#আমার তুমি
পর্ব ৩০
#তানিশা সুলতানা
তুলতুল ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। বুকটা ধুপ বুক করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। পাখির সামনে এই ভাবে যেতে লজ্জা লাগছে। তাছাড়া সায়ান যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে তখন কি হবে?
মুখ দেখাবো কি করে পাখিকে?
এই লোকটা তো আস্ত একটা খবিশ। এর থেকে আজকে কি করে নিস্তার পাবো?
আল্লাহ যদি পাখি না আসতো।
কিন্তু তুলতুলের ভাবনা ভুল প্রামানিক করে কলিং বেল বেজে ওঠে।
কেঁপে ওঠে তুলতুল। সায়ান ফোন থেকে মুখ তুলে তুলতুলের দিকে এক পলক তাকায়।
“প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার খুব লজ্জা লাগছে।
তুলতুল মাথা নিচু করে মিনমিনিয়ে বলে।
” একটা ছেলের সামনে এভাবে আছিস তাতে লজ্জা লাগছে না। আর একটা মেয়ের সামনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগছে?
ভ্রু কুচকে বলে সায়ান।
তুলতুল কটমট চোখে সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দরজা খুলে।
“হাই
পাখি এক গাল হেসে বলে। সায়ান মৃদু হাসে।
“এসো
দরজা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পাখিকে ঢোকার সুযোগ করে দেয় সায়ান।
পাখি মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকে।
খাটে কোম্বল জড়িয়ে বসে থাকা তুলতুলের দিকে এক পলক তাকায় পাখি। তুলতুলের কাঁদো কাঁদো ফেস দেখে বাঁকা হাসে পাখি।
” পাখি
সায়ান পাখির পেছনে দাঁড়িয়ে বলে।
পাখি সায়ানের দিকে তাকায়।
“আমাদের রিলেশনটা কি?
সায়ান পাখির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। পাখি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে এমন প্রশ্নে। তুলতুল গোল হয়ে বসে। তুলতুলও জানতে চায়। কি রিলেশন ওদের।
” বলবো?
পাখি মুচকি হেসে সায়ানের হাতের ভাজে নিজের হাত রেখে বলে।
তুলতুলের চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটাচ্ছে। এই দৃশ্য হয্য হচ্ছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস আটকে আসছে।
“হুমম বলো?
সায়ানও একটু হাসে।
” তুমি আমার লাইফ লাইন
এন্ড আমি তোমার
নাহহ আমি বলবো না তুমি বলো?
সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে পাখি।
খুব বড়সড় ধাক্কা খায় তুলতুল। চোখে অন্ধকার দেখছে। কানে বাজছে শুধু “লাইফলাইন “
নাহহ এটা হতে পারে না। কিছুতেই পারে না।
এমনটা কেনো হলো?
এখন সত্যি সত্যি তুলতুলকে চলে যেতে হবে। ডিভোর্স দিতে হবে। সায়ানের থেকে আলাদা হতে হবে।
আর ভাবতে পারছে না তুলতুল। বসে থাকা দুষ্কর হয়ে গেছে। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভীষণ বুকে ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে আর বেঁচে থাকবে না।
অবশ্য তুলতুলের বেঁচে থাকতেও ইচ্ছে করছে না।
চোখ বন্ধ করার আগে নিভু নিভু চোখে সায়ানের দিকে এক পলক তাকায় তুলতুল। ঝাপসা দেখতে পায় সায়ানের মুখটা।
তারপর ঠাস করে পড়ে যায়। খাটের কর্নারে বসাতে ফ্লোরে পড়ে যায়। খাটের পয়ার সাথে বাড়ি খাওয়াতে কপালের অনেকটা কেটে যায়।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে সায়ান পাখি দুজনই চমকে ওঠে সেদিকে তাকায়।
তুলতুলকে পড়ে থাকতে দেখে আতঙ্কে ওঠে সায়ান। হাত পা কাঁপছে।
এক দৌড়ে তুলতুলের কাছে যায়। তুলতুলের মাথাটা কোলে তুলে নেয়।
“এই তুলতুল তাকা না। কি হয়েছে তোর? তুলতুল কথা বল না।
সায়ান তুলতুলের গালে থাপ্পড়াতে থাপ্পড়াতে বলে।
” এতো হাইপার হওয়ার কিছু হয় নি। জাস্ট সেন্স লেস হয়ে গেছে।
পাখির খুব রাগ হচ্ছে। এই মেয়েটার এখনি পড়তে হতো। মরার হলে আর একটু পরে মরতো। অন্তত শুনতে পেতো সায়ানের উওরটা।
কিন্তু নাহহহ এই মেয়েটা ভিলেনের মতো ঠিক সময়েই সেন্স লেস হয়ে গেলো।
যতসব
সায়ান পাখিকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। পাখির বাবাকে কল করে ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে বলেন।
তারপর তুলতুলের পাশে স্থির হয়ে বসে থাকে। দৃষ্টি তুলতুলের মুখের দিকে। কি নিষ্পাপ মুখটা।
সায়ান হাত বাড়িয়ে কপালের রক্ত মুছে দেয়। এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
“সায়ান তোমার কোনো আত্নমর্যাদা নেই তাই না?
কিসের এতো মায়া তোমার? আবেগ নিয়ন্ত্রণ করো। আমি উকিলদের সাথে কথা বলে নিয়েছি। বাংলাদেশ ফিরেই ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে।
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। চোখ দুটো লাল হয়ে যায় মুহুর্তেই। এসি রুমে থাকার পরেও দরদর করে ঘামছে সায়ান।
ঘাড় বাঁকিয়ে পাখির দিকে তাকায়। পাখি ফোন দেখছে।
” আমার ব্যাপারে তোমার এতো মাথা ব্যাথা কেনো? কি চাও তুমি? তোমাকে আমি বলে দিলাম এখানে এসে বলবা আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড। তা না বলে তুমি তালবাহানা কেনো করলে?
সবটা ঠিক করে নিতে চেয়েছিলাম আমি। ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।
সায়ান পাখির দুই বাহু শক্ত করে ধরে চিৎকার করে বলে।
“আর আমি?
অস্ফুরণ কন্ঠে বলে পাখি। যেটা সায়ানের কান ওবদি পৌছায় না।
“সি ইজ মাই ওয়াইফ।
তোমাকে বলেছিলাম সম্মান করবা। ভাবি বলে ডাকবা।
পাখির চোখ দুটো ছলছল করছে। এই সায়ানকে পাখি চিনতে পারছে না। এ কোন সায়ান?
এতোটা বদলে গেছে সায়ান?
এই মেয়েটা কি সায়ানকে জাদু করেছে?
সায়ান পাখিকে ছেড়ে দেয়। আবার কল করে পাখির বাবাকে। এতো সময় লাগে ডাক্তার আনতে?
তারপর তুলতুলের পাশে গিয়ে বসে। গলা ওবদি চাদর টেনে দেয় তুলতুলের। কপালে অনেক সময় নিয়ে একটা চুমু দেয়।
তুলতুলের হাতটা মাথায় ঠেকিয়ে বসে থাকে।
পাখি এক পাশে দাঁড়িয়ে সায়ানের পাগলামি দেখছে। এই মেয়েটাকে এতোটা ভালো কেনো বাসে সায়ান?
এদের এই ভালোবাসা সয্য হচ্ছে না পাখির।
কিছুখন পরে ডাক্তার আসে।
মাথায় ব্যান্ডেস করে দেয় কিছু ঔষধ দিয়ে চলে যায়। পাখি এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
সায়ান পাখির হাত ধরে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
পখি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়।
সায়ান তুলতুলের পাশে অধশোয়া হয়ে বসে। তারপর তুলতুলকে টেনে বুকের ওপর তুলতুলের মাথাটা রাখে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তুলতুলকে।
” আই প্রমিজ এখন সবটা ঠিক করে দেবো আমি।
তুলতুলের মাথায় পরপর কয়েকটা চুমু খায়।
চলবে……