#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২০
#M_Sonali
কলেজের মাঠে গালে হাত দিয়ে বসে আছে শ্রাবনী। শ্রাবনীর ঠিক সামনেই বসে বসে খাবার খাচ্ছে চাঁদনী। চাঁদনী কে এর আগে কখনো এভাবে খেতে দেখনি শ্রাবণী। শ্রাবণী অবাক হয়ে চাঁদনী কে জিজ্ঞেস করল
— আস্তে খা চাঁদনী আস্তে খা, তুই এভাবে কেন খাচ্ছিস বলতো। তোকে তো আমি কোনদিন এই ভাবে খেতে দেখিনি। ইদানিং দেখছি তোর খাওয়া অনেক বেড়েছে। এতটা খাবার কারণটা কি আমাকে বলবি প্লিজ?
— জানিনারে শ্রাবণী কি হয়েছে আমার।ইদানীং আমার খুব খুব ক্ষুধা পায়। শুধু খেতে ইচ্ছে করে সব সময়। কিছুক্ষণ সময় না খেলেই শরীরটা খুব দুর্বল লাগে। মনে হয় যে শরীরে কোন শক্তি নেই আমার। তাই এই পরিমাণ খাই কিন্তু এটার কারণটা আমি নিজেও জানিনা।
এতক্ষণ ধরে দুরে দাঁড়িয়ে চাঁদনীর খাওয়া দেখছিল শ্রাবণ। আর অবাক হচ্ছিল কারণ ১৫ দিন আগে যখন ওরা ঐ প্রাসাদে ছিল। তখন মাঝরাতে দেখেছিল চাঁদনী এভাবে খাবার খাচ্ছে। যেটা চাঁদনী সকালে উঠে ভুলে গিয়েছিল। চাঁদনীকে নিয়ে ওইখান থেকে চলে এসেছে 15 দিন হলো। এর মাঝে চাঁদনী কখনো এইভাবে খায়নি। কিন্তু এই গত তিন চারদিন হলো চাঁদনীর কি হয়েছে সব সময় শুধু খায়। যেটা শ্রাবন লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কখনো চাঁদনীকে কিছু বলেনি। এটা নিয়ে চাঁদনীর আম্মুও অনেক টেনশনে আছে।
শ্রাবণ চাঁদনীর কাছে এগিয়ে এসে চাঁদনীর সামনে বসে শ্রাবনীকে বলল
— শ্রাবণী তুই এখন এখান থেকে যা। চাঁদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
শ্রাবণের কথা শুনে শ্রাবণী আর এক মুহূর্ত না বসে সেখান থেকে চলে গেল।
শ্রাবন যে পাশে এসে বসেছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই চাঁদনীর। চাঁদনী তো খেতেই ব্যস্ত। খাওয়া শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে তারপর শ্রাবনের দিকে ফিরে তাকিয়ে চাঁদনী বলল
— আপনি কখন এসেছেন শ্রাবন?
— তোমার কি হয়েছে চাঁদপাখি, তুমি এভাবে কেন খাবার খাচ্ছে বল তো? এর আগে তুমি একদিন রাত্রে এভাবে খেয়ে ছিলে। যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম মিলন হয়।কিন্তু সকালে উঠে তুমি ভুলে যাও সে কথা।আমিও তোমাকে আর মনে করানোর চেষ্টা করিনি তখন।কিন্তু এখন তোমার এভাবে খাওয়াটা আমার কেনো যেনো ভালো লাগছে না। তোমার কি শরীর খারাপ, কোথায়ও কষ্ট হয় তোমার? আমাকে বল প্লিজ তোমার এরকম দেখে আমার একটুও ভালো লাগছে না।
শ্রাবণের কথা শুনে চাঁদনীর কি হলো একটুতেই রেগে ফায়ার হয়ে চাঁদনী বলে উঠলো
— এসব কথা কেন বলছেন? আমার খাওয়া আপনার ভালো লাগছেনা, আমি খাচ্ছি বলে আপনার হিংসা হচ্ছে তাইনা। চলে যান এখান থেকে আপনার কোন কথা শুনতে চাই না আমি। আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছি আমার খুধা লেগেছে।
কথাগুলো বলেই শ্রাবন কে পাশ কাটিয়ে চলে গেল চাঁদনী। আর শ্রাবন হা করে তাকিয়ে রইল চাঁদনীর চলে যাওয়ার দিকে।শ্রাবন কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওর চাঁদ পাখির কি হয়েছে? ইদানিং একটুতেই খুব রেগে যায় চাঁদনী।বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না। আগের মতো দুষ্টুমিও করে না।আর সব সময় বলে ওর শরীর দুর্বল লাগছে কিছু খাওয়া দরকার। চাঁদনীর শরীরটা অনেক বেশি ফর্সা হয়ে গেছে। আগের থেকে অনেক সুন্দর লাগে এখন চাঁদনীকে দেখতে। চাঁদনীর শরীর ধবধবে সাদা হয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে আরো বেশি। কিন্তু এগুলো কেন যেন শ্রাবনের কাছে ভালো লাগেনা।
চাঁদনী চলে গেলেও শ্রাবণ সেই একই জায়গায় বসে রইল। শ্রাবণ কে বসে থাকতে দেখে শ্রাবনী শ্রাবনের কাছে এগিয়ে এসে বলল
— কি হয়েছে ভাইয়া তুমি এভাবে বসে আছো কেন আর চাঁদনী ওভাবে উঠে রাগ করে কোথায় গেলো? তোমাদের মাঝে সব ঠিক আছে তো?
— জানিনা শ্রাবণী সব ঠিক আছে কিনা? কেন জানিনা আমার মন খুব কুগাইছে। কেন বারেবারে চাঁদনী এভাবে খাবার খাচ্ছে বলতো? ওর খাওয়াটা কেন যেন আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না.।আর একটা জিনিস খেয়াল করেছিস তুই? চাঁদনী আগের থেকে অনেক বেশী সুন্দরী হয়ে উঠেছে, ওর শরীরের রঙ একদম ধব ধবে সাদা হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছু জিজ্ঞেস করলে একটুতেই রাগারাগি করে খুব রেগে যায়। ও তো আগে এমন ছিলনা। আগে কত সুন্দর দুষ্টু মিষ্টি ছিল আমার চাঁদ পাখি। হঠাৎ করে কি হলো বলতো ওর কেন এমন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ও?
শ্রাবনের কথা শুনে শ্রাবণীরও এটা মনে হলো। সত্যিইতো চাঁদনীর মাঝে অনেক ডিফারেন্স দেখা দিচ্ছে। ও আগের থেকে কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে চাঁদনী।কি কারন এর সেটা আসলেই জানা দরকার।
শ্রাবণী শ্রাবনকে আশ্বাস দিয়ে বলল
— ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না আমি চাঁদনীর সাথে কথা বলছি দেখি কি হয়েছে ওর। তুমি এটা নিয়ে টেনশন করো না আমি আছি তো।
,
,
খাওয়া শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বের হতেই চাঁদনীর ফোনটা বেজে ওঠে। কোন বের করে দেখে ওর আম্মু কল করেছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চাঁদনীর আম্মু বলে ওঠে
— চাঁদ তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।তোর আব্বু এসেছে তোকে খুঁজছে।
আম্মুর কথা শুনতেই মোবাইলটা কেটে দিয়ে ব্যাগে রেখে তাড়াতাড়ি করে কলেজ থেকে বের হয়ে যায় চাঁদনী। চাঁদনীর সাথে কথা বলার কোন সুযোগ পায় না শ্রাবণী। বাসায় পৌছে চাঁদনী দেখে ওর আব্বু ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে চা খাচ্ছে।
চাঁদনী দৌড়ে গিয়ে ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বলে
— কেমন আছো আব্বু এতদিন কেন আসনি তুমি? আমি তোমাকে কত মিস করেছি তুমি জানো?
— আমি ভালো আছি মামনি, তুমি কেমন আছো? আমিও তোমাকে এত্ত এত্ত মিস করেছি। কিন্তু কি করবো বলো কাজের জন্য আসতে পারিনি। তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে মামনি?
— হুম ভালো চলছে আব্বু। তুমি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছো সেটা বলো?
— তোমার জন্য এত এত চকলেট নিয়ে এসেছি মামনি। দেখো তোমার আম্মুর কাছে রাখা আছে। সাথে তোমার প্রিয় টেডিবিয়ারও এনেছি বেশ কয়েকটা। যাও গিয়ে তোমার রুমে দেখো।
আব্বুর কথা শুনেই আর দেরি না করে দৌড়ে চলে যায় চাঁদনী ওর আম্মুর কাছে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে ওর আম্মুকে বলে
— আম্মু আম্মু আমার চকলেট কোথায়?তাড়াতাড়ি দাও আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে।
চাঁদনীর কথা শুনে ওর আম্মু অবাক হয়ে বললো
— কি বলছিস কি চাঁদ, তুই এখন চকলেট খাবে একটু পরেই তো লাঞ্চ করবি, এখন চকলেট খেলে তো আর ভাত খেতে পারবিনা। চকলেট লাঞ্চের পরে খাস।
— না আম্মু আমি এখনই খাব আর ভাতও খাব। আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে তাড়াতাড়ি চকলেট দাও আম্মু। চকলেট গুলো কোথায় আমাকে তাড়াতাড়ি বল,,,,
কথাগুলো বলতে বলতে চাঁদনী চকলেটের বক্স খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যায় রান্নাঘরের একপাশে টেবিলের উপর রাখা। চাঁদনী দৌড়ে গিয়ে বক্সটা খুলে সব চকলেট বের করে একের পর এক চকলেট খেতে থাকে। এটা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর আম্মু।
কারণ চকলেট চাঁদনীর পছন্দের হলেও সে কখনো এভাবে চকলেট খায়নি। চাঁদনীর আম্মু বেশ কয়েকদিন হল লক্ষ্য করছে তার মেয়ের খাওয়া-দাওয়া অনেকটাই বেড়ে গেছে। সাথে চাঁদনীর সৌন্দর্য যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। চাঁদনীর আম্মু অবাক হয়ে চাঁদনীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
— তোর কি হয়েছে বলতো চাঁদ, বেশ কিছুদিন হল দেখছি তুই কেমন অদ্ভুত আচরণ করছিস। আর এভাবে খাবার বা কেন খাচ্ছিস একটু ধীরেসুস্থেও তো খেতে পারিস তাই না?
— আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে আম্মু, খুব ক্ষুধা পেয়েছে আমার। আমাকে খেতে দাও বিরক্ত করো না তোমার সাথে আমি পরে কথা বলবো।
কথা গুলো বলেই আবার খাওয়ায় মমনোযোগ দেয় চাঁদনী। চাঁদনীর এমন আচরণে বেশ অনেকটাই অবাক ও ঘাবড়ে যায় চাঁদনীর আম্মু। তাই চাঁদনীর আম্মু চাঁদনীর কাছ থেকে সরে বাইরে এসে চাঁদনীর আব্বু কাছে বসে বলতে থাকে
— চাঁদের আব্বু তোমাকে কিছু কথা বলব বলব করে বলা হয় নাই। কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে না বলে আর উপায় নাই। আমি চাঁদনীর মাঝে বেশ কয়েকদিন হলো অদ্ভুত কিছু জিনিস লক্ষ্য করছি। তুমি কি দেখেছ চাঁদনী কিন্তু আগের চাইতে অনেকটাই সুন্দরী হয়ে গেছে এবং অনেক বেশি ফর্সা হয়ে গেছে।
— হ্যাঁ এটা তো ভালো কথা। মেয়েদের যখন বিয়ের বয়সের সময় হয় তখন মেয়েরা একটু সুন্দরী হয়, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, এটাতে অদ্ভুত কি দেখলে তুমি চাঁদের আম্মু?
— আমি শুধু ওর সৌন্দর্যের কথা বলছি না চাঁদের আব্বু। চাঁদ বেশ কিছুদিন হল একটু অস্বাভাবিক ভাবে খাবার খায়। ওর নাকি সবসময় ক্ষুধা লাগে, একটু সময় না খেয়ে থাকলেই বলে শরীর খুব দুর্বল লাগছে ওর। আমার বিষয়টা খুব খারাপ লাগছে চাঁদের আব্বু। ওর ঠিক কি হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না।রান্নাঘরে গিয়ে দেখো তুমি কতগুলো চকলেট এনেছ একেবারে সবগুলো নিয়ে বসে গেছে চাঁদ।আর একের পর এক খেতেই আছে। তুমি তো এর আগেও অনেক চকলেট এনেছো ওর জন্য। আমি কখনও এভাবে খেতে দেখি নি ওকে।আর তাছাড়া ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলে ও একটুতেই রেগে যাচ্ছে উল্টাপাল্টা উত্তর দিচ্ছে। বিষয়টা আমার খুব খারাপ লাগছে চাঁদের আব্বু, আমার একটুও ভালো লাগছে না, তুমি একটু দেখো না ওর কি হয়েছে। একটা মাত্র মেয়ে আমাদের ওর কিছু হলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো বলো? তুমি একটু দেখনা চাঁদের আব্বু আমার চাঁদের কি হলো? ও এমন কেন করছে?
চাঁদনীর আম্মুর কথা শুনে চাঁদনীর আব্বু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবল। তারপর উত্তেজিত কণ্ঠে চাঁদনীর আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— চাঁদনীর আম্মু তুমি তাড়াতাড়ি যাও চাঁদনীকে এখানে নিয়ে আসো। ওর সাথে আমার কথা আছে। তুমি এসব ব্যাপারে আমাকে আগে বলনি কেন? এত দেরিতে কেন বলছ তুমি? জলদি চাঁদনীকে আমার কাছে নিয়ে আসো।
চাঁদনীর আব্বুর কথা শুনে চাঁদনীর আম্মু কোন কথা না বলে উঠে গেল রান্না ঘরে চাঁদনী কে ডেকে আনতে। এদিকে চাঁদনীর আব্বু ভয়ে ঘেমে একাকার অবস্থা। তার যেন সারা শরীর ঘেমে পানি পানি হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠছে বারবার। গলা শুকিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। তবে কি পুরনো সেই স্মৃতি নতুন করে ফিরে আসতে চলেছে তার মেয়ের জীবনে অভিশাপ হয়ে,,,,,,
আমার এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কল্পনা থেকে লেখা বাস্তবে এর কোন ভ্যালু নেই। আর তাছাড়া বাস্তবে কখনো ভ্যাম্পায়ার বলতে কোন কিছু হয় না এগুলো কল্পনা থেকেই নিয়ে তৈরি করা। তাই কেউ বাস্তবের সাথে গল্পকে গলিয়ে ফেলে উল্টাপাল্টা কমেন্ট করবেন না প্লিজ। এতে গল্প লেখার আগ্রহ কমে যায়। ধন্যবাদ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,