#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৬
“আস্তে! মানুষ তো ভাবে বাড়িতে চোর-ডাকাত ঢুকেছে।”
অভ্র ধীরে ধীরে নিরুর মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। তারপর ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাল। নিরু ক্ষোভে গলা চড়িয়ে বলল,
“আপনার এত বড় সাহস! আমার মুখে হাত দিছেন?”
অভ্র ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি টেনে শান্ত গলায় জবাব দিল, “ওহ, মুখে হাত দেওয়াটা ভালো লাগেনি? হাতটা অন্য কোথাও দেওয়া দরকার ছিল বুঝি?”নিরুর মুখ শুকিয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“অভ্র ভাই!”অভ্র চোখ নামিয়ে এক মুহূর্ত চুপ করে রইল, তারপর চাপা স্বরে বলল,
“ছি, এভাবে বললে মরে যাই…”
“আসেন ভাই এক সঙ্গে গু খাই।”
“ওয়াক এসব কই থেকে শিখেছ? নিশ্চয়ই ফারাজ ভাইয়ের কাছ থেকে?”
নিরু মুখ ভেংচি কাটল। বলল,”কমু না।”
বিদ্যুৎ ফিরে আসতেই নিরুর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আগের মতো দীপ্তি ফিরে এসেছে তার চাহনিতে। যাক, অবশেষে নাটকটা দেখা হবে! নিরু সুন্দর তবে গায়ের রংটা চাপা। চাপা বললেও ভুল হবে উজ্জ্বল ফর্সা বলা চলে। ছোট বেলায় চাপাই ছিল। দিনকে দিন রুপচর্চার বদৌলতে বেশ উন্নতি হয়েছে। টেনেটুনে মেট্রিক পাশ করেছে। এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে। ভালো কলেজে ভর্তি করাতেও টাকা খরচ করতে হয়েছে। মেয়ে পড়ালেখার নামে ডাব্বা, আবার খালুরে ডাকে আব্বা। বিদ্যুৎ আসতেই অভ্র গলায় সতর্কতা টেনে বলল,
“দয়া করে আর কখনো অন্ধকারে এভাবে চিৎকার করবেন না, আপা। লোকে ভুল বুঝতে পারে, দুষ্ট চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।”
নিরু মুখ ভেংচি কাটল। কথাটা একদম গায়ে মাখেনি। নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
“আমার মুখ, আমি চিৎকার করব তাতে কার কী আসে যায়?হুহ!”
নিরু চলে যেতেই অভ্র তার যাওয়ার পথে তালিয়ে ঘাড়ে হাত বুলায়। চেয়ে থাকে। ক্ষানিক বাঁধে মাথা চুলকে বলে,”আরে ধ্যাত আমি না ফারাজ ড্যাডির কাছে এসেছিলাম? যাকগে এখন আর দেখাসাক্ষাৎ এর মুড হচ্ছে না। বাহিরে থেকে হাওয়া খেয়ে আসি।”
–
“বউ বউ ডাক পারি বউ আমার কার বাড়ি? আয়রে বউ বুকে আয়,তোর স্বামীরে মশায় খায়।”
ফারাজ মশারী টাঙাতে টাঙাতে ছন্দ কাটছে। চিত্রা ডিভানে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। একটু ওর পর আবার ফারাজের তামাশা দেখছে। সন্ধ্যা বেলায় কেউ মশারী টাঙায়? তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেই গেল।
“আপনাকে মশারী টাঙাতে কে বলেছে?”
ফারাজ স্বভাবসুলভ হাসি ছুড়ে দিয়ে বলল,” আরে সাদা মুলা, মশারী না টাঙালে তো আমাকে মশায় খেয়ে দিবে তখন তোমার কি হবে? আমি নিজেকে হেফাজত করছি জাস্ট ফর ইউ। তোমার মত একপিস থাকতে আমার র*ক্ত মশায় কেন চুষে খাবে?বলো বউ।বলো বলো।”
“বুঝলাম না ভালোবাসা দেখালেন নাকি খোঁচা মারলেন।”
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলল,”খোঁচা? ওইটা আবার কি জিনিস? দেখো বউ আমি তোমাকে ভাতেও মারব না,কথায়ও না।আমি তোমায় ভালোবাসা নিয়ে মারব। ওইসব খোঁচাখোঁচি আমার পোষায় না।”
চিত্রা বিরক্ত হয়ে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাল।”আচ্ছা আপনি কাজ কি করেন? শুধুই কি মাছের ব্যবসা?এই ব্যবসায় এত লাভ?”
“আপাতত তোমাকে আদর করা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই।”
“মশকরা করবেন না। বিষ ধরে গায়ে। মরে যাই আপনার এসব কথা শুনলে।”
ফারাজ মশারী ফেলে চিত্রার কাছে এগিয়ে এল। এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে বিছানায় দিকে পাড়ি জমালো। চিত্রা ধস্তাধস্তি করছে। তা দেখে ফারাজ হেসে গান ধরল,
“মরবে না, মরবে না, রাঁধে মন্ত্র ভালো জানি,
দু-এক খানা যারা দিয়ে বিষ করিবো পানি।”
চিত্রার বিরক্তি আরও বেড়ে গেল। ফারাজের এই নাটকীয়তা যেন শেষই হচ্ছে না। তবুও সে চুপ করে আছে, হয়তো নাটকের পরবর্তী অংশ দেখার জন্য। মশারীর কাছে যেতেই রোমান্সের ছন্দপতন। মশারীর ভেতরে ঢুকতে গিয়ে ফারাজের মুড একেবারে ফুস! এই ঘোড়ার ডিমের মধ্যে বউকে কোলে নিয়ে সে কি করে ডুকবে? রাগে সে এক হাত দিয়ে চিত্রাকে শক্ত করে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আর অন্য হাত দিয়ে টেনে হিঁচড়ে মশারী ছিঁড়ে । চিত্রা এতক্ষণ ফারাজকে হাজারটা কথা শুনিয়ে চুপ হয়ে গেছে। ফারাজের চোখের দিকে চেয়ে আছে সে। লক্ষণ ভালো ঠেকছে না। ত্রিপল নাইনে কোনোভাবে একটা কল করা যায় না? ফারাজ চিত্রার পাশে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। চিত্রাকে নিজের বুকের ওপর শুইয়ে বলল,
“একটু আমার বুকে মাথা রাখো না। তুমি হীনা বুকটা কেমন ফাঁকা ফাকা লাগে।”
ফারাজ চিত্রা হাত দুটো আলত করে নিজের আয়ত্তে নিয়ে হাতের ওপর চুমু খায়। একটি নয়, দুটো নয়, পরপর বেশ কয়েকটা। চিত্রার বাঁধা দেয় না। আবার তার বাঁধা দিতেও ইচ্ছে করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় একটু আগেও যেই চিত্রা কেমন তেজি ছিল সে এখন পাথরের মত নির্বাক,স্তব্ধ। ফারাজ চিত্রার ওষ্ঠের ছোঁয়ায় নিজেকে ধন্য করার আগেই রুমের দরজাটা ঠাস করে খুলে যায়। চিত্রা লজ্জায় বিছানার কোণায় ছিটকে যায়। বিরক্তির ফলে ফারাজের মুখ থেকে চ উচ্চারিত হয়। না এই বাড়িতে আর থাকা যাবে। এখানে সবাই তার রোমান্সে মন্ডু ডুকিয়ে দেয়। জলদি ঢাকা ফিরতে হবে। আর নয়তো এক্কেবারে ডেনমার্ক।
“খা…খালু।”
মিতালী একবার ঘরের দিকে তাকাল। মশারী ফ্লোরে এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়ে আছে। এই রুমে কি ভূমিকম্প হয়েছে নাকি? মিতালীর মোটা মাথায় আসলেই কিছু ডুকছে না।
” দূর বাল! ঘরের দরজাটা লাগাতে মনে নাই। ধ্যাত একটা ভুল সারাজীবনের কান্না। আর এই মাতারি তুই দরজা নক করে আসতে পারলি না? নেক্সট টাইম এই ভুল হলে তোকে আমি গু খাওয়াবো।”
“ভুল হইয়া গেছে। মাফ চাই। গু খাওয়ান আর যাই খাওয়ান আগে আমার কথাডা একটু হুহেন।”
“কন্টিনিউ।”
“এইডা আবার কি?”
“মনটা চায় তোকে!” ফারাজ থামল। পুনরায় শুধালো, “কি হয়েছে ওইটা বল।”
“খালু নিলু নামের একটা মাইয়া আইছে বাড়িতে। অবস্থা খুব খারাপ। কি করমু খালু?”
ফারাজের মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এই মুহুর্তে যদি ঘোড়াও তার সামনে ডিম পারত তবুও হয়ত সে একটু প্রতিক্রিয়া দেখাত না। কারন আপাতত তার মস্তিষ্ক জুড়ে প্রিয়তমা বিচরণ করছে। তবে চিত্রা জলদি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। নিলু এসেছে?তার মানে নিলুর কিচ্ছু হয় নি? সে ঠিক আছে।
অন্দরমহলে পৌঁছাতেই চিত্রা মিতালীর দিকে তাকাল। মিতালী কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়েটাকে সে এখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল, সে গেল কোথায়? চারপাশে তাকিয়ে মেয়েটাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে সে উদ্গ্রীব হয়ে উঠল।
“নিলু?” মিতালী ডাক দিল। কোনো সাড়া নেই। ডাকাডাকির শব্দ শুনে উপরতলা থেকে রুমানা এলাহী, রোশান, রাজনসহ বাকিরাও বেরিয়ে এল। এক মুহূর্তেই বাড়ির পরিবেশ পাল্টে গেল। সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ফারাজ এতক্ষণ বুকের কাছে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে ছিল। এখন তার বিরক্ত লাগছে। রাজন নিচে নেমে এল। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, “আরে থাম তো! সন্ধ্যার বেলা এত চেঁচামেচি করছিস কেন?”
মিতালী ব্যাকুল কণ্ঠে বলল, “ভাই, সত্যি আমি নিলু নামের একটা মাইয়ারে এইখানে বসাইয়া রাইখা গেছিলাম!”
রাজনের ভ্রু কুঁচকে গেল। “মেয়েটার নাম নিলু, এটা তুই জানলি কীভাবে?”
“জিজ্ঞেস করছিলাম। ওর অবস্থা ভালা ছিল না। সে কইল, ‘চিত্রা আপার সাথে একটু কথা আছে, শুধু একবার তারে ডাইকা আনো।’ আমি তাই ওরে এখানে বসাইয়া চিত্রা আপারে খবর দিয়া আনতে গেলাম। কিন্তু ফিইরা আইসা দেখি মাইয়াটা গায়েব!”
রোশান বিরক্ত হয়ে বলল, “এখন তো কেউ নেই? কে না কে এসেছিল, তা নিয়ে বাড়ি মাথায় তুলতে হবে নাকি? দেশের অবস্থা ভালো না, ছিনতাই বাড়ছে। অযথা এমন হুটহাট কাউকে অন্দরমহলে ঢুকাবি না!”
রাজন সুর মিলিয়ে বলল, “দেখিস নাই? পুকুরে দুইটা লাশ ভাসাইয়া দিছে! কোনোদিন না জানি তুই-ই টার্গেটে পড়ে যাস।”
মিতালী ভয়ে চুপ হয়ে গেল। ফারাজ একবার রাজন আর রোশানের দিকে তাকাল। তারপর এক দমে বলল, “সবাই যার যার ঘরে চলে যাও!”
সবাই যেতেই ফারাজের দৃষ্টি স্থির হলো চিত্রার দিকে। মেয়েটার মুখ কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। আজ সারাদিনে অনেক কিছু দেখেছে। মানসিকভাবে বেশ ধকল যাচ্ছে ওর ওপর।ফারাজ ধীরে ধীরে চিত্রার দিকে এগিয়ে গেল।
“বউ!”
চিত্রা নিঃশব্দে তার দিকে তাকাল।
“বাজিতপুর যাবো। জিনিসপত্র যা লাগবে, প্যাক করে নাও।”
চিত্রা বিস্মিত দৃষ্টিতে ফারাজের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। বাজিতপুর? কিন্তু হঠাৎ সেখানে কেন?
–
সকাল থেকে মোহনার শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে। গা গুলিয়ে উঠছে। মাথার ভেতর ধকধক করা যন্ত্রণা হচ্ছে। আজ টাফনিলও কোনো কাজ করছে না। তারিখ কত আজ? ক্যালেন্ডারের দিকে হাত বাড়িয়ে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। মুহূর্তেই তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্য লাগতে থাকে।
না… না! সময় তো পেরিয়ে গেছে! মোহনার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। মাথার ভেতর একটাই প্রশ্ন। সে কি গর্ভবতী? না, এটা অসম্ভব! সে ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে তাকায়। রোশান সেখানে বসে কিছু হিসাব কষছে। ব্যবসায়িক ব্যাপার-স্যাপার নিয়েই ব্যস্ত। ভুলেও রোশান কিছু জানলে চলবে না। কিন্তু যদি জানতে পেরে যায়? যদি সে ধরা পড়ে যায়?মোহনার শ্বাস গলায় আটকে আসে। বাচ্চার কথা মনে পড়তেই ভেতরটা শীতল হয়ে যায়। না, সে আর সন্তানহারা হতে চায় না! বাচ্চার কান্না তাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। সে জানতে পারলে একেও মেরে ফেলবে। বাচ্চাটাকে একেবারে ফেলবে। মোহনা নিজেকে আরেকবার স্বান্তনা দেয়। আগে পরীক্ষা করতে হবে। যদি সে গর্ভবতী না হয় তাহলে তো এসব ভয় অযৌক্তিক।
“মোহনা!”রোশানের ডাক শুনে চমকে ওঠে সে।
“জ্বী!”কণ্ঠ কাঁপছে।
“এক গ্লাস পানি দাও তো।”
মোহনা ভয়ে ভয়ে জগের দিকে এগিয়ে যায়। খাটের পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলের ওপর জগটা ছিল। গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে মোহনার হাত কাঁপছে।তবু সে নিজেকে সামলে নেয়।পানি নিয়ে রোশানের দিকে এগোতেই আবারও ডাক পড়ল,
“এই, মোহনা!”চমকে ওঠে সে। হাত ফসকে গ্লাসটা পড়ে যায় মেঝেতে। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় কাঁচের গ্লাসটা।রোশান এক ঝলক ভাঙা কাঁচের দিকে তাকায়। তারপর মুহূর্তের মধ্যেই মোহনাকে টেনে নিয়ে আসে কাছে।গলা চেপে ধরে দাতে দাত পিষে বলে, “কি লুকাচ্ছো জানেমান? আমাকে চিনো তো? আমি কেমন সেটাও আশা করি জানো। সাবধান নিজের যমদূতকে ঢেকো না।”
রোশান মোহনাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁচের ওপর ফেলে দেয়। চোখের সামনে দপদপ করতে থাকে র*ক্তমাখা কাঁচের টুকরো। শরীরের একপাশ ক্ষতবিক্ষত। র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। তবু মোহনার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হয় না। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।যন্ত্রণা চেপে ধরে নিজেকে সামলায়। যদি মাটির নিচে একটা ফাটল থাকত, তাহলে সে তাতে ঢুকে চিরদিনের মতো হারিয়ে যেত। কিন্তু তার উপায় নেই। মৃ*ত্যু ছাড়া মুক্তি কোথায়?
–
আকাশ আজ এক শোকপট। কালো মেঘের দুর্ভেদ্য আবরণে ঢাকা। যেখানে চন্দ্রের রূপালী আলো অসহায়ভাবে বিলীন হয়ে গেছে। বাতাসের শীতল প্রবাহ শিরদাঁড়ায় এক অদৃশ্য শিকল জড়িয়ে দিয়েছে। তার নির্মম শৈত্য হাড়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠেও অনুপ্রবেশ করছে। দূরপ্রান্ত থেকে অনির্ধারিত পাখিদের কর্কশ ডাক বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। পথের ধূসর প্রান্তরে ছন্নছাড়া কুকুরগুলোর ক্ষীণ আলোয় ঘেউ ঘেউ শব্দ এক ভগ্ন সুর তৈরি করছে। হয়তো রাতের আঁধারে তারা কোনো অশরীরীর উপস্থিতি টের পেয়েছে। হুটহাট আবার বাতাস দিগ্বিদিক হয়ে ছুটছে। তার রুদ্ধশ্বাস প্রবাহে শুষ্ক পাতারাও এক কৃত্রিম ঘূর্ণিতে আবর্তিত হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কারাগারের বন্দিরা মুক্তির জন্য প্রলাপ বকছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির চাপা নৈঃশব্দ্য। এই নৈঃশব্দ্যতা প্রকৃতির প্রতিটি কণায় বিষণ্নতার ছাপ ফেলে রেখে যাচ্ছে। বহু দূরে…হয়ত তারচেয়েও বেশি দূরে।
সোহান নদীর ঘাটে নির্বাক বসে আছে। চারপাশের নিকষ অন্ধকারে তার কৃষ্ণগাত্র একাত্ম হয়ে গেছে রাত্রির অতল অমানিশার সঙ্গে। শুধু ঠোঁটের কোণে চেপে রাখা দাহমান সিগারেটের জ্বলন্ত কুন্ডলীমাত্র প্রমাণ করে যে সে এখনও শ্বাস নিচ্ছে। শূন্য দৃষ্টি, প্রশান্ত অথচ বিষাদগ্রস্ত মুখ।কিন্তু তার অন্তর্গত উত্তাল আগুন নিস্তরঙ্গ নদীর মতো নয়, বরং গভীর গহ্বরের ধিকিধিকি দহনে পরিণত হয়েছে। চিন্তার প্রবাহ বিভ্রান্ত। সুস্থ যুক্তিবোধ যেন দূরতম কোনায় নির্বাসিত। বিরক্তি তার অস্তিত্বকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল নির্বাসনে পাঠালে তবেই সে স্বস্তি পাবে। অথচ সে জানে, তাও যথেষ্ট নয়। তার ধমনিতে ছুটে চলা ক্রোধ ও অতৃপ্তি এত তীব্র যে কয়েকটি নিঃসঙ্কোচ হত্যা করলেও হয়তো এই দহন প্রশমিত হবে না। হাতের আঙুল অস্থিরভাবে নড়ছে। রাতের আঁধারে নদীর ঘাটটায় কেবল জলের শব্দ। নিস্তব্ধতার মাঝে হঠাৎ ভেঁপু বাজল। দূরের কোনো ট্রলার থেকে ভেসে আসছে এই শব্দ। সোহান বিরক্তিতে পা নাড়ায়। পায়ের লোমশ চামড়ায় মশার দংশনে ছোট ছোট দাগ ফুটে উঠলেও তার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য চিন্তা। হারুনসহ দলের চারজন খুন হয়ে গেল। অথচ হত্যাকারী কে? তা সে এতটুকু আঁচ করতে পারছে না। খু*নীর কি তারচেয়েও বেয়ি ক্ষমতা? আধিপত্য? সোহানের ব্যবসার পরিধি বিশাল। শহরের রাস্তায় যে অটোরিকশা-মোটরগাড়ি চলে, তার বেশির ভাগই তার আওতায়। চালকরা দিন শেষে নির্ধারিত টাকা বুঝিয়ে দেয়। আর সোহান হিসাব চুকিয়ে তাদের পারিশ্রমিক দেয়। এই ব্যবসাই তাকে নাম দিয়েছে, পরিচিতি দিয়েছে। তবে নৈতিকতার ভাত নেই দেশে। তার নৈতিকতা খারাপ থেকে শুরু হয়েছে আর খারাপেই শেষ। সোহান লুঙ্গিটা একটু উপরে টেনে তোলে। পায়ের পাতা চুলকায়। গায়ে তার অদ্ভুত রঙের একটা শার্ট। রঙটার ব্যখ্যা সে দিতে পারবে না। সোহানের কল বাজছে। সোহান টের পেয়েছে। তবে তুলে দেখতেও মন চাইছে না। এমনকি কে করেছে সেটাও জানতে ইচ্ছে করছে না। পর পর তিনটা কল আসার পর একরাশ বিরক্ত নিয়ে কল তুলে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে গম্ভীর পুরুষালী গলা ভেসে আসে। কল রিসিভ হতেই বিশ্রী গালিগালাজ শোনা যায়। সোহান জবাব দেয় না। সে মনোযোগ দিয়ে কথা গিলে। কথার মাঝে হঠাৎ এক তথ্য ছুড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সোহানের চোখ-মুখ চকচক করে ওঠল। হ্যা এমন একটা খবরের অপেক্ষাতেই তো সে এতক্ষণ ছিল! সোহান পৈশাচিক হেসে বলল,
“এত দিনে একটা কামের কাম করছো মামুর ব্যাটা। এবার সুন্দর একখান গপ্প বানাইয়া নাটক খানা প্রচার কইরা ফেলাও দেখি।”
চলবে?
(সব মেনে নিয়েছি তবে কপি ট্যাগ মেনে নেওয়া অসম্ভব। এই যে এত কষ্ট করে গল্প লিখার পরও যখন এসব শুনতে হয় তখন বিশ্বাস করেন গল্প লিখতে আর একটু ইচ্ছে করে না। দেখবেন হুট করে আমার পেইজ থেকে একটা নোটিশ আসতে পারে,যেখানে চিত্রাঙ্গনার ইতি ঘোষণা দেওয়া হবে। অভিনন্দন আপনারা আপনাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পুরোপুরি সফল।)