ইলমা বেহেরোজ,
আমিরের দ্বিতীয় অফিস অন্য এলাকায়। নারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিংবা অন্য কোনো অপরাধ জগতের বাসিন্দা প্রত্যেকে ওখানে দেখা করতে যায়।
আমির সেক্রেটারিকে ভারিক্কি গলায় বলল, ‘তাকে আসতে দিবেন না।’ ইন্টারকমের সুইচ অফ করে দিল ও।
আলমগীরসহ আরো ছয়জন আমিরের অফিসে ঢুকল। দ্বিতীয় অফিসে যাবার সময় হবে না বলে তাদেরকে আমির এখানে ডেকেছে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কে কোন এলাকায় যাবে, কীভাবে কী করবে তার একটা ছক তৈরি করেছে। প্রত্যেকের হাতে তা তুলে দিবে। আলমগীরের পাশে কবির দাঁড়িয়ে আছে; তেইশ বছরের তরুণ। বছর ছয়েক আগে কবিরকে পথ থেকে তুলে এনেছিল আমির।
মাতালের মতো চোখ বুজে আসছে বার বার, ঢলছে সে।
আমির কপাল কুঞ্চন করে বলল, ‘ওর কী হলো?’
কবির ধপাৎ করে আলমগীরের গায়ের উপর পড়ে যায়।
আলমগীর দ্রুত ধরে ফেলল, ‘বেশি গিলে ফেলছে।’
কবির জড়ানো গলায় বলে, ‘আমি শুনতাছি। খালি দাঁড়াইতে পারতাছি না, পা দুইটা কই জানি চইল্লা গেছে। আপনি কন, আমি শুনতাছি, শুনতাছি-‘
আমির গর্জে উঠল, ‘ঘাড় ধরে ও কে বের করে দাও।’ আবার বাজল ইন্টারকম।
সেক্রেটারি বিনীত সুরে বলল, ‘আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। রফিক মাওলা বলেছেন তিনি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলতে চান।’
তাৎক্ষণিক আমিরের শরীরের স্নায়ুতে টান পড়ল। রগে রগে কিছু একটা ছুটতে শুরু করল। রফিক মাওলা পদ্মজা সম্পর্কে কী বলবে? ভালো কিছু নয় তা নিশ্চিত। আমির বলল, ‘ভেতরে পাঠিয়ে দাও।’
তার চোখমুখের রঙ পরিবর্তন হতে দেখে আলমগীর প্রশ্ন করল, ‘কী হয়েছে?’
‘রফিক মাওলা অফিসে।’
‘ও এখানে কী করে?’
‘পদ্মজাকে নিয়ে কিছু বলতে চায়।’
কবির ছাড়া উপস্থিত বাকি ছয়জনের মুখে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। এরা প্রত্যেকে আমিরের বিশ্বস্ত সঙ্গী। একেকজন একেক দলের দলনেতা হয়ে কাজ করে। পদাজা সম্পর্কে সব জানে। পাঁচটি বছর পদ্মজার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার যে আপ্রাণ চেষ্টা ছিল আমিরের, তাতে এদেরও অবদান রয়েছে।
আমির কোথাও গেলে তারাই পদ্মজাকে আড়াল থেকে রক্ষা
করে। তাদের নাম সাদিক, সুরুজ, আবুল, আসাদসারওয়ার, কবির ও আলমগীর।
রফিক মাওলা অফিসে ঢুকল। প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাল চারিদিকে। চাকচিক্য এবং আভিজাত্যপূর্ণ অফিস!
দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘বহুদিন পর দেখা মি. হাওলাদার।’
আমিরের সোজাসাপটা প্রশ্ন, ‘কী বলতে চান?’
রফিক বাকিদের দেখে বলল, ‘এদের সামনেই বলব?’
‘দ্রুত বলুন, আমার কাজ আছে।’ তাড়া দিল আমির।
পদ্মজার নাম উঠায় অস্থিরবোধ করছে সে।
আগে তো বসতে দিন।’
আমির ও রফিকের কাছাকাছি বয়স। এক সময় দুজনের মধ্যে মহব্বত ছিল। একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করত। সেই সম্পর্ক আর নেই।
এখন দুজন দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু।
আমিরের মুখোমুখি একটি চেয়ার দখল করে বসল রফিক। বলল, ‘ভাবি কেমন আছে? শরীর ভালো আছে তো?’
রফিকের মুখে পদ্মজার সম্পর্কে কিছু শুনতে চাচ্ছে নাআমির।
এতোটাই অস্থির হয়ে পড়েছে যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
রফিক পুনরায় বলল, ‘ভাবির নাকি জ্বর এসেছিল, এখন ঠিক আছে?’
আমির কটমট করে তাকিয়ে আছে। তার হয়ে আলমগীর বলল, ‘হেঁয়ালি ছাড়ুন। কী বলতে চান? কাজের কথায় আসুন।’
রফিক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘ভাবির সম্পর্কেই বলতেচাই।’
রফিক পদ্মজা সম্পর্কে কিছু বলতে চায় শোনার পর থেকেই আমিরের রক্ত টগবগ করছে। আতঙ্কে বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। সে গর্জে উঠার আগে রফিক বলল, ‘ভাবিকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে শুনলাম, ভাবি নাকি…’ রফিক থামল।
আমিরের দিকে তাকিয়ে ফিচলে হাসল। আমির মনে মনে ভাবছে, ‘রফিক যেন এটা না বলে, ও জেনে গেছে পদ্মজা আমার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু জানে না। তাহলে শত্রুপক্ষরা আমাকে ধ্বংস করার মোক্ষম হাতিয়ার পেয়ে যাবে। এটা যেন না হয়, না হয়!’
কিন্তু তাই হলো। রফিক নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘ভাবির থেকে আড়াল করা কি ঠিক, হচ্ছে? অর্ধাঙ্গিনীর তো সব জানা উচিত। সে জানবে না তো কে জানবে? ভাবির সাথে অবিচার হচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আমির বলল, ‘কী জানার কথা বলছেন?’
রফিক নিষ্পাপ গলায় বলল, ‘অতীতের ফষ্টিনষ্টি,
দুইটা বউ, নারী ব্যবসা, এতো বড় একটা চক্র -‘
আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে চলে আসল, ‘বেরিয়ে যা কুত্তার বাচ্চা। এখুনি বেরিয়ে যা।’
আলমগীর, সাদিক দুজন মিলে রফিককে বগল থাবা দিয়ে ধরে বের করে দেয়ার জন্য। রফিক ঠোঁটে বাঁকা হাসি এঁটে বলল, ‘আশা করি ভাবি তার স্বামীর গল্পটা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনবে।’
আমিরের চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। বুকের ভেতর ধিকধিক করে জ্বলছে আগুন। রফিক মাওলা জানে মানে কুতুবউদ্দিনও জানে। সে ফেঁসে গেছে। পাথর হয়ে গেছে আমির। দ্রুত আলমগীরকে থামিয়ে দিয়ে দূর্বল ও কর্কশ গলায় বলল, ‘কী চাস?’
রফিক বিজয়ের হাসি হাসল। দুই হাত ঝেড়ে আবার চেয়ারে বসে পেশাগত ভঙ্গিতে বলল, ‘স্যার বলেছেন, ইয়াকিসাফির সঙ্গে যে চুক্তিপত্র করেছেন সেটি যেন আপনি বাতিল করেন। আপনার পশ্চিমের জায়গাটাও চান, যেখানে আপনি আরেকটা ফ্যাক্টরি করতে চাচ্ছেন। স্যার সেখানে শপিংমল করবেন আর চারটি জাহাজ চাই। এতটুকুই।’
চলবে।
পদ্মমির – পার্ট – ৭
ইলমা বেহেরোজ
এমনভাবে বলল রফিক যেন খুব সামান্য ব্যাপার চাইল।’ আমি চুক্তিপত্র বাতিল করলে কুতুবউদ্দিন অর্ডারটি পাবে
তার কোনো নিশ্চয়তা আছে?’ ‘না পেলেও সমস্যা নেই। যা আমাদের থেকে কেড়ে নেয়া
হয়েছে আমরা চাই না সেটি আপনি ভোগ করুন।’ দাঁত কেলিয়ে হাসল রফিক।
অনেকক্ষণ যন্ত্রণাদায়ক নীরবতা চেপে রইল রুমে।
রফিক ডেস্কে একটা দলিল রেখে বলল, ‘এখানে সাইন এবং সিল দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে পাঠিয়ে দিলেই হবে।’
আমির জানে এরা শুধু এতটুকু নিয়ে থামবে না। তাকে সর্বস্বান্ত করে দিবে। ধীরে ধীরে চুষে নিবে তার সবকিছু। রক্তশূন্য হয়ে গেছে আমিরের চেহারা। তরুণ সেই মুখটা যেন হঠাৎ বয়স্ক হয়ে গেল।
হাসিতে ভরে গেল রফিকের মুখ। বলল, ‘আসছি।’
কাচের দরজার ওপাশে পদ্মজাকে দেখা যাচ্ছে! been দুপুরের খাবার নিয়ে আসছে। রফিক থমকে দাঁড়ায়।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।
আমির সকালে তাকে বলে এসেছিল যেন দুপুরে খাবার নিয়ে অফিসে আসে। পদ্মজা এলে সেক্রেটারি কখনো আমিরের থেকে অনুমতি নেয় না। আলমগীর দ্রুততার সঙ্গে কবিরকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। বাকিরা মিটিঙের আবহ সৃষ্টি করতে পোশাক ঠিক করে ডেস্কের দুই পাশে থাকা চেয়ারে গোল হয়ে বসে। আমির নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে রফিকের দিকে তাকায়। রফিক বুঝতে পেরে সেও একটা চেয়ারে বসে। অফিসের ভেতরটা মুহূর্তে এমন রূপ নয় যে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে।
পদ্মজা অফিসে ঢুকেই থতমত খেয়ে যায়। দুপুরে কখনোই আমির ব্যস্ত থাকে না। সে নিকাব তুলে প্রবেশ করেছে। তাকে প্রথমবারের মতো রফিক দেখল।
পদ্মজা বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত বলে ওয়েটিং রুমে চলে যায়। রফিক ভীষণ মজা পেয়েছে এমন একটা ভাব নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ‘দারুণ! ভাবি কিন্তু অসম্ভব সুন্দরী। এতো সুন্দর মানুষ আমি আগে কখনো স্বচক্ষে দেখিনি।’
তার চোখ দুটিতে চকচক করছে লালসা। আমিরের
কানে কথাটি যায়নি। পাথরের মতো বসে আছে সে।
রফিক চলে যেতেই বাকিদেরও বেরিয়ে যেতে বলল আমির। আলমগীর কবিরকে নিয়ে ছাদের দিকে চলে যায়। পদ্মজা মাতাল অবস্থায় কবিরকে দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। হাজারটা প্রশ্ন করবে।
পদ্মজা কবিরকে এখানকার ঝাড়ুদার হিসেবে চিনে সবাইকে বেরিয়ে যেতে দেখে পদ্মলা অফিস-রুমে ঢুকল। পদ্মজাকে দেখেই আমির হেসে বলল, ‘স্বাগত ম্যাডাম।’
লাঞ্চবক্স রেখে পদ্মজা বলল, ‘আজ অসময়ে মিটিং
কিছুদিন ছিলাম না, অনেক কাজ জমে গেছে। আমি না থাকলে সব এলোমেলো হয়ে যায়।
‘আমিতো খোঁজখবর রেখেছি। সব ঠিকঠাক ছিল।’ আমির খতমত না খেয়ে কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘সেগুলোই
জানছিলাম। নতুন অর্ডারটা নিয়েও কথা হচ্ছিল।’ আমির হাজার চেষ্টা করেও নিজের চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক, রক্তশূন্যতা সরাতে পারছে না।
পদ্মজা বোরকা খুলে তার কাছে গিয়ে বলল, ‘কী
হয়েছে আপনার?
এই মুহূর্তে মনের অবস্থা আড়াল করতে চাওয়া বোকামি হবো আমির পদ্মলার কোমর জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে বলল, ‘কুয়েতে নীট ওয়্যার নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে সেটা যোগান
দেয়া কঠিন হবে।’ ‘আপনি এতকিছু করেন, এটাও পারবেন। যদি একেবারেই
না পারেন, চুক্তি বাতিল করে দিন। চাপ নিয়ে এতো টাকার তো প্রয়োজন নেই।’
আদির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো। আমাকে প্রাণভরে শ্বাস নিতে দাও।’
পদ্মজা ভাবছে, ‘কী এমন হলো যে, উনি এতো এলোমেলো হয়ে গেলেন। শুধুই কি কাজের চাপ? বাড়ির নাম শুকতারা। চুন শুরকি ব্যবহার করে ছোট আকারের লাল ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত একটি মাঝারি আকারের দ্বিতল বাড়ি।
ট্যাক্সি থেকে নেমে পদ্মজা প্রথমে বলল, ‘কার বাড়ি?’
পিছন থেকে সুরুজ বলল, ‘আমার দাদার বাড়ি। এখন আর কেউ থাকে না।’
আমির বাড়ির চাবি নিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে বলল,’ বড় উপকার হলো সুরুজ। ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। কথা দিচ্ছি, বাড়ির এক বিন্দু ক্ষতিও হতে দেব না।’
‘আরে কী বলছ, আমার বাড়ি মানে তো তোমারই বাড়ি। আর আমি জানি তোমরা বাড়ির খুব যত্ন করবে।’
অসম্ভব রোগা ধরনের একটা ছেলেকে আসতে দেখে সুরুজ বলল, ‘ওইতো ভুবন এসে গেছে। নিচ তলার ঘরটাতে ও থাকবে। যখন যা প্রয়োজন ভুবনকে বললেই এনে দিবে। সামনেই বাজার আছে।’
শুকতারার দুই পাশে অনেকগুলো পুরণে ভবন। প্রতিটি ভবনে ত্রিশ, চল্লিশটি করে রুম এবং প্রতিটি রুমে একটি করে পরিবারের বাস। অসংখ্য গলি পার হয়ে তারপর সড়কে উঠতে হয়। কলোনির অনেক মহিলা জানালা দিয়ে, গেইটের সামনে থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে তাদের। শত্রুপক্ষ ভাবতেও পারবে না, নিরাপত্তার জন্য তারা এরকম একটা জায়গায় এসে উঠেছে। পদ্মজ। গেইটের ভেতরে পা রাখতেই যাবে তখন আমির খপ করে ধরে ফেলল, কিছু বুঝে উঠার পূর্বে তাকে পাঁজাকোলা করে নিল।
সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ থেকে গুঞ্জন ভেসে আসো পদ্মজা অপ্রতিভ হয়ে উঠে লজ্জায়, ‘কী করছেন।’
আমির বলল, ‘হাওলাদার বাড়িতে ঢুকেছিলে আমার কোলে চড়ে, পদ্মনীড়ে ঢুকেছিলে আমার কোলে চড়ে, শুকতারাতেও আমাকে বাহন করেই প্রবেশ করবে।’ কথা শেষ করেই ও ভেতরে পা রাখল।
বাড়িটির সামনের দিকে পথের উপরেই এসেছে বাড়িতে ঢোকার পথ ও দোতলায় উঠার সরু সিঁড়ি।
পরিত্যক্ত বাড়িটির দেয়াল বেয়ে উঠে গেছে নানান লতানো ঝোঁপ।
আমির সিঁড়ি বেয়ে একটি বিশাল রুমে প্রবেশ করে।
পদ্মজা চোখ ঘুরিয়ে রুমটি পর্যবেক্ষণ করছে।কালো কাঠের চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল, বুকশেলফ – কী নেই! আসবাবপত্রগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক পুরনো। বুকশেলফে থাকা সবগুলো বইয়ে বালু জমে আছে। পদ্মজা প্রতিটি বই বালু ঝেড়ে ঝেড়ে ওলট-পালট করে দেখল। এক-দুটো পৃষ্ঠা পড়ল।
‘সব ইংরেজি উপন্যাসা’ বিস্ময় নিয়ে বলল ও।
সুরুজ ব্যাগপত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকে জানায়, আমার দাদা
ইংরেজি গল্প, উপন্যাস খুব পছন্দ করতেন।’
পদ্মজা হাসল, ‘আমি বইগুলো পড়তে পারি?’ ‘এজন্য অনুমতি নিতে হয়? অবশ্যই পড়বেন।’ পদ্মজার বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘ধন্যবাদ। দুপুরে খেয়ে যাবেন
কিন্তু। আমি রান্নাঘরটা গিয়ে দেখি।’
আমির পিছন থেকে ইশারা করলে সুরুজ দ্রুত বলল, ‘না, না আজ নয়। আরেকদিন এসে খাব। আজ আমার জরুরি কাজ আছে। আমি তাহলে আসি আ… আমির।’ অশ্বস্তি লুকোতে হাসল সুরুজ। পুনরায় বলল, ‘আসি ভাবি। ভালো থাকবেন।’ সুরুজ বেরিয়ে যেতেই পদ্মজা বলল, আপনার বন্ধু অমায়িক, বন্ধুবাৎসলা অবশ্য সব বন্ধুই এরকম। কোথায় পান এরকম বন্ধুবান্ধব?’
আমির শুধু হাসল, মুখে কিচ্ছুটি বলল না। মনে মনে
বলল, ওরা টাকার গোলাম, বন্ধু নয়। যেদিন আমার হাতে ক্ষমতা থাকবে না, অর্থ থাকবে না সেদিন বিশ্বস্ত এই মানুষগুলোই আমাকে ধ্বংস করবে।’
দুটো হাত পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় ওর তাবনার সুতো ছিড়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পদ্মজাকে দেখে, তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। পদ্মজা বলল, ‘কী ভাবছেন?’
আমির ওর কপালে চুম্বন করে বলল, ‘তোমার কথা।’
দুইদিন আগে।
বৈঠকখানা জুড়ে পায়চারি করছে পদ্মজা। দুপুরে আমিরকে এলোমেলো অবস্থায় রেখে আসার পর থেকে উদ্বেগের কারণে ছির হতে পারছে না সে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো, আমির ফিরল না। ওর উদ্বেগ বেড়ে মানসিক ব্যধিতে রূপ
নেয়। বাধ্য হয়ে অফিসের সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
‘মিসেস হাওলাদার বলছি-‘
ওপাশ থেকে ভেসে আসল, মিস্টার হাওলাদার বলছি।’
পদ্মজা উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল, ‘কখন আসবেন আপনি? ‘অফিসে কেউ নেই। অনেক কাজ জমেছে, শেষ করেই চলে আসব। সন্ধ্যার নাস্তা করেছি, চিন্তা করো না।’
আমির পদ্মনীড়ে ফিরল রাত এগারোটায়। গাড়ির শব্দ শুনেই পদ্মজা তড়িঘড়ি করে নিচ তলায় দামে।
কলিংবেল বাজার আগেই ও দরজা খুলে দিল।
আশ্চর্যজনকভাবে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা পদ্মজার মুখশ্রী দেখে আমিরের ক্ষিপ্ত হৃদয় শিথিল হয়ে আসে। চোখমুখ থেকে বিরক্তির ছাপটা সরে যায়। পদ্মজা দ্রুত নিয়ে আসল এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত। কোনোরকম প্রশ্ন না করে হাস্য বদনে আমিরকে শার্ট খুলতে সাহায্য করল। আমির ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, ‘মুখটা শুকনো লাগছে কেন? খাওনি?’
চলবে,,,,
সম্পূর্ণ গল্প