অনুতাপ পর্ব ২৯
#ঊনত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে রুহি ইরাদের দিকে তাকিয়ে আছে, ইরাদ রুহির পাশে এসে বসে। খুব কাছে এসে বসে রুহির, কিছু সেকেন্ডের মাঝেই রুহির ঘুম চলে যায়। বিগত কিছুদিন ধরে কি কি হচ্ছে সবটা মাথায় খেলে যায় রুহির। জীবনটা কত অদ্ভুত যে মানুষটাক্ব রুহি মনে প্রাণে নিজের কাছে চাইতো সবসময় আজকে সেই ছেলেটা ওর পাশে আছে। খুব বেশিই কাছে আছে তবে তাকে না আছে মন খুলে কথা বলার অধিকার, না আছে তাকে ছুয়ে দেখার অধিকার। ইরাদের পাশে থাকতে রুহির এই কারণে আরো বেশি অস্বস্তিকর লাগছে। ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও চলে যেতে, যেখানে না থাকবে ইরাদ, না থাকবে ইরাদের ছায়া। আজ রুহির কিছুই ভালো লাগছে না ইরাদের সাথে কথাও বলার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই। তাই রুহি ইরাদের দিকে না তাকিয়ে নিজের মোবাইলটা হাতে নিলো, ইরাদ রুহির হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে আরেক পাশে রেখে দিলো
– রুহি আমি কিছু বলছি
রুহি তারপরেও ইরাদকে দেখছে না।
এবার ইরাদ হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে রুহির পায়ের কাছে, এবং রুহির হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
এবার রুহি ইরাদের চোখের দিকে তাকায়
দুক’জন দুজনকেই দেখছে
কিছুক্ষণ পরে রুহির হাতে হাত রেখেই ইরাদ বলে,
-আমাকে বিয়ে করবেন রুহি? অনেক ভালোবেসে আপনাকে আগলে রাখবো। কোনোদিন আপনাকে দূরে যেতে দিবো না আর কোনোদিন নিজের থেকে আপনাকে অন্য কোনোভাবেই দূরে থাকতে দিবো না।
রুহির চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।
– আপনি বিবাহিত, এটা সম্ভব না।
– আমি ডিভোর্সড ঠিকি রুহি কিন্তু এরপর আর কোনোদিন বিয়ে করিনি।
রুহি এবার বেশ কিছুটা চমকে উঠে।
– মানে?
– তুমি কেনো ভাবছো আমি বিয়ে করেছি?
-সেদিন কেকের ওপরে…
-ওটা আমার বন্ধুর জন্য ছিলো, আমার না। আর তুমিও তো বিয়ে করো নি।
– কিভাবে জানলেন?
– আমি জানি
রুহি এবার জোরে কেদে উঠে।
– আমি আপনাকে কোনোদিন ভুলতে পারিনি, প্রতিদিন প্রতিক্ষন আপনি আমার মনের মধ্যে থাকতেন। অন্য কাউকে নিয়ে কোনোদিন ভাবতেও পারনি নি অথচ সেদিন কিভাবে আপনি বললেন আমি আপনাকে ভুলে যাবো?
ইরাদের ও দুটো চোখে অশ্রু চলে এসেছে।
– আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আমি আমার প্রাক্তন স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতাম রুহি। সে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পরে আমি ভাবিনি কখনো বিয়ে করবো, বা কাউকে নতুন করে ভালোবাসতে পারবো কিন্তু আপনি আমার জীবনে আসার পরে আমি বুঝেছি, প্রেম ভালোবাসা একবার যাওয়ার পরে আবারো হওয়া সম্ভব। কিন্তু এতোটাই ভীতি কাজ করতো আমার মাঝে যে আমি আপনাকে আপন করে নিতে পারিনি। আপনার বয়সটাও তখন তার আর আমার প্রেম যখন হয়েছিলো ঠিক সেই বয়সটাই ছিলো। সবমিলে আমি নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেও হেরে যাই। আর ফলশ্রুতিতে আপনাকে হারিয়ে ফেলি। তবে বিশ্বাস করেন আমি ও কোনোদিন আপনাকে ভুলতে পারিনি। অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে আমি রুহি।
.
দুপুর ১২টা বাজে মেঘা খাবার নিচ্ছে শ্বাশুড়িকে খাওয়াবে এমন সময় হসপিটালের কেবিনেনার্স এসে মেঘাকে বলেন আপনার পেশেন্ট এর রিপোর্ট এসেছে। আপনি আসুন মেঘা তখন ডক্টর হিল্লোল এর কেবিনে প্রবেশ করেন।
-কাম ইন মিসেস মেঘা হ্যাভ এ সিট।
– ইয়েস ডক্টর।
সে সব গুলো রিপোর্ট দেখলো।
– আই থিংক ইউ মাদার ইনলো নিডস অপারেশন।
– ইফ ইটস নিডেড দেন ডু ইট ডক্টর।
– বাট আই কান্ট ডু দিস। ইট উইল বি গুড ইফ ইউ কন্সাল্ট এ ভেরি ওয়েল এক্সপিরিয়েন্সড কোয়ালিফাইড ডক্টর।
– হুম শুড আই কন্সাল্ট ডক্টর?
– ইউ শুড কন্সাল্ট ডক্টর ইরাদ।
মেঘার মাথাটা ঘুরে গেলো, আবারো ইরাদ। কেনো বারবার ইরাদের কাছে ওর ছোটো হতে হবে?
ইরাদকে দেখলে মেঘার কিছুটা হিংসে হয়। ভালো লাগে না। আর আজকে আবারো তার কথাই বললো ডক্টর। মেঘা কিছু না বলে ইরাদের কার্ডটা হাতে নিয়ে ডক্টর এর কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। আর ভাবতে থাকে এখন কি করা যায়।
এদিকে বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে গেছে। চারিদিকে পানি দিয়ে সব যেনো ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। আর রুহিও ইরাদের মনের সব গুলো কষ্ট যেনো এই বৃষ্টির পানির সাথে মুছে যাচ্ছে।
– আপনি আমাকে মাফ করবেন রুহি?
রুহি কিছুই বলে না শুধু মাটির দিকে তাকিয়ে আছে
– কিছু বলেন প্লিজ? আমি জানি আমি আপনাকে অনেক অনেক কষ্ট দিয়েছি কিন্তু আপনাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি রুহি বিশ্বাস করুন।
রুহি এবার ইরাদের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বললো,
– আমার দিকে তাকিয়েও আপনি কোনোদিন অনুভব করতে পারেন নি আমি যে আপনাকে ভালোবাসি?
কথা গুলো একদম স্থির চোখে ইরাদের দিকে তাকিয়ে রুহি বললো,
নিজেকে বড়উ অপরাধী লাগছে ইরাদের মাথাটা নিচু করে ফেলে ও
– আমাকে মাফ করে দেন রুহি আমি বুঝতাম কিন্তু তবুও ভীতি কাজ করতো।
” ঘর পোড়া গরু তো আমি, তাই সিদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পেয়ে যেতাম”
– সারাজীবন পাশে থাকবেন তো?
– ইনশাআল্লাহ থাকবো।
রুহির এবার লজ্জা লাগলো ইরাদ রুহির ডান হাতটা নিয়ে চুমু একে দিলো।
রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
-রুহি
– হুম
– বিয়ে করবেন আমাকে?
– আপনার কি মনে হয়?
ইরাদ এবার হেসে দেয়। রুহিও হাসে। রুহি ইরাদের ধরে ওকে বিছানায় উঠিয়ে বসায় এমন সময় বাইরের ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ চলে যায়। রুহি কিছুটা ঘাবড়ে ইরাদকে জড়িয়ে ধরে। রুহির কাছে সবকিছুই যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ইরাদকে কোনোদিন এতোটা লজ্জা লাগেনি ওর তবে আজকে লাগছে আর এতোটা কাছে কোনোদিন রুহি আসে নি। এই প্রথম ইরাদকে জড়িয়ে ধরলো ও। ইরাদ ও শক্ত করে রুহিকে নিজের বাহুডোরে বেধে রেখেছে। রুহির শরীরে যেনো এক প্রকার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে শুরু করেছে আর ইরাদের ও যেনো হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে। রুহির ছলছলে চুল গুলো ইরাদ আলতো করে কানের কাছে গুজে দেয় এবং বাম গালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। রুহি লজ্জায় চোখ বুঝে ফেলে। ইরাদের ভালোবাসাই তো সবসময় চাইতো রুহি আজকে নিজের করে পেয়ে এতো বছর পরে রুহি আর ইরাদের যেনো আসমানের চাঁদ হাতে চলে এসেছে। এভাবেই প্রায় ১৫ মিনিট রুহি নিজেকে ইরাদের বুকে রেখে কাটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে ইরাদ রুহিকে কানের কাছে গিয়ে বলে
“বাকি আদর বিয়ের পর করবো, এখন এতোটুকুই থাকুক” রুহি লজ্জায় ইরাদের বুকের নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলে।
(চলবে…. কেমন লাগলো আজকের পর্ব? সবাই খুশি তো রুহি আর ইরাদের মান অভিমান ভেঙে দিলাম)