#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২১
#M_Sonali
রান্নাঘর থেকে আম্মুর সাথে এসে চাঁদনী ওর আব্বুর সামনে বসে বসে চকলেট গুলো এখনো খেয়ে চলেছে একের পর এক। চাঁদনীর আব্বু অবাক ও বিষ্ফরিত চোখে দেখছে তার মেয়ের এভাবে খাওয়া-দাওয়া।
— চাঁদ মামনি তুমি এভাবে চকলেট খাচ্ছ কেন? এগুলো তো তুমি পরেও খেতে পারো একটা একটা করে খাও এত তাড়াতাড়ি খাওয়ার কি আছে মামনি?
আব্বুর কথার দিকে তাল না দিয়ে সবগুলো চকলেট খেয়ে শেষ করে চকলেটের খোসাগুলো ফেলে দিয়ে জোরে একটা ঢেকুর তুলে ওর আব্বুর দিকে তাকাল চাঁদনী। তারপর বলল
— হ্যা আব্বু বলো তুমি আমায় কেন ডেকেছো?
চাঁদনীর কথা শুনে ওর আব্বু চাঁদনীকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও কি মনে করে থেমে গেল। থেমে গিয়ে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— মামনি তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে যাও ঘরে গিয়ে রেস্ট করো। তোমার সাথে আমি পরে কথা বলব। একটু পর লাঞ্চের সময় তোমাকে ডেকে একসাথে লাঞ্চ করব কেমন?
— হ্যা আব্বু তুমি ঠিকই বলেছো সত্যিই আমার শরীরটা ইদানিং খুব ক্লান্ত লাগে আর খুব ক্ষুধা পায়। আমি তাহলে রুমে যাচ্ছি কেমন? তুমি আমার খাওয়ার সময় ডাক দিও আবার ক্ষুধা পেয়ে যাবে আমার।
কথাগুলো বলেই উঠে চলে গেল চাঁদনী ওর আব্বু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল চাঁদনীর চলে যাওয়ার দিকে। চাঁদনীর আম্মু পাশে দাঁড়িয়ে বাপ মেয়ের কথা শুনছে। হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
চাঁদনী চলে যেতেই চাঁদনীর আম্মু ওর আব্বুর কাছে বসে বলল
— কি হল বল তো, তুমি ওকে এত জরুরি ডাক দিলে আর এখন আবার কিছু না বলে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বললে? তোমার মনের মধ্যে আসলে কি চলছে বলতো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?
চাঁদনীর আম্মুর কথার উত্তর না দিয়ে চাঁদের আব্বু বলল
— আমাকে সত্যি করে বলতো চাঁদের আম্মু, চাঁদ কি কারো সাথে কোন সম্পর্কে জড়িয়েছে বা কাউকে কি ভালোবাসে? তুমি কি এ বিষয়ে কোন কিছু জানো চাঁদের আম্মু?
চাঁদের আব্বুর কথা শুনে চাঁদের আম্মু বেশ কিছুটা অবাক হয়ে বলল
— তুমি এসব কি বলছ বলতো চাঁদের আব্বু? তোমার কি হয়েছে বলোতো তুমি কি সব উল্টাপাল্টা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যাচ্ছো, আর চাঁদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা এটা কেন জিজ্ঞেস করছো?
— আমি যেটা বলছি তুমি আগে সেটার উত্তর দাও চাঁদের আম্মু। আমি কিন্তু অনেক ঘাবড়ে আছি তুমি ভাবতে পারছ না আমি যেটা ভাবছি যদি সত্যিই সেটা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের মেয়ে কত বড় বিপদে আছে। আমরা খুব শিগ্রই হারিয়ে ফেলব আমাদের চাঁদনীকে। তুমি সত্যি করে বলতো ওর কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে? ও কি কাউকে ভালোবাসে এমন কিছু তোমায় বলেছে কখনো?
— জানিনা তুমি কেন এমন করছো চাঁদের আব্বু। তবে চাঁদ অনেকদিন আগে একবার আমায় বলেছিল ও শ্রাবন নামের একটি ছেলেকে ভালবাসে। কিন্তু আমি যখন ওকে বললাম ছেলেটিকে বাসায় নিয়ে আসতে, আমি ছেলেটির সাথে কথা বলব। তখন ও খুশি হয়ে কলেজে চলে গেল আর কলেজ থেকে যখন ফিরল তখন বলল সকালে আমার সাথে মজা করেছে কাউকে ভালোবাসে না চাঁদ। আমি ওর কথাটা সত্যি ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এসব কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো চাঁদের আব্বু?
— চাঁদনী তোমায় মিথ্যা বলেছে চাঁদের আম্মু ও নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে ভালোবাসে।
— তুমি এত জোর দিয়ে এ কথা কিভাবে বলছো চাঁদের আব্বু? আমি তো তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমাকে সব কিছু ক্লিয়ার করে বলবে প্লিজ?
চাঁদের আম্মুর কথার উত্তর না দিয়ে চাঁদের আব্বু বলল
— তুমি চাঁদনীকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আস আর তাড়াতাড়ি আমাদের দুপুরের খাবার বেড়ে দাও। তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খেয়ে হসপিটালে যাব চাঁদনী কে নিয়ে।
— চাঁদনীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে মানে কি বলছো এসব তুমি?
— যা বলছি ঠিক বলছি চাঁদের আম্মু। তোমাকে আমি সবই বলবো কিন্তু তুমি একটু ধৈর্য ধরে আমার কথা মত চলো। আমাদের মেয়ের মস্ত বড় বিপদ হতে পারে যদি আমি যেটা ভাবছি সেটা সত্যি হয়ে থাকে তো। তুমি তাড়াতাড়ি খাবার বাড়ো চাঁদকেও ডেকে আনো। খাওয়া শেষ করে আমরা হসপিটালে যাবো।
স্বামীর কথা শুনে আর কিছু বলল না চাঁদের আম্মু, তারপর চাঁদকে ডাকতে চলে গেল।
,
,
সেই কখন থেকে চাঁদনী আর ওর আম্মুকে বসিয়ে রেখে চাঁদনীর আব্বু গেছে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। এখনও আসার নাম নেই। এদিকে বসে থাকতে থাকতে চাঁদনীর ক্ষুধা লেগে গেছে অলরেডি।
একটু পর আব্বুকে আসতে দেখে লাফিয়ে ওঠে চাঁদনী। তারপর আব্বুর কাছে গিয়ে বলে
— আব্বু তুমি এখানে আমায় কেন নিয়ে এসেছো বলতো? আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে আমি বাসায় যাব।
চাঁদনীর কথা শুনে ওর আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
— চিন্তা করো না মামনি আমরা একটু পরেই বাসায় চলে যাবো। তুমি এখন তোমার ডাক্তার আঙ্কেলের সাথে যাও তোমাকে একটু চেকআপ করবে তোমার শরীর খুব একটা ভালো নেই তো তাই। তারপর আমরা বাসায় চলে যাব খুব বেশি 15 মিনিট লাগবে।
চাঁদনী ওর আব্বুর কথায় কিছু বলবে তার আগেই দুজন নার্স এসে চাঁদনীকে দুই পাশ থেকে ধরে নিয়ে যায়।চাঁদনীকে নিয়ে গেলে ওর আব্বু ওখানেই একটা বেঞ্চের উপর বসে পড়ে মন খারাপ করে। চাঁদনী আম্মু এগিয়ে এসে চাঁদনীর আব্বুর কাঁধে হাত রেখে বলে
— আচ্ছা তোমার কি হয়েছে বলতো?আমি তোমার কোন কিছুই বুঝতে পারছিনা, তুমি এখানে মেয়েটাকে কি জন্য নিয়ে এসেছে বলতো? আর তুমি এত চিন্তা করছো কিসের কি হয়েছে বলো আমায়?
— এখন আমি তোমায় কোন কিছুই বলতে পারব না চাঁদের আম্মু। তুমি শুধু দোয়া করতে থাকো আমি যেটা চিন্তা করছি সেটা যেন না হয় আমাদের চাঁদনী মামনি যেন ভালো থাকে। আর ওর যেনো কিছু না হয়।
চাঁদের আব্বুর কথা শুনে চাঁদের আম্মু আর কিছু বলল না। চুপ চাপ চাঁদের আব্বুর পাশে বসে পড়লো। তার মাথাও কাজ করছে না কি হচ্ছে এসব। বেশ কিছু সময় পরেই ডাক্তার বেরিয়ে এসে চাঁদের আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো
— কনগ্রাচুলেশন্স আপনার মেয়ে ৪ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আপনার মেয়ে ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ওর শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা যাচ্ছে, যে কারণে ওর শরীর দিন দিন বেশি ফর্সা মানে সাদা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। আপনারা ওকে বেশি বেশি ফলমূল খাওয়ান এবং রক্ত শূন্যতা পূরণ করেন। নইলে ডেলিভারির সময় ওর বাচা রিস্কি হয়ে যাবে।আর ওর হাজব্যান্ড কে আমার কাছে নিয়ে আসবেন তার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ডাক্তারের কথাশুনে চাঁদনীর মা বাবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। চাঁদনীর আম্মু ধপ করে সেখানে বসে পড়লো। আর চাঁদনীর আব্বু শান্তস্বরে ডাক্তার কে বলল
— ঠিক আছে আমি চাঁদের হাজব্যান্ড কে পাঠিয়ে দিব। আর চাঁদনীরও যেনো রক্ত শূন্যতা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবো।চাঁদনীকে কি এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?
— হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন আমি চাঁদনীকে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে নিয়ে আপনারা চলে যান। আর হ্যাঁ কিছু ভিটামিন লিখে দিচ্ছি আর কিছু ওষুধ সেগুলা ওকে সময় মত খাওয়াবেন। আর শরীরে রক্ত হওয়ার জন্য বেশি বেশি রক্ত হওয়ার মত খাবার খাওয়াবেন চাঁদনীকে।
কথাগুলো বলে চলে গেল ডাক্তার। ডাক্তার চলে যেতেই চাঁদের আব্বু বসে পড়ল চাঁদের আম্মুর পাশে। চাঁদনীর আম্মু চাঁদনীর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল
— এসব কি হয়ে গেল চাঁদের আব্বু। ডাক্তার এসব কি বলে গেলেন? চাঁদনীর পেটে বাচ্চা এলো কোথা থেকে। চাঁদনী কী তাহলে সত্যিই কাউকে ভালবাসে কিন্তু আমাদের কাছে এত বড় একটা সত্য কেন লুকিয়ে গেল চাঁদনী?
চাঁদনীর আম্মুর কথা শুনে শান্ত গলায় চাঁদনীর আব্বু বলল
— তুমি চিন্তা করোনা চাঁদের আম্মু আমি সবকিছু সামলে নেব। তুমি এখন এ বিষয়ে চাঁদনীকে কোনো কিছুই বলবে না। যা করার আমি করছি। আর তুমি কি যেন নাম বলেছিলে ছেলেটার যাকে ভালোবাসে বলেছিল চাঁদনী?
— চাঁদনী ছেলেটার নাম শ্রাবণ বলেছিল। কিন্তু চাঁদনী তো বলেছে এটা ও মজা করে বলেছিল আমায়?
— আচ্ছা তুমি চাঁদনীকে নিয়ে এখন বাসায় যাও। আমি একটু এক জায়গায় যাচ্ছি ফিরতে রাত হবে। আর চাঁদনীকে খবরদার এসব বিষয়ে কোন কিছু এখন বলবে না।
কথাগুলো বলেই চাঁদনীর আম্মুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেল চাঁদনীর আব্বু। চাঁদনীর আম্মুও চাঁদনী কে সাথে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আগামি পর্বে বের হবে আসল রহস্য,,,,,