#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্ব_31
মেঘ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়সড় একটা ঝটকা খেলো।ওর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে।অন্ধকারের মধ্যে বাইরের আবছা আলোতে আহানের রাগান্বিত চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মেঘ অবাক চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান যে কখনো ওর সাথে এরকম করতে পারে সেটা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।আহান মেঘের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাটু গেরে ওর সামনে বসলো।তারপর এক হাত মেঘের গালে রেখে শান্ত স্বরে জিঙ্গেস করলো
“শাড়ি পড়ে ভার্ষিটিতে কেনো এসেছো মেঘ পড়ি?”
আহানের এমন শান্ত স্বরে বলা কথাটাও যেনো মেঘের মনে মধ্যে অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি করলো।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে আহান ভিষন রেগে আছে।এখন যদি ও কোনো উল্টাপাল্টা জবাব দেয় তাহলে আহান ওকে মারতেও দ্বিতীয় বার ভাববে না।তাই মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে কাপাকাপা কন্ঠে বললো
“আ-আগেই প-প্লান করে রেগেছিলাম স-সবাই একসাথে শাড়ি পড়বো।”
আহান একটু গম্ভির কন্ঠে বললো
“তো এইভাবে সেজেছো কেনো?এটাও কি আগে থেকে প্লান করা ছিলো?”
মেঘ কিছু না বলে শুধু উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।আহান এবার রেগে মেঘের গাল জোড়ে চেপে ধরে চেচিয়ে বললো
“সবাই যদি গিয়ে পাহার থেকে যাপ দেয়,,তাহলে কি তুমিও ঝাপ দিবে?সবাই শাড়ি পড়ার প্লান করলেই তোমারও কেনো শাড়ি পড়তে হবে?আর কার থেকে পারমিশন নিয়ে তুমি শাড়িটা পড়ে ভার্ষিটিতে এসেছো?”
আহান মেঘের গাল এতো জোড়ে চেপে ধরেছে মেঘের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।ব্যাথ্যায় ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।মেঘ ওর দুহাত দিয়ে আহানের হাতটা নিজের গাল থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আহানের হাতটা সরানো তো দূরের কথা এক চুল অবদি নাড়াতে পর্যন্ত পারছে না।আহান রেগে চেচিয়ে বললো
“কি হলো চুপ করে আছো কেনো?অ্যান্সার মি!শাড়ি পড়ে ভার্ষিটিতে কেনো এসেছো?”
মেঘ কান্না ভেজা কন্ঠে বললো
“সবাই তো শাড়ি পড়েছে!আমিও পড়েছি তাতে কি হয়েছে?আপনি আমার সাথে এমন বিহেব করছেন কেনো?”
আহান মেঘের গাল ছেড়ে দাড়িয়ে এক ঝটকায় মেঘকে উপরে টেনে তুলে দাড় করালো।তারপর ওকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ওর দুই বাহু চেপে ধরে বললো
“সবাই শাড়ি পড়লেও তুমি পড়তে পারবে না।আমি চাই না,, তোমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় অন্য কেউ দেখুক।তুমি সব সময় শুধু আমাকে দেখানোর জন্য শাড়ি পড়বে।আর আজকের পর যদি আর কখনো আমার পারমিশন ছাড়া শাড়ি পড়েছো তাহলে তোমার হাত পা ভেঙে একদম ঘড়ে বসিয়ে রাখবো।”
মেঘ ভয়ে কাপছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।কান্না করতে করতে ওর হেচকি উঠে গেছে।ভয়ে আহানের দিকে তাকাতে অবদি পারছে না।আহান মেঘকে ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে শুধু শুধু এভাবে কাদছো কেনো?আমি কি তোমাকে মেরেছি?কান্না বন্ধ করো বলছি।”
মেঘ আহানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে হিচকি দিতে দিতে বললো
“লাগছে আমার,,হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।”
মেঘ এভাবে বলায় আহানের একটু মায়া হলো।ও মেঘের বাহু ছেড়ে দিয়ে মেঘের থেকে সরে দু-কদম পিছনে চলে গেলো।মেঘ এতোক্ষন এটারই সুযোগ খুজছিলো।আহান ছেড়ে দিতেই মেঘ শারির কুচি ধরে দিলো এক দৌড়।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।মেঘ দুই পা সামনে এগোতেই আহান খপ করে মেঘের হাত ধরে ফেললো।তারপর আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বাকা হেসে বললো
“এই ভাবে বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি করার কোনো মানে হয় মেঘ?তোমার মনে হয়,,আমি না চাইলে তুমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে?”
মেঘে ভয়ার্ত চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।ওর আজকে হঠাৎ করেই আহানকে খুব ভয় লাগছে।কেনো এতোটা ভয় পাচ্ছে সেটা ও নিজেও যানে না।শুধু জানে আহানের কাছ থেকে এক্ষুনি ওকে পালাতে হবে।মেঘকে এভাবে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে দেখে আহান বিরক্তকর ভঙ্গিতে বললো
“মেঘ এভাবে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে কোনো লাভ হবে না।আমার পারমিশন ছাড়া তুমি এখান থেকে এক চুলও নড়তে পারবে না।প্লিজ লাফালাফি টা বন্ধ করো”
কে শোনে কার কথা,, মেঘ ওর মতো ছটফট করেই যাচ্ছে।আহান ধমক দিয়ে বললো
“মেঘ স্টপ ইট!তোমাকে থামতে বলেছি না?থামো বলছি।চুপচাপ দাড়াও এখানে।”
মেঘ এবারেও আহানের কথার কোনো পাএা দিলো না।আহান মেঘের দিকে বিরক্তিকর একটা চাহনি দিয়ে বললো
“সরি মেঘ!আমি এটা করতে চাই ছিলাম না।বাট তুমি এটা করতে বাধ্য করলে।”
বলেই আহান ওর হাতের দুটো আঙ্গুল মেঘের কানের একটু নিচে চেপে ধরলো।আঙ্গুল দুটো চেপে ধরার কিছু সেকেন্ডের মধ্যে মেঘ ঢলে আহানের বুকে পড়ে গেলো।আহান মেঘকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেলো।তারপর ঝট করে মেঘকে পাজ-কোল করে তুলে ওর কানের কাছে গিয়ে লো ভয়েজে বললো।
“সরি মেঘ পরি!আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।আমি এটা একদমই করতে চাইছিলাম না।কিন্তু তুমি করতে বাধ্য করলে।”
কথাটা বলেই আহান মেঘকে নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।
_________________________
ফাংশনের এতো চিল্লাচিল্লি ডাকাডাকির মধ্যেও অভির চারদিকে কোনো খেয়াল নেই।ওর দৃষ্টি সামনের ষ্টেজের দিকে স্থির।চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে ষ্টেজের উপর দাড়িয়ে থাকা পার্ফমেন্সরতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটি দাড়িয়ে দাড়িয়ে অ্যাঙ্কারিং করছে।মেয়েটা মার্জিত ভঙ্গিতে কথার মাঝখানে বারবার মুচকি হাসছে।ওকে অভি আগেও অনেকবার দেখেছে কিন্তু যখনই দেখা হয়েছে তখনই ওর সাথে কোনো না কোনো ব্যাপ্যার নিয়ে অভির ঝগরা চিল্লাচিল্লি এইসব হয়েছে।কখনো মেয়েটির সাথে ওর ভালো ভাবে কথা বলার সুযোগই হয়ে উঠেনি। মেয়েটি আর কেউ না,, মেয়েটি হচ্ছে দিশা।
অভি আজকে দিশাকে নতুন একটা রূপে আবিষ্কার করলো।এতো দিনের খচ্চর ঝগরুটে মেয়েটাকে আজকে অভির কাছে একদম ভদ্র, স্নিগ্ধ, মার্জিত একটা মেয়ে লাগছে।যার একটু খানি কথা শুনলেই মনের মধ্যে অদ্ভুত শান্তি খেলে যায়।ঠোটের কোনের মুচকি হাসির দিকে তাকালে মনে হয় ওই মাতার করা হাসির দিকে তাকিয়ে যে কেউ অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে পারবে।অভি বার বার চেষ্টা করেও দিশার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।অভির মনে হচ্ছে ও যদি সারাদিনও এভাবে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলেও ওর কোনো ক্লান্তি লাগবে না।বরং ও সারাদিন কোনো কারন ছাড়া এভাবেই পলকহীন চোখে দিশার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে।
দিশা ষ্টেজের একপাশে দাড়িয়ে হাতে থাকা কাগজ গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলো।কাগজ গুলোতে কে কি পার্ফরমেন্স করবে সেগুলো লেখা আছে।আপাততো ফাষ্ট ইয়ারের একটা মেয়ে গান গাইছে।দিশা ভালো করে কাগজ গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে এর পর কাদের কাদের পার্ফরমেন্স আছে।ও মনোযোগ দিয়ে ওইগুলোই দেখছিলো তখনই একজন টিচার্স এসে ওকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা দুপুর হয়ে গেছে।প্রিন্সিপাল স্যার লাঞ্চের জন্য ব্রেক দিতে বলেছে।তুমি এনাউন্সমেন্টটা করে সোজা স্যারের কেবিনে চলে আসো।”
দিশা স্যারের কথায় সম্মতি জানিয়ে এনাউন্সমেন্ট করতে চলে গেলো।
_________________________
রেষ্টুরেন্টের মধ্যের এক পাশের একটা টেবিলে বসে ঠোট ফুলিয়ে রেখেছে দিশা।বিরক্তিতে ওর এখন হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।কোথায় ভেবে ছিলো ব্রেক টাইমে একটু রিল্যাক্স করবে তা না করে এখন এতো গুলো টিচার্সের মধ্যে বসে অভির টর্চার সহ্য করতে হচ্ছে।
তখন দিশা প্রিন্সিপালের রুমে যেতেই প্রিন্সিপাল স্যার সাড়িকা,সাঈফা,দিশা,রিজা,আহির,মিহির সহ আরো কিছু সিনিয়র ষ্টুডেন্ট আর টিচারদের নিয়ে রেষ্টুরেন্টে চলে আসে।আসলে ভার্ষিটি কর্তিপক্ষ আগেই চিফ গেষ্ট, কিছু টিচার্স আর ভার্ষিটির কিছু ষ্টুডেন্টদের জন্য রেষ্টুরেন্টে টেবিল বুক করে রেখেছিলো।ষ্টুডেন্ট বলতে যারা এই প্রোগ্রাম টা মেনেজমেন্টের দ্বায়িত্বে ছিলো শুধু মাএ তাদের জন্য।যদিও সাড়িকা সাঈফা মেনেজমেন্টের দ্বায়িত্বে ছিলো না।কিন্তু তাও ওরা দিশা রিজাকে অনেক হেল্প করেছে।
আসলে মেঘ,দিশা, রিজা ওদের এ্যাঙ্কারিং করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু হঠাৎ করেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষন আগে আহির,মিহির এসে জানায় মেঘের শরীর নাকি খুব খারাপ লাগছিলো তাই ও বাসায় চলে গেছে। দিশা আর রিজা ওদের দুজনের পক্ষে কিছুতেই এতোবড় অনুষ্ঠান সামলানো সম্ভব ছিলো না।তাই ওরা সাড়িকা সাঈফাকেও ওদের সাথে এ্যাঙ্কারিং করার জন্য ডেকে নিয়েছিলো।ওরা চারজন সারাদিন এতো কষ্ট করেছে দেখে, প্রিন্সিপাল স্যারও জোড় করে ওদের চারজনকে ওনাদের সাথে রেষ্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে এসেছে।
___
দিশা মনে মনে রেগে বোম হয়ে আছে।কারন যখন থেকে রেষ্টুরেন্টে এসেছে তখন থেকে অভি ওকে জেনারেল নলেজ নিয়ে এটা সেটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে।বেচারি দিশাও চুপচাপ দাতে দাত চেপে অভির সব প্রশ্নের অ্যান্সার দিচ্ছে।মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না।আপটার অল ভার্সিটির চিফ গেষ্ট বলে কথা। তার সাথে তো আর মিস বিহেইব করতে পারে না!আর তাছাড়া ওদের পাশের টেবিলে ভার্ষিটির অনেক টিচার্সরাও বসে আছে।তাদের সামনে অভিকে কিছু বললে সবাই ওকে খারাপ ভাববে।এখানে যদি টিচারেরা না থাকতো তাহলে ও আজকে অভিকে বুঝিয়ে দিতো দিশার সাথে লাগতে আসার ফল কি হয়। দিশা নিজেও ভালো করেই জানে অভি এইগুলো ইচ্ছে করে ওকে বিরক্ত করার জন্য করছে।কিন্তু তাও ওর আপাততো কিছুই করার নেই।
অভি ফোন স্ক্রল করতে করতে একবার আড় চোখে দিশার দিকে তাকালো।দিশা অভির দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।অভি ঠোট চেপে একটা বাকা হাসি দিলো।দিশাকে আজকে বিরক্ত করতে ওর বেশ মজা লাগছে।ভাগ্যিস এখানে টিচরেরা আছে নাহলে দিশা এতোক্ষনে চিল্লাচিল্লি করে ওর কান ঝালাপালা করে দিতো।কিন্তু এখন স্যারদের বকার ভয়ে দিশাকে ওর সব জ্বালা চুপচাপ মেনে নিতে হচ্ছে।
দিশা আর অভির কান্ড দেখে আহির,মিহির,সাড়িকা, রিজা সবাই মিটমিট করে হাসছে।ওরা ভালো করেই বুঝতে পারছে বেচারি দিশা বাধ্য হয়ে কিছু বলতে পারছে না।নাহলে এতোক্ষনে অভির নাক ফাটিয়ে দিতো।
সাঈফার কোনো হেলদোল নেই,, ও ওর নিজের মতো করে ফোন টিপে যাচ্ছে।ইদানিং সাঈফা অনেকটা বদলে গেছে এখন আর আগের মতো হাসি খুশি থাকে না।কারো কোনো বিষয়ে নাক গলায় না।মেকআপ করা ড্রেস পড়া নিয়ে সাড়িকার সাথে আর ঝগরা করে না।সব সময় একা একা চুপচাপ বসে থাকে নাহলে ফোন স্ক্রল করে।আবার কখনো কখনো বই পড়ে।আর মিহিরকে টোটালি ইগনোর করে।মিহিরের সাথে কথা বলা তো দুরের কথা,,সাঈফা মিহিরের দিকে তাকায় অবদি না।
শুরুতে সাঈফার এমন ব্যাবহারে মিহির ভিষন খুশি হয়েছিলো। কিন্তু আজকাল কেনো যেনো সাঈফার আগের হাসি খুশি চেহারাটা ও খুব মিস করে।সাঈফা যখন ওকে ইগনোর করে চলে যায় তখন মনে হয় ও অতি মূল্যবান কিছু একটা জিনিস ওর জিবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে।মিহির নিজেও জানে না ওর এমন কেনো মনে হয়!শুধু জানে সাঈফার এমন ইগনোর করাটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতে মিহির আর চোখে একবার সাঈফার দিকে তাকালো। দেখলো সাঈফা গম্ভির মুখ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন টিপছে।ওর আশে পাশে কে কি করছে!কি বলছে!সেদিকে ওর বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই।ও নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে ব্যাস্ত।মিহির কিছুক্ষন সাঈফার দিকে তাকিয়ে রইলো।ও ভেবেছিলো সাঈফা হয়তো একবার হলেও ওর দিকে তাকাবে, কিন্তু না সাঈফা ভুলেও একবার চোখ তুলেও মিহিরের দিকে তাকায় নি।
মিহিরের এবার সাঈফার উপর ভিষন রাগ লাগছে।কিসের এতো ভাব এই মেয়ের?এতোদিন তো ছ্যাচরার মতো পিছনে পরে ছিলো আর এখন একবার ফিরেও ওর দিকে তাকাতে পারছে না? কেনো? সেইদিন শুধুমাএ ওই কয়েকটা কথা বলেছিলো সেইজন্য?হুহ মাএ ওই কয়েকটা কথা শুনেই ভালোবাসা উড়ে পালিয়ে গেলো? মিহির রাগে টেবিলের উপর থেকে একটা কাটা চামচ বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের তালুতে চামোচের কাটার অংশটা গেথে ধরলো।এতো জোড়ে চামোচ টা চেপে ধরলো যে হাত ফুটো হয়ে হাতের তালু থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
_______________________
মেঘের জ্ঞান ফিরতেই ও পিটপিট করে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও নিজেকে একটা অপরিচিত জায়গায় আবিস্কার করলো।মেঘ বুঝতে পারছে না, ও এখানে কিভাবে এলো?ও তো ভার্ষিটির অনুষ্ঠানে ছিলো,,তাহলে এখানে ওকে কে আনলো!মেঘ মাথায় একটু জোড় দিতেই ওর আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে গেলো।আহান ওর ঘাড়ে আঙ্গুল চেপে ধরে ওকে অজ্ঞান করেছিলো।তারপর কি হয়েছে মেঘের কিচ্ছু মনে নেই।ও ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসলো।বসে সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে।মেঘ নিজের চোখ বন্ধ করে আবার খুললো,কিন্তু না এটা কোনো স্বপ্ন না সত্যি।ও দ্রুত খাট থেকে নেমে ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো।ওর মনে হচ্ছে এটা কোনো রুম না বরং কোনো শুভ্র রাজ্য।পুরো রুমাটা একদম ধবধবে সাদা।কার্পেট থেকে শুরু করে জানালার পর্দা পযর্ন্ত সবকিছু শুভ্র রঙে মুড়ানো।এখানে কোনো জিনিসের উপর অন্য কোনো রঙের ছোয়া নেই।মেঘ মুগ্ধ চোখে চারপাশটা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলো।
কিন্তু হঠাৎ ওর খেয়াল হলো এটা কোথায় আছে ও?এটা তো ওর রুম না!আর আহানদের বাসায়ও তো এমন কোনো রুম নেই।আর এইটা দেখে কোনো রির্সোটের রুমও মনে হচ্ছে না।তাহলে এটা কোন জায়গা?আহান ওকে কোথায় নিয়ে আসলো?আদৌ কি ওকে আহান এখানে এনেছে?নাকি ওকে অন্য কেউ এখানে নিয়ে এসেছে?মেঘ এসব কথা ভাবতেই দরদর করে ঘামতে লাগলো।ওর হাত পা ভয়ে কাপছে।ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে।আচ্ছা ওর সাথে কেউ খারাপ কিছু করেনি তো?মেঘ দ্রুত নিজের শরীরের দিকে তাকালো।নাহ সব ঠিকই আছে,ও ফাংশনে যে শাড়িটা পড়েছিলো এখোনো সেটাই পড়ে আছে।মেঘের মাথা ভয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।ওর শুধু এখন একটা কথাই ভাবছে ওকে এখান থেকে পালাতে হবে।মেঘ আর কিছু না ভেবে সোজা রুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো।বাইরে বের হয়ে ও আরো অবাক হলো শুধু ওই রুমটা সাদা রঙের নয়,,পুরো বাড়িটাই একদম সাদা রঙের।কিন্তু মেঘের এখন এসব দেখার বা ভাবার সময় নেই।ও দিলো এক ভো দৌড় ,,রুমের বাইরের কড়িডোর দিয়ে কিছুটা দূর দৌড়ে আসতেই,হঠাৎ কিছু একটার শব্দ শুনে ওর পা দুটো থেমে গেলো।
মেঘ দাড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো শব্দটা কোথা থেকে এসেছে। হঠাৎ ওর চোখ যায় কড়ডোরের অপর পাশের একটা রুমের দিকে হ্যা শব্দটা ওখান থেকেই আসছে।মনে হচ্ছে কেউ ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।মেঘ একবার ভাবলো ও এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাবে, ওখানে যেই হোক তাতে ওর কি?কিন্তু পরক্ষনেই আবার ভাবলো যদি ওর মতো কেউ বিপদে পড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ওর হেল্প করা উচিৎ।মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে আস্তে আস্তে রুমটার দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর কাপাকাপা হাতে দরজাটা হালকা করে খুলে ভিতরে উকি মারলো।ভিতরে তাকাতেই ভয়ে মেঘের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো।ওর চোখ থেকে আপনা আপনি গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।
রুমটার মধ্যে একটা মেয়েকে চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে।মেয়েটার গায়ে অসংখ্য মারের দাগ।সারা গায়ে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে।শুধু মারের দাগই না,, জায়গায় জায়গায় কেটে গেছে।দেখেই মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ব্লেড টাইপ কিছু দিয়ে ইচ্ছে করে পোচ দিয়ে কেটেছে।মেয়েটার সামনের চেয়ারে একটা লোক বসে আছে।লোকটার গায়ে কালো হুডি আর মুখে কালো মাক্স পড়া।লোকটি নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর হাতে থাকা গান টা নিয়ে কপালে শ্লাইড করছে।লোকটার পিছনে আরো চারজন লোক আছে, তাদের সবার মুখে কালো মাক্স দেয়া আর হাতে বন্ধুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।এদের দেখে মেঘের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।ও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালো।তাকিয়েই ও বড়োসড়ো একটা ঝটকা খেলো।ও নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।এটা কিভাবে সম্ভব?এই মেয়ে এখানে কিভাবে এলো?মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললো
“সৃষ্টি!”
চলবে;,,,,,,,