# এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -১৪
রোজা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফোটোটির দিকে তাকিয়ে আছে। বাগানের কোনো একটা কোণে মিষ্টার আরিয়ার কোলে হাসিমুখে বসে আছে একটি বাচ্চা ছেলে। ছেলেটির হাতে একটা পাকা আম। ছেলেটি নিশ্চয় মৃন্ময়? মিষ্টার আরিয়ার মুখটাও হাসি হাসি আর দৃষ্টি কোলে বসে থাকা বাচ্চা ছেলেটির দিকে। পেছন থেকে মিষ্টার. আরিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হেসে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে আছেন অসম্ভব রূপবতী একজন মহিলা। রোজা মুহূর্তেই বুঝতে পারলো মহিলাটি মৃন্ময়ের মা। রোজা কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আনমনেই বলে উঠলো , ” হোয়াট আ সুইট ফ্যামিলি!” রোজা ধীর পায়ে ছবিটির দিকে এগিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো সে। বিছানা, আলমারি, টেবিল সহ ঘরের সব আসবাবপত্রই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। কিন্তু কোনো ক্লু পেলে না বললেই চলে। আরো কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়লো রোজা। কয়েকবার জোড়ে শ্বাস টেনে নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো —– ৪ঃ২০। তারমানে, রোজার হাতে আছে মাত্র ৪০ মিনিট৷ রোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরো একবার ঘড়ি দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এটা মিষ্টার. আরিয়ার শোবাররুম ছিলো অর্থাৎ বেডরুম। এখানে যেহেতু কিছু পাওয়া যায় নি তাহলে কোথায় পাওয়া যেতে পারে ক্লু? এবাড়িতে কি কোনো লাইব্রেরি আছে? বা কোনো স্টাডি রুম?যেখানে বসে দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটাতো আরিয়া। রোজা রুম থেকে বেরিয়ে এসে খুব সাবধানে তালা লাগালো। তারপর এগিয়ে গেলো পরের রুমটির দিকে। দরজাটা খুলে ভেতরে উঁকি দিতেই বুঝতে পারলো এটাও একটা বেডরুম। অনেকদিন খোলা হয় না বলে অধিকাংশ আসবাবপত্রেই ময়লার স্তুপ। রোজা এটা সেটা নেড়ে বুঝলো এখানে কোনো ক্লু পাওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তবুও এদিক সেদিক খুঁজাখুঁজি করে যখন ক্লান্ত হয়ে দাঁড়ালো তখনই কানে লাগানো ব্লুটুথটি থেকে ভেসে এলো তীর্থের কন্ঠ,
— টাইম ইজ ওভার রোজা। ব্যাক টু ইউর ক্যারেক্টার, ফাস্ট…
রোজা তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। দরজায় তালা ঝুলিয়ে নেমে গেলো নিচে। সার্ভেন্টদের কারোরই অনুমতি ছাড়া উপরে উঠার পারমিশন নেই। রোজা নিচে নেমে জামা কাপড়গুলো একটু ভালো করে ঝেড়ে নিয়েই টেবিল থেকে একটা গ্লাস তুলে নিলো হাতে। পুরোটা পানি এক নিমেষেই শেষ করে দিলো। গ্লাসটা টেবিলে রেখে তীর্থকে ম্যাসেজ করে জানালো কিছুই পাই নি সে। ম্যাসেজটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তীর্থ। কে জানে কবে কিছু একটা হাতে আসবে তাদের। যা তাদের বলে দিবে এরপর কি করতে হবে তাদের।
২৬.
বস্তির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আরু। দূর থেকেই হাজারও মানুষের আহাজারি কানে আসছে তার। আরু জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বস্তির দিকে এগিয়ে গেলো। কিছুটা এগুতেই একটা বাচ্চাকে চোখে পড়লো তার। বয়স বড়জোর দেড় থেকে দুই বছর। মায়ের পাশে বসে কাঁদছে সে। বাচ্চাটির মা কপালে আঁচল চেপে বসে আছেন। একচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। আরু কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটু নিচু হয়ে বাচ্চাটার মাথায় হাত রাখলো। পিচ্চিটা এক রাজ্য বিস্ময় নিয়ে কান্নামাখা বড় বড় চোখ তুলে আরুর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণের জন্য কান্না থামিয়ে আরুকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে মায়ের আঁচল টেনে ধরে আরুর দিকে তাকিয়ে আধো আধো কন্ঠে বলে উঠলো,
— আ.. ম্মা। আম্মা বেতা পাততে…
আরু বাচ্চাটির কথা বুঝলো না। তবে তার মাকে নিয়ে কিছু একটা বলছে তা ঠিক বুঝতে পারলো আরু। চোখ সরিয়ে পাশে বসে থাকা মহিলার দিকে খেয়াল করে তাকাতেই মহিলাটির রক্তভেজা আঁচলটি চোখে পড়লো তার। আরু খানিকটা চমকে উঠলো। একটা ঢোক গিলে নিয়ে মহিলাটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— কি হয়েছে আপনার? এতো রক্ত কেন?
মহিলাটি কেঁদে উঠলো এবার। রক্তেভেজা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দুর্বল গলায় বলে উঠলো,
— সামনের মাসে আমার সোয়ামী মইরা গেছে বোন। এই ঘরটায় খালি আছিলো আমাগো তাও এরা লইয়া গেলো। ঘরের মধ্যি উনার একক্ষান ছবি আছিলো আফা। ওরা হেইডা নিতে দেয় নাই। ছবিডা আনতে গেছি কইরা লাঠি দিয়া মাতাত বাড়ি লাগাইছে আফা। ওইডা উনার শেষ চিন্হ আছিলো আফা। সেইডাও নিতে দিলো না। এরা মানুষ না আফা, এরা সব কয়ডা একেকটা কুত্তা। এগোর কহনো ভালা হবো না।।মায়ের দোয়া আল্লায় ফেলাই না আফা। আল্লায় ফেলায় না।। আমার দুধের বাচ্চাডারে লইয়া এখন কই যামু আমি?
আরু কিছুই বলতে পারলো না। শুধু স্তব্ধ হয়ে শুনে গেলো সবটা। একবার পিচ্চিটির দিকে তাকালো সে। কি নিষ্পাপ মুখ…কি নির্মল হাসি। এই হাসিগুলো ফুটপাতে পড়ে থাকতে থাকতে একদিন হয়ে উঠবে নরপিশাচ নয়তো কোনো চুর, বাটপার। তাদের এই অবনতির জন্য কি এই পৃথিবীই দায়ী নয়? আরু আবারও মহিলাটির দিকে ফিরে তাকালো। কিছুক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারলো সামনে বসে থাকা মানুষটিকে মহিলা বলা যায় না। একটা কিশোরী মেয়ে! দারিদ্রতা, পরিশ্রম আর পরিবেশের চাপে তাকে দেখাচ্ছে রঙহীন বেরঙ মধ্যবয়স্ক এক মহিলা। আরু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা গলায় বললো,
— আপনার বয়স কতো?
— ১৮ আইবো আফা। আফা কোনো কাম দিতে পারবেন আমারে? আমি রান্ধনের কাম জানি। ঘর মোছা কামগুলানও করতে পারুম আমি। দিবেন একটা কাম?
আরু মাথা নাড়লো। যার অর্থ সে দিবে না। আর কি করেই বা দিবে? তারকাছে কি কোনো কাজ আছে আদৌ? নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আরু। ভাইয়ের বেতনে সংসার চলে। ভাবির সারাদিনের খাটাখাটুনিতে বাড়িতে আর কাজের মেয়ের প্রয়োজন পড়ে না। আরু উঠে দাঁড়ালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো সে। চারদিকেই কতো বিভৎস কাহিনী। নারী-পুরুষের হাহাকার। বাচ্চারদের কান্না। কারো মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে তো কারো হাত কেটে আছে বিশ্রীভাবে। একটা বাচ্চার দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলো আরু। বাচ্চাটার বাম চোখের ঠিক উপর থেকে রক্ত ঝরছে। ঘর বাড়ির বাঁশ না কি জানি ছিটকে এসে লেগেছিলো চোখের কোণায়। বাচ্চাটার মা পাগলের মতো শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ চেপে ধরে চেঁচিয়ে চলেছে। কি অসহায় এই মানুষগুলো! কতোটা অসহায়! আরুর বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। মানুষের নিষ্ঠুরতা দেখে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু সে তো নিরুপায়! অবশেষে আসিফ নামের ছেলেটিকে চোখে পড়লো আরুর। দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে ডেকে উঠলো সে,
— এক্সকিউজ মি, আসিফ ভাই?
আসিফ ফিরে তাকালো। আরুকে দেখে অনেকটায় থতমত খেয়ে গেছে সে। রাফিনকে আরুর হাত ধরে হাঁটতে দেখেছে সে। মেলায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছে। সে রাফিন আর আরুর সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু হতে পারে তা আন্দাজ করার চেষ্টা করছে। রাফিনের সাথে আরুর সম্পর্কের গভীরতার উপর নির্ভর করছে আরুর প্রতি আসিফের ব্যবহার। আসিফ মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আরু হাঁফাতে হাঁফাতে বলে উঠলো,
— আপনার বস কোথায়? আমার উনার সাথে কথা আছে। আর্জেন্ট!
আসিফ এবারও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাফিনের কাছে নিয়ে যাবে কি না সে সিদ্ধান্তটাও নিতে পারছে না সে। আরু আবারও তাড়া দিয়ে উঠায় আসিফ একটা ছেলেকে ডাকলো। তাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— চলুন ম্যাডাম।
রাফিন সুইমিং পুলের পাশে কিছু ফরেইন ডিলারদের সাথে কথা বলছিলো। হঠাৎ পাশ থেকে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো কেউ,
— ভাই? আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসছে।
রাফিন ভ্রু কুঁচকালো। বিরক্ত হয়ে পাশে তাকিয়ে আসিফকে দেখে আরো বিরক্ত হলো সে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
— তুই এখানে কি করছিস? তোর না বস্তির ওখানে থাকার কথা?
— জি ভাই। আসলে ম্যাডাম আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিলো তাই আরকি।
আবারও ভ্রু কুঁচকালো রাফিন।
— ম্যাডাম? কোন ম্যাডাম?
— ভাই , কালকের মাইয়াটা। মেলায় যার জন্য একটা পোলারে মারলেন,ওই মাইয়া।
রাফিন এবার অবাক চোখে তাকালো। বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
— ওই মেয়ে এখানে কি করে?
— আপনার সাথে দেখা করতে চায়, ভাই।
— ওকে চলে যেতে বল আসিফ। আমি যার তার সাথে কথা বলি না। তাছাড়া এখন আমি মিটিং করছি।
কথাটা বলে ঘুরে বসতেই পেছন থেকে আরুর কন্ঠ কানে এলো,
— মিষ্টার গ্যাংস্টার?
রাফিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ফরেইন ডিলারদের সাথে কথা বলতে লাগলো। আরু এবার সবাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একদম রাফিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
— ওই বস্তিটা আপনি উচ্ছেদ করছেন, মিষ্টার ভিলেন?
রাফিন এবার ওঠে দাঁড়ালো। ফরেইন গেষ্টদের চোখের ইশারায় অন্য কোথাও বসতে বলে আরুর দিকে ফিরে তাকালো সে।
— হ্যাঁ। আমিই করছি তো?
— তো মানে? শুধু শুধু এই কাজটা কেন করছেন আপনি? জানেন? ওখানে কতো গরিব মানুষ থাকে? আপনার গুন্ডাগুলো ওদের অনেককেই মেরেছে।
— আই ডোন্ট কেয়ার, গেট লস্ট।
— আপনি বুঝতে পারছেন না ব্যাপারটা। ওরা কি নৃশংসভাবে অত্যাচার করছে ওদের। আপনি নিশ্চয় এসব কিছু জানেন না, তাই না? প্লিজ ওদের থামতে বলুন। প্লিজ!
— হোয়াট রাবিশ। যাও এখান থেকে। কার কি হলো তাতে আমার কোনো যায় আসে না। জায়গাটায় কোটি টাকার প্রজেক্ট আমার আর তা তোমার এসব ফলিশ কথা শুনে বন্ধ করে দিবো? সো সিলি ইয়ার….গো টু হেল।
— আপনার কাছে মানবতার চেয়ে টাকার মূল্য বেশি? (অবাক হয়ে) মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই আপনার কাছে?
— না নেই। সব মানুষের জীবনের দাম নিয়ে ভাবতে নেই। সাগরে অনেক মাছ থাকে। বড় মাছরা যদি ছোট মাছদের জীবনের দাম নিয়ে বসে থাকে তাহলে না খেয়ে তাদের মরতে বসতে হবে। এই ছোট মাছগুলোর জন্মই হয় বড়মাছদের খাবার হওয়ার জন্য। সাগরেরর মতো এখানে এই গরিব মানুষগুলো হলো ছোট মাছ। এদের জন্মই হয় আমাদের হাতে মরার জন্য। এটা নিয়ে এতো চিন্তা করার কি আছে? ওরা এই দারিদ্র্যপূর্ণ জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে কি করবে বলো? কোনো লাভ আছে? দেশের কোনো কাজে লাগছে? লাগছে না। তারথেকে ওদের মরে যাওয়ায় বেটার।
কথাটা বলতেই সশব্দে একটা চড় বসালো আরু। রাফিন সহ সবাই অবাক। একটা সাধারণ মেয়ের এতোবড় সাহস? আরুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এক পা এক পা করে পিছাচ্ছে সে।
— আই ওয়াজ রং মিষ্টার রাফিন চৌধুরী। আই ওয়াজ রং। ইউ আর নট আ ভিলেন ইউ আর আ মনস্টার। আমি বুঝতে পারি নি সিনেমা আর রিয়েলিটি এক হয় না। সিনেমার মতো জীবনগুলো এতোটা সুন্দর হয় না। সব ভিলেনের পেছনে একজন হিরো থাকে না। ফ্রম নাও…আই জাস্ট হেইট ইউ মিষ্টার রাফিন চৌধুরী। জাস্ট হেইট ইউ। ইউ আর দ্যা বিগেস্ট মিসটেক অফ মাই লাইফ…. দ্যা বিগেস্ট মিসটেক!
কথাটা বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো আরু। সবাই বরফের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আসিফ তো চরম অবাক। ও ভেবেছিলো রাফিন আর আরুর মাঝে ভালাবাসা টাইপ কিছু হচ্ছে কিন্তু এখন তো সম্পূর্ণটাই উল্টে গেলো। কি হবে এখন? রাফিনের চোখদুটোতে যেন রক্ত জমে গেছে। ওর দিকে তাকাতেই শিউরে উঠছে সবাই। সবার মনে এখন একটাই চিন্তা…. কি হবে এই মেয়ের শেষ পরিণতি? রাফিন কি ছেড়ে দিবে ওকে? এতো সহজে ছেড়ে দিবে? রাফিন তো ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নয়। ক্ষমা নামক শব্দটা যে তার ডিকশনারিতে একেবারেই নেই। একেবারেই না!
২৭.
ঘড়িতে পাঁচটা বাজে। ক্ষতবিক্ষত বস্তির পাশে দাঁড়িয়ে আছে সোহেল। বস্তিবাসীদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি মৃন্ময়। সবাইকে একটা করে পাটিও দেওয়া হয়েছে। রাতে ঘুমানোর ছোট একটা ব্যবস্থা। দু’ জন এসিস্ট্যান্ট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত আর পরাস্ত মানুষদের খাবার বিলিয়ে চলেছে সে। চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে আছে তার। মানুষগুলোকে দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে সোহেলের। তারসাথে জেগে উঠছে মৃন্ময়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। সুদূর অট্টালিকায় থেকেও গরিব মানুষের হাহাকার কড়া নেড়েছে তার বুকে। আর সোহেল? সে কি না বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে? নিজের প্রতি একগুচ্ছ ঘৃণা তৈরি হচ্ছে তার। অপরিসীম ঘৃণা! মৃন্ময়ের সাথে চারবছর ধরে আছে সোহেল তবু মৃন্ময়কে পুরোপুরি চিনতে পারে নি সে। মানুষকে টাকা দিতে হাত কাঁপে না তার অথচ সবটায় লুকিয়ে যায় সবসময়। এইতো আজও, সোহেলকে ফোন করে চুপিচুপি কাজ সারতে বলেছে সে। পেপারে তার নামে কোনো মহান বিবৃতি পছন্দ নয় তার। একদমই নয়। সোহেল প্রতিবারই অবাক হয় আর ভাবে মানুষটা এমন কেন? যেখানে মানুষ নিজের ঢোল নিজে পেটাতে ব্যস্ত সেখানে মৃন্ময়!মৃন্ময় যে কি চায় আর কি চায় না এখনও বুঝে উঠতে পারে নি সোহেল। মৃন্ময়কে আস্ত এক ধাঁধার মতো লাগে তার যে ধাঁধাটার কখনো কোনো সমাধান থাকে না। হয়তো থাকে কিন্তু কেউ তা খুঁজেই পায় না।
# চলবে…