#অষ্টবিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)
রুহি কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
রুহির মুখে কোনো উত্তর না শুনে ইরাদ রুহির কাছে এগিয়ে এলো, এবং একদম কাছে এসে কানের কাছে বললো,
– ঠিক আছে আমি হেল্প করছি।
কথাটা শুনে রুহির হার্টবিট একদম বেড়ে গেলো,
কথটা বলেই ইরাদ রুহির পাশে থাকা শাড়িটি হাতে নিয়ে সুধা চাকমা কে ডাক দিলো,
এবং মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– হেল্পটা এইভাবেই করি
রুহি ইরাদের কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে
– এই মুহুর্তে আপনি ঘর থেকে গেলে ভালো হয়।
ইরাদ মুচকি হেসে ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলো, সুধা চাকমা ভাবলো জামাই বউয়ের মধ্যে কোনো কারণে মনমালিন্য চলছে তবে এই গুলো হলো দুষ্ট মিষ্টি মনমালিন্য যেগুলো তাদের এই বয়সে তারাও করেছে। রুহিকে শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার সময় সে বললো,
– তোমাগো বয়সে আমরাও এমন অনেক করসি
রুহির চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকায় উনার দিকে,
– বোঝো নাই?
– না আন্টি
– এইজে জামাইর সাথে জেদ রাগ, তবে তোমার জামাই তোমারে আদর করে অনেক বুঝা গেসে
– কিভাবে?
– এইজে তুমি কাপড় পড়তে পারতাসো না দেইখা আমারে ডাইকা আনলো পুরাটা পাহাড় কোলে কইরা তুইলা আনলো। আদর সোহাগ না থাকলে কেউ করে নি?
কোনো উত্তর দিলো না রুহি। শুধু মলিন একটা হাসি দিলো।শাড়িটা পড়ার পরে রুহিকে একদম সুশ্রী রূপবতী দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে স্বর্গের কোনো অপ্সরাও হার মানবে। কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই গোলাপী ঠোঁট আর বড় বড় চোখ গুলো রুহির যে কাউকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। ইরাদ ঘরে ঢুকে কয়েক মুহুর্তের জন্য একদম জমে গেলো রুহিকে দেখে, ছিমছাম ঘরটা বেশ সুন্দর করে গোছানো আর এর মধ্যে রুহিকে মনে হচ্ছে একটা হূর বসে আছে।
রুহি গুটিশুটি মেরে বিছানার এক কোণে বসে আছে, পা বেশ ব্যাথা করছে। এই কারনে যতটা না অসহ্য লাগছে তার চেয়ে বেশি অসহ্য লাগছে ইরাদকে ওর স্বামী ভাবছে সবাই তাই। ইরাদ তো অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে তাহলে কেনোই বা সবার ভুল ইরাদ ভেঙে দেয় নি? এসবটা ভেবেই রুহির ডুকরে কান্না আসছে।
ইরাদ ঘরে এসেছে হাতে একটা বাটি নিয়ে, রুহি ইরাদকে দেখে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ইরাদ কিছু না বলে একদম রুহির কাছে এসে বসলো। এতেও রুহি কিছু বললো না, ইরাদ যে এখানে আছে এটা যেনো রুহির মধ্যে কোনো ধরনের ভাবান্তর ঘটাচ্ছে না। এবার ইরাদ আলতো করে রুহির হাতটা সরিয়ে পায়ের গোড়ালিতে হাত দিলো রুহি এবার ইরাদের দিকে তাকিয়ে,
– কি করছেন আপনি?
– কাজ করছি
– মানে?
– মানে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন এখন হলুদ আর নিমের লেপ দিতে হবে নাহয় শুকবেনা।
– এমনি ঠিক হয়ে যাবো দরকার নেই।
– দরকার আছে।
– ছাড়েন তো, অন্যের স্বামী আমাকে স্পর্শ করবে এটা আমার পছন্দ না।
– হ্যাঁ?
– নিজের স্ত্রী থাকা স্বত্তেও অন্য মেয়ের গায়ে হাত দেওয়া ঠিক না।
– আমি একজন ডক্টর। আমার কাছে কেউ ছেলে আর কেউ মেয়ে বলে পার্থক্য নেই আর এটা বোধহয় একজন ডাক্তার হিসেবে আপনিও জানেন।
– ছাড়েন
– চুপ থাকেন আর একটা কথাও বলবেন না আপনি।
আমার কাজ আমাকে করতে দিন এই বলেই রুহির পায়ে যে যে জায়গায় ক্ষত হয়ে গেছে সব জায়গায় লেপটা দিয়ে দিলো ইরাদ। ইরাদের স্পর্শ পেয়ে রুহি বারবার কেপে উঠছিলো। ইরাদকে হাজার চাইলেও নিজের মন থেকে রুহি বেড় করতে পারে না, এর মধ্যে এমন রাতের বেলা রুহি আর ইরাদ একা একটা ঘরে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে রুহির। একটা সময় ছিলো ইরাদ ওর হতেও পারে তখন একটা অপেক্ষায় কেটে যেতো রুহির দিন কিন্তু এখন? এখন কি ভাববে রুহি? কি নিয়েই বা থাকবে?
.
রুহিকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে ইরাদ লেপ দিয়ে দিলো আর খাবার খাইয়ে দিলো এবং নিজেও খেয়ে নিলো। খাওয়া নিয়ে যদিও প্রথমে রুহি আপত্তি করছিলো তবে ইরাদ ও নাছরবান্দা রুহিকে মানিয়েই ছেড়েছে।
রাত প্রায় ২ঃ৩০টা বেজে গেছে,
রুহিকে ঘুম পাড়িয়ে ইরাদ জানালার কাছে এসে বসেছে আজকে রুহির কথায় ইরাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে রুহি কেনো ওর সাথে এমনটা করছে, বিগত তিন বছরের অভিমান তো আছেই তবে তার সাথে এসে জুড়েছে সেদিনের কেকটা। কেকের মধ্যে যে এন্যিভার্সারীর উইশ ছিলো রুহি তাহলে ভেবে নিয়েছে ইরাদ বিবাহিত।
” ইশশ, আমি বারবার রুহিকে কষ্ট দিয়ে ফেলি মেয়েটা আমার কারণে আর কতো কাদবে? রুহির এই মুখে আর কান্না আনতে চাই না আমি। ওর ভুলটা আজকে ভেঙে দিতেই হবে আমার নাহয় যে নিজেকে মাফ করতে পারবো না। আর তাছাড়া আমি যে পরিমাণ কষ্ট ওকে দিয়েছি এরপর আসলেই আর কিছু বলার থাকে না যদি রুহি আমাকে মাফ করে তাহলে ভালো না করলেও আমি কিছু বলবো না। কারণ এই শাস্তি যে আমার প্রাপ্য।”
রুহির ঘুম তখন ভেঙে যায়,
ইরাদ রুহিকে উঠতে দেখে বলে,
-রুহি কিছু জরুরি কথা আছে যেগুলো আপনার জানা দরকার আমি বলি?
কথাটা খুব করুণ সুরে বললো ইরাদ। চোখ দুটো যেনো অনেক কথা বলে ফেলছে,
(চলবে…)