#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৭
#তানিশা সুলতানা
আবির আর খেতে পারছে না। যা ছ্যাঁকা খেয়েছে তাতেই পেট ভরে গেছে।
“আবির খাচ্ছো না কেনো? একটু আগে তো না খেতে পেয়ে মরেই যাচ্ছিলে?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
আবির কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে।
” সত্যিই তো
খাচ্ছো না কেনো? খাবারটা কি ভালো লাগছে না?
অন্য কিছু বানিয়ে দেবো?
সাবিনা বেগম বলেন।
আবির অপ্রস্তুত হাসে।
“না না আন্টি ঠিক আছে খাচ্ছি তো।
মুখে খাবার পুরে বলে আবির।
তখনই আবার ছোঁয়া পরিকে কোলে করে নিচে নামে। সাদি চোয়াল শক্ত করে দাঁড়ায়।
আবির তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
” শাশুড়ী
সাবিনা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
“এখানে কেনো তুমি?
” আসলে পরি চিপস খাবে। কিন্তু বাসায় চিপস নেই। তাই ভাবছিলাম দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসি।
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
“আন্টি ও কে?
আবির প্রশ্ন করে।
“কেনো বাবা ওর সম্পর্কে তুমি কেনো জিজ্ঞেস করবে? আর আমিই বলবো কেনো?
সাবিনা বেগম কড়া দৃষ্টিতে তাকায় আবিরের দিকে।
আবির থমথমের খেয়ে যায়। যেমন ছেলে তার তেমন মা।
” না মানে আসলে
আবির আমতা আমতা করে বলতে নেয়।
“ইয়ে মানে আসলে এসব কথা আমার আর
” শাশুড়ী আমি বলে দিচ্ছি।
সাবিনা বেগমকে থামিয়ে বলে ছোঁয়া। এক গাল হেসে এগিয়ে আসে।
“এরকম ইয়ে মানে আসলে এসব কথা আমার আর আমার ছেলে পছন্দ এটা। এটা চৌধুরী বাড়ি। এই বাড়ি ইয়ে মানে আসলো এসব চলে না।
ঠিক আছে না শাশুড়ী?
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। শাশুড়ী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
আবির গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটার কথা বলার স্টাইলও ভালো লেগে গেছে ওর।
” এই ছেলে তোমার খাওয়া শেষ হলে বিদেয় হও।
ধমক দিয়ে বলে সাবিনা বেগম। ছোঁয়া চমকে ওঠে।আবির কোনো রকমে হাত ধুয়েই হুট মুর করে বেরিয়ে যায়।
সাদি রুমে চলে যায়।
“এই মেয়ে তোমার কি কোনো দিন কান্ডব ঙ্গান হবে না?
যাও রুমে। বাড়িতে চিপস না থাকলে অন্য কেউ দোকানে যাবে। তোমাকে যেতে কে বলেছে?
শাশুড়ীর ধমক শুনে ছোঁয়া রুমে চলে যায়। পরি কেঁদে ফেলে। ও ভেবেছে ওকেই বকা দিয়েছে।
রাতে রান্না করার ভয়ে ছোঁয়া পরিকে নিয়ে ছাঁদে চলে যায়। শশুড় মশাইয়ের ফোন নিয়ে এসেছে। ছোঁয়ার একটা বাটন ফোন। আজকে শশুরের কাছে বাইনা করেছে একটা স্মার্ট কিনে দেওয়ার জন্য। আর তিনি বলেছে কালকেই কিনে দেবে। ছোঁয়ার খুশি আর দেখে কে?
এখন দুজন মিলে কার্টুন দেখবে বলে ঠিক করেছে। আর ছাঁদে আসার কারণ হলে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে।
রাতে খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত। ছোঁয়া পরিকে নিয়ে একটু আগেই নিচে নেমেছে। আর তখনই সাবিনা বেগম ছোঁয়াকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। শশা কাটতে হচ্ছে ছোঁয়াকে।
আর সবার খাওয়া হলে গেলে বাসনও ওকেই মাজতে হবে। দুঃখে কান্না চলে আসছে ছোঁয়ার। বাড়ি থাকতে একটুও কাজ করতে হতো না। মা আর আপিই সব কাজ করতো। কিন্তু এখানে দজ্জাল শাশুড়ী একটার পর একটা কাজ দিয়েই যাচ্ছে
সাদি সবাইকে কিছু বলতে চাই। তাই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে খাচ্ছে না।
সবাই চলে আসার পর সাদি লম্বা শ্বাস নেয়।
” বাবা কিছু বলতে চাইছি।
“হুমম বলো
খাবার মুখে পুরে বলেন উনি।
” কালকে সকালেই ঢাকা চলে যাবো আমি।
“সে কি রে? মাএ তিন দিন হলে বাড়িতে এসেছিস আর এখনই ঢাকায় যাবি। কেনো?
সিফাত জিজ্ঞেস করে।
” আমি ওখানেই থাকবো। এইরকম সস্তার জবে আমার পোষাবো না।
“আর তোর বউ?
সাদির প্লেটে ডাল দিয়ে বলেন সাবিনা বেগম।
” ও তো অনেক ছোট। সংসারের কিছু বোঝে না। তুমি নাহয় ওকে শেখাও সংসার কিভাবে করতে হয়। শিখে গেলে নিয়ে যাবো।
মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে শুনছে সব।
“আমিও ওকে রাখতে পারবো না। তুই ওকে শেখাবি কি করে সংসার করতে হয়। শাশুড়ীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়। তারপর এখানে এনে রেখে যাবি।
কর্কশ গলায় বলেন উনি।
” মা তুমি কি শুরু করলে বলবে?
বিরক্ত হয়ে বলে সাদি
“কিছুই শুরু করি নি। সিফাত কাল চলে যাবে। তুইও চলে যাবি। আর এই বুরো মায়ের ঘাড়ে রেখে যাবি তোর ছোট বউকে। আর সিফাত রেখে যাবে ওর মেয়েকে।
আমি কি মানুষ না? আমার কি কোনো সখ আহ্লাদ নেই?
ছেলে ছেলের বউ নিয়ে আমারও সংসার করতে ইচ্ছে করে।
সিফাত মায়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায়। সত্যিই মাকে বলার মতো কিছুই নেই ওর।
” তোমার এসব ইমোশনাল ড্রামা বন্ধ করো তো। জাস্ট বিরক্ত লাগে আমার।
তোমার বড় ছেলেকে বলো তার বউ কোথায় তাকে নিয়ে আসতে। তারপর তার সাথে সংসার করো।
সাদি হনহনিয়ে চলে যায়। সুলাইমান চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। সিফাত মাথা নিচু করে আছে।
“তোমারা কেনো খাচ্ছো না? তারাতাড়ি খাবার শেষ করো।
কঠিন গলায় বলেন উনি।
ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। মায়ের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে।
” মা আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমি তোমার সখ আহ্লাদ মিটাতে পারবো না। তুমি পরির মুখের দিকে তাকাও না মা। দেখে কতো মায়া মেয়েটার মুখে। ওকে নিয়েই তোমার সখ গুলো পূরণ করো না মা।
রিনরিনিয়ে বলে সিফাত।
সাবিনা বেগম কিছু বলে না।
“এই মেয়ে তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?
খেতে বসো।
ছোঁয়াকে বলেন উনি।
ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
” খিধে নেই আমার।
সাবিনা বেগম কিছু বলে না। নিজের ঘরে চলে যায়। মানুষটা খুব কঠিন মনের। সবাইকে নিজের কষ্ট দেখায় না উনি।
ছোঁয়া সাদির রুমে আসে। কানে হেডফোন গুঁজে বেলকনিতে বসে আছে তিনি। ছোঁয়ার ভীষণ রাগ হয়। মাকে কথা শুনিয়ে এখানে এসে গান শোনা হচ্ছে।
দাঁত কটমট করে সাদির দিকে আসতে যায়। একটু আগেই সাদি হাত ফসকে পানির বোতল পড়ে অনেকটা পানি পড়েছিলো ওখানে। ছোঁয়া সেটা খেয়াল করে না।
হনহনিয়ে আসতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যায়। ধাপ করে শব্দ হওয়াতে সাদি পেছনে তাকায় ছোঁয়াকে পরে থাকতে দেখে বোঝা শেষ। এই মেয়েটা আবার পড়ে গেছে।
কান থেকে হেডফোন খুলে সাদি। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
“পবলেম কি?
সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া চোখ খুলে। খুব বেশি ব্যাথা পায় নি।
গোল হয়ে বসে ছোঁয়া।
” আপনার পবলেম কি? বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না?
কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আপনার। এখানেই থাকবেন। ভরা সংসার চাই আমার শাশুড়ীর। তো তাকে তাই দিতে হবে।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমি মা হবো আর আমার শাশুড়ী দাদিমা হবে।
এভাবে বারো বছরে বারোটা নাতি দিবো শাশুড়ীকে। তারপর তার সংসার ভরে যাবে।
বুঝলেন?
এক নাগারে কথা গুলো বলে ছোঁয়া। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। এতে ফালতু কথা বলে কি করে মেয়েটা?
“তোমার কি আমার হাতের চর খেতে ইচ্ছে করছে?
হাত দেখিয়ে বলে সাদি।
” আমি ভয় পাই না আপনাকে। আমি যা বলেছি তাই হবে। আমার শাশুড়ীকে ভরা সংসার দিতেই হবে। নাহলে আপনাকে নেরা করে দেবো আমি।
রাগে ফুসফুস করতে করতে বলে ছোঁয়া।
“আই নিড অনেক গুলা বেবি।
চলবে……….
পর্ব ৮- ১৭