#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_30
ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে রিহারসার্ল রুমের ফ্লোরে বসে আছে দিশা,, রিজা,, মেঘ। পচন্ড রোদের তাপে তিন জনেরই প্রায় নাজেহাল অবস্থা ।বাইরে একফোটা বাতাশের ছিটে ফোটাও নেই। মাথার উপর ঘুড়তে থাকা ফ্যানটার বাতাসও গরম লাগছে।ওরা তিন জনই কাজ করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছে। কালকে ওদের ভার্ষিটিতে নবিন বরনের অনুষ্ঠান। আজকে পুরো ভার্সিটি ডেকারেশন করা হচ্ছে। কে কি পার্ফরমেন্স করবে সেটা নিয়ে সবাই ব্যাস্ত আছে। আর দিশা,,মেঘ,রিজা ওদেরকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ দেওয়া হয়েছে ওরা সবাইকে কাজ করার জন্য ইনট্রাকশন দিতে দিতেই অসুস্থ হয়ে গেছে।কাউকে কাজ করতে বললে কেউ ঠিকটাক মতো কাজটা করে না।ওরা বলে একরকম সবাই করে আরেক রকম।দিশা খিটখিটে মেজাজে বললো
“বিশ্বাস কর এখন ওই গর্দভ দুইটাকে যদি সামনে পেতাম তাহলে ওদের কাচা খেয়ে ফেলতাম।শয়তান দুইটা আমাদের ফাসিয়ে দিয়ে,,নিজেরা আনন্দ করছে।”
রিজা কনফিউজড হয়ে বললো
“কার কথা বলছিস বলতো?”
মেঘ বিরক্তির স্বরে বললো
“বুঝতে পারছিস না,, কার কথা বলছে?ওইযে সব মেয়েদের ক্রাশ, ফাটা দুইটা বাশ ওই দুইটার কথা বলছে।”
মেঘের কথা শুনে দিশা আর রিজা ফিক করে হেসে দিলো।মেঘ চোখ মুখ কুচকে বললো
“হাসিস না তো বিরক্ত লাগে!অসভ্য দুইটার জন্য আজকে আমাদের এই অবস্থা।কাজ করতে করতে প্রায় আধমরা হয়ে গেছি।এখন যদি ওদের একটাকেও হাতের কাছ পেতাম তাহলে,,,,,”
মিহির দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো
“তাহলে কি করতি শুনি?”
মিহিরের কন্ঠ শুনে দিশা,রিজা,মেঘ দরজার দিকে তাকালো,দেখলো মিহির,আহির আর ওদের পুরো বন্ধুদের গ্যাং নিয়ে ভিতরে ঢুকছে।
মেঘ বসা থেকে উঠে গিয়ে মিহিরের পিঠে একটা ধরাম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো
“তাহলে তোকে এইভাবে কয়েকটা কিল দিতাম।”
বলেই মেঘ আরো পাচ ছয়টা কিল মিহিরের পিঠে বসিয়ে দিলো।বেচারা মিহির ব্যাথ্যায় পিঠে হাত দিয়ে ডলছে।আহির ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন ও জানে ওর পিঠেও এখন তাল পড়তে চলেছে।ওর ভাবনার মধ্যেই মেঘ এসে ওর পিঠে ধরাম ধরাম করে আট দশটা কিল বসিয়ে দিলো।তাও আবার গায়ের জোড়ে।আহির ব্যাথ্যায় চোখ মুখ কুচকে দাড়িয়ে আছে।মিহির আর আহিরের বন্ধুরা মুখ টিপেটিপে হাসছে।ওরা জানে এখানে মেঘের জায়গায় অন্য কেউ যদি আহির আর মিহিরকে এভাবে মারতো তাহলে ওরা তাকে মেরে হাত পা ভেঙে এতোক্ষনে হসপিটালে পাঠিয়ে দিতো।কিন্তু মেঘ যদি ওদের মেরেও ফেলে তাও ওরা মেঘের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিবে না।মেঘের কান্ড দেখে দিশা রিজা হা হা করে হেসে দিলো।আহির আর মিহির গিয়ে ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লো।আহির মেঘের দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে বললো
“রাক্ষুসি মেয়ে একটা,, সব সময় আমাদের মতো কিউট সুইট বাচ্চা ছেলেদের মারবে।আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোর কোনোদিন বিয়ে হবে না।”
মেঘ মুখ বাকিয়ে বললো
“আমি কি বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছি নাকি?বিয়ে যদি না হয়,তাহলে না হবে তাতে তোদের কি?যাহ ফোট এখান থেকে,,গিয়ে নিজেদের চরকায় তেল দে।”
আহির বললো
“যাবোনা এখানেই থাকবো তোর কি?”
মেঘ ভেংচি কেটে বললো
“আমার কিছুই না।ইচ্ছে হলে থাক নাহলে ভাগ। শুধু শুধু কানের কাছে বসে আমার মাথা খাস না।”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“এই তোরা ধামবি নাকি দুইটাকে দুইটা চড় মারবো?আজকে অনেক কাজ আছে তাই ফালতু কথা বাদ দিয়ে সবাই কাজের কথা বল।”
মিহিরের ধমকে আহির আর মেঘ একটু দমে গেল। মিহির সিরিয়াস মুখ করে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা অ্যারেজমেন্টের লিষ্টটা একটু দেখা তো?দেখি ওখান থেকে কি কি ব্যাবস্থা তোরা এখনো করতে পারিস নি।সেগুলো আমরা করে নেবো।”
মিহিরের কথায় দিশা সম্মতি জানিয়ে ওর ব্যাগ থেকে লিষ্ট টা বের করে দিলো।মিহির লিষ্ট টা খুলে দেখছিলো তখনই মেঘ মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই ভাইয়া এইবার চিফ গেষ্ট কারা কারা আসছে।”
মিহির কাগজের দিকে চোখ রেখেই বললো
“তা জেনে তোরা কি করবি?কালকে আসলেই তো দেখতে পাবি।”
দিশা মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারন করে বললো
“যতোবার জিঙ্গেস করেছি ততোবার এই একই কথা বলেছিস!ওনাদের নাম বললে কি আমরা ওনাদের খেয়ে ফেলবো?আজব!”
আহির মুখ বাকিয়ে বললো
“তোরাই বা এতো আগ্রহ কেনো দেখাচ্ছিস?চিফ গেষ্ট যেই হোক তাতে তোদের কি?”
মেঘ ঝাড়ি মেরে বললো
“একটা সামান্য কথা বলতে তোরাই বা এতো পেচাচ্ছিস কেনো?”
আহির পকেট থেকে ফোনটা বের করে টিপতে টিপতে বললো
“একশো বার পেচাবো!তোরা’ই বা কারন ছাড়া এতোবার জিঙ্গেস করছিস কেনো?”
মেঘ কোমরে হাত দিয়ে বললো
“ওকে বলবি না তো?তাহলে আমরাও চিফ গেষ্টকে মালা আর ব্যাজ পড়াবো না।যাকে চিনিনা জানিনা তার গলায় মালা পড়াবো?হুহ ইমপসিবল! অন্য কাউকে খুজে নে ওনাদের মালা পড়ানোর জন্য।”
বলেই মেঘ ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।ওর পিছনে পিছনে দিশা আর রিজাও চলে গেলো।
_________________________
পরেরদিন সকালে……
মেঘ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে শাড়ি পড়ছে।কিন্তু এতোবার চেষ্টা করেও কুচি দিতে পারছে না।কুচি দিতে গেলেই বার বার হাত থেকে শারীটা ছুটে পড়ে যাচ্ছে।মিরা রহমান রুমে এসে মেঘের এমন অবস্থা দেখে হেসে দিলেন।তারপর নিজে গিয়ে সুন্দর করে মেঘকে শারিটা পড়িয়ে দিলেন।এরপর উনি মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে অফিষে চলে গেলেন।মেঘ মাথায় হিজাব টা বেধে হালকা একটু মেকআপ করলো।এক হাতে ঝুড়ো চুড়ি অন্য হাতে ঘড়ি পড়লো।শারির সাথে ম্যাচিং করে কালো হাই হিল পড়লো।ওর শারিটা কালো রঙের। শারির পারে গোল্ডেন কালারের লেজ এবং তার উপরে ষ্টোন বসানো।আচলটা সিম্পলের মধ্যে গরজিয়েজ করে ষ্টোন বসানো।
মেঘ রেডি হয়ে কয়েকটা পিক তুলে নিলো।তারপর বের হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা দিশাদের বাড়ির সামনে চলে গেলো সেখান থেকে প্রথমে দিশাকে পিক করলো। তারপর সাড়িকা সাঈফাদের বাড়িতে গিয়ে ওদের দুজনকে পিক করলো।রিজা আরো পরে যাবে রিজার বফ এসে ওকে নিয়ে যাবে।
_______________________
ভার্ষিটির সামনে এসে গাড়ি থামতেই মেঘ,দিশা, সাড়িকা,সাঈফা একে একে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।ওরা চারজনেই আজকে শাড়ি পড়েছে। শুধু ওরা চার জনেই নয় ভাষিটির সবাই আজকে শাড়ি পড়েছে।সাড়িকা সাঈফা পিংক কালারের সেইম ডিজাইনের শাড়ি পড়েছে।মেকআপ থেকে শুরু করে ওদের সবকিছু একদম এক রকমের,,কেউ ওদের দেখে সহজে বুঝতেই পারবে না,, কে সাড়িকা আর কে সাঈফা। দিশা হালকা নীল রঙের একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে,,সাথে ম্যাচিং হিজাব আর হাই হিল।এই গুলো ওরা আগেই প্লান করে রেখে ছিলো সবাই এক রকমের সাজবে।
ভার্ষিটির গেটের সামনে মেঘদের ব্যাজের কিছু স্টুডেন্টরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফাষ্ট ইয়ারের ষ্টুডেন্টদের হাতে একটা করে গোলাপ দিচ্ছিলো।আহির মিহির ওরাও সবাই ওখানেই দাড়িয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘ গেট দিয়ে ঢুকেই মিহিরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ওকে পিন্স করে বললো
“কিরে তোরা কি আমাদের ওয়েলকাম করার জন্য এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওয়েট করছিস?”
মিহির একটা ধমক দিয়ে বললো
“শাটআপ!তোদের ওয়েলকাম করার জন্য কোন দুঃখে অপেক্ষা করতে যাবো শুনি?চিফ গেষ্টের জন্য ওয়েট করছি।আর তোদের না আরো আগে আসতে বলে ছিলাম?তাহলে এতো দেড়ি করে কেনো আসলি?”
মেঘ বললো
“আরো আগে কোন দুঃখে আসতে যাবো শুনি?আগে এসে আমাদের এখানে কাজ কি?”
মিহির দাতে দাত চেপে বললো
“তোদের বলে ছিলাম না? চিফ গেষ্টকে তোরা ওয়েলকাম করবি!”
মেঘ ভেংচি কেটে বললো
“তোকেও বলেছিলাম না?নাম না বললে কিছুতেই ওয়েলকাম করবো না।”
“নাম জানার কি আছে শুনি,,একটু পরেই তো দেখতে পাবি।”
“এখন আমি দেখতে চাই না!যখন তোমার কাছে নাম জিঙ্গেস করে ছিলাম তখন নামটা বলোনি এখন ওনাদের নামও শুনতে চাই না,দেখতেও চাই আর ওয়েলকামও করতে চাই না।”
মিহির রাগি স্বরে বললো
“দেখ মেঘ,, ওয়েলকাম টা তোকেই করতে হবে।একদম বাড়াবাড়ি করবি না।”
“হুহ,করবো না,মানে কিছুতেই করবো না।তোদের ইচ্ছে হলে তোরা কর গিয়ে।”
বলেই মেঘ ঘুড়ে চলে আসতে নিলেই মিহির মেঘকে থামিয়ে দিলো।মেঘ ভ্রু কুচকে বললো
“আবার কি হলো?”
মিহির মেঘের কাছে এসে আস্তে করে বললো
“দেখ তুই যদি ওয়েলকাম টা না করিস তাহলে তোর ওই কিউট,সুইট সিষ্টার সাঈফা ওর গায়ে এখন ময়লা পানি ঢেলে দিবো।ভাব,,এতো সুন্দর করে সেজে গুজে এসেছে এখন যদি সবার সামনে ওর গায়ে পচা ময়লা পানি ফেলি তাহলে বেচারি ভার্ষিটির সবার সামনে কতোটা অপমানিত হবে।অবশ্য তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।ওকে অপমান করতে আমার বেশ ভালো লাগে।”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“এবার কিন্তু তুই বাড়াবাড়ি করছিস ভাইয়া।”
“কিচ্ছু বাড়াবাড়ি করছি না মেঘ দেখবি এক্ষুনি গিয়ে ওর মাথায় ময়লা পানি ঢেলে আসবো।”
কথাটা বলে মিহির যেতে নিলেই মেঘ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো
“ওকে!আমি ওয়েলকাম করবো।”
মিহির মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“এইতো মাই কিউট সিষ্টার।”
মেঘ রাগি কন্ঠে বললো
“তোর মতো অসভ্য আমি জিবনে দুইটা দেখিনি।নিজের বোনকে ব্লাক মেইল করিস?লজ্জা করে না তোর?”
মিহির একটু ভাব নিয়ে বললো
“আমি হচ্ছি দ্যা গ্রেট তাসনিধ সায়াজ মিহির আমার মতো আর কেউ নেই তাই দেখিসনি।আমি একদম ইউনিক পার্সোন।আর আমার একদমই লজ্জা করে না কারন আমার লজ্জা নামের বস্তুটা নেই।”
মেঘ মিহিরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বললো
“ডেবিল একটা!”
কথাটা বলেই ঘুড়ে যেতে নিলেই আহিরের সাথে মেঘের ধাক্কা লাগে।মেঘ আহিরের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ি মেরে বলে
“এই ডেবিল নাম্বার টু, চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুড়িস?”
আহির ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো
“সরি!সরি! আমি দেখতে পাইনি।”
“সারাদিন মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেমনে দেখতে পাবি?যাহ সর চোখের সামনে থেকে।”
আহির বোকার মতো মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মেঘকে যাওয়ার জন্য সাইড দিলো।মেঘ ঘটঘট করে সেখান থেকে চলে গেলো।আহির বিরবির করে বললো
“বনু তুই রেগে যাস এক জনের উপর আর সব সময় ঝারিস আরেক জনের উপর।কেনো বলতো?”
_________________________
মেঘ আর দিশা সেই কখন থেকে হাতে ফুল নিয়ে ভার্ষিটির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু গেষ্টেদের আসার কোনো নামই নেই।মেঘ আস্তে করে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“উফফ আর কতো ওয়েট করবো?এরা এখোনো আসছে না কেনো?এদের কি কোনো কান্ড ঙ্গান নেই নাকি?কোথাও গেলে যে সময় মেইনটেন যেতে হয় সেটা কি ওনারা জানেন না?”
দিশা চোখ মুখ কুচকে বললো
“ইয়ার এবার আমারও কিন্তু বিরক্ত লাগছে।তবে আমার কি মনে হচ্ছে জানিস?কোনো দেশের প্রিন্স কে হয়তো নৌকায় করে নিয়ে আসছে তাই এতো দেরি লাগছে।”
দিশার কথা শুনে মেঘ হা হা করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই হঠাৎ মেঘের খেয়াল হলো ওদের সামনে দুটো গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি দুটো দেখেই মেঘের ভ্রু কুচকে গেলো। গাড়িটা একদম আহানের গাড়ির মতো দেখতে।মেঘের ভাবনার মাঝেই পিছনের গাড়ি থেকে দুইজন গার্ড নেমে এসে সামনের গাড়ির পিছনের ছিটের দরজা দুটো খুলে দিলো। দরজা খুলতেই আহান আর অভি গাড়ির দুইপাশ থেকে নেমে এলো।
আহান কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট,আর শার্টের উপরে কালো কোর্ট পড়া।চুল গুলো স্পাইক করা,,চোখে সানগ্লাস পড়া ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলানো। সব মিলিয়ে আহানকে অসাধারন লাগছে।কিছু কিছু মেয়েরা আহানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।অভিও আহানের মতো সেইম গেটাপেই সেজেছে শুধু অভির ড্রেসের কালারটা ভিন্ন।ও ব্লু রঙের প্যান্ট আর ব্লু রঙের কোট পড়েছে।
আহান আর অভি সামনে এগিয়ে আসতেই প্রিন্সিপাল গিয়ে ওদের সাথে কুশল বিনিময় করলেন।আহির আর মিহির গিয়ে ওদের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
মেঘ এতোক্ষন হা করে আহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।আহানের হাটা চলা সবার সাথে আন্তরিক ভাবে কথা বলা সব মেঘ খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো।ছেলেটার সব কিছুই যেনো অদ্ভুত রকমের সুন্দর। চেহারায় একটা মায়াবি ভাব।মেঘ বারবার চেষ্টা করেও আহানের থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।ও একটা ঘোড়ের মধ্যে চলে যাচ্ছে।হঠাৎ দিশার ডাকে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।দিশা মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“জেগে জেগে ঘুমাচ্ছিস নাকি?কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?চল প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন।”
মেঘ একটু ইতস্তত করে বললো
“ওই আরকি,,কিছু একটা ভাবছিলাম।বাদ দে স্যার ডাকছেন,,চল।”
মেঘ আর দিশা গিয়ে আহান আর অভির সামনে দাড়ালো।দিশা জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে হাতে থাকা তোড়াটা অভির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“ওয়েলকাম টু আওয়ার ভার্ষিটি স্যার।”
অভি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“থ্যাংক্স মিস!”
মেঘ আহানের দিকে তোড়াটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“ওয়েলকাম স্যার।”
বলেই মেঘ আহানের মুখের দিকে তাকালো। তাকিয়েই ও অবাক হলো।আহানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।ও তীক্ষ্ণ চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ বুঝতেই পারছে না আহানের হঠাৎ কি হলো?এতোক্ষন তো বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছিলো ওকে তাহলে এখন হঠাৎ কি এমন হলো যে আহানের ফেইজের এক্সপ্রেশন এভাবে চেইঞ্জ হয়ে গেলো। আহান মেঘের হাত থেকে তোড়াটা নিয়ে গম্ভির স্বরে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“থ্যাংক্স!”
বলেই আহান হাতে থাকা তোড়াটা পাশে থাকা গার্ডের হাতে ধড়িয়ে দিয়ে হনহন করে ভিতরে চলে গেলো।মেঘের দিকে ফিরে একটা বার তাকালো না পযর্ন্ত।
_________________________
মেঘ ভার্ষিটির একদম শেষ প্রান্তের কড়িডোরে একা একা দাড়িয়ে আছে।ওর মনটা আজকে ভিশন খারাপ কোথায় চেয়েছিলো আজকে সবার সাথে খুব আনন্দ করবে মজা করবে তা না করে এখন মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।মন খারাপের কারনটাও মেঘের অজানা।ওর মনে হচ্ছে এখন চিৎকার করে কাদতে পারলে হয়তো ওর মনটা হালকা হতো।
মেঘ একটু আগে আহানকে ব্যাজ পড়তে গিয়েছিলো।আহান চেয়ারের উপর বসা ছিলো তাই মেঘ একটু আহানের দিকে ঝুকে ব্যাজটা পড়াচ্ছিলো আহান মেঘকে ওর দিকে ঝুকতে দেখেই নিজের মাথাটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নিয়েছে।এমন একটা ভাব করেছে যেনো ও মেঘকে চিনেই না।
আহানের হঠাৎ এমন ব্যাবহার মেঘকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে।কেনো এতোটা কষ্ট হচ্ছে ও নিজেও জানে না।এসব ভাবতে ভাবতে মেঘের চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।মেঘ দ্রুত হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানিটা মুছে ফেললো।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে মেঘের বাহু ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে একটা ক্লাস রুমের ভিতর জোড়ে ছুড়ে মারলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে মেঘ ব্যাক্তিটিকে দেখার সময়ই পেলো না।সেই ব্যাক্তিটি মেঘকে ছুড়ে মেরে রুমের ভিতরে ঢুকে ঠাস করে দরজাটা দিয়ে দিলো।মেঘ ফ্লোরে উপুর হয়ে পড়ে আছে।ও এতো জোড়ে পড়ে যাওয়ায় হাতে আর হাটুতে প্রচণ্ড ব্যাথ্যা পেয়েছে।ব্যাথ্যায় মাথা তুলে তাকাতে অবদি পারছে না। তবে বুঝতে পারছে ব্যাক্তিটি আস্তে আস্তে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।মেঘ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়সড় একটা ঝটকা খেলো।
#চলবে,,,,