# আরশিযুগল প্রেম পর্ব ২৯
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব- ২৯
________________
কপালের ছোট্ট টিপটা আরেক দফা ঠিক করে নিয়েই ব্যাগ হাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো শুভ্রতা। মনটা ভীষণ ভালো আজ। পুরো চারদিন পর সাদাফের সাথে দেখা হতে চলেছে তার। সকাল নয়টায় অফিস ফেলে, বানানী থেকে ধানমন্ডি এসে সাদাফের পক্ষে শুভ্রতার সাথে দেখা করাটা প্রায়ই সম্ভব হয়ে উঠে না। তবুও, শত ব্যস্ততাকে পাশে রেখে নিজ থেকেই ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলেছে সাদাফ। শুধুমাত্র আধাঘন্টার জন্যে একসাথে বসবে তারা….অনুভূতিময় মানুষটাকে প্রাণ ভরে দেখে নিয়ে জ্বালাময় তৃষ্ণাটা আরো খানিকটা বাড়িয়ে তুলবে। শুভ্রতার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুঁটে ওঠলো। বাইরে যাওয়ার জুতোগুলো পরে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতেই পেছন থেকে ডেকে ওঠলো শুভ্রব,
—-” দাঁড়া শুভি।”
ভাইয়ের ডাকে থমকে দাঁড়ালো শুভ্রতা। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ধরা পড়া চুরের মতো একবার ভাইয়ের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠলো শুভ্রব,
—-” ভার্সিটি যাচ্ছিস?”
শুভ্রতা মাথা নাড়লো। যার অর্থ, “হ্যাঁ। সে ভার্সিটি যাচ্ছে। ” শুভ্রব ডান হাতের কব্জিতে সাদা ডায়ালের ঘড়িটা পরতে পরতে বললো,
—-” বেশ! চল। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
শুভ্রবের বলা কথাটায় আৎকে উঠলো শুভ্রতা। আমতা আমতা করে বললো,
—-” তোকে পৌঁছে দিতে হবে না ভাইয়া। মাত্র তো ১০/১৫ মিনিটের পথ। রিক্সা করে ঠিক চলে যাবো আমি। তাছাড়া, সবসময় তো একাই যাওয়া আসা করি। তাহলে আজ….”
শুভ্রব গম্ভীর মুখে বললো,
—-” সবসময় কিভাবে যাওয়া-আসা করিস তা তো জানতে চাই নি আমি। আমি বাইকে ওয়েট করছি, জলদি আয়।”
শুভ্রতা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। শুভ্রব তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই একহাতে কপাল চেপে ধরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। যেকোনো কারণেই হোক, শুভ্রব যে রেগে আছে তা বেশ বুঝতে পারছে শুভ্রতা। এই অবস্থায় ভাইকে কিছু বলা মানেই জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরো ভয়ানক করে তোলা। শুভ্রতা তাড়াহুড়ো করে ঘড়ি দেখে —- ৭.৩১। সাদাফের এতোক্ষণে রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যাওয়ার কথা, এবার কি হবে? শুভ্রতার ভাবনার মাঝেই ডেকে উঠলো শুভ্রব। শুভ্রতা নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিলো।
ভার্সিটি গেইটে পৌঁছে, বাইক থেকে নেমে দাঁড়াতেই গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো শুভ্রব,
—-” ক্লাস কয়টাই শেষ হবে তোর?”
শুভ্রতা চকিতে ভাইয়ের চোখের দিকে তাকালো। ভাইয়ের শীতল চাহনিতে দৃষ্টি না রাখতে পেরে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো,
—-” একটায়….একটায় শেষ হবে ক্লাস।”
—-” ঠিক আছে। ক্লাস শেষে তোকে এসে নিয়ে যাবো আমি। আশেপাশেই আছি, সমস্যা নেই।”
শুভ্রতা বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-” আশেপাশেই আছিস মানে? এতোক্ষণ তুই কোথায় থাকবি ভাইয়া? আমি একাই চলে যেতে পারবো…..”
শুভ্রতাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই কথা বলে উঠলো শুভ্রব,
—-” আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না তোকে। আমার সময় ভালো ভালোই কাটবে। এই মামার দোকানে বসে চা খাবো। সাদেকদেরকেও আসতে বলেছি… কিছুক্ষণের মাঝে ওরাও চলে আসবে। আড্ডা চলবে বিন্দাস।”
শুভ্রতা শক্ত গলায় জিগ্যেস করলো,
—-” তুই কি আমায় গার্ড দিচ্ছিস ভাইয়া?”
শুভ্রব শীতল চোখে তাকাল। ঠান্ডা গলায় বললো,
—-” হ্যাঁ দিচ্ছি। এবার ক্লাসে যা।”
—-” কিন্তু কেন?”
শুভ্রব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-” দাদু বলেছে তাই। কাল নাকি খবরে কি সব দেখেছে। তখন থেকেই তোর জন্য প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে তাঁর। আর তখন থেকেই আমাকে তোর বডিগার্ড নিযুক্ত করা হয়ে গেছে। এবার যা তো! এমনি মেজাজ খারাপ…. মাথা খাস না।”
শুভ্রতা করুণ চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে, ধীর পায়ে ভেতরের দিকে হাঁটতে লাগলো। শুভ্রব বোনের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দাদুর কথাটা নেহাৎই মিথ্যে বলে নি শুভ্রব। আনিমুল হক শুভ্রতাকে নিয়ে যথার্থই চিন্তিত কিন্তু শুভ্রবের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুটা সম্পূর্ণই আলাদা।
________________
রেস্টুরেন্টে এসি চলছে। চারদিকে ঠান্ডা শীতল পরিবেশ। সাদাফ রেস্টুরেন্টের এক কোণায় বসে চুপচাপ কাঁচের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। দু’চোখ ভর্তি তার প্রতীক্ষা। প্রেয়সীকে এক নজর দেখতে পাওয়ার প্রতীক্ষা! অপেক্ষা করতে করতে অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছে সাদাফ। নয়টায় অফিস তার। এখন বাজে আটটা। এতোক্ষণে তো শুভ্রতার চলে আসার কথা। শুভ্রতার নাম্বারে বার কয়েক কল করার পর উঠে দাঁড়ালো সাদাফ। সাথে সাথেই অপরিচিত একটা নাম্বার ভেসে উঠলো ফোন স্ক্রিনে । কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নাভেজা গলায় বলে উঠলো শুভ্রতা,
—-” তুমি আর অপেক্ষা করো না প্লিজ। ভাইয়া আমার ওপর নজর রাখছে। ওর চোখ ফাঁকি দিয়ে রেস্টুরেন্টে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আর পৌঁছালেও অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে। তোমার তো….”
সাদাফ ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। ঠান্ডা গলায় বললো,
—-” আজ দেখা না হলে আগামী দুই সপ্তাহে তোমার সাথে দেখা হবে না শুভ্রা। আমি তোমাকে মিস করছি।”
এটুকু বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো সাদাফ। ওপাশ থেকে শুভ্রতার নিরুত্তর হেঁচকি শুনেই ফোনটা কেটে দিলো সে। রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে আসছে তার। সেই সাথে ভীষণ কষ্টও হচ্ছে। এক নজরের জন্য হলেও শুভ্রতাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। এতোটা পথ ছুটে এসে এভাবে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হবে ভাবতেই সবকিছু ভেঙে-চুরে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। সাদাফ লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে পাশে রাখা গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি খেলো। নিজেকে শান্ত করে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে।
বারান্দার গ্রিলে আঁকড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। বৈশাখ মাসের ভ্যাপ্সা গরমটা ভীষণ জ্বালাচ্ছে আজ। গাছের পাতাগুলোও যেন অনশনে নেমেছে। মনের ভুলেও কেঁপে উঠছে না। আকাশটাও কালো মেঘে ঢাকা। শুভ্রতার মতো আকাশের মনটাও আজ ভীষণ খারাপ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অসংখ্যবার সাদাফকে সরি বলেছে শুভ্রতা। সাদাফ ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও শুভ্রতার মন মানছে না। কিছুতেই না। আজকেই অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে চলে যাবে সাদাফ। ফিরবে ঠিক দু’সপ্তাহ পর। এতোটা দিন সাদাফকে না দেখে থাকতে হবে ভেবেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে শুভ্রতার। কিন্তু সে কাঁদবে না। সাদাফ তার অযথা কান্না একদমই পছন্দ করে না। শুভ্রতা বুক ভরে শ্বাস টেনে নেয়। হঠাৎ করেই উপলব্ধি করে, শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সবকিছু হারিয়ে নিতান্তই নিঃস্ব লাগছে। শুভ্রতার গাল বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। শুভ্রবকে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। এতোকিছুর পরও শুভ্রবকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। কিছুতেই না। কি ভেবে নিজের রুমের দিকে দৌড়ে গেলো শুভ্রতা। বিছানা থেকে ফোনটা তুলে নিয়েই কল লাগালো পরিচিত এক নাম্বারে। কলটা রিসিভ হতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো শুভ্রতা,
—-” ওই? হারামি কোথাকার! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আমার বড় ভাইয়ের সাথে প্রেম করিস অথচ আমাকে বলিস না। প্রেম করা এতো সহজ? তোদের প্রেমে সবচেয়ে বড় ভিলেন হবো আমি। কি ভেবেছিস? আমাকে না জানিয়ে সারা শহরে প্রেম করে বেড়াবি? হবে না। কিছুতেই না। আমি…”
শুভ্রতার আচমকা এসব কথায় অবাক হলো পুষ্পি। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” প্রেমে পড়ে পাগল টাগল হয়ে গেছিস নাকি শুভি? দুনিয়ায় আর কোনো ছেলে খুঁজে পেলি না? সব রেখে তোর ওই ধলা বিলাই ভাইটাকে আমার সাথে জড়াচ্ছিস? অদ্ভুত! মরে গেলেও তোর ভাইয়ের লগে প্রেম করবো না আমি। সত্যি করে বল তো, নেশা টেশা করছিস কিছু?”
#চলবে….
# আরশিযুগল প্রেম
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব- এক্সট্রা পার্ট (২৯)
________________
‘দুই সপ্তাহ’ শব্দটা অল্পতেই শেষ হয়ে গেলেও দুই সপ্তাহে ঘেরা সময়টা খুব দীর্ঘ। দুই সপ্তাহ মানে বিশ হাজার একশো ষাট মিনিটের অপেক্ষা! সাদাফ বিহীন একটা মিনিটও যেখানে বিষাক্ত সেখানে এতোটা সময় শুভ্রতার জন্য মৃত্যুরই নামান্তর। অফিসের কাজে বাইরে যাওয়ায় অধিকাংশ সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। সারাদিনের ক্লান্তিটা রাত নামার সাথে সাথেই চোখের পাতায় ভর করে। ক্লান্তি আর ব্যস্ততা ঠেলে শুভ্রতাকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারে না সে। ফোন দিলেও বেশিক্ষণ কথা বলাটা আর হয়ে উঠে না। সারাদিনের পিপাসু মন নিয়ে বসে থাকা শুভ্রতার জন্য পাঁচ মিনিটের সাদাফ বড্ড যন্ত্রণার। পাঁচ মিনিটের জন্য সাদাফকে পেয়ে,তার কন্ঠ শুনে একদমই মন ভরে না শুভ্রতার। পিপাসাটা বেড়ে যেন দ্বিগুণ হয়। কখনো কখনো ফোন রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। কেন সে সাদাফের প্রতি এতো দুর্বল? কেন? আর সেই দুর্বলতাটা কেন-ই বা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে? রাগে-দুঃখে নিজের হাত-পা কামড়ে জখম করে শুভ্রতা। কুশন, চাঁদর সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে অস্থির করে তুলে। কিছুক্ষণ পর নিজেই গুছিয়ে রাখে সব। রাত-বিরেতে শাওয়ার ছেড়ে বসে থাকে। ভিজে চুপচুপে হয়ে কাটিয়ে দেয় সারারাত। সাদাফ ফোন দিয়ে যখন বলে,
—-” সাবধানে থাকবে শুভ্রা। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে। আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে, ওকে?”
সাদাফের বলা ‘ওকে’ এর উত্তরটা আর দেওয়া হয় না শুভ্রতার। বুক ফেটে বেরিয়ে আসে হাহাকার। সাদাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাশে বসিয়ে রাখার ইচ্ছেটা তীব্র হয়। তারপর, একসময় ইচ্ছেটাকে চোখের জলে ভাসিয়ে দেয়। নিজেকে তার পাগল পাগল মনে হয়। সাদাফকে ছাড়া বাঁচার কথা ভাবলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আজও ঠিক তাই হলো। ঘড়িতে দশটা বাজতেই মনের পাটাতনে ঠুকরে উঠা শকুনির মতো বেজে উঠলো মুঠোফোন। শুভ্রতা সারাটাদিন নিজেকে সামলে রাখলেও ফোনটা পেতেই যেন উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা তুলে কানে নিলো সে। সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ক্লান্ত আদুরে কন্ঠ ভেসে এলো,
—-” তোমাকে ভীষণ মিস করছি শুভ্রাণী। ভীষণ! প্রচন্ড দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়। ঢাকায় থাকলে নির্ঘাত তোমার বাসার সামনে চলে আসতাম আজ।”
সাদাফের এমন খোলামেলা কথায় নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না শুভ্রতা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। সাদাফ অস্থির হয়ে বললো,
—-” আরে বাবা, কাঁদার মতো কিছু বলেছি নাকি? কাঁদছো কেন? বাচ্চাদের মতো কথায় কথায় কাঁদে কেউ? এভাবে কাঁদলে আর ফিরবে না বউ।”
শুভ্রতার কান্নার বেগ এবার বাড়লো বৈ কমলো না। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
—-” আমি সেদিন রেস্টুরেন্টে যাই নি বলে, ইচ্ছে করে এমনটা করছো তুমি। ইচ্ছে করেই ফিরছো না…..”
শুভ্রতার কথায় হেসে ফেললো সাদাফ। হাসিমুখেই বললো,
—-” পাগলিটা বলে কি! কান্না থামাও না রে বাবা। আমি ক্লান্ত শরীরে কি তোমার এই কান্না শুনার জন্য ফোন দিয়েছি? চমৎকার একটা হাসি দাও এবার। তোমার হাসি দেখলেই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে আমার।”
শুভ্রতা কান্না থামানোর চেষ্টা করলো। সাদাফ মুচকি হেসে বললো,
—-” রাতে খাও নি নিশ্চয়? রাত সাড়ে দশটার বেশি বাজতে চললো এখনও খাও নি? এসব কোন ধরনের বাচ্চামো, শুভ্রা? আমি তোমাকে আগেই বলেছি, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের কোনোরূপ ক্ষতি করার চেষ্টা তুমি করবে না। আর না খেয়ে থেকে ঠিক সেই কাজটাই করছো তুমি। প্লিজ শুভ্রা…. খেয়ে নাও। আর মাত্র দুটো দিন। ফিরছি আমি। এখন রাখি, কেমন?”
শুভ্রতা উত্তর দেয় নি। সাদাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছোট্ট করে ‘খেয়ে নাও’ বলেই ফোন কেটেছে। সাথে সাথে দমকা হাওয়ার মতো কান্নায় ভেঙে পড়েছে শুভ্রতা। আরো দু’দুটো দিন। তারমানে আরো দুই হাজার আটশো আশি মিনিটের অপেক্ষা! শুভ্রতার কান্নার মাঝেই গলা ছেড়ে ডেকে উঠলেন রাদিবা আহমেদ। শুভ্রতা চোখ-মুখ মুছে দরজাটা খুলে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। রাদিবা আহমেদ মেয়ের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন। চোখ-মুখের একি ভয়ানক অবস্থা হয়েছে তার মেয়ের? শুভ্রব মায়ের থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। বোনের এমন বিধ্বস্ত মুখের দিকে একবার শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই নিজের ঘরে ফিরে গেলো সে। রাদিবা আহমেদ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
—-” কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
শুভ্রতা ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলো,
—-” কিছু হয় নি। ঘুমোচ্ছিলাম তাই এমন লাগছে। কিছু বলবে?”
রাদিবা যান্ত্রিক পুতুলের মতো হাতে থাকা ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
—-” তোর মামু ভিডিও কলে আছে। কথা বল….”
শুভ্রতার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ফোনটা নিয়ে রাস্তার মাঝ বরাবর ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মায়ের অযথা প্রশ্নের থেকে মামুর সাথে কথা বলাটাই কম বিরক্তিকর ভেবে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো সে। রাদিবা এখনও স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের চোখে-মুখে। ভেতরটা উদ্বেগে ছটফট করছে তার। কি জানি, কি হলো তার মেয়ের! শুভ্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মামুর পাশে বসা অপরিচিত একজনকেও চোখে পড়লো তার। লোকটির গোলগাল ভদ্রলোক ধরনের চেহারায় কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। লোকটি সরাসরি শুভ্রতার দিকে তাকাচ্ছে না। একবার তাকিয়েই অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে তার মামুর দিকে তাকালো। শীতল গলায় বললো,
—-” আসসালামু আলাইকুম মামু। কেমন আছেন?”
মামু অমায়িক হেসে বললো,
—-” ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামুনি। তুমি ভালো আছো?”
শুভ্রতা জবাব দিলো না। মামু বিগলিত হেসে বললো,
—-” তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ও হচ্ছে আমার বন্ধু ওবায়দুল্লাহর ছেলে। ভেরি শার্প বয়!”
পাশের ছেলেটি হাসার চেষ্টা করে বললো,
—-” হ্যালো শুভ্রতা?”
শুভ্রতা ভদ্রতার হাসি হাসলো৷ ছোট্ট একটা শেষ টেনে বললো,
—-” আমি খুব সিক ফিল করছি মামু। তোমার সাথে পরে কথা বলি? প্লিজ?”
শুভ্রতার মামু কিছু বলার আগেই ফোনটা মার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দরজা দিলো শুভ্রতা। ছেলেটার ওমন লাজুক হাসি মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না শুভ্রতার। আর মামুও বা অপরিচিত একটা ছেলেকে ভিডিও কলে আনে কিভাবে? রিডিওকিউলাস। বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে এলো শুভ্রতার। ভয়ানক রাগে সবকিছু ভেঙে ফেলার তীব্র ইচ্ছে জাগতে লাগলো!!
#চলবে….
[ আপনাদের নাকি মন ভরে নি? তাই এক্সট্রা পার্ট।]