# এক মুঠো রোদ.
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্বঃ ৪৯
৮৫.
গাড়ির ডেকের উপর বসে আছে রোজা। খানিকটা দূরেই গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৃন্ময়। রোজার লেপ্টে যাওয়া কাজল আর ভেজা স্নিগ্ধ মুখটার উপরই ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মুগ্ধ দৃষ্টি। বেশ কিছুক্ষণ একইভাবে তাকিয়ে থাকার পর অধৈর্য গলায় বলে উঠলো মৃন্ময়,
—” পাঁচ বছর একটু বেশি হয়ে যায় না? ডিসিশনটা একটু পাল্টানো যায় না, রোজা?”
রোজা স্পষ্ট গলায় বললো,
—” না। যায় না। তিনবছর অনার্স, একবছর মাস্টার্স আর একবছর বাবার অফিসে প্র্যাকটিস। মোট পাঁচবছর। তারপর বিয়ে…”
মৃন্ময় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—” পড়াশোনাটা তো তুমি বিয়ের পরও করতে পারবে রোজা। আমি কি তোমাকে আটকাবো? পাঁচ বছর! ওহ্ মাই গড। কিভাবে সম্ভব?”
—” কেন? পাঁচ বছর পর কি আপনার ফিলিংস চেঞ্জ হয়ে যাবে? এইজন্যই বলি নায়করা ভালো না। মেয়ে দেখলেই হামলে পড়া স্বভাব,হুহ।”
মৃন্ময় হেসে বললো,
—” একটু কাছে এসে বসো। আমার তো আবার হামলে পড়া স্বভাব। এতো দূরে দূরে বসলে কি চলে? আই এম সো এক্সাইটেড। কি হলো? এসো।”
রোজা আরেকটু সরে বসে আড়চোখে তাকালো। মৃন্ময়কে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে সে। দিন দিন রোজার প্রতি মৃন্ময়ের ব্যবহারটা খুব বেশি খোলামেলা হয়ে যাচ্ছে। মৃন্ময় যে এভাবে কথা বলতে পারে কল্পনায় করতে পারে নি রোজা। কে জানে, আর কত রূপ দেখতে হবে তার? কথাগুলো ভেবে বাচ্চাদের মতো মুখ করে বিরবির করে বলে উঠলো রোজা,
—” নায়করা এমনই হয়, লুচু।”
মৃন্ময় নিঃশব্দে হাসতে লাগলো। হাসি থামিয়ে রোজাকে টেনে নিজের কাছে বসালো। সিরিয়াস হয়ে বললো,
—” বিয়ের জন্য তোমার ক্যারিয়ার বা পড়াশোনায় ক্ষতি হোক তা আমি নিজেও চাই না রোজা। কিন্তু এনগেজমেন্ট করে নিতে তো কোনো সমস্যা নেই। এটলিস্ট এনগেজমেন্টটা করে নিই? তারপর তোমার যখন ইচ্ছে হবে তখন না হয় বিয়ে করবো। তোমার আর আমার সম্পর্কের একটা রেসপেক্টিভ নাম চাই রোজা। “গার্লফ্রেন্ড” শব্দটা আমার পছন্দ নয়। কেউ তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড বলুক বা তোমাকে আমার সাথে বাজে ভাবে জড়াক তা আমি চাই না। তুমি “হ্যাঁ” বললে তোমার বাবার সাথে কথা বলবো আমি। প্লিজ,বুঝো একটু।
এতোক্ষণে বৃষ্টির দাপট অনেকটাই কমে এসেছিলো কিন্তু আবারও আকাশ অন্ধকার করে এলো কালো মেঘে। বর্ষার দ্বিতীয় সপ্তাহে এমন ঢালা বর্ষন অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও রোজার মনে হচ্ছে, এই বৃষ্টি শুধু তার জন্যই। তার স্পর্শ পেতেই প্রকৃতির এই আয়োজন। রোজা গাড়ির উপর থেকে লাফিয়ে নামলো। আবারও ছমছম শব্দ করে বৃষ্টির পানি গিয়ে মিশতে লাগলো নদীতে। নদীও যেন সানন্দে বুকে টেনে নিচ্ছে তাদের। আচ্ছা? নদী বুঝি বৃষ্টিকে বড্ড ভালোবাসে? ভালো না বাসলে কি এভাবে পরম আদরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেওয়া যায়? রোজার গায়ে হালকা গোলাপী রঙের শাড়ি। তার উপর সাদা সুতোর কাজ। বৃষ্টির পানিতে শাড়িটা ল্যাপ্টে গিয়ে আবেদনময়ী নারী রূপে ফুটে উঠেছে সে। শাড়ির আঁচল গেলে বেরিয়ে আছে মসৃন পেটের এক কোণো। মৃন্ময় গভীর চোখে তাকাতেই চোখ দুটো আটকে গেলো তার কোমরে। দু’সেকেন্ডের মাথায় চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও তাকালো। এবার আর চোখ সরালো না। ধীর পায়ে রোজার পেছনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বললো। কথাটা কানে যেতেই ছিটকে সরে গেলো রোজা। শাড়িটা এদিক ওদিক টেনে দিয়ে হতভম্ব গলায় বললো,
—” ছি! কি অশ্লীল কথা। আপনি যে এমন ধরনের কথা বলতে পারেন আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
মৃন্ময় মৃদু হাসছিলো। রোজার কথা শুনে বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে, শব্দ করে হেসে উঠলো। রোজা আবারও অবাক হলো। সেই সাথে মুগ্ধও। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর মৃন্ময়ের থেমে থেমে হাসির শব্দ দুইয়ে মিলে যেন এক স্বর্গীয় সুর। মৃন্ময় রোজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আলতো হাতে কাছে টেনে নিলো তাকে। কোমরে দু’হাত জড়িয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
—” আমার হাসি,কান্না, আদর,ভালোবাসা,অশ্লীলতা সবই তোমার থেকে শুরু এবং তোমাতে গিয়েই শেষ রোজা। চৌদ্দটা বছর ধরে শুষ্ক-জীর্ণ হয়ে পড়ে আছে এই মন। এবার অন্তত “এক মুঠো রোদ” হয়ে নামো প্লিজ। একটু উত্তাপের জন্যই তোমার কাছে আসা। আমার উত্তাপ চাই রোজা। প্রেমময় উত্তাপ, রোজাময় উত্তাপ।”
মৃন্ময়ের চোখে-মুখে আকুতি আর রোজার চোখে হাসি মাখানো জল। চারপাশের বৃষ্টির ফোঁটার থেকেও কি ভীষণ সাদা-সরল এই জল। ভালোবাসাময় শুভ্রতায় ঘেরা এই জল!
_________________
টেবিলে বসে চুপচাপ খাবার চিবুচ্ছে আরু। দু’সপ্তাহ হলো ঢাকার বাসায় ফিরেছে তারা। সবকিছু সেই আগের মতোই আছে তবুও কোথাও একটা কিছু নেই। বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সব। আরিফের কপালে চিন্তার ভাঁজ। প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে আরুর দিকেই তাকিয়ে আছে সে। আরু বিবাহিত কিন্তু এই সম্পর্কটা কি আদৌও মেনে নেওয়া যায়? রাফিনের হাতে তার এই ছোট্ট বোনটাকে কি করে তুলে দেবে সে? আরুই বা রাজি হবে কেন? তাছাড়া, সমাজই বা কি বলবে তাদের? আরুর আবার বিয়ে দেওয়াটাও কি এতোটা সহজ হবে?এর আগেও সাইমকে নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে কানাঘুষা হয়েছে প্রচুর। তারওপর যদি আরুর বিয়ের খবরটাও জেনে যায় সবাই তাহলে কি ভালো কোনো পাত্র পাবে সে? পেলেও তার অবুঝ বোনটিকে সারাটা জীবন চরিত্রহীনার অপবাদ নিয়ে বাঁচতে হবে। তারসাথে দিতে হবে সাধ্যের বাইরে যৌতুক। মা মরা বোনটাকে এভাবে ভাসিয়ে দিতে পারে না আরিফ। কথাগুলো ভাবতেই কপালের ভাঁজটা আরো একটু কঠিন হয়ে এলো। কাঁধে লিনার হাতের স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে বসলো আরিফ। লিনা শান্ত গলায় বললো,
—” কি হলো? খাচ্ছো না যে।”
আরিফ হাসার চেষ্টা করে বললো,
—” সন্ধ্যায়ই তো নাস্তা করলাম। এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না লিনা। তুমি খেয়েছো? এই অবস্থায় এতো কাজ করো তারমধ্যে যদি ঠিক মতো খাবারটাও না খাও তাহলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ক’দিক সামলাবো বলো?”
লিনা মৃদু হেসে বললো,
—” ধুর! কে বললো ঠিকঠাক খাচ্ছি না? আমি বেশ আছি।”
আরিফ লিনার হাতটি টেনে ধরে পাশের চেয়ারটাতে বসালো। প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে হতাশ গলায় বললো,
—” আমি জানি তুমি কি খাও আর কি করো। তোমার শরীরটা এমনিতেই দুর্বল লিনা। এই অবস্থায়ও বাসার সব কাজ করছো তুমি। তুমি বরং তোমার বাবার কাছে চলে যাও লিনা। এই অসুস্থ শরীরে…”
আরিফকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই বলে উঠলো লিনা,
—” আরুর শরীরটা কি দুর্বল দেখেছো? এই অবস্থায় আমি বাবার বাড়ি গেলে দু’দিন পর খুঁজেই পাওয়া যাবে না ওকে। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
লিনার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে নরম গলায় বললো আরিফ,
—” আর তুমি? নিজের কথাটা কি কখনোই ভাববে না লিনা? চলো না দিয়ে আসি। এবার একটু শুনো আমার কথা।”
লিনা খাবারটুকু গিলে নিয়ে মাথা নিচু করলো। মৃদু গলায় বললো,
—” তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না আমি।”
আরিফ কথাটা শুনেও শুনলো না। যথারীতি খাবার এগিয়ে দিতে দিতে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। খানিকবাদে শুকনো মুখে বললো,
—” একটা কাজের মহিলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।”
লিনা প্রতিবাদ করে বললো,
—” কি দরকার আরিফ? ধার শোধ,বাবার ঔষধ,আরুর ঔষধ,বাসার বাজার এসবেই তো টানাপোড়া পড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে বুয়া? ঢাকা শহরে বুয়া এতো সস্তা নাকি? আমি পারবো আরিফ। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কি দরকার?কিভাবে ম্যানেজ করবে?”
আরিফ শক্ত কন্ঠে বললো,
—“সেটা আমি বুঝবো। টাকার চেয়ে তোমাকে আমার বেশি প্রয়োজন লিনা। সাথে আমার বাচ্চাটাকেও প্রয়োজন।”
আরিফ-লিনা ছোট করে কথা বললেও হালকা-পাতলা কানে এসেছে আরুর। আরু এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার সাহস করে কথা পাড়লো,
—” ভাইয়া? আমি তো আছি। বাসার কাজে আমি হেল্প করবো ভাবিকে। তুই চিন্তা করিস না। এমনিতেও সারাদিন খালি হাতে বসে থাকতে একদমই ভালো লাগে না। কিন্তু ভাবি আমায় কিছু করতেই দেয় না। কিছু ধরার আগেই ধমকে ওঠে।”
লিনা হেসে ওঠে বললো,
—” বাচ্চা একটা মেয়ের কি পাকা কথা দেখেছো? এইটুকুন তুই কি কাজ করবি শুনি?”
আরু অবাক হয়ে বললো,
—” এইটুকুন? আমি এইটুকুন? একদমই না। এবার বিশে পা দিলাম। ভাইয়া? তুই বল, আমি এইটুকুন?”
আরিফ শুকনো হাসি দিয়ে ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
—” তুই আমার কাছে সবসময় এইটুকুনই বোন।”
লিনা মৃদু হাসলোও ভারি মন নিয়ে তাকিয়ে রইলো আরিফের যাওয়ার পথে। আরিফ কিছু না বললেও সবটাই বুঝতে পারছে লিনা। কিন্তু কি করবে সে? কিভাবে কমাবে আরিফের চিন্তা? এতো মানসিক চাপ মানুষটা কি করে সহ্য করছে কে জানে? লিনার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। আরিফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এতো চেষ্টা করেও কেন আরিফের কষ্টগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে না লিনা? কেন?
___________________
ঘড়িতে দেড়টা বাজে। নিস্তব্ধ এই রাতের আঁধার ভেদ করে মাত্রই কাজ সেরে বাড়ি ফিরলো রাফিন। শোবার ঘরে ঢুকতেই কেমন একটা শূন্যতা ছেয়ে ধরলো তাকে। গত দু’সপ্তাহ ধরেই এমনটা হচ্ছে তার। সারাদিন কাজের চাপে ব্যস্ত থাকলেও বাড়ি ফিরে সময় করে আরুর কথা মনে পড়ে তার। আরুর হাসিমাখা ছবিটা দেখে বুকের ভিতর শীতল শিহরণ বয়ে যায়। আরুকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। ওর কথা শুনতে ইচ্ছে করে। চারপাশের বাকি সবকিছুকে ভয়ানক রকম তেঁতো লাগতে শুরু করে। রাফিন ফ্রেশ হয়ে, কফি হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশটা গোমটরূপ ধরে আছে আজ।চারপাশটা স্তব্ধতা কাটিয়ে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে। তারসাথে কাঁপিয়ে তুলছে রাফিনকেও। তার এই নিষ্ঠুর বুকটাতে একটি কোমল মনের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে সে। যেখানে কামনার দায়ে নয় ভালোবাসার দায়ে আরুকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে বারবার। আরুকে ভাবতে ইচ্ছে করে। রাত জাগতে ইচ্ছে করে। কখনো কখনো রাগে আরুকে নিজের সাথে পিষে ফেলতে ইচ্ছে করে। সারাদিন নিষ্ঠুর, বন্য রাফিন রাতে হয়ে পড়ে শান্ত। ধরা দিতে চায় কারো বুকে। “ভালোবাসা” নামক শব্দটা যে রাফিনের থেকেও নিষ্ঠুর। রাফিনের থেকেও বন্য। রাফিন তো মানুষকে খুন করে মুক্তি দেয় চিরতরে কিন্তু ভালোবাসা খুন করে চলে প্রতিটা মুহূর্তে। শরীরের প্রতিটি লোমকে শিউরে তুলে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সুখময় বেদনায় পিষ্ট করে। এই যন্ত্রণা কি সহ্য করা যায়? রাফিন পারে না। কিছুতেই সহ্য হয় না তার তবুও এই অসহ্যকর বিষয়টিতেই আটকে পড়ে সে। দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজেকে বুঝার আগে অন্যকাউকে বুঝতে ইচ্ছে করে। অন্যকারো নিঃশ্বাসের উত্তাপে তপ্ত হতে ইচ্ছে করে। সেই অন্যকেউটা যে শুধুই আরু!
___________________
সকালের দিকে ঘুম কেটে আড়মোড়া ভাঙতেই পায়ের কাছে কিছু একটা ঠেকলো। কৌতূহল নিয়ে উঠে বসলো মৃন্ময়। কম্বল সরাতেই পায়ের কাছে লাল রঙের একটি বাক্স চোখে পড়লো তার। মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সতর্ক চোখে একবার দরজায় চোখ রেখে আবারও বাক্সটির দিকে তাকালো সে। ধীরস্থিরভাবে হাতে তুলে নিলো বাক্সটি। বাক্সটা সাদা রঙের ফিতে দিয়ে আটকানো। মৃন্ময় একটানে ফিতেটা খুলে ভেতরে চোখ রাখলো। ছোট-খাটো একটা কেক। মৃন্ময় বিস্মিত হলো। খানিকবাদেই তৃপ্তিময় হাসি ফুটলো তার ঠোঁটে। কেকের পাশে রাখা চিরকুটটা তুলে নিয়ে মেলে ধরলো সে,
” দৃষ্টিজালে জড়ায় ওকে হাজারখানা চোখ,
ধ্বনির ঝড়ে বিপন্ন ওই লোক।
জন্মদিনের মুখর তিথি যারা ভুলেই থাকে,
দোহাই ওগো, তাদের দলে লও এ মানুষটাকে–
আচ্ছা?এতো এতো ফ্যানদের ভীরে আমায় কি মনে পড়ে, নায়ক সাহেব? সবার এতো এতো শুভকামনার ভীরে আমার মৃদু কন্ঠটা কি কানে লাগে? লাগলে বলুন তো…কি বলছি আমি?”
মৃন্ময় হেসে ফেললো। দু’সপ্তাহ ধরে ফোন দিতে দিতে হাত ব্যাথা হয়ে যাওয়ার পরও ফোন তুলে নি রোজা। কেন তুলে নি কে জানে? মৃন্ময়ের মনে হচ্ছে ফোনটা না তুলেই বেশ করেছে রোজা। নয়তো সকালবেলার এই চমকে এতোটা খুশি হয়তো হতো না সে। কখনো নয়। আজ অনেক বছর পর নিজের জন্মদিনটার জন্য আনন্দ লাগছে মৃন্ময়ের। প্রচন্ড আনন্দ। মৃন্ময় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথেই দরজা থেকে বলে উঠলো সোহেল,
—” শুভ জন্মদিন স্যার।”
মৃন্ময় মৃদু হাসলো। সোহেল মন খারাপ করে বললো,
—” বিভিন্ন জায়গায় আপনার জন্মদিনের পার্টি এরেঞ্জ করা হচ্ছে। এবারও কি বেরুবেন না স্যার?”
মৃন্ময় হেসে বললো,
—” এসব জন্মদিনের পার্টি আমার ভালো লাগে না সোহেল। তবে নিশ্চিন্ত থাকো এবার আর রুমে বসে থাকছি না।”
সোহেল হাসলো। সোহেলের হাসির কারণটা ঠিক ধরতে পারলো না মৃন্ময়। ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই রোজার দেওয়া চিরকুটটা খুব যত্নে তুলে রাখলো সে। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেলো নাস্তা করবে বলে। টেবিলের কাছাকাছি যেতেই আবারও অবাক হলো। চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
—” এই সকালে এতোকিছু রান্না করিয়েছো কেন সোহেল? আমার জন্মদিনটা বাকি দিনের মতোই সাদামাটা থাকে। তাহলে এসব কেন?”
জবাবে হাসলো সোহেল। মাথা চুলকে একটা চিরকুট এগিয়ে দিয়েই চুপচাপ মুখ টিপে হাসতে লাগলো। মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে কাগজটি হাতে নিয়ে একবার সোহেলের দিকে তাকালো। মুহূর্তেই নজর ফিরিয়ে নিয়ে আবারও কাগজটির দিকে তাকালো। কাগজটি মেলতেই চোখ পড়লো গুটি গুটি অক্ষরে লেখা-
” আপনি তো দারুন ধুরন্ধর ব্যক্তি! সব থেকে কঠিন কঠিন রেসিপিগুলো পছন্দের তালিকায় যোগ করে বসে আছেন। আমি সিউর আপনি টেস্ট করার আগে রেসিপি দেখেছেন। সবচেয়ে কঠিন রেসিপিগুলো দেখে নিয়ে ঘোষণা করেছেন, “ইহা আমার প্রিয় খাদ্য।” এইজন্যই বলি নায়করা ভালো না। জানেন? কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে আমায়? এবার সবকটা আইটেম ফিনিশ করবেন। ডাইট ফাইট ভুলে যান। পুরো দু’সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করে রান্নাগুলো শিখেছি আমি। না খেলে বিয়ে তো দূর এনগেজমেন্টও ভুলে যান। আর শুনুন? শুভ জন্মদিন! শুভ জন্মদিন, মিষ্টার হিরো। “
চিঠিটা পড়েই হেসে ফেললো মৃন্ময়। চিঠিটা ভাজ করে পকেটে রাখতেই বুকে বয়ে গেলো ভালোলাগার জোয়ার। অদ্ভুত এক ভালোবাসার জোয়ার। মৃন্ময় খাবারগুলো মুখে তুলতেই তুমুল গতিতে ছুটতে লাগলো হৃদপিণ্ড নামক যন্ত্রটি। তার সাথে বাজতে লাগলো “রোজা” নামক মায়াবতী মেয়েটার নাম!
# চলবে….