#লেখিকাঃতানিশা_আহিয়াদ_তিশা
#পর্বঃ52
আগের দিন রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর জন্য বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো মেঘ।প্রথমে ভেবেছিলো ‘ও’ একাই হয়তো দেড়ি করে উঠেছে।কিন্তু পরে শোয়া থেকে উঠে বসতেই দেখলো সাড়িকা,সাঈফা,দিশা তিনজনই এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে ঘুমিয়ে আছে।মেঘ কতোক্ষন কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো।কারন মেঘ ওদের তিনজনের জন্য বেড ছেড়ে দিয়ে নিজে এসে সোফায় শুয়েছে।আর তিনজনকে এতো বড় একটা বেড দেওয়ার শর্তেও সবগুলো বেড থেকে ফ্লোরে পড়ে গেছে।আর পড়েছে ভালো কথা।কিন্তু পড়ার পর আবার এভাবে মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।মেঘ ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে বসা থেকে দাড়িয়ে ওদের কাছে গিয়ে ওদের তিনজনকেই ঘুম থেকে তুলতে লাগলো।কিন্তু ওদের উঠার কোনো নামই নেই।অবশেষে বহু কষ্টে প্রায় আধ ঘন্টা পর মেঘ ওদের তুলতে সক্ষম হলো।ওরা ফ্রেস হয়ে নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।এখন দুপুর সাড়ে বাড়োটা বাজে।কালকে অনেক রাতে হিয়ানদের বাড়ি থেকে ওরা অভিদের বাড়িতে ফিরে এসেছে।আসার পর সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তারপর প্রায় সকালের দিকে ঘুমিয়েছে।
সাড়িকা,সাঈফা,দিশা,মেঘ ব্রেকফাস্ট করে উপরে এসে আবার রেডি হতে লাগলো।আজকে সন্ধ্যায় আলিশার গায়ে হলুদ।সন্ধ্যা বেলা বর পক্ষের সবাই এই বাড়িতে আসবে।বর কনের গায়ে হলুদ এক সাথেই হবে।তার আগে মেয়ের বাড়ির লোকেরা ছেলের বাড়িতে গায়ে হলুদের তত্ব নিয়ে যাবে।আর ছেলের বাড়ির লোকেরা মেয়ের বাড়িতে তত্ব নিয়ে আসবে।মেঘ,সাড়িকা,সাঈফা আর অভিদের কিছু কাজিন মিলে হিয়ানদের বাড়িতে যাবে তত্ব দিতে।আর দিশা আলিশাকে নিয়ে প্রথমে টুকিটাকি শপিং করবে তারপর লাঞ্চটা রেষ্টুরেন্টে করে ওখান থেকে পার্লারে চলে যাবে।
_____________________________
দুপুরঃ02:00
কিছুক্ষন আগেই মেঘরা চৌধুরী বাড়িতে এসেছে।এখানে এসে ওরা গেষ্টদের সাথে ড্রইংরুমে বসে আছে।নিজেদের বাড়িতে এভাবে গেষ্ট হয়ে আসায় সাড়িকা,সাঈফার ভিষন হাসি পাচ্ছে।ওরা কোনো রকম দাতে দাত চেপে হাসিটা কন্ট্রোল করে রেখেছে।কিছুক্ষন বসে থাকার পর সার্ভেন্টরা এসে মেঘদের জন্য হালকা পাতলা স্নাক্স, ফ্রুটস দিয়ে যায়।মেঘ মিষ্টির বাটি হাতে নিয়ে একটা মিষ্টি মুখে দিতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়।ওর মনে হচ্ছে কান দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে।মিষ্টিটা গলার কাছে আটকে গেছে।মেঘ হাতে থাকা মিষ্টির বাটিটা টেবিলের উপর রেখে সবাইকে খাওয়ার জন্য মানা করতে যাবে।তার আগেই কোথা থেকে আহান উড়ে এসে মেঘের পাশে ধপ করে বসে পড়লো।তারপর মেঘের রাখা মিষ্টির বাটি টা নিয়ে চামচ দিয়ে আরেকটা মিষ্টি মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“একটা মিষ্টি এতোক্ষন বসে খেলে হবে বেয়াইন সাহেবা?মুখেরটা তাড়াতাড়ি শেষ করে আরেকটা নিন।”
বাকিরাও ততোক্ষনে মিষ্টি নিয়ে খাওয়া শুধু করলো।কিন্তু এক বাইট দেওয়ার পর কেউই আর দ্বীতিয় বাইট দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।সবাই মুখের মধ্যে মিষ্টি নিয়ে বসে আছে।না পারছে গিলতে আর না পারছে ফেলতে।অবশ্য এটাকে মিষ্টি বলা চলে না।মিষ্টিতে তো চিনি দিয়ে সিড়া দেওয়া হয় কিন্তু এটাতে শুধু লবন দিয়ে শিড়া দেওয়া হয়েছে।অতিরিক্ত লবন দেওয়ায় মিষ্টি টা একদম তেতো হয়ে গেছে।মেঘ গিলছে না দেখে আহান এক গ্লাস সাদা পানি মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“বেয়াইন সাহেবা নিজেই একটু বেশিই সুইট তো,তাই হয়তো এই এক্সটা সুইট ওনার ঠিক হজম হচ্ছে না।আচ্ছা কোনো ব্যাপ্যার না,পানিটা খেয়ে নিন বেটার ফিল করবেন।”
আহান পানির গ্লাস টা বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে মেঘ টান দিয়ে ছো মেরে আহানের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো।কিন্তু কয়েক ঢোক পানি খাওয়ার পরে মেঘ আর স্থির হয়ে সেখানে বসে থাকতে পারলো না।গ্লাসটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে মুখ চেপে ধরে এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।ওকে ওভাবে বের হতে দেখে সাড়িকা,সাঈফা সহ অভির বাকি কাজিনেরা বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।আহানের ঠোটের কোনে ফুটে উঠেছে বাকা হাসি।আহান যে পানির গ্লাস মেঘকে খাওয়ার জন্য দিয়েছিলো ওটাতেও লবন গোলানো ছিলো।সাড়িকা কাপা কাপা কন্ঠে আহান কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ভাইয়া আমাদের তো এখানের সব কাজ শেষ।তাহলে আমরা এখন আসি।”
কথাটা বলে সাড়িকা সামনে এগোতে নিবে তার আগেই আহির এসে খপ করে সাড়িকার হাত ধরে ফেললো তারপর একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
“এক যাএায় পৃথক ফল কেনো হবে ছোট বেয়াইন?ওনাকে যখন ফ্রেস পানি খাওয়ানোই হয়েছে তখন আপনাকে নাহয় ভালোবেসে একটু জুস খাওয়ালাম।”
কথাটা বলেই আহির এক হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে অন্য হাত দিয়ে সাড়িকার ঘাড় চেপে ধরে গ্লাস টা ওর মুখের সামনে ধরলো।এমন ভাবে মাথাটা গ্লাসের সাথে চেপে ধরেছে যে সাড়িকা কোনোদিকে ঘাড় টা নাড়াতেই পারছে না।অনেক ছোটাছুটি করেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন বাধ্য হয়ে সাড়িকা কে নাক চোখ বন্ধ করে জুসটা গিলতে হলো।’ও’ এক ঢোক গিলছে আর ওর মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওর পেট থেকে সব নাড়ি ভুড়ি বেড়িয়ে আসবে।কারন এটা কোনো ফলের জুস না।এটা হচ্ছে হলুদের গুড়া আর কাচা ডিমের জুস।সাড়িকা পুরো জুস টা খেয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আহির কে একটা ধাক্কা দিয়ে এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।ধাক্কা খেয়ে আহির তাল সামলাতে না পেরে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।সাড়িকা দৌড়ে যেতেই সাঈফা আর অভির বাকি কাজিনরাও চোখ বন্ধ করে দিলো এক ভো দৌড়।কিন্তু দৌড়ে বেশি দূরে যেতে পারলো না।দরজার কাছে আসতেই হিয়ান আর মিহির দুজন দুপাশ থেকে এক এক বোতল করে তৈল ওদের সামনে ঢেলে দিলো।টাইলসের উপরে তৈল পড়ে জায়গাটা একদম পিচিল হয়ে গেলো।আর ওরা সবাই দৌড়ে এসে একেক জনের গায়ের উপর একেক জন ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।সবাই হাতে পায়ে ভিষন ব্যাথ্যা পেলো।কিন্তু সেদিকে পাএা না দিয়ে সবাই কোনো রকম বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজেদের প্রান নিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।যাওয়ার আগে সাঈফা চিল্লিয়ে বললো
“এর প্রতিশোধ যদি তোদের থেকে না নিয়েছি তাহলে আমি আমার নাম পাল্টে ফেলবো।”
এদিকে ওদের এমন কান্ড দেখে আহির,আহান,রিয়ান হেসে সোফায় গরাগরি খাচ্ছে।মিহিরও দরজার পাশে দাড়িয়ে হাহা করে হেসে যাচ্ছে।হিয়ান হাসতে হাসতে দরজার কাছ থেকে আহানদের কাছে যাচ্ছিলো,ঠিক তখনই অসাবধানতাবশত তেলের উপর পা পড়ে ‘ও’নিজেই ঠাস করে চিৎ হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ওকে পড়ে যেতে দেখে আহান,রিয়ান,আহির,মিহির হাসি থামিয়ে দিয়ে হিয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার হাহা করে হেসে দিলো।আহান বসা থেকে উঠে হিয়ানের কাছে আসতে আসতে বললো
“দেখলি একেই বলে কর্মের ফল।পরের জন্য কুয়া খুড়লে সেই কুয়ায় নিজেকেই পড়তে হয়।”
হিয়ান কোমরে হাত দিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“শালা তাহলে তো সবার আগে এখানে তোর পড়া উচিৎ ছিলো।এই সব কিছুর মাষ্টার মাইন্ড তুই।এগুলো সব তোর প্লান ছিলো।আমরা তো শুধু তোকে সাপোর্ট করেছি।”
আহান এসে হিয়ানের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“কি করবো বল ম্যাড্যামদের কনে পক্ষের হয়ে বিয়ে এ্যাটেন্ড করার খুব শখ জেগেছিলো তাই হালকার উপর করে একটা কড়া ডোজ দিয়ে দিলাম।”
_____________________________
এদিকে মেঘরা সবাই বাড়িতে একদম নাজেহাল অবস্থায় ফিরে এলো।মেঘ আর সাড়িকা বমি করতে করতে কাহিল হয়ে পড়েছে আর বাকিরা কেউই ঠিকঠাক মতো সোজা হয়ে দাড়াতেই পাড়ছে।ওরা কোনো রকম নিজেদের সামলে নিয়ে সবাই মিলে বরপক্ষের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্লান করতে লাগলো।ওদের প্লানে অভিও সামিল হলো।
__________________
সন্ধ্যার পর বর পক্ষের সবাই একে একে আসতে লাগলো।একদম সবার শেষের গাড়িতে হিয়ান,আহান,মিহির,আহির,রিয়ান আসলো।ওরা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছিলো তখনই অভি ওদের দিকে এগিয়ে এসে হিয়ান কে উদ্দ্যেশ্য করে গম্ভীর মুখে বলে
“হিয়ান তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।আমার সাথে একটু অন্য সাইডে চল।”
অভিকে এতোটা সিরিয়াস মুখে কথা বলতে দেখে হিয়ান আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ অভির পিছনে পিছনে অন্য সাইডে চলে গেলো।ওদের যেতে দেখে রিয়ান,আহান,আহির,মিহির বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।অভি আর হিয়ান কিছু দূর যেতেই হঠাৎ করে উপর থেকে আহানদের গায়ে তরল জ্বাতীয় কিছু একটা পড়লো।ওরা তাকিয়ে দেখলো এটা পানিতে গোলা লাল রং।ওরা রেগে চিল্লিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাথার উপরে আবার তারল টাইপের কিছু একটা পড়লো।গন্ধ শুকে বুঝতে পারলো এটা গোবরের পানি।আহান রেগে জোড়ে আআআআআআ বলে একটা চিল্লানি দিলো।আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওদের মাথায় তরকারির ছোলা,ডিমের খোসা,মাছের আশ,হাড়,কাটা,ফাষ্ট ফুডের প্যাকেড মানে রান্না ঘরের যতো ময়লা আছে সব পড়লো।ওখানে উপস্থিত সব মানুষ হতবম্ভ হয়ে আহানদের দিকে তাকিয়ে আছে।চারপাশটা বিশ্রি গন্ধে ভরে গেছে।সবাই নাকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আহান,আহির,মিহির,রিয়ান রাগে হাত মুঠ করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে।হিয়ান আল্লাহর কাছে শূকরিয়া আদায় করছে এটা ভেবে যে ‘ও’ একটুর জন্য বেচে গেলো।বেচে যায়নি অবশ্য অভিই প্লান করে আগে থেকে ওকে ওখান থেকে সরিয়ে এনেছে।হঠাৎ চারপাশের পিনপতন নিরবতার মধ্যে কেউ একজন স্টেজে উঠে মাইকের সামনে গিয়ে জোড়ে সিটি বাজালো।সিটির শব্দ শুনে সবাই ষ্টেজে দিকে তাকিয়ে দেখলো সাইফা মাইক হাতে দাড়িয়ে আছে।সবাইকে তাকাতে দেখে সাঈফা একটু গলা ঝেড়ে বললো
“আসলে ব্যাপ্যার টা হয়েছে কি,আমরা যখন আজকে দুপুরে ওনাদের বাড়িতে তত্ব নিয়ে গিয়েছিলাম তখন ওনারা আমাদের বেশ সুন্দর করে খাতির যত্ম করে ছিলেন।তাই আমরাও ওনাদের একটু গ্রান্ড ভাবে ওয়েলকাম করলাম।ভালো করে ওয়েলকাম না করলে মেয়ের বাড়ির লোকেদেরই তো বদনাম হতো তাইনা?যাই হোক আপনারা চাপ নিয়েন না।নিজেদের মতো অনুষ্ঠান টা ইনজয় করুন।”
কথাটা বলে সাঈফা ষ্ট্রেজ থেকে নামতে নিলেই পায়েল হিলের সাথে ষ্টেজে থাকা কার্পেট লেগে পড়ে যেতে নেয়।তখনই কোথা থেকে অভির এক কাজিন এসে সাঈফা কে কোলে তুলে নেয়।আচৎমকা এভাবে হোচট খাওয়ায় সাঈফা ভয়ে ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে ছেলেটার বুকে মুখ গুজে ।ছেলেটা সাঈফার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওকে নিয়ে ষ্টেজ থেকে নিচে নেমে এসে ওকে কোল থেকে নামিয়ে দাড় করায়।মেঘ,দিশা,সাড়িকা দৌড়ে সাঈফার কাছে আসে।মেঘ হন্তদন্ত হয়ে বলে
“ঠিক আছিস?সাবধানে হাটবি তো আরেকটু হলেই তো পড়ে যেতি।”
মেঘের কথা শুনে সাঈফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা বললো
“আমি ওনাকে পড়তেই দিতাম না।ঠিক কোনো না কোনো ভাবে ছুটে এসে ওনাকে বাচিয়ে নিতাম।”
ছেলেটার কথা শুনে সাঈফা ব্রু কুচকে বললো
“মানে?”
ছেলেটা একটু থতমত খেয়ে ঠোটের কোনে জোড় পূর্বক হাসির রেখা টেনে বললো
“না মানে কিছু না।আরে মিস সাঈফা আপনি ষ্টেজে উঠে এতো সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারেন অথচ ঠিক ভাবে সোজা হয়ে একটু হাটতে পারেন না?”
কথাটা বলেই ছেলেটা সাঈফার গাল হালকা টেনে দিয়ে বললো
“পরের বার থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন।সব সময় তো আর আমি থাকবো না আপনাকে বাচানোর জন্য।”
বলেই ছেলেটা একটা তেডি স্মাইল দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।আর ওরা চারজন ছেলেটার যাওয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো।
সাঈফার যে গালটা ওই ছেলেটা স্পর্শ করেছিলো সেই দিকে একজোড়া লাল রক্তিম বর্নের চোখ হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে পারলে এখনি সাঈফার শরীর থেকে ওর গালের মাংস আলাদা করে দিবে।
____________________________
বাইরে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।আহান,রিয়ান,আহির,মিহির বাসার ভিতরে এসে চারজন চার রুমে সাওয়ার নিতে চলে গেলো।সবাই এদিকে কাজে বিজি আছে তাই অভি এসে সাঈফার হাতে চারটা টাওয়েল আর চারটা পাঞ্জাবীর সেট ধরিয়ে দিয়ে এগুলো আহানদের দিয়ে আসতে বললো।সাঈফাও ভালো মেয়ের মতো ওইগুলো হাতে নিয়ে বাসার ভিতরে এসে একে একে আহির,আহান,রিয়ানের রুমে ওগুলো রেখে আসলো।আর আসার আগে সবার ওয়াশ রুমের দরজায় নক করে বলে আসলো পাঞ্জাবী,টাওয়েল বাইরে রাখা আছে।
প্রায় পাচ মিনিট ধরে সাঈফা একটা রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে দরজাটা লক করা নেই।তাও ঠেলে ভিতরে যেতে ওর ভিষন ভয় করছে।কারন এই রুমে মিহির আছে।সাঈফা অনেক ক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর মনে সাহস যুগিয়ে বুকে ফু দিয়ে দয়জায় হালকা নক করে ভিতরে ঢুকলো।’ও’ ভেবেছিলো মিহির হয়তো এখনো ওয়াশ রুমের মধ্যেই আছে।কিন্তু ওর ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে কেউ এসে ঠাস করে দরজাটা লক করে দিলো।আচৎমকা দরজা লক করার শব্দে সাঈফা ঘুরে পিছনে তাকালো।তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।সাথে কয়েকটা হার্টবিটও যেনো মিস করে ফেললো।ওর সামনে মিহির দাড়িয়ে আছে।মিহিরের পড়নে শুধুমাত্র একটা হোয়াইট টাওয়েল।ওর ভেজা চুল থেকে টুপ টুপ করে পানির ফোটা গুলো ওর লোমহীন বুকে পিঠে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।মিহিরকে এভাবে দেখে সাঈফা আবার কয়েক দফা ক্রাশ খেলো।পরক্ষনেই মনে মনে কড়া ভাষায় নিজেকে কয়েকটা গালি দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকালো।তারপর চোখ খিচে বন্ধ করে এক শ্বাসে বললো
“বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি।অভি ভাইয়া আমাকে এই গুলো দেওয়ার জন্য পাঠালো (হাতে থাকা পাঞ্জাবী তাওয়েল দেখিয়ে)।ভেবে ছিলাম আপনি ওয়াশরুমে আছেন তাই পারমিশন না নিয়েই ভুল করে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।কিন্তু আমি বাইরে দাড়িয়ে দরজায় নক করে ছিলাম বিশ্বাস করুন।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ পাইনি তাই আরকি এসে পড়েছি।আই অ্যাম ভেরি সরি।আর কখনো এমনটা হবে না।”
সাঈফার এমন গরগর করে কথা বলার ধরন দেখে মিহির একটা মুচকি হাসি দিলো।পরক্ষনেই কিছু একটা মনে পড়তেই মিহিরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।’ও’ একপা একপা করে সাঈফার একদম সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর শক্ত কন্ঠে বললো
“তখন ওখানে ওটা কি হচ্ছিলো?”
মিহিরের প্রশ্ন শুনে সাঈফা ঝট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো।তাকিয়েই মিহির কে নিজের এতোটা কাছে দেখে ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো।মিহির ওকে পিছিয়ে যেতে দেখে নিজেও ওর দিকে দু”পা এগিয়ে গেলো।সাঈফা আরো পিছাতে যাবে তার আগেই মিহির ওর কোমরে হাত রেখে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো
“ছেলেটার সাথে তখন কি কথা বলছিলি?”
সাঈফা কাপাকাপ কন্ঠে বললো
“ক-কোন ছ-ছেলেটা?”
মিহির তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে সাঈফার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ওর গালে শ্লাইড করতে করতে বললো
“আরেহ বাহ এরমধ্যেই ভুলে গেলি?অন্য সবকিছু তো তোর বেশ ভালোই মনে থাকে।কিন্তু একটা ছেলে এসে তোকে কোলে নিলো,তোর সাথে এতো কথা বললো,তুই তার গলা জড়িয়ে ধরলি,সে তোর গালে টাচ করলো এইটুকু সময়ের মধ্যে এতো কিছু তোর মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেলো?”
সাঈফা এবার বুঝতে পারলো মিহির কার কথা বলছে।’ও’ ভ্রু কুচকে বললো
“আরে ওটা তো রাজ ভাইয়া।আলিশা আপুর কাজিন।এতোদিন ইতালি ছিলো।বিয়ে এটেন্ড করতে বাংলাদেশে এসেছে।”
সাঈফার কথা টা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মিহির ওর কোমর ছেড়ে দিয়ে ঠাটিয়ে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।চড় টা বেশ জোড়ে মারায় সাঈফা উপুর হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ওর মাথার মধ্যে কেমন ঝিমঝিম করছে।মিহির গিয়ে সাঈফার বাহু চেপে ধরে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে চিল্লিয়ে বললো
“ওই ছেলের বিষয়ে এতো খোজ খবর নিতে তোকে কে বলেছে?এখানে এসেছিস কি ছেলেদের বিষয়ে খোজ নেওয়ার জন্য?আর তোর সাহস হলো কি করে ওই ছেলেটার কোলে উঠে ওর গলা জড়িয়ে ধরার?”
কথাটা মিহির এতো জোড়ে বললো যে সাঈফা ভয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।তারপর কাদতে কাদতে বললো
“আমি ওনার ব্যাপ্যারে কোনো খোজ খবর নেইনি।এগুলো তো আন্টিরা যখন বলাবলি করছিলো তখন শুনেছি।আর আমি তো ইচ্ছে করে ওনার কোলে উঠিনি,পড়ে যাচ্ছিলাম তাই উনিই এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।”
মিহির সাঈফাকে থাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিয়ে ফ্লোর থেকে টাওয়েল আর পাঞ্জাবী টা উঠালো।তারপর দরজাটা চাবি দিয়ে লক করে সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো
“আমি চেইঞ্জ করে যতোক্ষন পযর্ন্ত না বের হচ্ছি ততোক্ষন পযর্ন্ত মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের করবি না।চুপচাপ এখানে শুয়ে থাক।”
কথাটা বলেই মিহির ওয়াশরুমে চলে গেলো।মিহির চলে যেতেই সাঈফা দরজার কাছে গিয়ে দরজার লক খোলার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু খুলতে না পেরে জোড়ে জোড়ে ধাক্কাতে লাগলো আর মেঘ আপু,আহান ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলো।কিন্তু লাউড মিউজিক চলার কারনে ওর চিৎকারের শব্দ কারো কানেই গিয়ে পৌচাচ্ছে না।
রাজ সাঈফা কে বাড়ির ভিতরে আসতে দেখে ‘ও’ নিজেও ভিতরে চলে আসে।মেয়েটাকে বেশ ভালো লেগেছে ওর।খুব মিশুকে সভাবের আর দেখতেও মাসাআল্লাহ অনেক সুন্দরী।ভাবছে আলিশার বিয়েটা মিটে গেলে সাঈফার বাড়ির লোকের কাছে নিজের বিয়ের প্রস্তাপ দিবে।রাজ করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো।ঠিক তখনই একটা মেয়েলি কন্ঠের চিৎকার শুনে দাড়িয়ে গেলো।চিৎকারের শব্দটা অনুসরন করে একটা রুমের সামনে গিয়ে থেমে গেলো।তারপর একটু কৌতুহলী কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“কে আছেন এখানে?”
একটা অপরিচিত ছেলের কন্ঠস্বর শুনে সাঈফা কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আমি সাঈফা।পাএের বোন হই।বাইরে গিয়ে মেঘ অথবা আহান নামের কাউকে পেলে এখানে একটু নিয়ে আসুন প্লিজ।আমি এখানে আটকে গেছি।”
সাঈফার ভয়েজ শুনে রাজের চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না।’ও’ বাইরে থেকে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বললো
“মিস সাঈফা একদম ভয় পাবেন না।শান্ত হোন আমি কিছু একটা করছি।”
সাঈফা বিরক্তির স্বরে বললো
“আরেহ ধুর আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না।আহান ভাইয়া অথবা মেঘ আপিকে ডেকে আনুন প্লিজ।”
কথাটা বলেই সাঈফা পাশে তাকাতেই দেখলো মিহির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মিহিরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাঈফা শুকনো একটা ঢোক গিললো।এখন যে ওর কানের নিচে আরেক টা পড়বে সেটা বুঝতে ওর আর বাকি রইলো না।কথাটা ভাবতে ভাবতে মিহির সত্যি সত্যি এসে ওর গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো।চড় খেয়ে সাঈফা আবার ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলো।মিহির ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে বললো
“চুপচাপ এখানে বসে কান্না করবি।এখান থেকে উঠলেই মেরে তোর ঠ্যাং ভেঙে দিবো।”
কথাটা বলেই মিহির গিয়ে দরজাটা খুলে ফেললো।খুলেই রাজ নামের ছেলেটাকে চোখের সামনে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
#চলবে