#ভ্যাম্পায়ার বর পর্ব ১৩
#M_Sonali
চাঁদনী ঘুমিয়ে পড়লে চোখ মেলে তাকালো শ্রাবন। তারপর চাঁদনীর কপালে চুমু এঁকে দিয়ে মনে মনে বলল
— আমি অনেক দুঃখিত চাঁদপাখি, তুমি আমাকে মাফ করে দিও, আমি তোমার কাছে সত্যি কথাটা বলতে পারলাম না। আমাদের বিয়ের কথা কখনোই আমরা কাউকে জানাতে পারব না চাঁদ পাখি। এমনকি তোমার মা-বাবা কেউও না। কারণ এর দ্বারা তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তোমাকে আমার সামনে সব ভ্যাম্পায়াররা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে যদি ওরা জানতে পারে, যে তুমি একজন মানুষ হয়ে আমার মতো একজন পিওর ভাম্পায়ার কে বিয়ে করেছো। তাই আমি তোমার ভালোর জন্য আমাদের বিয়ের কথা কাউকে বলতে পারবোনা চাঁদ পাখি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই নি চাঁদ পাখি। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার থাকাটা অসম্ভব হয়ে গেছে, যে কারণে তোমাকে আমার বিয়ে করতেই হল। চাঁদ পাখি তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না চাঁদ পাখি। যেখানেই থাকো যেভাবেই থাকো তুমি শুধু আমার আর কারো নয়। তোমার সাথে অন্য কাউকে কোনদিনো মানতে পারব না আমি। তুমি যদি অন্য কারো হও তাহলে আমি সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিব। জোর করে হলেও তুমি আমার আর ভালোবেসে হলেও তুমি শুধু আমার চাঁদ পাখি। তুমি আর কারো হতে পারো না কখনোই না কোনদিনও না। বেঁচে থাকতেও তুমি আমার, মরে গেলেও তুমি আমার, তোমাকে ছাড়া আমি কখনো থাকতে পারবো না চাঁদ পাখি। প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও কখনো ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে চলে যেওনা চাঁদ পাখি। আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি,অনেক অনেক বেশি ভালবাসি চাঁদপাখি।
কথাগুলো ভেবে চাঁদনীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল শ্রাবণ।
,
,
সকালে ঘুম ভাঙতেই চাঁদনী দেখল একা বিছানায় শুয়ে আছে ও।শ্রাবন ওর পাশে নেই, চাঁদনী মুচকি হেসে উঠে বসে আড়মোড়া ভেঙে মনে মনে বললো
— মাই সুইট হাসবেন্ড আপনি কখন চলে গেছেন, খুব মিস করছি আপনাকে আমি।ভেবেছিলাম সকালে হয়তো আপনার মুখ দেখে ঘুম ভাঙবে আমার, কিন্তু আপনি যে তার আগেই এভাবে চলে যাবেন বুঝতে পারিনি। তবে গিয়েছেন ভালোই করেছেন হয়তো, কারন লজ্জায় হয়তো আপনার সামনে মুখই তুলতে পারতাম না আমি। সত্যি খুব লজ্জা লাগছে আমার আর জানিনা আজ আমার দুষ্টুমি গুলো কোথায় হারালো। এত কেন লজ্জা লাগছে নিজের ভেতর।
কথাগুলো ভেবে একা একাই মুচকি হাসলো চাঁদনী। তারপর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে নাস্তার টেবিলে চলে গেল। নাস্তা শেষ করে ওর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে স্কুটার নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজের গেটে পৌঁছাতেই চাঁদনী দেখতে পেল ওর জন্যে মিতু আর শ্রাবণী দাঁড়িয়ে আছে কলেজের গেটের সামনে। চাঁদনী কে দেখেই এগিয়ে এলো ওরা। তারপর চাঁদনীর সামনে এসে দুষ্টু হেসে শ্রাবণী বলল
— কিরে দুষ্টু পাখি বাসর কেমন হলো তোদের কাল রাতে। আমাদের কি বলা যাবে না। আমরাও একটু শিখে রাখি ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বল। বল কি কি করলি তোরা কাল রাতে একটু শুনি বল না প্লিজ।
শ্রাবনীর কথার সাথে তাল মিলিয়ে নিতু বলল
— হ্যাঁ হ্যাঁ দুষ্টু পাখি বলনা কি কি করলি কালকে আমাদেরকেও একটু বল। শিখে রাখা ভালো সামনে তো আমাদেরও এমন দিন আসছে তাইনা?
মিতু আর শ্রাবণীর কথা শুনে চাঁদনী মুখ বেকিয়ে বলল
— ছি ছি ছি তোদের কি লজ্জা বলতে কোন কিছু নেই রে। তোরা কি লজ্জার মাথা খেয়েছিস নাকি সব। এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করেনা তোদের।
আর শ্রাবণী তোকেও বলিহারি তুই কিভাবে বলছিস এসব কথা। শ্রাবন না তোর বড় ভাই হয়।
— বড় ভাই হয় তাতে কি হয়েছে, আমি কি তোর পর নাকি বল। তুই না আমার বান্ধবী ভাইয়াকে দিয়ে দরকার নাই আমি তোর কাছ থেকে শিখব। বলনা বল কি কি করলি কাল বাসর রাতে আমাদের খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
শ্রাবণীর কথা শুনে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে শ্রাবনীর মাথায় টোকা দিয়ে শ্রাবণ বলল
— ওই কি বলছিস কি তোরা হুমম,আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি সে খবর কি আছে তোর।দিন দিন যত বয়স বাড়ছে ততো লজ্জা শরমের মাথা খাচ্ছিস তাইনা। একটা থাপ্পর দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো। যা এখান থেকে আর আমাকে আমার বউয়ের সাথে গল্প করতে দে।
শ্রাবণের কথা শুনে শ্রাবণী মুখ বেকিয়ে বলল
— হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো এখন তো তুমি এটাই বলবে ভাইয়া।আমি আর তোমার কি হই বলো। এখন তো ওই পিশাচীনি দুষ্টুপাখি ভাবি আছে। আমরা আর কাবাব মে হাড্ডি হয়ে কি করবো বল। তার চেয়ে বরং আমরা চলে যাই। চল রে চল মিতু আমরা এখান থেকে চলে যাই, থাকতে দে ওদের একা। আমরা আর কেহই ওদের বল কথায় বলেনা সময় ফুরালে সবাই ভুলে যায়।
কথাগুলো বলেই মুখ ফুলিয়ে দাঁড়ানো শ্রাবনী। শ্রাবনীর এমন কথা শুনে হু হু করে হেসে দিল চাঁদনী। তারপর আবার রাগ করে বললো
— ওই পেত্নী তুই আমারে কি বললি আমি পিশাচিনী? আমি যদি পিশাচিনী হতামনা তাহলে সবার আগে আমি তোর ঘাড় মটকে তোর রক্ত খেতাম। পেত্নী কোথাকার।
সবার কথা শুনে পাশ থেকে মিতু বলল
— এই তোরা কি একটু থামবি, যখন তখন শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া। আর পারিনা আমি তোদের নিয়ে, যানতো ভাইয়া আপনি চাঁদনীকে নিয়ে চলে যান। নতুন নতুন বিয়ে করেছেন আপনাদের ও তো একটু প্রাইভেসি দরকার আছে। তাই আমরা আর আপনাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না। ওই শ্রাবণী চলতো চল আমরা ওদিকে কোথাযও গিয়ে বসি। ওদেরকে একটু একা থাকতে দে।
কথাটা বলেই শ্রাবণীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শ্রাবনীর হাত ধরে নিয়ে চলে গেল মিতু। ওদের চলে যেতে দেখে শ্রাবণ বাঁকা হেসে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিল।শ্রাবণের চোখ টিপ দেওয়া দেখে চাঁদনি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। তারপর চাঁদনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্রাবণ ওকে কোলে তুলে নিল। শ্রাবনের এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে শ্রাবণের দিকে তাকাল চাঁদনী। চাঁদনীকে এভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হাসলো শ্রাবন। তারপর বলল
— তোমাকে একটা কথা বলব রাখবে চাঁদ পাখি আমার কথাটা?
— কথা পরে বলবেন আগে আমাকে নিচে নামান শ্রাবন। আশেপাশে কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে বলুনতো। আমাকে নিচে নামান আমার খুব লজ্জা করছে আশেপাশে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।
— কেউ কিছু ভাববে না তুমি খামোখা এত টেনশন করো না তো চাঁদপাখি। এখন তুমি চোখ টা একটু বন্ধ করো প্লিজ চাঁদ পাখি আমার কথাটা শোনো।
শ্রাবণের কথা শুনে চোখটা আরও বড় বড় করে চাঁদনী বলল
— চোখ বন্ধ করবো মানে আপনি এখন কি করবেন যে আমি চোখ বন্ধ করবো?
— যেটা বলছি সেটা শোনো চাঁদ এত বেশি বকবক না করে চোখটা বন্ধ করো। নইলে কিন্তু খবর আছে তোমার বলে দিলাম, এটা তোমার স্বামীর আদেশ।
শ্রাবণের কথা শুনে আর কিছু বলার সাহস পেলো না চাঁদনী তাই চুপ করে চোখটা বন্ধ করে রইলো। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে কিছুক্ষণ পরে চাঁদনী অনুভব করল, ও যেন হাওয়ায় উড়ে চলেছে অন্য কোথাও। এমন অনুভূতি হতেই চোখ খুলতে চাইল চাঁদনী। কিন্তু তার আগেই শ্রাবণ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— খবরদার চাঁদ পাখি এখন একটু ওচোখ খুলবে না তুমি। আমি যখন বলব তখন চোখ খুলবে তার আগে চোখ খোলা বারণ।
শ্রাবণের কথা শুনে আর চোখ খুললো না চাঁদনী। চুপ করে শ্রাবণের গলা জড়িয়ে শ্রাবনের কোলে রইল। বেশ কিছুসময় পর চাঁদনীকে নামিয়ে দিল শ্রাবণ। তারপরে নরম কন্ঠে বলল
— চাঁদ পাখি এখন তুমি নিজের চোখ টা খুলতে পারো আর সামনের দিকে তাকাও।
শ্রাবণের কথা শুনে চোখ মেলে তাকালো চাঁদনী। আর মুহুর্তেই অবাক এর উপর অবাক হয়ে গেল ও। এই কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ও, এই জায়গাটা তো আগে কখনো দেখেনি ও, অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা চারদিকে সবুজে সবুজে ঘেরা।
আর তার ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে আছে চাঁদনী। ডান পাশে রয়েছে বিশাল বড় এক নদী আর বা পাশে গভীর জঙ্গল। এ যেনো এক স্বপ্নপুরীতে চলে এসেছে চাঁদনী।
জায়গার সৌন্দর্য দেখে মুহূর্তেই চাঁদনীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। চাঁদনী খুশিতে দৌড়া দৌড়ি শুরু করলো একদিক থেকে আরেকদিক।চাঁদনীর এমন আচরন দেখে মুচকি মুচকি হাসছে শ্রাবন। বেশ কিছুক্ষণ ছোটাছুটির পর হয়রান হয়ে চাঁদনী এক জায়গায় ধপ করে শুয়ে পড়ল। তারপর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে লাগল চাঁদনী। শ্রাবণ আর দেরি না করে চাঁদনীর পাশে এসে শুয়ে পড়ল। তারপর মিষ্টি সুরে বলল
–চাঁদ পাখি জায়গাটা তোমার পছন্দ হয়েছে?
শ্রাবণের কথা শুনে শ্রাবনের দিকে ঘুরে তাকালো চাঁদনী। তারপরে মুচকি হেসে বলল
— অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে শ্রাবণ আমার এই জায়গাটা। আমি এর আগে কখনো দেখিনি এই জায়গাটা। এটা কোন জায়গা আর এতোটুকু সময়ের মধ্যে আপনি কিভাবে এখানে আমাকে নিয়ে আসলেন শ্রাবন?
চাঁদনীর কথা শুনে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো শ্রাবন। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
— কেনো চাঁদনী কিভাবে আসলাম কি করে আসলাম সেটা জেনে তুমি কি করবে। তুমি শুধু বলো জায়গাটা তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা? জায়গাটা তোমার পছন্দ হলেই আমি ধন্য। নিজের বউকে বিয়ের পরের দিন যদি একটা সুন্দর জায়গায় বেরাতে নিয়ে না আসতে পারি, তাহলে কেমন স্বামী হলাম আমি বলতো?
শ্রাবনের কথা শুনে কিছু বলল না চাঁদনী। বেশ কিছুক্ষণ অবাক নয়নে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে জড়িয়ে ধরল শ্রাবনকে। তারপর বলল
— আপনি সত্যিই অনেক ভালো শ্রাবণ আপনাকে পেয়ে আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান অনুভব করছি। আমি আপনাকে সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসি শ্রাবন। আই লাভ ইউ শ্রাবন আই লাভ ইউ।
চাঁদনী কথা শুনে চাঁদনী কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল শ্রাবণ। তারপর বলল
— তুমি তো আমাকে ভালোবাসো চাঁদপাখি। তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে অনেক বেশি বিশ্বাসও করো। তাহলে কি আমার একটা কথা রাখবে তুমি চাঁদপাখি। বলতে পারো তোমার কাছে এটা তোমার বরের আব্দার।
শ্রাবণের কথা শুনে শ্রাবণের গলা ছেড়ে দিয়ে চাঁদনী মুচকি হেসে বললো
— বলে ফেলুন মাই কিউট হাসবেন্ট, আপনার জন্য আপনার এই দুষ্টু বউটা কি করতে পারে? আপনার আদেশ আমি যথাযথ মেনে চলবো। এইটা আপনার কাছে আপনার দুষ্টু বউয়ের প্রতিজ্ঞা।
চাঁদনীর কথা শুনে উঠে বসলো শ্রাবণ তারপরে সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলল
— তুমি তোমার বাসায় কিছু একটা বলে সাত দিনের জন্য আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবে চাঁদনী?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
কি চলছে শ্রাবনের মনে? চাঁদনী কী শ্রাবনকে বিশ্বাস করে ভুল করলো?