#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ১২
#M_Sonali
শ্রাবনের কথা শুনে অবাক হয়ে চাঁদনী বলল
— এটা আপনি কি বলছেন শ্রাবণ, এভাবে আমাদের বিয়ে করা কখনোই সম্ভব নয়। বাড়িতে সবাইকে জানাতে হবে। কাউকে না জানিয়ে আমি আপনাকে কোনো ভাবেই বিয়ে করতে পারবোনা। আজকে বিকেলে আম্মু আপনাকে নিয়ে আমাদের বাসায় যেতে বলেছেন। আপনাকে দেখতে চায়, আপনার সাথে কথা বলতে চায় আম্মু।আমি আপনার আর আমার ব্যাপারে সবকিছু আম্মুকে বলে দিয়েছি শ্রাবণ। আপনি কি যাবেন না আম্মুর সাথে দেখা করতে।
— না চাঁদপাখি এখন কোনোভাবেই কাউকে জানানো সম্ভব নয় আমাদের বিয়ের ব্যাপারে। আমি যেটা বলছি সেটা মেনে নাও এখন তোমার আম্মুকে কোনভাবে সামাল দাও তুমি। কিন্তু আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কাউকে কোন কিছুই বলা যাবে না এখন, তাতে আমাদের দুজনেরই বিশাল বড় ক্ষতি হয়ে যাবে যে ক্ষতির ব্যাপারে তোমার কোন ধারনাও নেই চাঁদ পাখি।
শ্রাবনের কথা শুনে পাশ থেকে মিতু বলে উঠলো
— এ আপনি কি বলছেন ভাইয়া এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে করবে চাঁদনি আপনাকে?ওর বাড়ির সবার ও তো তোকে নিয়ে স্বপ্ন আছে, ও ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তারা কি চাইবে না নিজের মেয়ের বিয়েতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ধুমধাম করে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে দিতে?
মিতুর কথা শুনে পাশ থেকে শ্রাবণী বলে উঠল
— ভাইয়া যেটা বলছে সেটা ঠিকই বলছে মিতু। তোরা কোন কিছু জানিস না তাই এভাবে ভাবছিস, এখন আসলেই চাঁদের সাথে ভাইয়ার বিয়েটা সম্পর্কে কাউকে কিছু জানানো যাবেনা। তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ওদের যেটা আমি কিছুতেই চাইনা বা তুইও চাইবিনা হয়তো।
— কিন্তু সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করলে কি এমন ক্ষতি হবে শ্রাবণী? যেটা তোরা এভাবে লুকিয়ে যাচ্ছিস আমাদের থেকে, চাঁদনী এভাবে কিভাবে বিয়ে করবে শ্রাবণ ভাইয়াকে সবাইকে না জানিয়ে?
মিতুর কথা শুনে পাশ থেকে শ্রাবণ বলে উঠল
— তোমরা যেটা জানো না সেটা নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না প্লিজ মিতু। আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো আমি যেটা করছি চাঁদ পাখির ভালোর জন্যই করছি। প্লিজ চাঁদপাখি তুমি আমায় বিশ্বাস করো চলো আমরা বিয়েটা করে ফেলি। কিন্তু এখন দয়া করে কাউকে জানাতে চেয়েও না তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের। কথা দিচ্ছি তোমায় আমি ধীরে ধীরে সব কিছুই জানতে পারবে তুমি।
শ্রাবনের এভাবে কথা শুনে আর কিছু বলার ইচ্ছা হলোনা মিতু ও চাঁদনীর। তাই ওরা রাজি হয়ে কাজি অফিসের উদ্যেশে রওনা হলো। বেশ ভালোভাবেই শ্রাবণী আর মিতু সাক্ষী থেকে বিয়ে হয়ে গেল শ্রাবণ আর চাঁদনীর। ওরা বিয়ের বন্ধনে জরিয়ে গেলো। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দু’জন ভালবাসার পাখি স্বীকৃতি পেল। তারপর যে যার বাসায় চলে গেল।
,
,
বিকেলে বাসায় ফিরতেই চাঁদনীর মা চাঁদনী সামনে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করলো
— কি হলো চাঁদনী তুই একা ফিরলি যে তোর সাথে ওই ছেলেটা কোথায়? আমি না তাকে নিয়ে আসতে বলছিলাম তোর সাথে। তুই কি আমার কথা ভুলে গেছিস? নাকি আমার সাথে সব মিথ্যা বলে ছিলি সকালে?
মায়ের কথায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা চাঁদনী। তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল
–আসলে আম্মু আমি সকালে তোমার সাথে দুষ্টামি করেছিলাম। তোমার কি মনে হয় তোমার এই দুষ্টু মেয়ে কারো সাথে প্রেমে করতে পারে? সেটা কখনোই সম্ভব নয়, আরে যে আমার প্রেমে পড়বে আমিতো তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলব তুমি তো জানোই তোমার মেয়ে কতটা দুষ্টু।
চাঁদনীর কথা শুনে হা হা করে হেসে দিলো ওর আম্মু। তারপর বলল
— তুই আসলেই ইদানিং খুব দুষ্টু হয়ে গেছিস রে চাঁদ। এত কেন জ্বালাস বলতো আমায়? এত বড় মিথ্যা কথা তুই আমার কাছে বলতে পারলি? আমি তো বিশ্বাসই করে নিয়েছিলাম যে তুই হয়তো সত্যি কাউকে ভালোবেসে ফেলেছিস, আর তাকে নিয়ে আসতে চাইছিস, কিন্তু তোর পাগলামি দিন দিন যেন বেড়েই যাচ্ছে। বুঝেছি তোর আব্বুকে বলতে হবে তোর পাগলামি কথা দুষ্টু মেয়ে কোথাকার।
মায়ের কথা শুনে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চাঁদনী বলল
— আম্মু তুমি এত কেন অভার রিঅ্যাক্ট করছ বলোতো? আমি যেটা করেছি সেটা তো তোমার সাথে দুষ্টামি করেছি বলো, তুমি তো জানোই তোমার মেয়ে কতটা দুষ্টু। তাই বলে কি এত রাগারাগি করলে চলে বলো? আমার ভালো লাগছে না আমাকে কিছু খেতে দাও খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার।
কথাগুলো বলেই মায়ের গলা ছেড়ে দিয়ে রুমে চলে গেল চাঁদনী। তারপর মনে মনে বলল
— আম্মু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। এই প্রথমবার তোমার কাছে আমি এত বড় একটা সত্যি কথা লুকিয়ে গেলাম। জানিনা কি ভাববে তুমি আর আব্বু আমার বিষয়ে যখন সত্যিটা জানবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আম্মু আমি কখনই চাইনি তোমাদেরকে এভাবে লুকিয়ে শ্রাবনকে বিয়ে করতে। কিন্তু ওর কথাটাও ফেলতে পারলাম না আমি।জানি না কেন এভাবে সবকিছু লুকিয়ে গেল সবার থাকে। তবে যখন জানতে পারব তখন অবশ্যই সবার আগে আমি তোমাকে জানাবো আম্মু। প্লিজ আম্মু তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও।
চাঁদনী চলে গেলেও ওর মায়ের মনে কেমন যেন একটা খটকা কাজ করতে লাগলো। মেয়ের এমন ব্যবহারে চাঁদনীর মা মনে মনে বলল
— আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে চাঁদনী আজকে তুই আমার কাছ থেকে কোন কিছু লুকিয়ে গেলি। হয়তো কোনো বড় সত্যি, হয়তো সত্যিই তুই কাউকে ভালোবাসিস। নাকি আমার সাথে সত্যিই দুষ্টামি করে বললি জানিনা আমি। তবে আমি তোকে বিশ্বাস করি আমি জানি আমার চাঁদনী কখনো কোনো ভুল কাজ করতে পারেনা।
,
,
রাত 12:05 মিনিট
চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে চাঁদনী, কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই সারাক্ষণ একটা চিন্তাই মাথার মধ্যে ঘুরছে, ও কি করে পারল বাবা-মাকে কিছু না জানিয়ে শ্রাবনকে এভাবে বিয়ে করতে? যখন ওর বাবা-মা জানতে পারবে তখন না জানি কতটা কষ্ট পাবে তারা। তারা কি আদৌ মেনে নিতে পারবে চাঁদনীকে নাকি ভুল বুঝবে।
এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে চাঁদনীর। যার কোন উত্তরই চাঁদনীর জানা নেই।ভীষণ একা লাগছে নিজেকে মনে হচ্ছে কারো সাথে একটু নিজের মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারলে খুবই ভালো লাগতো। কিন্তু কেন জানিনা মনে হচ্ছে শ্রাবণ আজকে ওর কাছে আসবেনা। ভাবতেই মুখটা আরো বেশি মলিন হয়ে উঠল চাঁদনীর। মনটা ভীষণ খারাপ তার শুয়ে আছে চুপচাপ। চোখের কোনে জমে আছে এক ফোটা অশ্রুজল।
হঠাৎ জানালা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো চাঁদনীর। পিছনে ঘুরে জানালার দিকে তাকালো চাঁদনী। তাকিয়ে দেখল শ্রাবণ এসে দাঁড়িয়েছে হাসিমুখে। শ্রাবনকে দেখতেই হাসি ফুটে উঠল চাঁদনীর মুখে। কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষনের জন্য হলো না মন খারাপ করে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল চাঁদনী। একটু অবাক হয়ে চাঁদনীর দিকে এগিয়ে গেল শ্রাবন। তারপর চাঁদনীর পাশে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল
— কী হলো চাঁদপাখি, কথা বলবে না আমার সাথে? আমি কি চলে যাবো তুমি কি রাগ করে আছো আমার সাথে? প্লিজ একটু কথা বলো আজকে না আমাদের বাসর রাত?
শ্রাবনের কথা শুনে আস্তে করে চাঁদনী বলে উঠল
— প্লিজ শ্রাবন আপনি বাসর রাত বাসর রাত বলে আর কোনো কথা বলবেন না। আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু যতদিন না আব্বু আম্মু আমাদের বিয়ে সম্পর্কে না জানবে আর তারা মেনে না নেবে সে পর্যন্ত আমাদের কোন ফিজিক্যাল সম্পর্ক হবে না। আশা করি আমার কথাটা আপনি মাথায় রাখবেন শ্রাবন।
চাঁদনীর কথা শুনে মুচকি হাসলো শ্রাবণ। তারপর বলল
— পাগলি একটা আমি কি তোমায় বলেছি আমার সাথে এখনই বাসর করতে? আমিও চাই না যতদিন না সবাই জানবে কতদিন তোমার সাথে কোন শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে। আমরা বিয়ে করেছি ঠিকই কিন্তু আমরা কি বন্ধুর মতো থাকতে পারিনা? আমি তোমাকে ভালোবাসি চাঁদনী তোমার শরীরটাকে নয় তাই যতদিন না আব্বু আম্মুকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাতে পারবো ততদিন আমরা স্বামী-স্ত্রী হলেও বন্ধুর মত থাকবো।
শ্রাবণের কথা শুনে মুচকি হেসে শ্রাবনের গলা জড়িয়ে ধরলো চাঁদনী। তারপর বললো
— সত্যিই তুমি অনেক ভালো শ্রাবণ। আমি ভুল কাউকে ভালবাসিনি তুমি সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি শ্রাবন। আই লাভ ইউ শ্রাবন আই লাভ ইউ।
চাঁদনীর কথা শুনে রহস্যময় হাসি দিল শ্রাবণ। কিন্তু শ্রাবণের সেই হাসির চাঁদনীর দৃষ্টিগোচর হল না। তারপর চাঁদনী কেও বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল শ্রাবণ। আর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল একসাথে,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,