বিয়ের চাপ ৩য় পর্ব
—————————-
রাত বারোটার দিকে দুলাভাইকে আমার রুমে ডেকে আনলাম।দুলাভাই রুমে ঢুকেই বললেন,
-দিপু শোনো,যা বলবা তাড়াতাড়ি বলবা।আমার এখন ঘুমের সময়।আমার যখন ঘুম আসে,তখন আমার মাথা ঠিকভাবে কাজ করে না।
-আপনি কি শিওর অন্য সময় আপনার মাথা ঠিকভাবে কাজ করে ? আমরা তো জানি,আপনার মাথায়….
-সমস্যা আছে বলবা তো ? শোনো সবার মাথাই একটু-আধটু সমস্যা থাকে।এটা খারাপ না।তাই তো কবি বলেছেন, বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে,আসি আসি বলে জোছনা ফাঁকি দিয়েছে।
-দুলাভাই প্লিজ সব সময় ফাজলামি কইরেন না।আজ একটু সিরিয়াস হোন।আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন ।
-ওকে। আমি সিরিয়াস।তোমাকে দুই মিনিট সময় দিলাম। বল কি তোমার সমস্যা।
-আপনি আমার সমস্যা কি জানেন না ? আমার সমস্যা তো আপনার বউ আর আমার হবু বউ।
-শোনো আমার বউ এর ব্যাপারে আমি কিছু করতে পারব না।সে আমার ক্ষমতার বাহিরে।আমি তার বিরুদ্ধে গেলে সে আমাকে তোমাদের এই বাসা থেকে বের করে দেবে।ঘরজামাই এর মতো এমন লোভনীয় পদ আমি হাতছাড়া করতে পারব না।
-আপনি যে আপনার বউ এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না,সেটা আমি জানি।আর আমি সেটা করতেও বলছি না।আপনার কাছে আমার অনুরোধ,কমপক্ষে মইল্লারে আমার পিছন থেকে সরান।
-মইল্লাটা আবার কে ? তারে তো চিনলাম না।
-মইল্লা মানে মলি। রাগের জন্য মলিকে মইল্লা বলে ফেলছি।
-আচ্ছা আমি বুঝলাম না,তোমার সমস্যা কি ? মেয়েটি তো খুবই ভালো মেয়ে।এতো ভালো একটা মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছ না কেন ?
-দুলাভাই মেয়ে খারাপ তা তো আমি বলিনি।তবে এই মেয়েটি প্রচণ্ড লোভী।সে আমার সবকিছু কুক্ষিগত করার মতলবে আছে।
-তাই নাকি ! কিভাবে বুঝলা।
-বোঝাবুঝির কিছু নাই।সে আমাকে সরাসরি বলেছে,বিয়ের পর বাড়ি ভাড়ার সব টাকা উঠায়ে সে নিজের কাছে রাখবে।আপনি কি বুঝতে পারছেন এই কথার অর্থ কি ? এর মানে হচ্ছে আমাকে এবং আপনাকে হাত খরচের জন্য তার কাছে হাত পাততে হবে। বোঝেন ব্যাপারটা।
-তাতে সমস্যা কি।আমাদের টাকা পাওয়া নিয়ে কথা।টাকা কোথা থেকে কিভাবে এলো, এটা তো মূখ্য না।কবি বলেছেন, পাগল মন মন রে,মন কেন এত কথা বলে,মনকে আমার যত চাইরে বুঝাইতে,মন আমার চায় রঙের ঘোড়া দৌড়াইতে।অতএব হাত পেতে টাকা নেওয়া কোনো সমস্যা না।
-দুলাভাই বলেন কি,এটা কোনো সমস্যা না ? আরে আপনি তো সমস্যাটা ধরতেই পারছেন না।আচ্ছা এ বাসায় আপনার পদবি কি ?
-ঘরজামাই।
-এখন যদি টাকার জন্য আমার বউ এর কাছে আপনাকে হাত পাততে হয়,তাহলে আপনার পদবি কি হবে ?
-কি হবে ?
-ভিক্ষুক ঘরজামাই।
-তাতেও আমার কোনো সমস্যা নাই।শোনো কখনো পদবি নিয়ে মাথা ঘামাবা না।কবি বলেছেন,হাট্টিমাটিম টিম,তারা মাঠে পাড়ে ডিম,তাদের খাড়া দুটো শিং,তারা হাট্টিমাটিম টিম।
আমি অবাক হয়ে দুলাভাই এর দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটা মানুষ এমন হয় কি করে ? বুঝলাম,এই ব্যাটারে এসব বলে কোনো লাভ নাই।এর চক্ষু লজ্জা অনেক কম।
-দুলাভাই এ ছাড়া আরেকটা জটিল সমস্যা আছে।
-কি সেটা ?
-আমার ধারণা মলির মাথায় সমস্যা আছে।
-কিভাবে বুঝলা ?
-জানেন সে হানিমুনে কোথায় যেতে চায় ? সে হানিমুনে হাতীবান্ধা, গাইবান্ধা, ভেড়ামারা,বা ঘোড়াশাল যেতে চায়।
-তাই নাকি ? কেন ?
-কারণ এসব জায়গার নাম নাকি তার কাছে খুউব কিউট লেগেছে।
-কিউট লাগার কারণ ?
-কারণ জায়গাগুলোর নাম বিভিন্ন প্রাণীর নামে।
-তাহলে বান্দরবান বাদ দিল কেন ? ওটাও তো প্রাণীর নামে নাম।
-তা তো জানিনা।
-এককাজ করি,মলিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি।আর এই কথা বলার ফাকে তোমার সম্পর্কে কিছু বদনামও করব।যাতে ও নিজেই বিয়ে ভেঙে দেয়।
-এটা ভালো বুদ্ধি। এককাজ করেন স্পিকারে ফোন দেন।আমি যে আপনার পাশে আছি সেটা বুঝতে দেবেন না।
দুলাভাই মলিকে ফোন দিলেন,
-মলি কেমন আছ ? আমি দুলাভাই বলছি।তোমার হানিমুনের চয়েজগুলো সেই রকম হয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস তো বুঝলাম না। তুমি বান্দরবানের কথা ভাবলা না কেন ? এটাও তো কিউট প্রাণীর নামে নাম।
-জি দুলাভাই। আসলে আমি তো রামগড় থাকি। পাহাড়ি এলাকা। এর সাথে বান্দরবানের তেমন একটা পার্থক্য নাই।তাই ভাবলাম ওখানে যেয়ে লাভ কি ? অবশ্য আরেকটা কারণ আছে।
-কি সেটা ?
-আমার সাথে যে যাবে সে নিজেই তো একটা বান্দর। ওরে নিয়ে আমি যেখানে যাব সেটাই হয়ে যাবে বান্দরবান। হি হি হি..।
বলেই মলি হাসতে লাগল।
-তা অবশ্য তুমি ঠিকই বলেছ। তবে কি জানো,ও শুধু বান্দরই না,ওর চরিত্রও কিন্তু খারাপ আছে।
-তাই নাকি ?
-তা আর কি বলছি। ও একবার করেছে কি জানো ? পাশের বাসার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
-বলেন কি ? তারপর ? ওরা কি বিয়ে করেছিল ?
-অবশ্যই করেছে। ঐ বউ এখন গ্রামে থাকে।ঐ ঘরে বাচ্চাও আছে একটা । ক্লাশ এইটে পড়ে। দেখতে পুরাই বাবার মতো হয়েছে।শোনো তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও।না হলে এত বড় বাচ্চা তোমাকে আম্মা আম্মা বলে ডাকবে।
-তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই দুলাভাই।আমার খুব শখ কেউ আমাকে আম্মা আম্মা ডাকুক।আর দিপুর বাচ্চা তো আমারই বাচ্চা তাইনা ?
-আরও সমস্যা আছে।
-বলেন কি ! আরও সমস্যা আছে ?
-তুমি কাউকে বইলো না,ওর কিন্তু এইডস আছে।
-দুলাভাই অসুখ সবারই হতে পারে। চিকিৎসা করালেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
-ওর তো অসুখ একটা না।আরও অসুখ আছে।ওর যক্ষা, কলেরা,ডায়রিয়া, আমাশয়,হুপিংকাশি,কিডনি সমস্যা।ও আরেকটা কথা ওর একবার ওপেন হার্ট সার্জারিও হয়েছে। কমপক্ষে দশ-বারোটা রিং…
-দুলাভাই আর বলতে হবে না।আমি বুঝতে পারছি,ওর অনেক অসুখ।
-না পুরা বোঝেনি। ডাক্তার বলেছে যে কোনো সময় ওর খেল খতম।তাহলে তো তুমি বিধবা হয়ে যাবা।
– দুলাভাই শোনেন,আপনি সহজ সরল মানুষ।আপনি কেন ঐ গাধাটার বুদ্ধি ধরে এসব করছেন ? আমি জানি ও আপনার পাশেই বসে আছে।ওই আপনাকে ফোন করে এসব ফালতু কথা বলতে বুদ্ধি দিয়েছে তাই না ?
-মাইগড,তুমি কি করে জানলে ? তুমি তো দেখছি,খুবই জ্ঞানী মেয়ে।আমার ধারণা তোমার মধ্যে জৈনিক ক্ষমতা আছে।
-জৈনিক ক্ষমতা কি দুলাভাই ?
-এর মানে জিনের ক্ষমতা।মানে জিনের মতো তুমি যেখানে খুশি যেতে পার। যেয়ে সব দেখে আসতে পার।এই যেমন তুমি ঐ জৈনিক ক্ষমতা দিয়ে দেখতে পাচ্ছো দিপু আমার সাথেই বসে আছে।আচ্ছা তুমি কি দেখতে পারছ, আমি একটা হলুদ লুঙ্গি, আর লাল গেঞ্জি পরে বসে আছি ?
-হি হি হি..।দুলাভাই আপনার কালার চয়েজ তো মাশাআল্লাহ। হলুদ লুঙ্গি, আর লাল গেঞ্জি হা হা হা..।
বলেই মলি হি হি করে হাসতে লাগল।এরপর মলি হাসি থামিয়ে আমার উদ্দেশে বলল,
-দিপু,তুমি এসব কেন করছ ? শোনো তুমি এসব করে করে আমার জিদ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছ।একটা কথা সাফ সাফ শুনে রাখ।তোমাকে আমি বিয়ে করেই ছাড়ব।আর বিয়ের পর তোমার খবর আমি নিজের হাতে লিখব।আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।দুলাভাই খোদা হাফেজ। আপনি ঘুমান।এই গাধাটার সাথে থেকে ঘুম নষ্ট কইরেন না।
-এটা তুমি ঠিক বলেছ।এই গাধাটার সাথে থেকে থেকে আমার বুদ্ধি কমে যাচ্ছে।মলি বোন আমার ,তুমি কিন্তু আমার হাত খরচের টাকাটা একটু বাড়ায়ে দিও। কারণ কবি বলেছেন,এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
মলি হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিল
আজ মলিদের বাসায় আমার আর মলির গায়ে হলুদ।জানিনা অন্য কোনো বিয়েতে এমন ভাবে গায়ে হলুদ হয়েছে কিনা।মলি জিদ ধরেছে ওর বাড়িতে যে গায়ে হলুদ হবে, সেখানে শুধু আমি উপস্থিত থাকব।আমার পরিবার থেকে বা আমাদের পক্ষের আর কেউ সে অনুষ্ঠানে থাকতে পারবে না।এরপর দিন আমার বাসায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে।সেখানে মলি উপস্থিত থাকবে। কিন্তু মলির বাড়ির থেকে আর কেউ উপস্থিত থাকতে পারবে না।এই উদ্ভট চিন্তার উদ্দেশ্য কি ? মলির ব্যাখ্যা হলো, বিয়ের আগে মেয়ে এবং ছেলে একাকী শ্বশুর বাড়ি গিয়ে জড়তা কাটিয়ে সাহস সঞ্চয় করবে।
সে হিসেবে আজ আমি একাকী মলিদের বাসায় গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি।মেয়ে পক্ষ গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে।একাকী এসে আমার ভিতরটা ভয়ে কাঁপছে।হলুদের জন্য যে মঞ্চ বানানো হয়েছে,সেখানে আমি আর মলি পাশাপাশি বসে আছি।আমার সামনে দুই জগ শরবত রাখা হয়েছে॥ আর মলির সামনে এক বাটি রসমালাই, আর এক বাটি পায়েস রাখা হয়েছে।কারণ কি ? কারণটি শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেল।যারা গায়ে হলুদ দেবে, তারা আমাকে গায়ে হলুদ দিয়ে এক চামুচ শরবত খাওয়াবে।আর মলিকে হলুদ দিয়ে রসমালাই বা পায়েস খাওয়াবে।এই উদ্ভট চিন্তাও মলির মাথা থেকে এসেছ।মলির বক্তব্য হচ্ছে মিষ্টিতে বেশি সুগার থাকে।সে চায়না তার স্বামীকে সবাই মিষ্টি খাইয়ে ডায়াবেটিস ধরিয়ে দিক।বিষয়টা জানার পর মেজাজটা গরম হয়ে গেল।আরে ফাজিল মেয়ে,মিষ্টি খেলে আমার ডায়াবেটিস হবে তোর হবে না ? আমি খাব শরবত,আর তুই খাবি রসমালাই, এটা কোনো কথা ?
প্রথমে আমার শ্বশুর মশায় এসে আমার গায়ে হলুদ দিলেন। তারপর আমার মুখে এক চামুচ শরবত দিলেন। শরবত মুখে নিয়েই আমার মুখ-চোখ বিকৃত হয়ে গেল।আমি মনে মনে আতংকিত বোধ করলাম।কারণ আমার মুখে দেওয়া ওটা শরবত না,ওটা চরম তিতা কিছু একটা।শ্বশুর মশায় দিয়েছেন বলে ফেলেও দিতে পারছি না।চোখ-মুখ বন্ধ করে গিলে ফেললাম।
আসলে সামনে যে দুই জগ শরবত রাখা আছে,সেগুলো শরবত না।তার একটি ছিল চিরতার রস।আরেকটি ছিল করলার রস।যে তিতার ভয়ে জীবনে এই দুই জিনিস মুখে দিলাম না। সেই জিনিস একজন একজন করে আসছে আর এক চামুচ করে আমাকে খাওয়াচ্ছে।আমি মলির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
-মলি, তুমি কি জানো এই দুই জগে কি আছে ?
মলিও আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
-জানব না কেন ? আমিই তো রেখেছি।এক জগে আছে চিরতার রস,আরেক জগে আছে করল্লার জুস।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেন ?
-আমি চাইনা মিষ্টি খেয়ে তোমার ডায়াবেটিস হোক।তাই এই ব্যবস্থা। এটা তোমার শরীরের জন্য ভালো।
-আরে বাবা,একদিন মিষ্টি খেলে আমার ডায়াবেটিস হবে না। আর তাছাড়া আমার বাবা-মা কারও ডায়াবেটিস নাই।
-শোনো আমি কোনো রিস্ক নিতে পারব না। ডায়াবেটিস বাঁধায়ে বুড়া বয়সে তুমি বিছানায় মুতবা,সেটা আমি হতে দেব না।
-আরে আমি খামাকা বিছানায় মুতব কেন ?
-অবশ্যই মুতবা। আমি শুনছি যাদের ডায়াবেটিস হয়,তারা প্রস্রাব কন্ট্রোল করতে পারে না।
-শোনো তুমি ভুল জানো।ডায়াবেটিস হলে প্রস্রাব বেশি হয়। কিন্তু তাই বলে মানুষ বিছানায় প্রস্রাব করে না।
-মানুষ না করতে পারে।কিন্তু তুমি করবা।আমি শিওর তুমি অবশ্যই বিছানায় মুতবা।তোমার চেহারার মধ্যে সেই ধরণের ছাপ আছে।এখন চুপচাপ খাও।এখন থেকে তোমার দায়িত্ব আমার।
সারা অনুষ্ঠানে সবাই এসে এক চামুচ এক চামুচ করে ঐ তিতা রস আমার মুখে ঠেসে ঠেসে ঢুকাইছে।আর ঐ বিশ আমি চোখ-মুখ খিচে গিলছি।আর মাশাল্লা আমার শ্বশুরের আত্মীয়-স্বজনও মনে হয়ে কয়েক হাজার।এতো লোক কোথ্থেকে আসছে,আমি জানিনা।কম করে হলেও পাঁচশত মানুষ আমারে গায়ে হলুদ দিয়া ঐ তিতা শরবত খাওয়াইছে।
গায়ে হলুদ শেষে বাসায় এসে মাকে বললাম,
-মা আমি এই মেয়েকে বিয়ে করব না।
-কেন ? আবার কি হলো ? এত ভালো মেয়ে,এতো সুন্দর মেয়ে,বিয়ে করবি না মানে কি ?
-আমার সুন্দর মেয়ের দরকার নাই।আমি এই মেয়ে বিয়ে করব না।
-আচ্ছা কারণটা বলবি তো।গায়ে হলুদ হয়ে গেছে। কাল মেয়ে আসবে এ বাড়িতে গায়ে হলুদ দিতে। আর তুই এ সব কি বলছিস ?
-মা, শোনো এই মেয়ের মাথায় ছিট আছে।একে বিয়ে করা যাবেনা।
-ঐ বুঝছি,হলুদের এই নতুন নিয়মটার জন্য একথা বলছিস, তাই না ? আমার কাছে তো বিষয়টা ইউনিক মনে হয়েছে।
-মা বিষয় সেটা না।এই মেয়ে পুরাই ক্রিমিনাল।শোনো দুনিয়ার সবাই গায়ে হলুদ দিয়া মিষ্টি খাওয়ায়।এমনকি মলি নিজেও মিষ্টি খেয়েছে।কিন্তু আমারে কি খাওয়াইছে জানো ?
-কি খাওয়াইছে ?
-সবাই আমার গায়ে হলুদ দিছে,আর এক চামুচ করে করল্লা রস আর চিরতার রস খাওয়াইছে।
-কেন !
-মলির ধারণা আমার নাকি মিষ্টি খেয়ে ডায়াবেটিস হবে। আর ডায়াবেটিস হলে আমি নাকি বুড়া বয়সে হের বিছানায় মুতব।সে বলছে,আমার চেহারার মধ্যে নাকি বিছানায় মুতার ছাপ আছে।
আমার কথা শুনে মা মুখ টিপে হাসি বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। ঘরে উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসতে লাগল।
পরেরদিন বিকেল বেলায় মলি আমাদের বাসায় একাকী চলে এলো গায়ে হলুদ দেওয়ার জন্য।সবাই মলিকে বরণ করে নিলো।মলিকে অসাধারণ সুন্দর লাগছে।কিন্তু মলির এই সৌন্দর্য আমাকে স্পর্শ করছে না।আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলুদের মঞ্চে গিয়ে মলির পাশে মন খারাপ করে বসলাম।বসেই খেয়াল করলাম,আমার সামনে গতকালকের মতো দুই জগ শরবত।আর মলির সামনে নাটোরের কাঁচা গোল্লা রাখা। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার মায়ের দিকে তাকালাম। মা মুচকি হেসে সামনের থেকে সরে গেলেন। আমি আমার বোনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
-আপা এগুলো কি ?
-চিরতার রস আর করল্লার রস।
-এটা তোমরা কোথায় পাইছ ?
-মলি সাথে করে নিয়ে আসছে।দুই গ্যালন আনছে।তুই খা চিন্তা করিস না।যথেষ্ট আছে।শেষ হবে না।
আমি মলির দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
-তুমি এগুলা এখানে আনছ কেন ?
-তোমাকে তো আমি গতকালই বলেছি,তোমাকে আমি বিছানায় মুততে দেব না।
আমি হতভম্ব হয়ে মলির দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।
প্রথমেই মা এলেন আমাকে হলুদ দিতে। হলুদ দিয়েই আমার মুখে তিনি এক চামুচ চিরতার রস ঢুকিয়ে দিলেন।তিতার কারণে আমার চোখ-মুখ বেঁকে গেল।মা মুচকি হাসতে হাসতে মলিকে হলুদ লাগাতে লাগলেন।
আমি বুঝে গেছি,এই মেয়ে আমার জীবন ধ্বংস করে দেবে।আমার ধারণা এই মেয়ে অবশ্যই যাদুটোনা জানে।না হলে এত দ্রুত আমার মাকে সহ পুরো পরিবারকে হাত করতে পারতো না।হলুদের মঞ্চে বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এই মেয়েকে আমি কিছুতেই বিবাহ করব না।আজ রাতেই আমি ঢাকা থেকে পালাব।
চলবে …