#অবন্তিকা_তৃপ্তি
রাত বাড়ছে; অদূরে থেকে কটা কুকুরের ডাক ভেসে আসছিল। অদিতি-ধ্রুব হাঁটছে ফুটপাথ ধরে। অদিতির গা চাদর দিয়ে ঢাকা; ধ্রুবর মাথায় ক্যাপ! অদিতি দুহাতে গায়ের চাদর শরীরের সঙ্গে চেপে ধরে জোরোসরো ভঙ্গিতে হাঁটছে; ওর পেছনে ধ্রুব! ধ্রুবর মুগ্ধ চোখ-দুটো অদিতির পিঠে ঝুলানো বেনুনি দেখছিলো; হাঁটার তালে অদিতির বেনুনি নড়ছিল—ভীষণ সুন্দর দৃশ্য ছিলো এটা।
অদিতি বলা শুরু করলে; ধ্রুবর ধ্যান ভাঙে! অদিতি বলে গেল——‘আমি লক্ষ্মীপুরের ভীষণ অজপাড়া গ্রাম থেকে এসেছি; যেখানে প্রে… প্রেম ভালোবাসা পা/প নয়, মহাপা/প!’
ধ্রুব অবাক হয়ে তাকালো অদিতির দিকে! অদিতি ঢোক গিলে আবারও বলতে থাকে—— ‘আমাদের গ্রামে একটা ছেলে-মেয়েকে একসঙ্গে সন্দেহভাজনভাবে দেখা গেলে ওদের নিয়ে গ্রামের পঞ্চায়েতে সালিশ বসানো হয়; নি-ষ্ঠুরভাবে অ/পমান করা হয় ছেলে-মেয়ের দুই পরিবারকে। বিচার বসে; ওই ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়, এবং ওদের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।’
ধ্রুব এবার ভীষণ অবাক হলো; জিজ্ঞেস করলো— ‘এই যুগে এসেও এমন, ইম্পসিবল!’
অদিতি শুনে মলিন হাসল! বলে যায় নিজের কথাগুলো——‘এসবের পেছনে ওদের যুক্তি—প্রেম হারাম! হারাম সম্পর্কে আল্লাহর আযাব আসে, গ্রামের বরকত কমে যায়।’
ধ্রুব শুনে যায় শুধু। অদিতি বলে—-‘ওই প্রেম জড়ানো দুই ছেলে-মেয়ের পরিবারকে কিভাবে দেখা হবে সামাজিকভাবে; সমাজে তাদের অবস্থান কেমন থাকবে; সবাই ওদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে; কতটা ব্যবসায়িক লেনদেন হবে— এসব কিছু কে সিদ্ধান্ত নেয় জানেন?’
ধ্রুব প্রশ্নবোধক চোখে তাকাল; অদিতি জোরে একটা শ্বাস টেনে আকাশের দিকে চেয়ে উত্তর দিল——— ‘আমার আব্বা! তোফাজ্জল হায়াত!’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেললো তাৎক্ষণিক। অদিতি আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকাল! হেঁটে যেতে থেকে; বলতে থাকে—— ‘ছোটবেলা থেকে আমাকে, আমার ছোট ভাই-বোনকে ভীষণ রক্ষণশীলভাবে বড় করা হয়েছে। আব্বার অনেক ভয়— উনি প্রেমের এতটা বিরোধী, উনার মেয়ে প্রেমে জড়ালে উনার মুখ থাকবে না। গ্রামের লোক ছি-ছি করবে।’
ধ্রুব ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো—— ‘এন্ড ফর দ্যাট, তুমি আমাকে এতদিন ধরে ফিরিয়ে দিচ্ছো, রাইট?’
অদিতি ধ্রুবের দিকে তাকালো একবার; পরপর চোখ সরিয়ে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—— ‘আমাদের পরিবার মূলত আব্বার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ছোটবেলা থেকে মায়ের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের পরিবারে খাটেনি। আব্বা যা বলতেন; সেটাই ফাইনাল কথা ছিল।’
ধ্রুবর হঠাৎ মনে পরে গেল নিজের মায়ের কথা! ও হাঁটতে হাঁটতে কল্পনা করে যায়— ওর মা জীবিত থাকা পর্যন্ত ওদের পরিবার মোটেও এমন ছিল না। সুখের সংসার ছিল ওদের। মায়ের প্রতি ধ্রুবর বাবা ভীষণ যত্নবান ছিলেন; সব সিদ্ধান্তে স্ত্রীর মত চাইতেন। ধ্রুবর চোখে ভাসে সেদিনের সুন্দর স্মৃতিগুলো। ওদের পরিবারও তো কত সুন্দর ছিলো; আদুরে ছিলো! তারপর; একটা রাত এলো! সেই রাত ধ্রুবর থেকে সবকিছু কেড়ে নিলো সমূলে। ওর শখের পরিবার…
অদিতি এবার ঘুরে ধ্রুবের দিকে তাকায়। ধ্রুবও তাকায়; ওর চোখ দিধান্বিত! অদিতি টলমলে চোখে চেয়ে বলে—— ‘আমি ঢাকায় আসার সময় আব্বা ভীষণ বিরোধী ছিলেন। উনি চাননি আমি ঢাকা আসি; ঢাকা আসলে আমি উনার নজরের বাইরে চলে যাবো। আর যদি প্রেমে জড়িয়ে যাই; আব্বা মূলত এটারই ভয় পাচ্ছিলেন।’
অদিতি এবার ধ্রুবর দিকে অসহায় চোখে চাইলো। ধ্রুবর দৃষ্টি অদিতির চোখের দিকে। অদিতি ধ্রুবর ওই নেশালো-স্থির চোখের দিকে চেয়ে; ঢোক গিলে কান্না আটকে রেখে বলে গেল—— ‘তারপর এখানে এসে আমার দেখা হয় আপনার সঙ্গে। একটা বেপরোয়া; ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সেদিন আমার সামনে সিগারেট মুখে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি সেদিন একটা ওয়াশরুমে একটা ছেলের সঙ্গে প্রথম দাঁড়িয়েছিলাম; আমি আটকে গিয়েছিলাম ওইদিন। আমাদের গ্রামের একটি দৃশ্য আমার চোখে ভাসছিল; গ্রামের পঞ্চায়েত, সালিশ, আব্বার বিচার করা। সব একের পর এক আমি নিজের চোখে সামনে দেখে যাচ্ছিলাম। আমি ভি..ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাই আপনার দিকে দুবার না তাকিয়ে দৌঁড়ে চলে এসেছিলাম সেখান থেকে। তারপর আমার-আপনাকে নিয়ে ছড়িয়ে যায় গুজব, আরও কত বিশ্রী কথা। আমি সেদিন দুই চোখে অন্ধকার দেখেছিলাম। বারবার আব্বাকে ডেকজছিলাম; যে সবার সামনে আঙুল তুলে বিচার করছে আমার। ভেতরে ভেতরে এই চিন্তা-গুলো আমাকে মানসিকভাবে পাগল করে দিচ্ছিলো।’
ধ্রুব তাকিয়ে আছে অদিতির দিকে; ওর চোখ ভীষণ শান্ত! অদিতি নিজের কান্না আর আটকে রাখতে পারলো না। চোখের জল ফেলে দিলো; বললো—— ‘যে আব্বা লোকের প্রেমের উপর আঙুল তোলেন; লোকের প্রেমের কারণে ওর পরিবারকে শা/স্তির কাঠগড়ায় তুলেন, তার মেয়ে যদি প্রেম করে আব্বা ম/রে যাবেন বিশ্বাস করুন। আব্বার কাছে নিজের সম্মান; নিজের গৌরব উনার সন্তানদের থেকেই আগে। আমার ব্যাপারে এসব জানতে পারলে; উনার হাতে সবচেয়ে প্রথম খু/ন হবো আমি! নিজের সম্মান রাখতে; মানুষের সামনে নিজেকে মহান প্রকাশ করতে উনি সবার সামনে আমার বলিদান দেবেন। এবং লোককে বলবেন— তোফাজ্জল হায়াত নিজের মেয়ের বেলাতেও কোনও কম্প্রোমাইজ করেননি; নজির তৈরি করেছেন গ্রামে।আমার মন; আমার প্রেম; আমার মৃ/ত্যু উনার কাছে নস্যি; বিশ্বাস করুন।’
অদিতি কেঁদে যাচ্ছে! ধ্রুব ওর দিকে চেয়ে থাকে! অদিতির দুই-চোখে পানি ভেসে যাচ্ছে। ও মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে ক্রমশ। ধ্রুব শুধু দেখে যাচ্ছে। ধ্রুব কান্না দেখে অধৈর্য্য হলো; এগিয়ে গেল দু কদম; পরপর আচমকা আটকে গেল কোনো অজানা বাঁধায়!
ওর হুশ ফেরে। অদিতিকে ওর ছোয়ার কি কোনও অধিকার আছে? অদিতি কি আদৌ কখনো দিবে ধ্রুবকে সেই অধিকার? আজ প্রথম ধ্রুব কেন যেন অদিতিকে শান্ত করতে পারছে না; ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না; গালে হাত দিয়ে ওর কান্না ভেজা চোখ মুছে দিতে পারছে না। এতটাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেল দুজনের মধ্যে আজ?
অদিতি একসময় নিজে নিজেই শান্ত হলো। দুহাতে এলোমেলোভাবে চোখ মুছে; ধ্রুবের দিকে অসহায় চোখে তাকাল! ধ্রুবর স্থির-শান্ত দুই চোখের দিকে চেয়ে; ভারি শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো —— ‘আপনি আমার জীবনে হয়তো ভালো কোনো অধ্যায় ছিলেন। কিন্তু আমি অধম সেই ভালো-টুকুও গ্রহণ করতে পারছি না। আপনি আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমাদের মধ্যে কিছু হবার নেই; হলেও শেষ অব্দি আমি আব্বার মুখের উপর আপনার নাম বলতে পারবো না। আর প্রেম করে ছেড়ে দেওয়া আপনাকে আমার সেই সাহস নেই। আমি আপনাকে সত্যি ভালো…’
অদিতি হুট করে থেমে গেল! কি বলতে যাচ্ছিলো ও?এসব ধ্রুবকে বলে কি বোঝাতে যাচ্ছে? অদিতির মুখটা ছোট হয়ে গেল; ও মাথাটা নামিয়ে ফেলল। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে ছিল তখন ওর দিকে। অদিতি পুরো কথা না বললেও; ধ্রুব বুঝে গেছে কি বলতে চেয়েছিলো ও।
ধ্রুবর এলোমেলো হৃদয় এতক্ষণে যেন শান্ত হলো। ওই মেয়ে ধ্রুবকে কিছু না বলেও অনেক কিচি বুঝিয়ে ফেলেছে আজ। ধ্রুব মৃদু হাসল; ধীর পায়ে এগিয়ে গেল অদিতির দিকে।অদিতি অনুভব করছে; ধ্রুব এগুচ্ছে। ধ্রুবর গাঁয়ের পারফিউম, হাঁটার সঙ্গে জুতোর শব্দ সব অদিতির বুকের কাপন বাড়িয়ে দিচ্ছে শুধু। ধ্রুব কিছুটা দূরত্ব রেখে অদিতির নিচু হওয়া মুখের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে এলো; অদিতির নামিয়ে রাখা চোখের দিকে চেয়ে ফিচেল গলায় বললো—-‘তাকাও আমার দিকে।’
অদিতির ঢোক গিললো! কান্না আটকে রেখে; ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকাল ধ্রুবর ওই নেশাল-আত্মবিশ্বাসী চোখের দিকে। দুজনের চোখে-চোখ মিলে গেল। ধ্রুব ওই মায়াবী-কান্নাভেজা মুখের দিকে চেয়ে নিজস্ব ভঙ্গিতে ঠান্ডা গলায় বলে গেলো—— ‘তুমি আমাকে নিজের থেকে কখনোই ছাড়াতে পারবে না অদিতি। তোমার বাবা নিজের হাতে আমার কাছে তোমাকে তুলে দিবেন; ট্রাস্ট মি। সেদিন নিজেকে আর আটকে রেখো না; আজকের অর্ধেক বলা কথাটা পুরোপুরি বলে দিও-
আরেকটু ঝুঁকে এসে; ধ্রুব এবার ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ——-‘অ্যাই উইল বি ওয়েটিং ফর দ্যাট ডে; অদিতি! ডেসপারেটলি!’
অদিতি দ্রুত চোখ খিঁচে নিল! ধ্রুব এভাবে ফিসফিস করে বলছে; ওর বুক কাঁপছে! মনটা হরমোনের জ্বালাতনে চুড়ান্ত বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে—নিজেকে আর এতটা কঠোর ভাবে না আটকে রাখতে। ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে এই প্রেমিক ধ্রুবর বুকে।
ধ্রুব ধীরে সরে গেল। অদিতির দিকে চেয়ে বললো—— ‘হোস্টেলে নামিয়ে দেই তোমায়; চলো।’
ধ্রুব অদিতিকে যখন হোস্টেলে নামিয়ে দিলো; যাওয়ার আগে অদিতি ওর পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ উসখুস করতে লাগল। ধ্রুব ওকে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল; বলল——‘কিছু বলবে?’
অদিতি থামল! উসখুশ গলায় বলতে চাইলো——‘‘আমি বাড়ি যাচ্ছি সামনের সপ্তাহে! হয়তোবা আমার আকদ…’
‘রুমে যাও অদিতি; গো!’—— অদিতিকে ধ্রুব ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল।
অদিতি অবাক হয়ে তাকালো! বিয়ের কথা শোনার পর থেকে ওর বুক ফেটে যাচ্ছে। আর ধ্রুব এতটাই শান্ত হয়ে আছে?ও স্থির দৃষ্টিতে ধ্রুবের দিকে চেয়ে রইল! ধ্রুব এখনো হয়তো অদিতির পরিস্থিতি বুঝতে পারছে না। ও জানতেই পারছে না—ওদের দেখা হওয়াটা, একসাথে পথ চলা এটুকুই ছিল!ও যদি ধ্রুবকে না দেখে আর…
অদিতির আজ শুধু ইচ্ছে করছে— শেষবারের মতো ধ্রুবর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে! বারবার মম বলছে ওর—আর যদি না দেখে এই মানুষকে! অদিতির অন্য জায়গায় বিয়ে হলে ও কি পারবে আদৌ সংসার করতে? যেখানে ও তন-মন-রুহ দিয়ে বসে আছে আরেকজনকে।
ধ্রুব বাইকে হেলমেট রেখে; দাঁড়িয়ে ছিল। অদিতি চেয়েই থাকল ওর দিকে। ধ্রুব এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো ; অদিতি তখনই দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেলল। ধ্রুব অদিতির এলোমেলো চোখের দিকে চেয়ে আছে; অদিতির কষ্টে জর্জরিত মনটা ধ্রুব বুঝে নিলো মুহূর্তেই। এবার নিজের গলার স্বর অনেকটাই নরম করে বললো—-‘বাড়ি যাও অদিতি! কিন্তু এটা ভেবো না- যে ধ্রুব তোমাকে ছেড়ে দিবে। তুমি যতই আমাকে ফিরিয়ে দাও; আমি জানি তুমি ফিল করো আমার জন্যে। তোমার মুখের কথা সত্য ভেবে বসে থাকার মতো আমি ধ্রুব ঘাস খাই না।’
অদিতি অবাক হয়ে তাকাল! ধ্রুবর চোখ বিশ্বাসী আজ! অদিতিকে ও জয় করেই ছাড়বেই! অদিতির খরার মতো বুকটায় কেন যেন পানির ঢল নামল! আজ এতবার কেন ইচ্ছে করলো- ধ্রুবর আরো একটু কাছে যেতে; জড়িয়ে ধরতে! অথচ সেই অধিকার তো নেই অদিতির! বুকটা ভারি হয়ে এলো ওর! অদিতি ধীর পায়ে হোস্টেলের গেটে ঢুকে গেল।
অদিতি ধ্রুব তখন কাউকে কল লাগাল! ওপাশে কল রিসিভ হলে ধ্রুব বলল——‘‘লক্ষ্মীপুরের একটা বাসের টিকিট কেটে রাখ সামনের সপ্তাহে!’
_____________
অদিতি বাড়ি যাচ্ছে! বাসের জানালার পাশে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছে! ওর স্থির দৃষ্টি জানালার বাইরে তাক করা। বুকে আজ বড্ড আকুতি! ফোনের মধ্যে ছেলের একটা ছবি পাঠানো হয়েছে। অদিতি এখনো সেই ছবি দেখেনি। দেখার ইচ্ছেও হয়নি। মনে হচ্ছে— জীবনে প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো ভুল কেন করে ফেলল ও। ধ্রুব ওর জীবনে না আসলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত! অদিতির কান্না আসছে এখন! ও একসময় জিজের এই এলোমেলো ভাবনা-গুলোতে অতিষ্ট হয়ে দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরলো! কেন জড়িয়েছিল ও ধ্রুবর সঙ্গে? ধ্রুব কেন, কেন ওর জীবনে এসেছে?
বাস ছেড়ে দিবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। বাড়ি যাবে; তারপর—আকদ। এরপরেই ধ্রুব ওর থেকে যোজন-যোজন দূরে চলে যাবে! কীভাবে সইবে ও এই দূরত্ব! অদিতি চোখ মুছে; ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। নতুন এই টাচ-ফোন কিনেছে কদিন আগেই। মাত্র ৫ হাজার টাকার ফোন, ছবি ভালো আসে না। তবুও ও লুকিয়ে এই ফোনেই ধ্রুবর একটা ছবি তুলেছিল।
ছবিতে ধ্রুব ময়লা সাদা শার্ট গায়ে; সানগ্লাস বুকের শার্টে ঝুলিয়ে রাখা! মুখটা গম্ভীর; এক হাতে কোকাকোলার ক্যান, অপর হাতে ওর পাশে থাকা ইমনের কাঁধে হাত রেখে কিছু বলছে। অদিতি ছবিটা দেখতেই থাকে! একসময় আঙুল দিয়ে ছবির ওপর ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো ——-‘আপনি আমার প্রেমিক হলে; হয়তো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী হতে পারতাম।আমার এই এলোমেলো-বিস্বাদ জীবনে আপনার আসা উচিত হয়নি, একদমই না।
অদিতি থামল! একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ফোনের স্ক্রিনে; ও সেই জল দ্রুত আঙুল দিয়ে মুছে ফেলল। ছবির দিকে তাকিয়েই রইলো!
‘ছবিটাতে আমাকে ভালো দেখাচ্ছে না, অদিতি!’ ——-আচমকা ধ্রুবর গলা শুনে অদিতির হাত থেকে ফোন পড়ে গেল নিচে; চমকে উঠে সামনে তাকাল। ধ্রুবর চোখে সানগ্লাস; কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো; আজ একটা পরিপাটি কালো শার্ট আর জিন্স পরেছে। ধ্রুব অদিতির দিকে চেয়ে আছে গম্ভীর দৃষ্টিতে!
ধ্রুব এবার একটু ঝুঁকে ফোন মাটি থেকে তুলে সেটার ময়লা মুছে অদিতির পাশে এসে ঠাস করে বসে গেল। অদিতি তখনও বিস্ময়ে ধ্রুবর দিকে চেয়ে আছে! ওর এসবকিছু বিশ্বাসই হচ্ছে না। ধ্রুব অদিতির ফোন পরিষ্কার করে এগিয়ে দিয়ে বলল——‘নতুন ফোনের প্রথম ছবিটাই আমার? গুড; ভেরি গুড!’
অদিতি তখনও অবাক চোখে চেয়ে আছে। ও বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে বসলো—-‘আপনি এই বাসে? এটা তো লক্ষ্মীপুর যাচ্ছে।’
ধ্রুব বুঝতে পারল অদিতির মনের দ্বিধা! ও সানগ্লাস চোখ থেকে খুলে বুকের শার্টে ঝুলিয়ে রেখে নিজের মাথা এগিয়ে নিয়ে যায় অদিতির দিকে; অদিতি জমে যায় যেন। ধ্রুব ওর চোখে চোখ মিলিয়ে ফিচেল গলায় বললো——-‘অ্যাই নো এটা লক্ষ্মীপুরের বাস! এন্ড আমি তোমার সঙ্গে যাচ্ছি, তোমার গ্রামে থাকতে; ইনফ্যাক্ট তোমাদের প্রেম বিরোধী বাড়িতে কদিন থাকব ভাবছি।’
ধ্রুবর চোখে কৌতুক খেলে গেল যেন। অদিতি বিস্ময়ে হতবাক! ও নিজের বিস্ময় লুকিয়ে ধ্রুবের হাত থেকে ফোন নিয়ে বললো——‘অসম্ভব! আপনি খামোকা কষ্ট করেছেন! আমাদের মধ্যে আর কিছুই সম্ভব নয়।’
ধ্রুব অদিতির দিকে হঠাৎ ঝুঁকে এলো। দু’জনের মুখ ছুঁইছুঁই হবে, সেই ভয়ে অদিতি মাথাটা পিছিয়ে নিলো! তাকিয়ে রইল ধ্রুবর চোখের দিকে! ধ্রুব নিজের মতো ওর দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল——‘সম্ভব; আমাদের মধ্যে সবই সম্ভব অদিতি।’
#চলবে
মনখুলে সবাই রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন প্লিজ!
পর্ব ভালো লাগলে বা না লাগলে, আপনারা গ্রুপে এটা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
অবন্তিকা তৃপ্তির পার্সোনাল গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/share/g/5XQheuegTGqc2anJ/?mibextid=K35XfP