#লেখিকাঃ_আরভি_আহিয়াদ_তিহু
#পর্বঃ44
এদিকে দিশা অভির কথা শুনে কান্না বন্ধ করে হতবম্ভ হয়ে বসে আছে।ও অভির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“আমি আপনারই হবো মানে কি?আর আপনিই কিভাবেই বা আমাকে এই বাড়িতে পার্মানেন্টলি নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করবেন?”
অভি কিছু না বলে চুপচাপ ওয়ারড্রোপ থেকে ফাষ্ট-এইড বক্স টা বের করে নিয়ে এসে দিশার সামনে এক হাটু গেরে বসলো।দিশা অভিকে চুপচাপ থাকতে দেখে বললো
“কি হলো আমার প্রশ্নের অ্যান্সার দিন?”
অভি দিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো
“সেটা নাহয় সময় হলেই জানতে পারবে।আপাততো চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো বসে থাকো।তোমার পা টা ব্যান্ডেজ করতে হবে অনেকখানি ছিলে গেছে।”
বলেই অভি দিশার কাটা পা টা তুলে নিজের হাটুর উপরে রেখে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।অভি দিশার পা ধরেছে দেখে দিশা অভির হাটুর উপর থেকে পা টা নামিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো
“একি আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?আপনাকে ব্যান্ডেজ করতে হবে না।আমাকে ফাষ্ট-এইড বক্স টা দিন,,আমি নিজের টা নিজে করে নিতে পারবো।”
দিশার কথা শুনে অভি রাগি চোখে দিশার দিকে তাকালো।অভিকে এভাবে তাকাতে দেখে দিশার মুখটা ফ্যাক্যাশে হয়ে গেলো।অভি দিশার পা টা আবার নিজের হাটুর উপর তুলে দাতে দাত চেপে বললো
“চুপচাপ আমাকে আমার কাজটা করতে দাও।শুধু শুধু আমার রাগ উঠিও না।আমি রেগে গেলে তোমার হাত পায়ের যে ভালো আঙুল গুলো আছে ওগুলোও এটার মতো হয়ে যাবে বুঝলে?”
কথাটা বলেই অভি আবার ব্যান্ডেজ করায় মনোযোগ দিলো।দিশা শুকনো একটা ঢোক গিলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।অভি দিশার পায়ের আঙুলে ব্যান্ডেজ করে হাতের র্যাস পড় জায়গায় ওয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিলো।তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে ফাষ্ট- এইড বক্স টা আবারও ওয়ারড্রোপে রেখে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“পেইন কিলার খেতে হবে,,দুপুরে কিছু খেয়েছো?”
দিশা ডানে বামে ঘাড় ঘুড়িয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো।অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিশার কাছে গিয়ে ওকে ঝট করে কোলে তুলে নিলো।আকষ্মিক ঘটনায় দিশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।দিশা চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো
“একি হঠাৎ এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেনো?প্লিজ নামান আমাকে!”
অভি দিশাকে নিয়ে ওর রুম থেকে বের হতে হতে বললো
“তোমাকে আলিশার রুমে রেখে আসতে যাচ্ছি।এখন বাড়িতে অনেক মেহমান আছে।তোমাকে আমার রুমে দেখলে শুধু শুধু উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসে থাকবে।”
কথাটা বলে অভি সামনে তাকাতেই দেখলো সাড়িকা সাঈফা আলিশাকে নিয়ে সবেমাএ রুম থেকে বের হয়েছে।ওরা অভির কোলে দিশাকে দেখে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।তিনজনই রসগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে অভির দিকে তাকিয়ে রইলো।
অভি ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বললো
“কিরে এভাবে মূর্তির মতো সামনে দাড়িয়ে আছিস কেনো?সর সামনে থেকে!”
অভির কন্ঠস্বর কানে আসতেই ওদের হুস ফিরে আসলো।আলিশা অবাক কন্ঠে জিঙ্গেষ করলো
“তুই দিশাকে কোলে করে কোথা থেকে নিয়ে আসলি?আর কি হয়েছে ওর?”
অভি বিরক্তির স্বরে বললো
“ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলো,,পা কেটে গেছে।”
সাঈফা সন্দীহান কন্ঠে বললো
“ওয়াশ রুমে পড়ে গিয়েছিলো তো তোমার কোলে কিভাবে আসলো?”
দিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।এইভাবে অভির কোলে থাকা অবস্থায় যে ওদের সামনে পড়ে যাবে সেটা ও ভাবতেই পারেনি।
অভি বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে সাঈফা কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দিশা ওয়াশ রুমে পড়ে গিয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়েছিলো।আমি ওর চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে গিয়ে দেখি ও ফ্লোরে পড়ে আছে।তাই ওকে কোলে তুলে নিয়ে আসলাম।আলিশার রুমে রেখে যাবো বলে।”
সাড়িকা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“আচ্ছা আপি কে যখন ওয়াশ রুম থেকেই এখানে নিয়ে এসেছো তাহলে আপির পায়ে ব্যান্ডেজ আসলো কোথা থেকে?আর আপির চিৎকারের শব্দ তুমি একা শুনতে পেলে কিভাবে?বাড়িতে এতো লোক তারা কেনো শুনতে পেলো না?”
সাড়িকার কথা শুনে আলিশা আর সাঈফা ফিক করে হেসে দিলো।দিশা লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।অভি আলিশা,সাড়িকা,সাঈফাকে ধমক দিয়ে বললো
“তোদের এতো প্রশ্নের অ্যান্সার দিতে আমি বাধ্য না।সর সামনে থেকে।”
বলেই অভি হনহন করে আলিশার রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো।আর ওরা অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হেসে দিলো।
____________________________
সারাদিন সবাই অনেক হই হুল্লোর করলো।তারপর দুপুরে লাঞ্চ করার পর সবাই একসাথে বসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললো।এক সপ্তাহ পরে বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হলো।অবশ্য সবাই মোটামুটি সুস্থ হলেও আহান এখনো অসুস্থ।তাই সবাই মিলে বিয়ের ডেট টা আরো পেছোতে চেয়েছিলো কিন্তু আহান বারন করে দিয়েছে।আহান বলেছে ও এখন একদম ঠিক আছে।ওর কোনো সমস্যা নেই।তাই তাড়াতাড়িই বিয়ের ডেটটা রাগা হয়েছে।বাকিরা পুরোপুরি সুস্থ না হলেও এমনিতে ঠিক আছে,,তবে ওদের সবার শরীরেই কোথাও না কোথাও কাটা ছেড়ার দাগ।মেঘের গায়ের কাচ ফোটার দাগ গুলো এখন আর নেই।সব সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে গেছে।কিন্তু ড্রাগস টা ওর উপরে খুব খারাপ ভাবে এফেক্ট করেছিলো তাই এখনো মাঝে মাঝে ওর মাথার মধ্যে ঝীমঝীম করে।
___________
সন্ধ্যার দিকে আহানরা সবাই অভিদের বাসা থেকে চলে আসলো।সবাই যার যার গাড়ি নিয়ে নিজ গন্তব্যে চলে গেলো।আহান এসে মেঘদের বাসার গেটের সামনে গাড়ি থামালো।আহান কে গেটের সামনে গাড়ি থামাতে দেখে মেঘ আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“একি গাড়ি এখানে থামালেন কেন ভিতরে যাবেন না?”
আহান সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে শক্ত কন্ঠে বললো
“নাহ ইচ্ছে করছে না,তুমি যাও।”
মেঘ জানে আহান একবার যখন মানা করেছে তখন আর হাজারবার বললেও যাওয়ার জন্য রাজি হবে না।তাই ও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে বাইরে নামার জন্য পা বাড়ালো, ঠিক তখনই আহান মেঘের কোমরে এক হাত রেখে হেটকা টান দিলো।হঠাৎ এভাবে টান দেওয়ায় মেঘ গিয়ে হুমরি খেয়ে আহানের বুকের উপর পড়লো।আহান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেঘের চোখে চোখ রাখলো।হঠাৎ আহানকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘ ভিষন অবাক হলো।আহান এক হাত দিয়ে মেঘের গাল আস্তে করে চেপে ধরে শান্ত স্বরে বললো
“সুইটহার্ট ভুল করেও আবিরের ধারে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।ওর থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।আর কথা তো একদমই বলবে না।যেখানেই থাকো না কেনো,আমি যখনই কল করবো সাথে সাথে ফোন পিক করবে।মেডিসিন গুলো ঠিকঠাক মতো খাবে।আর তোমার ওই সো কলড পরিবারের লোকদের থেকেও যতোটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবে।মনে থাকবে?”
মেঘ উপর নিচ করে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।মেঘের সম্মতি পেয়ে আহান মেঘের গালে আরেকটু জোড়ে চাপ দিয়ে ওর দিকে ঝুকে বললো
“আমার একটা কথারও যদি অমান্য করেছো টিয়া পাখি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”
__________________________
মেঘ বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে রুমের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে ছিলো।কিন্তু মিরা রহমান এসে মেঘকে নিচে ডেকে নিয়ে গেলো।মেঘ প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু মিরা রহমানের ধমক শুনে যেতে বাধ্য হলো।মিরা রহমান ট্রে তে স্নাক্স সাজিয়ে মেঘের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মেঘকে ওগুলো ড্রইং রুমে গেষ্ট দের কাছে দিয়ে আসতে বললেন।মেঘ এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্নাক্সের ট্রে তা হাতে নিয়ে ড্রইং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।তখনই বাহির থেকে ফোন টিপতে টিপতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো মিহির।মিহিরকে ভিতরে ঢুকতে দেখেই মেঘ ট্রে তা হাতে নিয়ে ষ্টাচু হয়ে দাড়িয়ে গেলো।ভয়ে ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।এখন না জানি এই ছেলে কি একটা ঝামেলা বাজাবে।
মিহির সামনে এগিয়ে আসতে আসতে ওর চোখ গেলো মেঘের দিকে।ও ভালো করে মেঘের দিকে তাকাতেই দেখলো মেঘের হাতে খাবারের ট্রে।মিহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেঘ খাবারের ট্রে টা কেনো হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মিহিরের
মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।ও ওর ফোন টা প্যান্টের পকেটে ঢূকিয়ে মেঘের সামনে গিয়ে ওর হাত থেকে ট্রে টা ছো মেরে নিয়ে জোড়ে ফ্লোরে আচাড় মারলো। ট্রে টা এতোটাই জোড় আছাড় মারলো যে ওটা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে উঠলো।
আবিরেরা সবাই এতোক্ষন ড্রইংরুমে বসে নিজেদের মতো কথা বলছিলো।হঠাৎ কাচ ভাঙার বিকট শব্দ কানে আসতেই ওরা সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে সামনে তাকালো।মিড়া রহমানও কাচ ভাঙার শব্দ শুনে কিচেন থেকে ছুটে এলেন।মিহির মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে রেগে চিল্লিয়ে বললো
“তোকে এসব করতে কে বলেছে মেঘ?বাড়িতে কি লোকের অভাব পড়েছে যে আমার বোনকে খাবার সার্ভ করতে হবে?”
মিহিরের চিৎকারে ওখানে উপস্থিত সবাই কেপে উঠলো।মিড়া রহমান মিহিরকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন
“মিহির ওগুলো আমিই মেঘকে সার্ভ করতে বলেছি।আর নিজের বাড়ির লোকদের সার্ভ করবে সেটা তো খারাপ কিছু না?তাহলে তুমি এতো ওভার রিয়্যাক্ট করছো কেনো?”
ব্যাস মিড়া রহমানের এইটুকু কথা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।মিহির রেগে সামনে থাকা একটা টি-টেবিলের উপর একটা জোড়ে লাথি মারলো।টেবিলটা সাথে সাথে কাৎ হয়ে পরে গেলো।মিহির রেগে চিল্লিয়ে ওর মাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তুমি আমার বোনকে দিয়ে এদের সার্ভ করাচ্ছো আর আমাকে জিঙ্গেস আমি ওভার রিয়্যাক্ট কেনো করছি?আমার বোন এদের জন্য কষ্ট করে সার্ভ করবে আর এরা বসে বসে গরুর মতো গিলবে?”
মিহিরের কথা শুনে মিড়া রহমান ধমক দিয়ে বললেন
“মিহির মুখ সামলে কথা বলো।এনারা তোমার গুরুজন হয়।”
“এরা আমার কেউ হয়না!তোমাদের যতো খুশী এনাদের নিয়ে আদিক্ষেতা করো,কিন্তু আমাকে আর মেঘকে একদম এসব ড্রামার মধ্যে জড়াবে না।এদের কোনো কাজে মেঘকে টানবে না।যদি আরেক বার দেখেছি তুমি এদের কোনো কাজ মেঘকে দিয়ে করিয়েছো তাহলে আমি এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিবো।সব কিছু পুড়িয়ে শেষ করে দেবো।আশাকরি আমার রাগ সম্পকে তোমাদের ভালোই ধারনা আছে।তাই যাই করবে ভেবে চিন্তা করবে।”
বলেই মিহির আর কাউকে কিছূ বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘকে নিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর বাকিরা সবাই মিহিরের ব্যাবহার দেখে হতোবম্ব হয়ে বসে রইলো।
চলবে,,,,
[রি-চেইক করিনি,,ভূল এূটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]