গল্পর নাম : #১৬_বছর_বয়স
#পর্ব_২২ : #অনুভব
লেখিকা : #Lucky
যখন চোখ খুললাম তখন সকাল হয়েছে। আমার গায়ে একটা কম্বল দেওয়া। যদিও আমি ঘামছি। মাথা হালকা ব্যথা এখনো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালাম। শাওন ফ্লোরে বসে থেকে বিছানায় দুই হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম যে ব্যাপারটা কি! আমি আস্তে করে উঠে বসে পাশের ড্রয়ারের উপরে তাকালাম। এক বাটি জল আর একটা কাপড়। উনি কি আমাকে রাতে জলপট্টি দিচ্ছিলেন?! আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
অনেক বেলা হয়েছে। নাস্তা বানানো উচিত। উনি যেহেতু এত কিছু করে এখন ঘুমাচ্ছেন তাই আজ আমারই নাস্তা বানিয়ে ফেলা উচিৎ।
আমি আস্তে করে কম্বল সরিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে আমার ওড়নাটার অর্ধেক অংশ ওনার হাতের নিচে।
ওটা কিভাবে ছাড়াবো এখন?
আমি এগিয়ে গিয়ে হাটু ভাজ করে ওনার পাশে বসলাম। তারপর আস্তে করে ওড়নাটা ছাড়ানোর জন্য টান দিতেই শাওন আমার দিকে মাথা ঘুরিয়ে ওড়নাটা টেনে নিয়ে নড়েচড়ে ঘুমাতে লাগল।
এ কেমন জ্বালা! এখন! কি শান্তির ঘুম রে বাবা! আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম, আর একবার চেষ্টা করে দেখি।
আমি শাওনের দিকে ঝুকে ওড়নাটা হালকা টান দিতেই শাওন আস্তে চোখ খুলে তাকালো। চোখে একটা পলক ফেলে আমার দিকে ভালমতো তাকিয়েই ফট করে সরে গেল। আর পিছনের ড্রয়ারের সাথে টাক খেল। টাক খেয়েই মাথার পিছনে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। ভালই জোরে লেগেছে মনে হয়।
আমি এগিয়ে গিয়ে হাত দিতে চাওয়ার সাথে সাথে শাওন অন্য হাত দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়ে বলল, কি করছ তুমি!
আমি ভ্রুকুচকে বললাম, এদিকে আসুন দেখতে দিন আমাকে।
শাওন ফট করে উঠে দাড়িয়ে পরল আর গম্ভীর গলায় বলল, কোনো দরকার নেই।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ওড়নাটা নিলাম আর উঠে দাড়ালাম। শাওন রাগী গলায় বলল, জ্বর বাধিয়েছো কেন আবার? সরকারি পানি পেয়ে গোসল করতেই থাকো নাকি?
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, আমি বাধিয়েছি? কার জন্য বাধে জানেন না? সেদিনও আর আজও আপনার জন্যই ত।
শাওন বলল, এবার আমি কি করেছি?
“আপনার জন্যই ত ওইদিন সারারাত বাহিরে বসে থাকা লেগেছে। অইজন্যই ত ঠান্ডা লেগে গেছে। হুহ। মদ খেয়ে নিজের তাল সামলাতে পারে না তাও খায় কিজন্য বুঝিনা।”
বলেই ফিক করে হেসে দিলাম।
শাওন কিছু একটা চিন্তা করে আমার এক বাহু ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে এসে ভ্রুকুচকে বলল, কিছুই হয়নি তারমানে!
আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম, কি হবে!
“তুমি তাহলে সেদিন অত নাটক করছিলে কিসের জন্য? হাসছিলে লজ্জা পাওয়ার ভান করছিলে!” শাওন রাগী চোখে তাকিয়ে বলল।
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,”ত করব না। আমার সময় আপনি ত ‘মানে মানে’ করছিলেন। আর আপনি সেদিন যা বলেছেন আর করেছেন তা দেখলে আমি কেন সবাই হাসবে।”
তারপর শাওনকে ভেঙিয়ে বললাম, আপনি কি বলেছিলেন জানেন? বলেছিলেন ‘আমি এখন সব খুলতে চাচ্ছি’।
বলেই আমি ফিক করে হেসে দিলাম। শাওন রেগে আমার মাথায় বেশ জোরেই একটা টোকা মারল আর বলল, তুমি আরো গাধা হচ্ছো দিন দিন।
আমি মুখ হা করে চোখ পাকিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি বিরক্তির সাথে মাথা ডলতে ডলতে বিছানায় বসলাম। তখনি শাওন ফিরে এসে আমার কপালে হাত দিল। আমি খানিক চমকে গেলাম।
শাওন বলল, জ্বর নেই এখন আর। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসো।
বলে শাওন চলে গেল।
আমি উঠে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম। শাওন কিচেন থেকে খাবারসহ প্লেট আমার সামনে রাখল। তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি প্লেটের খাবার দেখে মনমরা হয়ে গেলাম। তারপর শাওনের দিকে তাকালাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, কি?
“ডিম আর আলুভাজি?” বলে আমি শাওনের দিকে ঠোঁট উলটে তাকালাম।
শাওন বলল, তোমাকে এগুলোই খেতে হবে।
বলেই শাওন ফ্রেস হতে চলে গেল।
প্লেটের উপর থাকা চালকুমড়ো ভাজির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি একে ত অসুস্থ তার উপর আরো অসুস্থ বানাতে চায় এগুলো দিয়ে। চালকুমড়াপটাশ কোথাকার!
আজ শাওন অফিসে যাচ্ছে না। তারমানে আজ বাসাতেই থাকবে! আমার জন্য? আমি শাওনের রুমের দিকে তাকালাম।
যা ইচ্ছা করুক আমি আমার মত টিভি দেখি। কিন্তু রিমোট টা কোথাও পাচ্ছিনা! গেল কই?
টিভির পিছনের বাটন গুলো চেপেই অন করতে হবে হয়ত।
টিভি ছেড়ে বসতে না বসতেই টিভি অফ হয়ে গেল। আমি হা হয়ে গেলাম। ব্যাপার কি? একা একা কিভাবে বন্ধ হল?
শাওন পিছন থেকে বলল, আজ থেকে টিভি দেখা বন্ধ তোমার।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। শাওনের হাতে রিমোট। তারমানে উনিই রিমোট দিয়ে অফ করে দিয়েছেন! কিন্তু কেনো?
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কেনো? কেন বন্ধ?
শাওন কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর রুমে ঢুকে গেল।
আমার এখন রাগ লাগছে। কি করব তাহলে আমি এখন! স্নোবেলকে আজ দিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সুমনা ত নিয়ে এলো না!
আমি উঠে গিয়ে আবার টিভি চালিয়ে দিলাম। আর এসে সোফায় বসলাম। সাথে সাথে শাওন এসে অফ করে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলল, তোমাকে কি বললাম আমি!
নাক মুখ তাকিয়ে কুচকে বললাম, কি সমস্যা আপনার? সাউন্ড কমিয়ে দিয়েছি ত!
শাওন বিরক্তির সাথে বলে উঠল, না মানে না। এগুলা দেখো আর তারপর আমার উপর এপ্লাই করো! গাধা একটা।
আমি না বুঝে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম।
সাথে সাথে কলিং বেল বেজে উঠল। আমি অনেক খুশি হয়ে গেলাম এটা মনে করে যে স্নোবেলকে হয়ত সুমনা নিয়ে এসেছে। আমার হাসিমুখ দেখে শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর এগিয়ে দিয়ে দরজা খুলে দিলো।
আমি ঘাড় উঁচু করে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম যে কে এসেছে!
শাওন একটা বক্সের মধ্যে কতগুলো জিনিস নিয়ে রুমে ঢুকল।
আমি মন মরা হয়ে তাকালাম। শাওন আমার সামনের টি-টেবিলে জিনিসগুলো রাখল।
অহ উনি এখন আবার ঘরের মডেল বানাবেন! যাক ভালো, টিভি না দেখতে দিলে না দিলো, ঘর বানানোই দেখি। শাওন আবার সেদিনের মত ফ্লোরে বসে পরে সব জিনিস পত্র বের করতে লাগল।
আমি সোফায় দুই পায়ের হাটু জড়িয়ে ধরে বসে দেখছি। কিন্তু এভাবে ভালো দেখা যাচ্ছেনা। তাই আমি মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম।
এভাবে আর পারলাম না বলে টুপ করে এসে ওনার পাশে বসে পরলাম। উনি ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। তারপর বললাম, কী? এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?
শাওন বলল, এখানে এসেছ কেনো?
“টিভি ত দেখতে দিবেন না, এখন কি করব!” আমি মনমরা হয়ে মাথা নিচু করে বললাম।
শাওন আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল। অর্থাৎ আমি বসতে পারি।
আমি খুব মন দিয়েই দেখছি। উনি মন দিয়ে কাজ করছেন কিন্তু ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।
অনেক সময় ধরে একটা সুন্দর বাড়ির অনেকটা তৈরি হয়ে গেল। এটা একতলা বাসার বাহিরের মডেল।
আমি হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠলাম, এটা কার জন্য?
শাওন আমার প্রশ্নের উত্তর দিল না। আমিও উওরের অপেক্ষা করলাম না।
শাওন অর্ধেক কাজ করে তারপর থামল। আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন উঠে কিচেনে চলে গেল।
অহ হ্যা রান্নার কথা ত আমি ভুলেই গেছিলাম! আমি উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে কিচেনে ঢুকলাম।
শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, তোমার এখানে কোনো দরকার নেই।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম, তাহলে আমার স্নোবেলকে এনে দিন।
শাওন আমার ফ্রাইপ্যানে তেল ঢলছিল। আমার কথা শুনে কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো। তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে নিল।
তাই আমি বললাম, কবে এনে দিবেন?
শাওন বলল, আমি পেটস পছন্দ করিনা সো ওটা আর আনব না।
আমি চোখ মুখ পাকিয়ে বললাম, আপনার পছন্দ না হলে না হোক। ও ত আমার সাথে থাকে। আপনার সাথে ত না।
শাওন কোনো উওর না দিয়ে প্যানের উপর ঢ্যাঁরশ গুলো দিয়ে দিলো।
আমি এগিয়ে এসে ওনার বাহুর কাছের শার্ট খামছে ধরে নাড়িয়ে বললাম, সুমনার বাসা কোথায়? আমাকে বলুন আমি নিয়ে আসব।
শাওন আমার হাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো আর বলল, শার্ট ছাড়ো।
আমি বললাম, না, আমাকে আগে বলুন।
শাওন রেগে বলল, দেখছ না আমি কাজ করছি? ছাড়ো।
শাওন হাত সরিয়ে ছাড়িয়ে নিল।
শুধু শুধু উনি আবার আমাকে রাগ দেখাচ্ছেন কেন? তাই আমিও রেগে গেলাম আর ওনার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, বলুন বাসা কোথায়?
শাওন শান্ত গলায় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ফেলে দিয়ে এসেছি ওটা।
তারপর ফ্রিজের কাছে গিয়ে ফ্রিজ খুলল।
আমি কিছু সময় স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। এটা শুনে খুবই কান্না পাচ্ছে। চোখে পানি ছলছল করছে। আমি ছলছল চোখে বললাম, কেন ফেলেছেন?
শাওন ডিপ ফ্রিজ থেকে কিছু বের করতে ব্যস্ত। আমি রেগে এগিয়ে গিয়ে ওনার বাহুর কাছের শার্ট ধরে টেনে ওনাকে আমার দিকে ঘুরালাম। তখনি শাওনের হাতে থাকা একটা পলিথিনসহ মাছ আমার পায়ে পরল। ডিপ ফ্রিজে ছিল বলে পুরো বরফ হয়ে গেছে। এমন মনে হলো যেন পায়ে পাথর পরল। আমি ব্যথায় ঠোঁট কামড়ে নরমাল ফ্রিজের হ্যান্ডেল ধরলাম। পায়ের উপরের কিছু অংশ কেটে রক্ত বের হচ্ছে। শাওন বিরক্তির সাথে বলল, একটা কিছু না বাধালে তোমার ভালো লাগেনা?
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি অনেকটা হকচকিয়ে গেলাম। শাওন আমাকে ওর রুমের বিছানায় এনে বসালো। তারপর হাটু ভাজ করে বসে পাশের ড্রয়ার থেকে তুলা আর সেভলন বের করল। আমি ছলছল চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। স্নোবেলটা কোথায় কি করছে কে জানে!
উনি ব্যান্ডেজ লাগাতে লাগাতে আমার দিকে তাকালেন। আমার চোখের জল ছলছল করছে। শাওন শান্ত গলায় বলল, চুপচাপ বসে থাকো।
“কেন ফেলেছেন স্নোবেলকে?” আমি কেদে দিলাম।
শাওন ড্রয়ারটা বন্ধ করছিল। আমাকে কাদতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।
আমি আর একটু জোরে বলে উঠলাম, কেন ফেলেছেন? আপনি অনেক খারাপ।
আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে কেদেই যাচ্ছি। শাওন আমার চোখের জল মুছার জন্য হাত বাড়াতে গিয়ে আবার হাতটা সরিয়ে নিল। তারপর বলল, ফেলি নি। সুমনার বাসাতেই আছে।
শুনে আমি চোখের জল মুছতে মুছতে কাদো কাদো গলায় বললাম, “সত্যি?!”
শাওন বলল, হ্যা।
আমি এবার হাসলাম। শাওন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
আমি এখন মহাখুশি। সত্যিই।
হঠাৎ ই পোড়া পোড়া গন্ধ পেতে লাগলাম। শাওনও পেয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি চোখ বড়সড় করে বলে উঠলাম, আপনার ঢ্যাঁড়স!
শাওনও চোখ বড়সড় করে আমার দিকে তাকিয়ে চট করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
তারপর চোখ ফিরিয়ে নিজের পায়ের দিকে তাকালাম। নিজের পা নাড়িয়ে দেখলাম কেমন ব্যাথা। বুঝলাম বেশি না, হাটতে পারব। উঠে একটু হেটে দেখলাম।
তাই হেটে রুম থেকে বের হয়ে এসে কিচেনে গেলাম। ঢ্যাঁড়স এর অবস্থা পুড়ে শেষ তাই সব ফেলতে হয়েছে। শাওন ফ্রাইপ্যান ট্যাপের নিচে দিয়ে রেখেছে।
আমাকে দেখেই রেগে বলল, কথা শুনতে চাও না কেনো তুমি?
আমি জানতাম উনি খ্যাচ খ্যাচ করবেন। ওনাকে আর না খেপানোই ভাল। তাই এদিক ওদিক তাকিয়ে চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসলাম।
অনেক সময় বসে রইলাম। যদিও অনেক বোর লাগছিল তাও।
শাওন রান্না শেষ করে সব খাবার টেবিলে সাজালো। আজ মাংস আছে তাই এখনি খেতে বসে পরতে ইচ্ছে করছে। আমি উঠে গিয়ে টেবিলের পাশে দাড়ালাম। মাংস দেখেই মুখে হাসি চলে এলো। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হাসিটা মুখ থেকে সরিয়ে নিলাম।
সাথে সাথে কলিং বেল বেজে উঠল। এই দুপুর বেলায় কে এলো?! শাওন এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। আমিও পিছন পিছন আসলাম।
আমরা দুইজনই অবাক হয়ে গেলাম। পিশামনি এসেছেন!
শাওন বলে উঠল, তুমি এখন?
পিশামনি হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, ভিতরে ত ঢুকতে দে!
শাওন সরে দাড়ালো। পিশামনি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে আমার দিকে তাকালো আর বলল, কি রে কেমন আছিস?
আমি রেগে তাকিয়ে রইলাম। এত দিন পর তিনি এলেন।
পিশামনি হঠাৎ আমার পায়ের দিকে তাকালো আর বলল, কিরে তোর পায়ে কি হয়েছে?
শাওন আমার দিকে তাকালো। আমি নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে তারপর অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বললাম, এমনি লেগেছে।
পিশামনি ম্লান মুখ করে তাকিয়ে তারপর সোফাতে গিয়ে বসল।
শাওন সোফার দিকে এগিয়ে এসে বলল, কিছু হয়েছে?
পিশামনি হাসি দিয়ে বলল, কি হবে?
“তাহলে হঠাৎ এসেছ যে?”
“কেন আসতে পারিনা?” পিশামনি হেসে বলল।
শাওন বলল, হ্যা পারো কিন্তু তুমি…
পিশামনি শাওনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আগে লাঞ্চ করে নিই চল তারপর বলি।
পিশামনি শাওনের রুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে বসল। আমি খুবই খুশি মনে খাচ্ছি।
হঠাৎ পিশামনি আমাকে প্রশ্ন করল, তোদের মধ্যে সব ঠিক আছে এখন?
শাওন খাওয়া থামিয়ে পিশামনির দিকে তাকালো। আমি খেতে খেতে পিশামনির দিকে তাকিয়ে বললাম, মানে?
“ফোনে বলেছিলি অনেক কিছু।” পিশামনি বলল।
সেই আগের কথা মনে পরেই আমার কাশি উঠে গেল। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি একটা হাসি টেনে পিশামনিকে বললাম, “হাহা, হ্যা। আমি ত এমনি মজা করছিলাম। হেহে।”
“কোথায় ঘুমাস তুই?” পিশামনি আবার প্রশ্ন করল।
আমি পিশামনির দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই শাওন পিশামনিকে বলল, “তুমি কিজন্য এসেছো এখনো বললে না? বাসায় সব ঠিক আছে?”
পিশামশাই পকেট থেকে একটা চাবি বের করে শাওনের সামনে রেখে বলল, চাবি দিতে এসেছি।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকালো চাবিটার দিকে। পিশামনি ইশারা করে বলল, ওই তালা মারা রুমের এই চাবি।
“এটা এখন দিচ্ছ কেন?” শাওন বলল।
শাওনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পিশামনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আর তোকে নিতে এসেছি।
আমি আর শাওন না বুঝতে পেরে পিশামনির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন বলল, মানে?
পিশামনি বলল, নিয়ে যেতে এসেছি মিলাকে।
শাওন অনেক অপ্রস্তুত হয়ে পিশামনির দিকে তাকালো তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি ভ্রুকুচকে পিশামনির দিকে তাকিয়ে আছি কারন এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।
পিশামনি বলল, ব্যাগ গোছা।
আমি ক্ষোভের সাথে বললাম, গোছানোই আছে। কিন্তু তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করিনা।
পিশামনি হেসে বলল, সত্যিই নিতে এসেছি।
আমি এবার চোখ ঘুরিয়ে পিশামনির দিকে তাকালাম। পিশামনি বলল, আমার কিন্তু হাতে বেশি সময় নেই, এখনি খেয়েই বের হয়ে যাব।
আমি হাসিমুখে পিশামনির দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
আমি খাওয়া প্রায় শেষ হয়েই গিয়েছিল। তাই বাকিটুকু শেষ করেই রুমে চলে গেলাম।
“কিরে তুই খাচ্ছিস না কেন?” পিশামনি শাওনকে বলল।
শাওন অন্যমনস্ক হয়েছিল। পিশামনির কথায় ধ্যান ভাঙ্গল। বলল, “I am done.”
তারপর খাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়ালো। পিশামনি হেসে বলল, কিছু ঘুষ দিবি নাকি?
শাওন ভ্রুকুচকে পিশামনির দিকে তাকালো।
আমার সব ই গোছানো। নতুন করে গোছানোর কিছুই নেই। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সব ঠিকঠাক করে নিলাম। আমি ল্যাগেজ টেনে রুম থেকে বের হতে যাব তখনি শাওন এসে ঢুকলো।শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার ল্যাগেজের দিকে তাকালো।
“যাক উনি নিশ্চয় অনেক খুশি যে আমি চলে যাচ্ছি।” শাওনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম কিছু বলব কিনা। হঠাৎ দ্বিধা বোধ কাটিয়ে হাসি মুখে বলেই ফেললাম,” আপনাকে…সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।”
শাওন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।
আমি মনে মনে বললাম, গরিলা একটা, কিভাবে বাই বলতে হয় তাও জানেনা।
আমি ল্যাগেজ টেনে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হবার সাথে সাথে ওড়নায় টান অনুভব করলাম।
(চলবে….)
[কারো উপস্থিতির মূল্য আমরা ঠিক তত সময় বুঝিনা যত সময় না সেই মানুষটা আমাদের থেকে দূরে চলে যায়। তাই কুমড়োপটাশকে একটা শিক্ষা দেওয়াই উচিত]