#লেখিকাঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_5
রাত 1:25 বাজে।…..
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো মেঘ। মাথাটা ভিষন ভারি হয়ে আছে মাথায় চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব করলো।চারপাশে ভালো করে তাকালো ,,,একটু নড়াচড়া করতেই হাতে কিছুতে টান খেলো।মেঘ তাকিয়ে দেখলো তার হাতে স্যালাইন লাগানো ,,,গায়ে হাসপাতালের ড্রেস,,,মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো।তারমানে সে হাসপাতালে আছে।হাসপাতালের কথা মনে হতেই তার মিহিরের কথা মনে পরল,,,চোখের সামনে ভেষে উঠলো মিহিরের রক্তাক্ত শরীরটা ,,, মূহুর্তেই মেঘ হাইপার হয়ে গেল,,,তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে তার ভাইয়া কোথায় আছে?কেমন আছে?পাগলের মতো বিরবির করে বলতে লাগলো,, আমাকে ভাইয়ার কাছে যেতে হবে,,,কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসলো,,,হাত থেকে টান দিয়ে ক্যানোলা সহো স্যাল্যাইন খুলে ফেললো,,,মুখের অক্সিজেন মাক্সটা ছুটিয়ে ফেললো,,,শ্বাস নিতে ভিষন কষ্ট হচ্ছে মেঘের,,,কন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।সে বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে একপ্রকার দৌরে বাইরে চলে গেল।
________________________________________________________________________________________________
ওটির বাইরে বসে আছে সবাই,,,সবার মুখেই চিন্তার ছাপ।একটু আগে একজন নার্স ওটি থেকে বাইরে বের হয়েছিল,,তাকে মিহিরের কথা জিঙ্গেস করায় সে বলে ,,,পেশেন্টর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। আহান একপাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে,,,একটু আগে সে তার মামাদের সাথে ফোনে কথা বলে উপরে এসেছে।তার মামা-মামি,ভাই -বোনরা সবাই এখানে আসতেছে।মিরার কথা শুনেই সবাই সাথে সাথে হাসপাতালের উদ্যেশে রওনা দিয়েছেন।
মা,,. কারো ডাক শুনে চোখ তুলে সেদিকে তাকায় সবাই,,,তাকিয়ে সবাই হতবম্ব হয়ে যায়।মেঘ দাড়িয়ে আছে ,,,হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে,,,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখ দুটো অসম্বব লাল হয়ে আছে,,, এইটুকু সময়ের মধ্যে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।আহান একদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে এতক্ষন মেঘকে পর্যবেক্ষন করছিলো,,,তার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো ,,,কে এই মেয়েটা?মিরা রহমান এর কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হলো আহান। মিরা রহমান বসা থেকে দাড়িয়ে গিয়ে বেশ উএেজিত হয়ে বললে
___”মেঘ তুমি কেন এখানে উঠে এসেছো?”
মেঘ ভাংগা গলায় বললো
__”ম মা, ভ ভাইয়া কোথায়,,,,আ আমি ভাইয়ার কাছে যাবো।”
মেঘ ঠিক ভাবে দাড়াতে পাড়ছে না,,,কথা বলার সময় সব কথা গলায় আটকে যাচ্ছে,,,ঠিক করে কথা বলতে পারছে না,,,মেঘের হাত পা কাপছে মনে হচ্ছে এখনি পরে যাবে,,,মিরা রহমান গিয়ে মেঘকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন,,,আহান , আহির,আহাদ খান বুঝতে পারলেন এটাই মিরার মেয়ে।কিন্তু ওদের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ,,,,ওর হয়েছে টা কি এভাবে কেনো বিহেব করছে?আজম রহমান মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললেন
__” মামনি তোমার ভাইয়া একদম ঠিক আছে।কিচ্ছু হয়নি মিহিরের।”
__”তাহলে আমাকে এক্ষনি ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলো,,,আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।”
মিরা রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
__”,তুমি তো এখন অসুস্থ মেঘ ,,,একটু সুস্থ হও,,,তারপর তোমাকে তোমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবো।”
মেঘ এবার মিরা রহমানকে জোরে ধাক্বা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো,,,তারপর চেচিয়ে বলতে লাগলো
__” তোমরা মিথ্যে বলছো,,, তোমরা পরে আমাকে আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবে না। “
কথাটা বলেই আসে পাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলো।কিছু নার্স মেঘের চেচামেচি শুনে এখানে দৌড়ে এসেছে।তাদের মধ্যে এজনের হাতে একটা ট্রে,,,,আর সেই ট্রেটার মধ্যে কিছু Surgical instument (সারজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট),,,,মেঘ নার্সটার কাছে গিয়ে নার্সটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছো মেরে ট্রে থেকে একটা surgical knife নিয়ে নেয়,,,তারপর সেটা হাতে জোরে চেপে ধরে ,,,আর বলে
___”ত তোমরা আমাকে এ এখনি আ আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে য যাবে,,, নয়তো আমি আমার হাত কেটে ফেলবো।”
মেঘের এরকম কাজে সবাই শকড হয়ে গেছে,,,কি করবে ওনারা কিছুই বুঝতে পাড়ছে না,,সবাই মেঘকে হাত থেকে নাইফটা ফেলে দিতে বলছে,,,,কিন্তু মেঘ কারোর কথা শুনছে না,,,ওর কাছে কেউ এগিয়ে আসলেই নাইফটা আরো জোরে হাতে চেপে ধরে,,,তাই ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে যেতেও পারছে না,,,,সবাই এটা সেটা বলে মেঘের মাইন্ড ডিসট্যাক করার চেষ্টা করছে,,,ঠিক সেই মূহুর্তে আহান খুব সর্তকে মেঘের কাছাকাছি চলে গেল,,,মেঘ আহান কে দেখে দুপা পিছিয়ে গিয়ে কান্নাভেজা গলায় বললো,,,
__” দেখুন একদম আমার দিকে এগোবেন না ।তাহলে কিন্তু আমি আমার হাত কেটে ফেলবো।(তারপর কাদতে কাদতে বললো)আমি তোমাদের কাছে তো আর বেশি কিছু চাইছি না,,,শুধু আমার ভাইয়া কে একটু দেখতে চাইছি,,,শুধু একটুখানি দেখেই চলে আসবো প্রমিজ,,,(আহানের দিকে তাকিয়ে বললো) ওরা আমায় নিয়ে যাচ্ছে না, আপনি একটু আমাকে আমার ভাইয়ার কাছে নিয়ে যাবেন প্লিজ।”
মেঘের শেষের কথাটা আহানের বুকে গিয়ে লাগলো। সে চমকে উঠে মেঘের চোখের দিকে তাকালো,,, অসম্ভব মায়াবি দুটো চোখ,,, চোখ দিয়ে পানি পরছে,,,কান্নার কারনে গোলাপি ঠোট দুটো বারবার কেপে কেপে উঠছে,,,, চোখের ঘনো পাপড়ি গুলো চোখের পানিতে একদম ভেজা,,,,চোখ দুটো সামান্য ফোলা,,,, নাকের ডগা, গাল কান্নার কারনে লাল হয়ে আছে। আহান মেঘের চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকালো,,,এই চোখের ভাষা যেনো সে খুব সহযেই পড়ে ফেললো।।এই চোখে যেনো লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট যন্ত্রণা।, সে নিযের মনকে প্রশ্ন করলো আচ্ছা কিসের এতো কষ্ট এই মেয়েটার?এই মূহুর্তে ,, তার খুব ইচ্ছে করছে মেঘকে একবার ছুয়ে দিতে,,,তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতে এই পিচ্চি মায়াপরি তোমার এই মায়া ভরা চোখে পানি একদম মানায় না। কেদো না প্লিজ,,,তোমার কান্না দেখে কোনো এক অজানা কারনে আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তোমার চোখের পানি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না।
কিন্তু কথাগুলো তার মনেই থেকে গেল,,,মুখে আর বলা হলো না,,, শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নেয়।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে
__” মেঘ তুমি না চাইলে আমি তোমার দিকে একদম এগোবো না,,,,এনারাও কেউ এগোবে না। প্লিজ তুমি হাত থেকে নাইফটা ফেলে দাও,,,হাতটা অনেক কেটে গেছে।আমরা তোমার সব কথা শুনবো বিলিভ মি।”
__”আমি এত কিছু শুনতে চাই না,,,আমি এক্ষুনি আমার ভাইয়ার কাছে যাবো,,,এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।
আহান বললো
“__মেঘ আমার দিকে তাকাও”
আহানের কথায় মেঘ আহানের চোখের দিকে তাকালো,,,আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে আহ্লাদি গলায় বললো
__”তোমার ভাইয়া ওটিতে আছে,,,আমার মা তোমার ভাইয়ার অপারেশন করছে,,,অপারেশন শেষ হলে যখন তোমার ভাইয়া তোমাকে দেখতে চাইবে,,,,তখন যদি শোনে তুমি নিজেকে এভাবে হার্ট করেছো,,,,তখন তোমার ভাইয়া কতটা কষ্ট পাবে একবার ভেবে দেখেছো।”
মেঘ এক ধ্যানে আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো,,,আহান সেই সুযোগে কথাগুলো বলতে বলতে মেঘের দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো।তারপর মেঘকে একটা হেচকা টান দিয়ে মেঘের পিঠ তার বুকের সাথে ঠেকিয়ে দাড় করায় ।আহান তার একহাত মেঘের দুইহাত চেপে ধরে,,,আর অন্য হাত দিয়ে নাইফটা নিয়ে নিচে ছুড়ে মাড়ে।মেঘ নিজেকে আহানের থেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে।আহান আরও শক্ত করে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো,,তারপর আহান তার হাতের দুই আঙুল দিয়ে মেঘের কানের একটু নিচে জোড়ে চাপ দিলো,,,সাথে সাথে মেঘ সেন্সলেস হয়ে আহানের বুকে ঢলে পড়লো।
সবাই একটা সস্তির নিশ্বাষ ফেললো। এতক্ষন এখানে চেচামেচির কারনে অনেকেই এসে ভির করেছে।এদের মধ্যে কিছু ডাক্তার নার্স আর অন্যান্য পেশেন্টের বাড়ির লোক ।আহান মেঘকে কোলে তুলে নিল তারপর সবার দিক তাকিয়ে রেগে চেচিয়ে বললো
__”এখানে সার্রকাস চলছে না।যে সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছেন।”
আহানের ধমকে সবাই কেপে উঠলো,,,ওখানে যারা বাইরের লোক ছিল তারা দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।আহান মেঘকে কোলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলো,,,ওদের পিছনে পিছনে ওদের পরিবারের সবাই ঢুকলো,,,বাইরে দাড়িয়ে থাকা ডাক্তার নার্সরা ভিতরে ঢুকে এক কোনায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আহানের ভয়ে সামনে এগোচ্ছে না,,,,ওর রাগ সম্পর্কে সবার ধারনা আছে।
আহান মেঘকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে ডাক্তারদের দিকে ঘুরে রাগি গলায় বললোঃ
__” এবার আপাদের কি ট্রিটমেন্ট করার জন্য স্পেসাল ভাবে বলা লাগবে।”
এবার ডাক্তাররা দ্রুত এসে মেঘের ট্রিটমেন্ট শুধু করলো।আহান রাগি দৃষ্টিতে এখনো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা খেয়াল করে একজন ডাক্তার বললোঃ
___” সরি স্যার।”
আহান রেগে চেচিয়ে বললো
__”go to hell you and with you’re sorry.”
আহাদ খান শান্ত গলায় বললো
” behave yourself আহান,,,এটা hospital এখানে এতো চেচামেচি কেন করছো।”
__” exactly বাবা এটা একটা hospital,,,,এখানে প্রত্যেকটা কেবিনে রোগীর পাশে একজন করে নার্স থাকার কথা। তাহলে এই কেবিনে কেনো ছিলো না বাবা ।আজকে যদি এদের কেয়ারলেসির জন্য এই মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো।কাদের কাছে হসপিটালের দ্বায়িত্ব দিয়েছো বাবা,,,যারা ঠিকঠাক ভাবে রোগিটা অবদি সামলাতে পারে না। তারা আবার এতো বড়ো হসপিটাল কিভাবে সামলাবে।”
আহাদ খান কি বলবে বুঝতে পারছে না,,,তার ছেলে যে কথাগুলো বলছে তা ঠিক বলছে,,,কিন্ত ওকে এখন থামাতে হবে যা রেগে আছে তাতে সব ডাক্তার নার্সদের চাকরি তো খাবেই,,,নিজের বাবাকেও ছাড়বে না।তাই সে ব্যাপারটা সামলাতে আহানকে বললো
__” একটু শান্ত হও আহান,,,ওদের তরফ থেকে আমি তোমাকে সরি বলছি,,ওদের একটা ভুল হয়ে গেছে এর পরের বার থেকে আর হবে না,,,আমি নিজে এই ব্যাপারটা দেখবো। তুমি এখানে এভাবে চেচামেচি করলে মেঘের কষ্ট হবে।আর ডাক্তাররা ঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট টা করতে পারবে না।”
আহান তার বাবার কথায় কিছুটা শান্ত হলো।তারপর তার বাবার দিক থেকে ঘুরে একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে কেবিন দেকে বেড়িয়ে গেল।
আহান বের হতেই ডাক্তাররা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
একজন ডাক্তার আহাদ খানের দিকে তাকিয়ে বললো
__’স্যার যদি কিছু মনে না করেন ,,,আপনারা একটু বাইরে গেলে ভালো হতো,,,এখানে এতোজন থাকলে রোগীর সমস্যা হবে।”
আহাদ খান ঠিক আছে বলে,, সবাইকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো।
ভোর সাড়ে চারটা,,,একটু আগেই মিহিরের অপারেশন শেষ হয়েছে,,, শুরুতে কপ্লিকেশন হলেও এখন মোটামুটি ঠিক আছে,,,এখনও সেন্স ফিরেনি,,,আপাততো ডাক্তাররা মিহিরকে icu তে আন্ডার ওফজারবেশনে রেখেছেন,,,সেন্স ফিরলে কিছু টেষ্ট করে তারপর কেবিনে শিফট করা হবে। এদিকে মেঘ বারবার বিড়বিড় করে ভাইয়া ভাইয়া করছে,,, বারবার হাইপার হয়ে যাচ্ছে এভাবে করতে থাকলে ওর শরীর আরো খারাপ হতে পারে,,, তাই জন্য মোনা খান,,ডাক্তার রিয়া চৌধুরী এবং ডাক্তার সায়িদ চৌধুরী মিলে ডিসিশন নিয়েছেন,,,মেঘকে মিহিরের কাছে নিয়ে গিয়ে এটা দেখিয়ে নিয়ে আসবে যে মিহির একদম ঠিক আছে,,,তাহলেই হয়তো মেঘের কন্ডিশন কিছুটা ভালো হতে পারে।
সাইদ চৌধুরী হলো মোনা আর মিরার ছোট ভাই,,,রিয়া চৌধুরী হলো সাইদের ওয়াইফ।মিরা রহমানেররা চার ভাই বোন।দুই ভাই দুই বোন।
সবার বড়ো হলেন হাসান চৌধুরী,,,পেশায় একজন বিজনেস ম্যান,,,ওনার ওয়াইফের নাম শারমিন পেশায় একজন টিচার,,,ওনাদের এক ছেলে এক মেয়ে,,,,বড় ছেলের নাম হলো হিয়ান।আহানের সাথে লন্ডনের একই ভার্সিটিতে একই ক্লাসে পড়ে।ছোট মেয়ের নাম হলো হিমানি,,সবাই হিমা বলে ডাকে।লন্ডনের একটা law কলেজে পড়াশোনা করে।দুই মাস আগে হিমার বিয়ে হয়েছে,,,ওর বরের নাম রিয়ান।আহান এবং হিয়ানের ব্যাসমেইড এবং বেস্টফ্রেন্ড। হিমা আর রিয়ানের লাভ ম্যারেজ হয়েছে,,,মূলতো এই বিয়ের জন্যই আহান, হিয়ান,হিমা,রিয়ান বাংলাদেশে এসেছে।বিয়েটা যেহেতু শেষ হয়ে গেছে তাই ওরা কিছুদিন পর সবাই আবার লন্ডনে চলে যাবে।
আর মেজ হলো মোনা খান,,সেজ হলো মিরা রহমান।
সবার ছোট সাইদ চৌধুরী ,,, ওনি এবং ওনার ওয়াইফ দুইজনই ডাক্তার,,,ওনার তিন ছেলেমেয়ে,,,বড় দুই মেয়ে টুইনজ,,,তাদের মধ্যে বড় হলো সারিকা আর এক মিনিটের ছোট হলো সাইফা।দুজন ক্লাস নাইনে পড়ে। আর ছোট ছেলে নাম হলো ছাহীর ক্লাস ফাইবে পড়ে।
আহান ফোনে কথা বলার কিছুক্ষন পরই ওনারা সবাই এখানে এসে পড়েছিলেন।ওনারা এখানে এসে রিতিমতো সবাই শকড ছিলেন,,,,কোনোদিন যে মিরা রহমানকে ফিরে পাবেন সেটা ভাবতেও পারেনি কেউ,,,তার উপর আবার মেঘ আর মিহির কে দেখে যতোটুকু মনের অভিমান বাকি ছিলো সেটুকু উড়ে গেছে,,, এখন তাদের কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে কেনো মিরা রহমানকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলো,,,তাদের আদরের বোনটা এতটাই অভিমান করেছিল যে এতো বছরে সে কেমন আছে কোথায় আছে ভাইবোনদের কাউকে জানায় নি,,,,মিরা রহমান ভাই ভাবিদের জরিয়ে ধরে অনেক কেদেছে,,,,এতো বছর পর আবার নিজের পরিবার কে দেখে, আর তাদের উপর রেগে থাকতে পারেন নি,,, এতো বছরের সব রাগ অভিমান নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
Icu এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হাসান চৌধুরী,, শারমিন চৌধুরী,,হিয়ান,,হিমা,,রিয়ান,,আহীর,,সারিকা সাইফা,, ছাহির,,আহাদ খান, শিহাব রহমান,,শাথি রহমান,মিরা ও আজম রহমান।স্ট্রেচারে করে কেবিন থেকে বের করে মেঘকে icu তে নিয়ে যাওয়া হলো,,,ওর সাথে সাথে মোনা খান,,আহান,,রিয়া চৌধুরী ,,সাইদ চৌধুরীও ডুকলেন।যেহেতু সবাই icu তে ঢুকতে পারবে না তাই আহীর আহানকে কল করে ফোনটা স্পিকারে দিলো,,,কারন সবাই শুনতে চায় মেঘ ঠিক কি কথা বলে।
মেঘের স্ট্রেচার টা এনে মিহিরের বেডের পাশে রাখা হলো,,,মেঘের মাথার পাশে এসে আহান এবং মোনা খান দাড়ালো,,,মিহিরের ওই পাশে দুইজন ডাক্তার আর একজন নার্স,,,মিহির আর মেঘের পায়ের কাছের দিকে দাড়িয়ে আছে রিয়া এবং সাইদ চৌধুরী।
ওখানে থাকা একজন ডাক্তার বললো
__” ডাঃ মোনা ও যদি আবার হাইপার হয়ে যায় তাহলে তো আবার নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে,,,তাছাড়া যদি এখানে ভাংচুর করে তাহলে তো (মিহিরকে দেখিয়ে বললো) এই পেশেন্টরও ক্ষতি হতে পারে।”
মোনা খান বেশ ঠান্ডা গলায় বললেন
__”No Doctor. মেঘ হাইপার হলেও কিছু করতে পারবে না,, কিছুক্ষণ আগে ওর স্যালাইনে হাই ডোজের ঘুমের ঔষধ ইনজেক্ট করা হয়েছে,, যেটা স্যালাইনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওর শরীরে গিয়ে ওকে অনেকটা দূর্রবল করে দিয়েছে,,, হয়তো স্যালাইনটা আর পাচ মিনিট চলতেই ও ঘুমিয়ে পড়বে।”
মেঘ নিভু নিভু চোখে মিহিরের দিকে তাকালো,,,মিহিরের চোখ বন্ধ করা,, একহাতে স্যালাইন দিচ্ছে ,,অন্য হাতে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে,,বুকে ব্যান্ডেস করা,,,মুখে অক্সিজেন লাগানো,,হার্ট রেট মনিটরের টুড টুড শব্দ শোনা যাচ্ছে,,,মিহিরের এই অবস্থা দেখে মেঘের চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে,,,মেঘ নিজের ব্যান্ডেজ করা হাতটা উঠিয়ে মুখের অক্সিজেন মাক্সটা খুলে ফেললো,,,তারপর কাপা কাপা হাতে এক হাত মিহিরের হাতের উপড়ে রেখে ভাংগা গলায় বললো
__” I’m sorry vaiya .i’m really very sorry. এই সবকিছু আমার জন্য হয়েছে। আমার জন্য তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছো,,,তুমি কেনো আমাকে বাচাতে গেলে,,,আমি মরে গেলেই ভালো হতো,,,আমি সবাইকে কষ্ট দেই প্রথমে আমার জন্য মাম্মাম বাবাই সবার সামনে এতো অপমানিত হলো, আর এখন আমাকে বাচাতে গিয়ে তোমার গুলি লেগেছে,,,,আমি খুব খারাপ ,, আমি সবসময় সবার কষ্টের কারন হয়ে যাই,,,,ভাইয়া আমার সাথে একটু কথা বলবে না?,,,তুমিও কি আমার সাথে রাগ করেছো,,,একটু কথা বলো না প্লিজ,,,কতোগুলো দিন তোমার সাথে ঠিক করে কথা বলা হয়নি,,, একসাথে আইসক্রিম খাওয়া হয়নি। যানো তুমি যখন আমার পাশে বসে এটা ওটা বলে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করতে আর আমি চুপচাপ থাকতাম,তখন আমার খুব কষ্ট হতো,,,ইচ্ছে করতো একবার জরিয়ে ধরে বলি ভাইয়া আমি মরে যেতে চাই, ওরা সবাই মিলে বাজে বাজে কথা বলে তোমার বোনকে অপবিএ বানিয়ে দিয়েছে,,,তোমার বোনের বেচে থাকা মুসকিল বানিয়ে দিয়েছে,,,তুমি আমাকে নিজের হাতে শেষ করে দাও ভাইয়া। কিন্তু বলতে পারিনি , সবাই অবহেলা করলেও আমার ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে ,,,এই একটা কারন আমার বেচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিলো।তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেও প্লিজ।”
কথাগুলো বলতে বলতে মেঘ চোখ বন্ধ করলো ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বিরবির করে বললো
__”Love you vaiya. আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যেও না প্লিজ। তারাতারি সুস্থ হয়ে যাও। নিজের জন্য নয় তোমার বোনের জন্য তোমাকে সুস্থ হতে হবে।”
চলবে…….