহানের দিকে। মেঘ রেগে হাত পা ছোড়াছুড়ি তো করছেই সাথে আহানকে কিল ঘুসিও দিচ্ছে। আর আহান কিচ্ছু বলছে না চুপচাপ সব সহ্য করছে। র্সাভেন্টরাও সবাই চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান সোফার কাছে এসে মেঘকে ধরাম করে সোফায় ফেলে দিলো।মেঘ আহ বলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বললো
—– ” ও মা আমার কোমরটা ভেঙে গেলো। ইউ ইডিয়েট , ননসেন্স, ম্যানারলেস এতো জোরে কাউকে ফেলে।”
কথাগুলো বলেই মেঘ জিভ কাটলো ।এতোক্ষনে হুশ এলো ও কাকে কি বলছে।মেঘ ভিতু চোখে আহানের দিকে তাকালো আহান রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো। মিরা রহমান , আজম রহমান ,মোনা খান , আহাদ খান বুঝতে পারলো আহান মেঘকে জোড় করে এখানে নিয়ে এসছে।বাইরের সেই গার্ডটা ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে আহানকে উদ্যেশ্য করে বললো স্যার এগুলো কোথায় রাখবো।
“আহান বললো উপরে গিয়ে আহিরের পাশের রুমটায় রেখে এসো ।”
গার্ডটা ব্যাগগুলো নিয়ে উপরে চলে গেলো।মিরা রহমান অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো
“আহান এই এতোগুলো ব্যাগ কিসের?”
” এগুলোতে মেঘ আর মিহিরের কিছু ড্রেস আছে।”
মিরা রহমান অভাক গলায় প্রশ্ন করলেন
“তোমরা শপিং এ গিয়েছিলে । আমাদের বলোনি কেনো? আর একসঙ্গে এতোগুলো ড্রেস কিনে টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয়। আমি পরে ওদের আস্তে আস্তে কিনে দিতাম।”
“মামনি এই ড্রেস গুলো আমি আমার ভাই বোনদের কিনে দিয়েছি তাই টাকা নষ্ট হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তোমার ভালো লাগলে তুমি আবার ওদের নতুন ড্রেস কিনে দিও। আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। এখন আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। আমি একটু রেষ্ট নেবো। “
মোনা খান আহানের সামনে এসে জিঙ্গেস করলো
“ডিনার করবে না?”
” না করবো না। শপিং করার মাঝে শপিং মলের একটা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আমরা সবাই ডিনার করে আসছি।”
কথাগুলো বলেই আহান সিড়ি দিয়ে উপড়ে চলে গেলো।
_________________________________________
ফোনের আর্লামের কর্কশ শব্দে ঘুমের ঘোরে চোখ মুখ কুচকে ফেললো মেঘ। মুখ দিয়ে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারণ করে পাশে থাকা একটা বালিশ নিয়ে কানের উপড়ে চেপে ধরলো ।কিন্তু আর্লাম কিছুতেই থামছে না। তাই মেঘ আর কোনো উপার না পেয়ে জোরে মাম্মাম বলে চিৎকার দিলো। ওর চিৎকার শুনে মোনা খান, আহাদ খান , মিরা রহমান,আজম রহমান , আহান সবাই দৌরে মেঘের রুমে এলো।দরজা হালকা করে লাগানো ছিলো তাই কারো আসতে কোনো সমস্যা হলো না। এসে দেখলো মেঘ গুটিশুটি মেরে কানের উপর বালিশ চেপে ধরে শুয়ে আছে ।মেঘকে এভাবে দেখে ওনারা সবাই ভয় পেয়ে গেলেন ।মিরা রহমান হন্তদন্ত হয়ে মেঘের কাছে গিয়ে মেঘকে জিঙ্গেস করলো
—-“কি হলো মেঘ এভাবে চেচাচ্ছো কেনো ? ভয় পেয়েছো মা?”
মেঘ ওর বেডের পাশের টেবিলে থাকা নিজের ফোনটাকে দেখিয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো
” মাম্মাম এই স্টুপিড এর্লামটাকে বন্ধ করো প্লিজ আমি ঘুমাতে পাড়ছি না।”
আহাদ খান, মোনা খান, আহান হতবম্ভ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। মিরা রহমান রেগে বললো
“মেঘ তোমাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মাড়বো।অসভ্য মেয়ে কোথাকার।এজন্য এতো জোরে কেউ চিৎকার করে।”
“মাম্মাম চড়টা পড়ে মেরো ।আগে ওটাকে বন্ধ করো আমি ঘুমাবো।”
আহান রেগে গিয়ে বললো
” পড়াচ্ছি আমি তোমাকে ঘুম। “
বলে মেঘের কাছে গিয়ে ওকে এক জটকায় কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ।ওয়াশরুমে ঢুকে ধরাম করে মেঘকে বাথটবের ভিতরের পানিতে ফেলে দিলো।মেঘ আ আ আ আ বলে জোরে একটা চিৎকার দিলো।আহানের এমন কান্ডে মিরা রহমান এবং আজম রহমান শকড হয়ে দাড়িয়ে আছে।আহাদ খান আর মোনা খান মুখ টিপে হাসছে।মেঘ রেগে বললো
“হোয়াট দ্যা হেল ।কোন ছাগল আমায় পানিতে ফে—“
মেঘ কথাটা ষেশ করতে পারলো না তার আগেই আহান ধমক দিয়ে বললো
” আর একটাও যদি উদ্ভট কথা বলো তাহলে মেরে তোমার দাত ভেঙ্গে দেবো।পাচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেস হয়ে বের হও নাহলে তোমাকে রেখেই আমি হসপিটালে চলে যাবো।”
বলেই আহান হনহন করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো ওর পিছনে পিছনে বাকিরাও বের হয়ে গেলো।
আহান নিজের রূমে ঢুকতে ঢুকতে মোনা খান কে উদ্যেশ্য করে বললো
“মা আমার জন্য এক্ষনি রুমে এক মগ কফি পাঠিয়ে দেও।”
বলেই রুমে ডুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।তারপর ধুপ করে গিয়ে খাটের উপর বসে পড়লো। তখন মেঘ ওভাবে চিৎকার দেওয়ায় আহান প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো ভেবেছিলো হয়তো পড়ে টরে গেছে। কিন্তু গিয়ে যখন শুনলো আর্লাম বন্ধ করার জন্য ওভাবে চিৎকার করেছে তখন ইচ্ছে করছিলো মাথায় তুলে একটা আছাড় মাড়তে। কারো দরজায় নক করার শব্দে ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে। আহান গিয়ে দরজা খুলে দেয় একজন সার্ভেন্ট ভিতরে এসে কফি রেখে চলে যায়। ও দরজা টা আটকে দিয়ে কফি মগ নিয়ে ব্যাকনিতে চলে যায়।
____________________________________________________________________________________
মেঘ সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে খাটের উপর বসে চুল মুছতে মুছতে ফোনটা হাতে নিয়ে অন করলো দেখলো মাএ সকাল সাতটা বাজে।মেঘের এবার ভিষন রাগ হলো ।
এই সকাল সাতটার সময় এই স্টুপিড ফোনটার জন্য ওকে সাওয়ার নিতে হোলো ইচ্ছে করছে একটা আছার মেরে ভেঙ্গে ফেলতে ।পরক্ষনেই আবার মনে মনে বললো না না ফোনটা ভাঙা যাবে না।মাএ দুই মাস হলো কিনেছি এিশ হাজার টাকার ফোন যদি ভেঙে ফেলি তাহলে মাম্মাম আমাকে মেরে এিশ টুকরা বানাবে।তাছাড়া আমার ফোনের তো কোনো দোষ নেই এর্লাম টা তো আমি দিয়েছিলাম। কিসের জন্য যে সকাল ছয়টার এর্লাম দিতে গেলাম।তারপর আবার ভাবলো আজব আমার ফোন আমার এর্লাম আমি যা খুশি করবো তার জন্য আমাকে পানিতে ফেলে দিতে হবে ।সব দোশ ওই ডিসিপ্লিনের ড্রামের ওর জন্য আমার সাধের ঘুমটা নষ্ট হয়ে গেলো। এসব ভাবছিলো তখনি মেঘের ফোন বেজে উঠলো স্কিনে তাকিকে দেখলো হিমা আপি লেখা মেঘ ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে হিমা বললো
“গুড মরনিং বনু। রাতে ঘুম কেমন হলো।”
এবার যেনো মেঘের দুঃখটা আরো বেড়ে গেলো মেঘ কাদো কাদো গলায় বললো
” ব্যাড মরনিং আপি। “
“কেনো সোনা, ব্যাড মনিং কেনো? কাদছিস কেনো কিছুকি হয়েছে?”
মেঘ ন্যাকা কান্না করে এতক্ষন যা যা হয়েছে সবটা বললো।সবটা শুনে হিমা, হিয়ান ,রিয়ান, আহির, মিহির, সাড়িকা, সাইফা সবাই হু হা করে হেসে দিলো।আসলে হিমা এতক্ষন ফোন লাউড দিয়ে কথা বলছিলো তাই ওরা সবাই সবটা শুনতে পেয়েছে। মেঘ রেগে গিয়ে বললো
“ওই খচ্চরটা আমকে পানিতে ফেলে দিলো আর তোমরা সবাই হাসছো।বাই দা ওয়ে তোমরা সবাই হসপিটালে তারমানে তোমরা কাল রাতে কেউ বাসায় যাওনি ।সবাই সাড়া রাত হসপিটালেই ছিলে । “
মেঘের মোনটা এবার আরো খারাপ হয়ে গেলো। তাই আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।মাথার তোয়ালেটা খাটের উপর রেখে ব্যালকনিতে চলে গেলো।ব্যালকনিতে গিয়েই ওর কালো আধার নামা ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।মেঘ দৌড়ে রুমের মধ্যে এলো তারপর গায়ে ওরনা জরিয়ে হাতে ফোনটা নিয়ে এক দৌরে নিচে চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে এবাবে মেঘকে দৌড়ে নামতে দেখে মোনা খানা জিঙ্গেস করলো
“এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
” বাইরে গারডেনে এরিয়ায় যাচ্ছি।”
” তো এভাবে দৌড়ানোর কি আছে আস্তে যা।পড়ে গেলে ব্যাথা পাবি।”
মেঘ পড়বোনা বলে এক দৌড় দিয়ে বাইরে চলে গেলো।
মেঘ বাইরে এসে ভিষন অবাক হয়ে গেলো।এই বাড়ির বাইরের দিকটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। মেঘের মনে হচ্ছে মেঘ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে তাই সিউর হওয়ার জন্য মেঘ নিজের হাতে একটা জোরে চিমটি কাটলো।নিজে চিমটি কেটে আবার নিজেই আহ বলে মৃদু চিৎকার দিল। মেঘ পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখতে লাগলো। বাড়িটা তিন তলার ।পুরোটা সাদা রঙ করা।বাসা থেকে গেট পর্যন্ত সোজা একটা রাস্তা গেছে ।রাস্তার দুইপাশে কমলা আর হলুদ রঙের গাধা ফুল গাছ লাগানো।গাছ গুলো একদম এক সমান করে কাটা ।রাস্তাটার এক পাশে বেশ বড়োসড়ো একটা সুইমিংপুল ।পুলের পাশে তিনটা গোল টেবিল ,প্রত্যেকটা টেবিলে পাচটা করে চেয়ার রাখা ।ছয় জন কালো ড্রেস পড়া গার্ড বন্ধুক হাতে নিয়ে সেখানে বসে আছে। রাস্তার আরেক পাশে একটা বাস্কেট বলের মাঠ। তার থেকে একটু দূরে একটা সার্ভেন্ট কয়াটার । সেটাও সাদা রঙের ।বাড়ির পিছনের দিকে ছোট একটা গ্যারেজ যেখানে দুইটা বাইক আর তিনটা প্রাইভেট কার পার্ক করা। গ্যারেজের পাশে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান সেখানে কয়েক ধরনের ফুল আছে।বেশির ভাগই গোলাপ ফুলের গাছ।আহান ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো। হটাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ নিচে দাড়িয়ে আছে ।কালো রঙের একটা লিলেনের গাউন আর হোয়াইট কালারের লেগিন্স পড়া সাথে হোয়াইট কালারের ওরনা গলায় রাউন্ড করে ঝুলিয়ে রেখেছে । ভেজা চুল গুলো ছেড়ে রাখার কারনে কোমর পর্যন্ত এসে পড়েছে। সামনের ছোট চুলগুলো বারবার হাত দিয়ে কানের পিছনে গুজে দিচ্ছে।ভেজা চুলে মেঘকে অসম্ভব স্নিগ্ধ লাগছে। আহান মুগ্ধ হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মনে মনে বললো।
“মেঘের পরি বারবার এভাবে কেনো আমার সামনে আসো বলোতো।তোমাকে দেখলেই আমার সবটা এলোমেলো হয়ে যায়।নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে । তোমাকে খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে করে । তুমি যানো আমি নিজেকে কতো কষ্টে সামলে রাখি ।প্লিজ আমাকে এভাবে তোমার প্রতি দূর্বল করে দিয়ো না।তাহলে তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে।”
আহান কফি মগটা ব্যালকনিতে রেখে রুমে গেলো ।রুম থেকে ওর ক্যামেরাটা নিয়ে আবার ফিরে এলো। তারপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘের ছবি তুলতে লাগলো।মেঘ হেটে হেটে সবকিছু ঘুরে দেখছিলো তখনি দেখলো—-
চলবে,,,