#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ34
পিট পিট করে চোখ খুলতেই মেঘ নিজেকে কারো বাহু বন্ধনে আবিস্কার করলো।ও কয়েকবার চোখের পলক ফেলে,ওকে জড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি কে, তা দেখার জন্য মাথা তুলতেই চোখের সামনে আহানের ঘুমন্ত মুখটা ভেষে উঠলো।রুমটার মধ্যে সব লাইট অফ করা,শুধু মাএ একটা ডিম লাইট জ্বালানো।ডিম লাইটের আবছা আলোতেও মেঘের আহানকে চিনতে একটুও অসবিধা হলো না।ওকে দেখতেই মেঘের একে একে দুপুরের ঘটা সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো।ও আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে,ঝটফট বেড থেকে নেমে গেলো।
আচৎমকা এভাবে ধাক্কা দেওয়ায় আহানের ঘুমটা ভেঙে গেলো।ও খুলে পাশে তাকাতেই মেঘের ভয়ার্ত মুখটা দেখতে পেলো।আহান তড়িঘড়ি করে উঠে বেড থেকে নেমে মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই।মেঘ দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“এ-একদম আ-আমার দ-দিকে এ-এগোবেন না।আ-আমার থেকে দ-দূরে থাকুন প্লিজ।”
মেঘের কথায় আহানের পা দুটো থেমে গেলো।আহান আগেই জানতো মেঘ ওকে দেখে এভাবেই রিয়্যাক্ট করবে।ও মেঘের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বললো
“মেঘ পড়ি তুমি আমায় ভয় পাচ্ছো?ভয় পেও না প্লিজ।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।”
বলে আহান মেঘের দিকে আবারো এগোতে নিলেই।মেঘ আরেকটু পিছনে গিয়ে কাদো কাদো কন্ঠে চেচিয়ে বললো
“না,না প্লিজ,প্লিজ আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন।”
“মেঘ পড়ি তুমি শুধু শুধু আমাকে কেনো ভয় পাচ্ছো?আমি কি তোমাকে মেরেছি বা বকেছি?”
“আ-আপনি খুব খারাপ।আপনি সৃষ্টি ম্যামকে শুট করেছেন।”
“আমি ইচ্ছে করে ওকে শুট করিনি বিশ্বাস করো।ওটা তো ব্যাস অ্যাক্সিডেন্টলি ট্রিগারে চাপ লেগে বের হয়ে গিয়েছিলো।”
মেঘ একটু ঝাঝালো কন্ঠে বললো
ওহ গুলিটা অ্যাক্সিডেন্টলি ট্রিগারে চাপ লেগে বের হয়েছিলো তাইনা?তো ওর গায়ে যে এতোগুলো মারের দাগ দেখলাম,ওগুলোও কি অন্য কাউকে মারতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টলি বা ভুলে ওর গায়ে মেরেছেন।”
আহান বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো
“মেঘ তখনকার সিচুয়েশন অন্য রকম ছিলো।’ও’ একটা অন্যায় করেছিলো তাই ওকে আমি এতোদিন আটকে রেখে শাস্তি দিয়েছি।বিশ্বাস করো আমি আজকেই ওকে ছেড়ে দিয়ে, আমার লোকদের বলে হসপিটালে পাঠিয়ে ওর চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতাম।কিন্তু ‘ও’ তোমার গলায় ওভাবে কাচ ধরায় আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছিলাম।মাথায় কিচ্ছু আসছিলো না।তাই ওকে আমি,,,,,,,”
আহান এইটুকু বলতেই মেঘ আহানের কথার মাঝে ফোরন কেটে তাছিল্য স্বরে বললো
“তাই আপনি ওকে শুট করে দিলেন!”
“মেঘ পড়ি আমি ওকে শুট না করলে, ‘ও’ তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলতো।যেভাবে তোমার গলায় কাচটা চেপে ধরেছিলো তাতে যদি তোমার উল্টোপাল্টা কিছু একটা হয়ে যেতো।তখন কি হতো?”
“কি আর হতো?আমার গলাটা কেটে যেতো,আর আমি মরে যেতাম।আমি মরে যাই, আমার গলা কেটে যাক,মাথা ফেটে যাক,হাত-পা ভেঙে যাক,যাহ খুশী হোক তাতে আপনার কি?আপনি কেনো আমার সব বিষয় নিয়ে এতো মাথা ঘামান।আমার বিষয়ে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?আপনি শুধুমাত্র আমার কাজিন হন,এর থেকে বেশি কিচ্ছু না।তাহলে শুধু শুধু কেনো আমার গার্ডিয়ান হওয়ার চেষ্টা করেন?”
আহান এতোক্ষন শান্ত ভাবে কথা বললেও মেঘের মুখ থেকে মরার কথা শুনে ওর মাথায় রাগ উঠে গেলো।ও হনহন করে মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে মেঘকে এক টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর নিজেও মেঘের দিকে ঝুকে ওর দু-হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো
“তোমার সাহস হয় কি করে আমার সামনে মরার কথা বলার?এতোক্ষন ভালো ভাবে কথা বলছিলাম তাই আমার কথা মাথায় ঢুকছিলো না তাইনা?তোমাকে না বারন করেছিলাম,,আমার সামনে মরার কথা না বলতে?তারপরেও তুমি কোন সাহসে ওই কথাটা বললে?আর বাকী রইলো তোমার বিষয়ে আমি কেনো এতো মাথা ঘামাই সেটা?তাহলে জেনে রাখো, তোমার মা-বাবার পরে যদি কারোর তোমার উপরে সবচেয়ে বেশি অধিকার থেকে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে আমার।তোমার সব বিষয়ে মাথা ঘামানোর অধিকার আমার আছে।”
মেঘ আহানের এমন হঠাৎ কাছে আসাতে ভয় পেয়ে গেলেও সেটা মুখে প্রকাশ করলো না।বরং চেহারায় কাঠিন্য একটা ভাব এনে, শুকনো একটা ঢোক গিলে ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“আমার উপরে আপনার কোনো অধিকার নেই।আপনার মতো নোংরা,অসভ্য আর বাজে লোকের আমার উপরে কোনো অধিকার থাকতেই পারে না।আর আমাকে এভাবে কেনো ধরে রেখেছেন ছাড়ুন আমাকে।”
বলেই মেঘ হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো।আহান অগ্নি চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর হাতটা আরো জোড়ে বিছানার সাথে চেপে ধরলো তারপর রেগে চেচিয়ে বললো
“তোমার সাহস হলো কিভাবে আমাকে নোংরা,অসভ্য,বাজে লোক বলার?আমি কি এমন করেছি তোমার সাথে,যাতে তোমার আমাকে বাজে লোক মনে হচ্ছে?”
আহান এভাবে রেগে চেচিয়ে কথা বলায় মেঘের এতোক্ষনের সাহস সব ফুস হয়ে গেলো।ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।মেঘ বুঝতে পারলো নিজেকে সাহসী প্রমান করতে গিয়ে ‘ও’ আহানকে একটু বেশিই বলে ফেলেছে।’ও’ আর কিছু না বলে অসহায় বাচ্চাদের মতো ফেইস করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান ধমক দিয়ে বললো
“কি হলো?এখন চুপ করে আছো কেনো?স্পিক আপ?”
মেঘ এইবারেও কিছু বললো না,,শুধু কাদো কাদো মুখ করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান দেখলো মেঘ মুখটা একদম অসহায় বাচ্চাদের মতো বানিয়ে রেখেছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে আরেকটু কিছু বললেই কেদে দিবে।আহান ভ্রু কুচকে বললো
“কি হলো মুখটা এমন বানিয়ে রেখেছো কেনো?”
মেঘ কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আমার হাতে খুব ব্যাথ্যা লাগছে।ছাড়ুন প্লিজ।”
মেঘের কথা শুনে আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।কারন আহান মেঘের হাতটা এতোটাও জোড়ে চেপে ধরেনি যে,মেঘ ব্যাথ্যা পাবে।আহান কিছুক্ষন মেঘের দিক তাকিয়ে থেকে ওর ভাব ভঙ্গি বোঝার জন্য ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো।
আহান মেঘকে ছেড়ে দিতেই,মেঘ মনে মনে একটা বাকা হাসি দিলো।ও জানতো,,হাতে ব্যাথ্যার কথা বললে আহান ওকে ঠিক ছেড়ে দিবে।আহান ওকে ছেড়ে একটু দূরে সরতেই ও এক লাফ দিয়ে শোয়া থেকে দাড়িয়ে গেলো।তারপর আর কোনো দিক না তাকিয়ে দরজার দিকে দিলো একটা ভো দৌড়।কিন্তু আফসোস দরজাটা আহান আগে থেকেই লক করে রেখেছিলো।মেঘ দরজার কাছে এসে জোড়ে জোড়ে দরজাটা ধাক্কাতে লাগলো,,লক ধরে টানাটানি করতে লাগলো,কিন্তু দরজাটা কিছুতেই খুলতে পারলো না।
আহান দু-হাত বুকে গুজে একটু বাকা হয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে মেঘের কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।কারন ও আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো মেঘ এরকম কিছু একটাই করবে।আহান ঠোটের কোনে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ পড়ি, আমি বারবার তোমাকে এক কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করি,আর তুমি বারবার সেই একই ভুল করো।তোমাকে আর কতোবার বলবো,তুমি যতোই দৌড়াদৌড়ি করো আর আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো,আমার পারমিশন ছাড়া তুমি আমার থেকে এক চুলও দূরে সরতে পারবে না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে ঘাঢ় ঘুড়িয়ে ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো।ওর এখন ইচ্ছে করছে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে।কেনো যে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো?আহান নিশ্চয়ই এখন ওকে ধরে একটা ঠাটিয়ে চড় মারবে।চড়ের কথা মনে হতেই মেঘের একটা হাত অটোমেটিক ওর গালে চলে গেলো।
আহান সোজা হয়ে দাড়িয়ে ট্রাউজারের পকেটে দু-হাত ঢুকিয়ে ফুল অ্যাটিটিউট নিয়ে এগিয়ে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো।তারপর পকেট থেকে একটা চাবি বের করে মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“এই দরজাটা লক করা আছে।আর এটা হচ্ছে লক খোলার চাবি।”
মেঘ আহানের হাত থেকে ছো মেরে চাবিটা নিতে চাইলো।কিন্তু ও চাবিটা ছুবে তার আগেই আহান নিজের হাতটা মুঠোবন্ধি করে নিলো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে,চাবিটা একটা টি টেবিলের উপর রেখে,একহাত মেঘের কোমরে দিয়ে,ওকে একটানে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললো
“তোমার কি মনে হয় টিয়া পাখি?তুমি এই রুম থেকে বের হলেই আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে?ধরো, তুমি এই চাবিটা দিয়ে এই রুমটার দরজা খুলে বের হয়ে গেলে।কিন্তু তারপর নিচের এতো এতো সিকিউরিটির চোখে ফাকি দিয়ে কিভাবে বের হবে?আর ধরলাম সবার চোখে ফাকি দিয়েও বের হয়ে গেলে,কিন্তু তারপর?তুমি কি আদৌ জানো এটা কোন জায়গা?এখান থেকে যদি কোনো ভাবে বেরও হও,, তাহলেও সেইফলি বাড়ি গিয়ে পৌছাতে পারবে না। তাই বলছি,এখান থেকে পালানোর ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”
আহানের কথা শুনে ভয়ে মেঘের চোখ মুখ শুকিয়ে একদম পানশে হয়ে গেলো।সত্যিই তো,,ও তো এতোক্ষন এসব কিছু ভেবেই দেখেনি!দুপুরে বাইরে যা কড়া সিকিউরিটি দেখলো, তাতে ও হাজার চেষ্টা করেও এখান থেকে বের হতে পারবে না।মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো
“আমি বাসায় যাবো।আমাকে দিয়ে আসুন প্লিজ।”
আহান মেঘের কপালে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো
“হুমম,,দিয়ে আসবো।তবে এখন না,কালকে সকালে।”
মেঘ চমকে উঠে বললো
“কালকে সকালে মানে?ততোক্ষন আমি কোথায় থাকবো?”
আহান নিজের মুখটা মেঘের আরেকটু কাছাকাছি নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“কোথায় থাকবে মানে?আমার এতোবড় বাড়িটা তোমার চোখে পড়ছে না?”
“আমি এখানে আপনার সাথে এক বাড়িতে থাকবো না।আমি বাসায় যাবো।”
“ওমা তাই নাকি!তো যাও তোমাকে কে আটকে রেখেছে।”
মেঘ অসহায় চাহনী দিয়ে বললো
“আমি একা কিভাবে যাবো।আপনি দিয়ে আসুন প্লিজ।”
আহান নেশাতুর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“এখন আমিও কোথাও যাবো না,আর তোমাকেও কোথাও যেতে দিবো না।বুঝেছো টিয়া পাখি?আমরা দুজন আজকে রাতে এখানেই থাকবো।”
বলেই আহান নিজের মুখটা একদম মেঘের কাছাকাছি নিয়ে গেলো।দুজন এতোটাই কাছাকাছি আছে যে ওদের দুজনের ঠোট একদম ছুইছুই হয়ে আছে। আহানের গরম নিশ্বাস মেঘের চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।মেঘ চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।ওর কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।শরীর জমে একদম বরফ হয়ে গেছে।হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত উঠানামা করছে।নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে।
আহান ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত উঠা নামার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছে।রুমের আবছা আলো আর অন্ধকার মিশ্রিত পরিবেশটা মেঘকে একদম মোহনীয় করে তুলেছে।শরীরের সাথে সাথে মেঘের ঠোট মৃদ্যু কাপছে,,আহান ওর হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে মেঘের ঠোটে শ্লাইড করতে লাগলো।ও এক ধ্যানে মেঘের ঠোটের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের ঠোটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই ওর খুব ইচ্ছে জাগলো নিজের প্রিয় তমার ঠোট আলতো করে ছুয়ে দেওয়ার।আহান আর বেশি কিছু না ভেবে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোট নিজের আয়ওে নিয়ে নিলো।
আহানের হঠাৎ এমন কান্ডে মেঘ অবাক হয়ে গেলো।ও দ্রুত আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু আহানকে এক চুলও সরাতে পারলো না।বরং মেঘ যতো আহান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে,,আহান ততো আরো ওকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।মেঘ ছটফট করতে করতে আহানের সাথে শক্তিতে না পেরে, শান্ত হয়ে নিজেও আহানের সাথে রেসপন্স দিতে লাগলো।
______________________
রাত 11:10
ছাহীর (সাড়িকা সাঈফার ছোট ভাই) নিজের রুমের দরজা খুলে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে,,আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো।তারপর সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে একবার তাকিয়ে সদর দরজার কাছে গিয়ে কোনো শব্দ না করে দরজাটা খুলে ফেললো।দরজা খুলতেই কালো হুডি পড়া দুটো ছেলে তড়িঘড়ি করে বাসার ভিতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।আচৎমকা এভাবে ভিতরে ঢোকায় ছাহীর ভয় পেয়ে ওদের থেকে একটু পিছিয়ে গেলো।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে রাগি গলায় বললো
“তোমরা মানুষ নাকি অন্যকিছু!একে তো এতো রাতে একটা বাচ্চা ছেলেকে ব্লাকমেইল করে দরজা খুলতে বাধ্য করলে, তার উপর আবার এই ভাবে হুডি পড়ে ভ্যাম্পায়ার হয়ে তাকে ভয় দেখাচ্ছো?লজ্জা করে না তোমাদের আমার মতো একটা ভোলাভালা বাচ্চাকে এই ভাবে এতো রাতে ভয় দেখাতে?”
ছাহীরের কথা শুনে হুডি পড়া ছেলে দুটো নিজেদের হুডি সড়িয়ে ফেললো।ছেলে দুটো আর কেউ না আহির আর মিহির।আহির ছাহীরকে ধমক দিয়ে বললো
“ওই শালা তুই দরজা খুলতে এতো দেরি করছিলি কেনো রে?আর একটু হলেই তো তোর ওই হিটলার বাপ আমাদের দেখে ফেলতো।ওই ব্যাট্যা ডাক্তার এতো রাত জেগে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করে?চোর পাহাড়া দেয় নাকি?আর ভোলাভালা বাচ্চাটা কে রে?তুই?তুই যদি ভোলাভালা বাচ্চা হোস তাহলে আমরা দুজন নবজাতক শিশু।সবেমাএ পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হয়েছি।”
মিহির গিয়ে এক হাত ছাহীরের কাধে রেখে হাসতে হাসতে বললো
“বুঝলি আহির, আমাদের ভোলভালা বাচ্চা ছাহীর বাবু,,এই বয়সেই রাত তিনটা অবদি জেগে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করে।একবার ভাব যদি এই কথা এর ওই খারুস বাপ জানতে পারে, তাহলে এর অবস্থা কি করবে?”
ছাহীর মিহিরের হাতটা কাধ থেকে ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললো
“যা বললে তাই তো করলাম, তার পরেও ওই এক কথা বলে আবার কেনো ব্লাক মেইল করছো?কতো বার তোমাদের বলবো ওই মেয়েগুলো যাষ্ট আমার ফ্রেন্ড।এর থেকে বেশি কিচ্ছু না।আর কি তখন থেকে তোর বাপ, তোর বাপ করে যাচ্ছো ভুলে যেওনা ওনি তোমাদেরও মামা হন।সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলতে শেখো।”
মিহির ছাহীরের গাল টেনে দিয়ে বললো
“ওরা তোর যাষ্ট ফ্রেন্ড বলেই না আজকে বেচে গেলি, নাহলে তোকে গাছের সাথে উল্টো ঝুলিয়ে এমন মার মারতাম ক্লাস এইটে বসে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করার শখ জিবনের মতো ঘুচে যেতো।আর তোর ওই বাপ জিবনে এমন কোনো ভালো কাজ করেনি যাতে ওনাকে রেসপেক্ট করবো।ওনাদের ওই থার্ড ক্লাস ইগোর জন্য আমার মা অনেক গুলো বছর সাফার করেছে।মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে ওনাদের শরীর থেকে ইগো বের করে,ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে বিক্রি করে ঝালমুড়ি কিনে খাই।”
ছাহীর কনফিউশন হয়ে মাথা চুলকে বললো
“জানো,আমি এতোদিন জানতাম ক্লাউড আপ্পি (মেঘ) শুধু উদ্ভট কথা বলে।কিন্তু এখন দেখি তুমিও বলা শুরু করেছো।লাইফে ফাষ্ট টাইম শুনলাম শরীর থেকে নাকি ইগো বের করে ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে ব্রিকি করা যায়!কি জানি,,তোমাদের দ্বারা সবই সম্ভব।”
ওদের কথা শুনে আহীর একটা ধমক দিয়ে বললো।
“ওই তোদের এইসব আজাইরা বকবক বাদ দিয়ে,,আগে বল আমার বউটা কোথায়?”
ছাহীর বিদ্রুপের স্বরে বললো
“তোমার ওই খাচ্চুনী বউ নিজের রুমেই আছে।বাড়িতে এসে নিজের রুমের সব জিনিস পএ ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে ফেলেছে।ছোট আপ্পি( সাঈফা)থামাতে গিয়েছিলো, আপ্পিকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।তারপর নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে,,সবাই অনেক ডেকেছে কিন্তু দুজনের এক জনও খেতে আসেনি।ছোট আপ্পি তো কাদতে কাদতে আমার রুমেই ঘুমিয়ে পড়েছে।”
সাঈফার কান্নার কথা শুনে মিহিরের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব করলো।
আহির আর ওখানে দাড়িয়ে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।ছাহীর গিয়ে চুপচাপ সোফার উপরে বসে ফোন টিপতে লাগলো।
মিহিরের হঠাৎ করেই কেনো যেনো সাঈফাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কই আগে তো কক্ষনো এই রকম হয়নি।তাহলে আজকে কেনো সাঈফার কান্নার কথা শুনে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে সাঈফার কাছে গিয়ে ওকে একবার দেখে আসি।মিহির বারবার নিজের মন কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো।ও মনে মনেই নিজেকে বোঝাতে লাগলো ও সাইফার কাছে কিছুতেই যেতে চায় না।কিন্তু অবশেষে নিজের মনকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়ে,উপরে যাওয়ার জন্য পা বারালো।কিন্তু তখনই পিছন থেকে ছাহীর বলে উঠলো
“ব্রো তুমি কোথায় যাও?আসো এখানে আমার পাশে বসে পড়।শুধু শুধু ওদের রোমান্সের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে যেও না।তার থেকে চলো আমরা দুজন এখানে বসে ওদের পাহাড়া দেই।দেখি কেউ আসে কিনা?”
ছাহীরের কথা শুনে মিহির বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো
“আমাকে কি তোর সিকিউরিটি গার্ড মনে হয়, যে এখানে বসে বসে ওদের পাহাড়া দিবো?”
ছাহীরও মিহিরের মতো চোখ মুখ কুচকে বললো
“তো তোমার আমাকে কি সিকিউরিটি গার্ড মনে হয়?আমি তো ওদের পাহাড়া দিচ্ছি?না তো!তাহলে আমি যদি ওদের পাহাড়া দিতে পাড়ি,তুমি কেনো পারবে না।”
“তোর খেয়ে দেয়ে এখন কোনো কাজ নেই তাই তুই পাহাড়া দিচ্ছিস।কিন্তু আমার এখন অনেক কাজ আছে তাই আমাকে উপরে যেতে হবে।”
ছাহীর ভ্রু কুচকে বললো
“তোমার আবার এখন কি কাজ আছে?আর উপরেই বা কোথায় যাচ্ছো?”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“যে কাজই থাকুক না কেনো?সেটা কি তোকে বলতে হবে?আর এটা আমার মামু বাড়ি তাই আমি ডানে,বামে,উপড়ে, নিচে যেখানে খুশী যেতে পাড়ি তোর কোনো সমস্যা আছে ?”
ছাহীর একটা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ফোন দিকে তাকিয়ে ফোন টিপতে টিপতে বললো
“উহুম,,আমার কোনো সমস্যা নেই।বরং তোমার মাথায় সমস্যা আছে।একটু আগেই তো আমার বাবার ইগো বিক্রি করে তুমি ঝালমুড়ি কিনে খাচ্ছিলে,ওই ব্যাট্যা বলছিলে।এখন মুহুর্তের মধ্যে ওই ব্যাট্যা থেকে সোজা মামু হয়ে গেলো।বাহ!আর ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,,এখন তোমরা এই বাড়ির গেষ্ট হয়ে আসোনি,যে যেখানে খুশী যেতে পারবে।আপাততো তোমরা এই বাড়িতে রাতের অন্ধকারে ঢুকে পড়া দুজন চোর।যদি একবার কোনো ভাবে বড় আব্বু বা বাবাইয়ের কাছে ধরা পড়েছো তাহলে ওনাদের বন্ধুকের বর্তমান বুলেটের উপর তোমাদের নাম লেখা আছে।আর আমিও কতোক্ষন নিজের মুখ বন্ধ রাখতে পারবো বলতে পারছি না।হতেও তো পারে আমি নিজের মুখটা বন্ধ রাখতে না পেরে নিজেই ওনাদের কাছে তোমাদের চোড় বলে ধড়িয়ে দিলাম।”
মিহির ভ্রু কুচকে বললো
“তুই কি কোনোভাবে আমাদের ব্লাক মেইল করার চেষ্টা করছিস?”
“চেষ্টা করছি না,,ডিরেক্ট ব্লাকমেইল করছি।চুপটাপ আমার মুখ বন্ধ করার জন্য কিছু একটা দিয়ে যাও,নাহলে তোমরা এতোক্ষন যে যে কথা গুলো বলেছো সব আমার ফোনে রেকর্ড করা আছে।রেকর্ডিং গুলো গিয়ে ভালো ছেলের মতো বড় আব্বু আর বাবাইকে দেখিয়ে আসবো।তখন তোমাদের দুজনের কি অবস্থা হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো।”
মিহির চোখ দুটো বড় বড় করে ছাহীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই টুকু পুচকে একটা ছেলে নাকি তাসনিধ সায়াজ মিহির কে ব্লাকমেইল করছে!বিষয়টা নিতান্তই হাস্যকর।তবে আপাততো এই পুচকের কথা না শুনলে এই লেজ ছাড়া বাদরটা সত্যি সত্যি ওদের বিপদে ফেলে দিতে পারে।মিহির ছাহীরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করে একটা পাচশো টাকার নোট ছাহীরের হাতে দিয়ে ওর কান টেনে ধরে বললো
“এইবার চুপচাপ নিজের মুখটা বন্ধ রাখবি।নাহলে তোকে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে টুপুৎ করে ফেলে দিবো।তোর যাহ সাইজ তাতে ওতো উপর থেকে পড়লে একদম আলুর ভর্তা হয়ে যাবি।”
বলেই মিহির গটগট করে হেটে উপরে উঠে গেলো।মিহির যেতেই ছাহীর ফিক করে হেসে দিলো।অনেক দিন পর ও মিহিরকে জ্বালাতে পেরে ভীষন মজা পেয়েছে।
।
আহীর তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে সাড়িকার রুমের ডুপ্লিকেট চাবিটা বের করে দরজাটা খুলতে লাগলো।এই চাবিটা অনেক আগেই বানিয়েছিল সাড়িকা কে জ্বালানোর জন্য।আহীর আর মিহির মাঝে মাঝে রাতে এসে ভুত সেজে এসে সাড়িকা আর সাঈফা কে ভয় দেখাতো।
আহির দরজাটা খুলে সামনে এগোতেই অবাক হয়ে গেলো।পুরো ফ্লোরে শুধু কাচের গুড়োর ছড়াছড়ি, রুমটা একদম তছনছ হয়ে আছে।কোনো একটা জিনিস ঠিকঠাক মতো জায়গায় নেই,সব উল্টেপাল্টে এখানে সেখানে পড়ে আছে।আহীর বেডের দিকে তাকালো, দেখলো সাড়িকা বেডের উপরে নেই।বেডের উপরে থাকা বালিশ,পাশ বালিশ,টেডিবিয়ার সব এখানে সেখানে পড়ে আছ। আহীর ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করে,টর্চ অন করে চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে সাড়িকা কে খুজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।আহীর এটাই ভেবে পাচ্ছে না,রুম তো ভিতর থেকেই বন্ধ ছিলো তাহলে সাড়িকা গেলো কোথায়?আর কিভিবেই বা গেলো?
চলবে,,,,,