#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_১৭
ভালোবাসা হচ্ছে সময়ের মতো।
একে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না।
তবুও প্রতিটি মুহূর্তে তার অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।
যেমন অনুভব করা যায় নিঃশ্বাসের পতন স্পর্শহীন স্পর্শের মতো।
ফারাজের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে চিত্রা। গাড়িতে উঠলেই মেয়েটার মাথা ঝিমঝিম করে। বমি পায়। ফারাজের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ফারাজের বুকে সেদিকে খেয়াল নেই। ফারাজের তাতে মন্দ লাগছে না। বুকটা এখন আর ফাঁকা নেই। শূন্যস্থান পূরণ করেছে তার অর্ধাঙ্গনী। আচ্ছা ফারাজ তো এমন ছিল না? জীবনে কাজ ব্যতিত অন্য কিছুকে তো গুরুত্ব দেয় নি সে। পরিবারের বন্ধন এড়িয়ে চলেছে, সম্পর্কের উষ্ণতা কখনো প্রয়োজন মনে হয়নি। ফারাজ জীবনকে গড়ে তুলেছে নিজ হাতে। প্রতিটি ইট, প্রতিটি কাঠামো তার ঘামে, পরিশ্রমে নির্মিত। সে কারও চাটুকারিতা করেনি। কারও ছায়ায় দাঁড়ায়নি। যে স্থানে সে দাঁড়িয়ে আছে তা তার নিজস্ব অর্জন। অথচ সে সৌন্দর্যের মোহগ্রস্ত হয়নি। নারী বা জগতের কোনো মোহ তাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। নারীর সৌন্দর্যতা তার কাছে অর্থহীন। কেবল কি নারীর?জগতের কোনো সৌন্দর্যই তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নি। দুনিয়ায় যা চিরস্থায়ী নয়। তাকে গুরুত্ব দেওয়া ফারাজের কাছে কেবলই সময় অপচয় বলে বিবেচিত। ফারাজের হঠাৎ মোহনার কথা মনে পড়ে যায়। মোহনা ছিল তার চেয়ে ছয় বছরের ছোট। যখন ফারাজ মাস্টার্স করছিল, তখন সে কেবল কলেজের সীমানায় প্রথম পদচিহ্ন রেখেছিল। ফারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টটিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র আর মোহনা ইডেন মহিলা কলেজে পড়ত। ফারাজের হলে থাকার অভ্যাস ছিল না। কলাবাগানের একটা বিল্ডিংয়ে থাকত সে। বিল্ডিংয়ের ওই একটা ফ্লোর ফারাজের নিজের ছিল। সেই ব্লিডিংয়ের পাশের বাড়িটাতে মোহনা আইসিটি পড়তে যেত। প্রথম সাক্ষাৎটা খুব অদ্ভুত ভাবে হয় তাদের। মোহনা যার কাছে আইসিটি পড়ত তার ঘরের জানালা দিয়ে ফারাজের বেলকনি দেখা যেত। ফারাজ রোকিং চেয়ারে বসে আনমনে গুনগুন করত। সিগারেটের ধোঁয়া উড়াত। মোহনা প্রাইভেটের নাম করে সেইসব আড়াল থেকে দেখত। ফারাজের তীক্ষ্ণ চাহুনি, সিগারেটে ঝলসানো তিক্ত ঠোঁট আর গম্ভীর স্বভাবই মোহনাকে আকৃষ্ট করেছিল। তার ভালোলাগা প্রথম পুরুষ ওই লোকটাই ছিল। যে তার দিকে কখনো ফিরে চায় নি। রোজ নিয়ম করে মোহনার চোখ দুটো খুঁজে নিত ফারাজকে। এক নির্বাক আকুতি নিয়ে। কিন্তু ফারাজ? সে তো অন্য পথের যাত্রী। আশপাশের শত প্রশংসিত দৃষ্টির বিপরীতে সে মোহনাকে ভালো করে দেখেও নি। ভালোবাসা দিবসে, জনসমক্ষে শাহবাগের পড়ে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে মোহনা যখন বুকের গভীর গোপন বাসনার কথা প্রকাশ করেছিল। তখন ফারাজের প্রতিক্রিয়া ছিল নির্মম। বিরক্তি, বিতৃষ্ণা আর একরাশ কঠিন বাক্যে সে মোহনাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল তার জীবনে নারীর কোনো স্থান নেই। মোহনার চোখে জ্বলজ্বল করা অশ্রুর রেখা ফারাজকে স্পর্শ করতে পারেনি। এরপর? এরপর মোহনা হারিয়ে যায়। কোথায়, কিভাবে, ফারাজ জানে না। বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। ফারাজ পড়াশোনা শেষ করে বিদেশের পথে পাড়ি জমায়।জীবনকে সংহত করতে দৃঢ়তায়। অবশেষে বহু বছর পর দেশে ফিরে দেখা মিলে সেই চেনা মুখের। তবে এবার সম্পর্কের সংজ্ঞা ভিন্ন। সে মুখ তার ভাইয়ের স্ত্রীর। আচ্ছা নারীরা এমন কেন?অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করাই কি তাদের চূড়ান্ত প্রতিশোধ?কিন্তু এসব করে লাভ কি? কই এসব করেও তো ফারাজকে পুড়াতে পারল না মোহনা। উল্টো ফারাজের মুখে ভাবী ডাক শুনে কি তার নিজের দহনের বেগ বাড়ে না? মোহনার প্রতিশোধ তাকেই ধ্বংস করেছে। সেই মোহনা যার জন্য একসময় পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ পাগল ছিল, তাকে পুনরায় দেখেও ফারাজের হৃদয়ে কোনো আন্দোলন জাগেনি। তবে চিত্রার ক্ষেত্রে কেন ভিন্নতা? কেন সে নিজেকে সামলাতে পারে না? কেন তার নিজের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়? ফারাজ নিদ্রিত চিত্রার অবয়ব আরও শক্ত করে আগলে ধরে। ড্রাইভারের দিকে না ফিরেই গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করে,
“গাড়ি ধীরে চালাও। সাবধান! আমার স্ত্রীর ঘুম যেন না ভাঙে।”
রাতের অন্ধকারে গাড়ি নীরবে ছুটে চলে বাজিতপুরের পথে। ফারাজ চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে। যে উদ্দেশ্যে সে দেশে ফিরে এসেছে, তা সফল করতেই হবে যেকোনো মূল্যে।
–
চিত্রার মামার বাড়ি পৌঁছাতে অধিক সময় ব্যয় হয় না। রাত এগারোটা ছুঁইছুঁই। আগামীকাল শুক্রবার।সোহাগের বিবাহোৎসব। যদিও একান্তই ঘরোয়া আয়োজন। নামমাত্র অনুষ্ঠান। বিশেষ কিছু নয়। ফারাজের বাজিতপুরে একটি কাজ ছিল, সেই সূত্রে চিত্রাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছে। না হলে এমন নিমন্ত্রণ কে-ই বা গ্রাহ্য করে? বিশেষত বউয়ের প্রাক্তনের নিমন্ত্রণ। তবে ফারাজের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। চিত্রা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করুক তার অতীতের সোহাগ আজ কীভাবে আরেক নারীর সোহাগে পরিণত হয়েছে।গাড়ি বাড়ির সন্নিকটে আসতেই চিত্রার নিদ্রা ভেঙে যায়। ঘুমের তন্দ্রা কাটতেই অনুভব করে, সে ফারাজের বুকে আশ্রয় নিয়েছে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে ওঠে তার। দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে রাগে উত্তপ্ত কণ্ঠে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
“আপনার কি মাথা গেছে? গাড়িতে একজন ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেও এভাবে আমার সঙ্গে লেপ্টে আছেন ?”
ফারাজ প্রশান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। চিত্রার লজ্জাবোধকে অবজ্ঞা করে হাস্যরত কণ্ঠে বলে,
“একবার চেহারাটা দেখি তো, প্রিয়তমা। আহা! লজ্জা পাচ্ছো মনে হচ্ছে? কিন্তু লজ্জার কী আছে? সেই রাতের কথা কি ভুলে গেছো? যখন আমাদের মাঝে সূক্ষ্ম সুই ফেলারও জায়গা ছিল না?”
চিত্রার দৃষ্টি দ্রুত সামনে বসে থাকা ড্রাইভারের দিকে যায়। লোকটি কী ভাবছে, আল্লাহই জানেন! তার অন্তর্দাহ আরও প্রগাঢ় হয়।
“আরে, ওদিকে কী দেখছো? আমার দিকে দেখো না।”
চিত্রার বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে সে জানে, ক্ষোভ প্রকাশে লাভ নেই।ফারাজ তাতে আরও আস্কারা পাবে।
“আপনার এই অর্থহীন বাক্যালাপে বরফ গলবে না, মিস্টার দারাজ এলাচী।”
ফারাজ এত সহজে নিবৃত্ত হয় না। তার শীতল হাত চিত্রার উষ্ণ কোমর ছুঁতেই চিত্রার শরীর অনিচ্ছায় কেঁপে ওঠে। বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে সে ফারাজের দিকে তাকায়। তবু৷ তার কণ্ঠ রুদ্ধ। অসীম লজ্জাবোধে কোনো শব্দ বের হয় না। রাগে ফুঁসতে থাকে। অথচ প্রতিবাদও আটকে গেছে অদৃশ্য বাঁধনে। ফারাজ এহেন প্রতিক্রিয়ায় আরও উৎসাহী হয়ে ওঠে। চিত্রার কানের কাছে মুখ এনে নৈঃশব্দ্যের সুরে বলে,
“হিশশশ! ডোন্ট মেক অ্যা নয়েজ।”
–
বাড়ির সামনে পা রাখতেই চিত্রার চোখে অশ্রু চলে এলো। কতদিন পর আবার বাড়ির গন্ধ পেল সে! এই বাড়ির উঠোন, দেয়ালের চুনধোয়া গন্ধ, রাতের বাতাসে ভাসতে থাকা চেনা সব শব্দ, সবকিছু যেন একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার মনে। মেয়েদের জীবন এত কঠিন কেন? সবকিছু আপন করে নিয়েও কেনো ছেড়ে যেতে হয়? কতশত অভিমান জমে আছে তার মনে তবুও সত্যি বলতে মামী যতই কঠোর হোক না কেন এতগুলো বছর অন্তত মাথা গুঁজে থাকার জায়গা তো দিয়েছিলেন।
“আরে বাল! এই বাড়িতে কলিং বেল নাই কেন? টু মাচ ছোটলোক!”
ফারাজের কণ্ঠে বিরক্তির সুর স্পষ্ট। চোখের জল মুছে চিত্রা তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“এখানে কেনো আনলেন আমাকে?”
“সোহাগকে দেখিয়ে তোমাকে চুমু খাওয়ার জন্য, বেবস।”
“ধ্যাত!”
চিত্রা বিরক্ত মুখে দরজায় টোকা দিতেই মারিয়া এসে দরজা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকতেই দেখে মার্জিয়া আর বাকিরা বসার ঘরেই অপেক্ষা করছে। তাদের চোখে অবাক হওয়ার কোনো ছাপ নেই। বোঝাই যাচ্ছে চিত্রার আগমন সম্পর্কে তারা আগেই অবগত ছিল। অথচ চিত্রা নিজেই কিছু জানত না! পেছন থেকে ফারাজও ভেতরে পা রাখলো। তার দৃষ্টি সোজা গিয়ে পড়লো মার্জিয়ার ওপর। মার্জিয়া ইতিমধ্যেই ফারাজ এলাহী নামক চরিত্রের পরিচয় পেয়েছে। তাই সে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। মুখে মেকি হাসি। চোখেমুখে দ্বিধা। ফারাজ হাসিমুখে বড় করে সালাম দিলো,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম, মাদার ইন লো! মানে, আমার তো পোড়া কপাল, শাশুড়ি নেই। কিন্তু বউটাকে তো তাড়ত্যাড়া আপনিই বানিয়েছেন তাই ভালোবাসার খাতিরে আপনাকেই মাদার ইন লো বলে ডাকছি। আপত্তি আছে নাকি?”
মার্জিয়া হালকা হেসে বলল, “না না, বাপজান! আপত্তি কিসের? শত হইলেও তুমি আমাগো চিত্রার সোয়ামি।”
মার্জিয়া কথা শেষ করার আগেই ফারাজ বলে উঠল,
“নাউজুবিল্লাহ। জান-ফান বলে কেন ডাকছেন? দেখুন আমি চরিত্রবান পুরুষ। বউয়ের প্রতি দয়াল না মানে লয়াল। আপনার আর আমার বয়সের পার্থক্য জানেন তো?ছি ছি এই বয়সে কি জোয়ান ছেলেদের জান বলে বলে ডাকে রে।”
মার্জিয়া বোকার মতো চেয়ে রইল। কিছুপল চুপ থেকে নিজেকে সামলে বলল,
“দাও দাও, ব্যাগপত্র দাও, আমার হাতে দাও। এই মাহদী, সোহাগ আর জান্নাতরে ডাক!”
“আরে আমার লোকের অভাব নেই।ওরাই সব করবে। কিন্তু সোহাগকে কেন ডাকছেন, মাদার? সদ্য বিয়ে হয়েছে। একটু বাসর-টাসর তো ঠিকমতো করতে দেন! ননসেন্স।”
চিত্রার ইচ্ছে করছে এখান থেকে পালিয়ে যেতে।মারিয়া আর মার্জিয়া অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। মাহদী নিশ্চুপ।কারণ সে ভালো করেই জানে ফারাজ এলাহীর সঙ্গে তর্কে নামা মানেই নিশ্চিত বিপদ। ফারাজের গলা শুনে সোহাগ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। চিত্রার দিকে এক ঝলক তাকায়। কিন্তু মুহূর্তেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। চিত্রার দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ। ঘৃণায় তার গা শিউরে উঠছে। ফারাজ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। মুখে হাসি টেনে সোহাগকে বলল,
“আরে! সোহাগ ভাই নাকি? মিয়া, বাসর ফেলে উঠে আসার কী দরকার ছিল? ইট’স নট ফেয়ার, ব্রো! এসেছো যখন, একটু বুকে আসো, না! কত বড় উপকার করেছো তুমি! তোমার মতো এক পিস মালকে জড়িয়ে না ধরলে আবার কষ্টে আমার এন্টেনা ব্যথা করবে!”
ফারাজ এগিয়ে গিয়ে সোহাগকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বাড়ির কারো মাথায় কিছু না ঢুকলেও চিত্রার বুঝতে বাকি রইল না এটা যে নিছক মশকরা। সোহাগ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।চিত্রার এক মুহূর্তও এখানে থাকার ইচ্ছে নেই। সে দ্রুত রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফারাজ তা দেখে সোহাগের কানের কাছে মুখ এনে হিসহিসিয়ে বলল,
“বউ আমায় রুমে ডাকছে। আমি আসি? তুমি পারলে এক গ্লাস দুধ পাঠিয়ে দিও। কথায় আছে না, দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে।”
সোহাগের কাঁধে চাপড় মেরে বাঁকা হাসল সে।তারপর চিত্রার পিছু নিল। গুনগুন করে আবার গাইতে লাগল,
“মাদার ইন লোয়ের বাড়িতে আইসা পাইলাম ভাঙা রুম,
বউটারে মোর বুকে লইয়া দিমু কড়া ঘুম…
হায়রে দিমু কড়া ঘুম!”
–
ফজরের আজানের সুরলহরী এখনো বাতাসে মৃদু প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। একে একে মুসল্লিদের দল মসজিদ অভিমুখে গমন করছে। কেউ ধীরপায়ে। কেউ বা তাড়াহুড়োয়। তবে সবার চোখেমুখে নিবিষ্ট ভাব। আকাশ তখনো সম্পূর্ণ শুভ্র হয়ে ওঠেনি। গাঢ় নীলের ক্যানভাসে আবছা ধূসর রেখা যেন রাতের শেষ স্মৃতি হয়ে স্থির হয়ে আছে। পূর্ব দিগন্তের কোণে সূর্য তার ক্ষীণ আলোয় ধীরে ধীরে চারপাশ আলোকিত করছে। নদীর তীর ঘেঁষে ফিরে আসছে সারারাত পরিশ্রান্ত মাঝিদের নৌকা। দেখে মনে হচ্ছে অন্ধকার জলরেখার বুকে ছায়ামূর্তির মতো দুলতে থাকা একেকটি নীরব প্রত্যাবর্তন।
নিলুফাদের বাড়ির সম্মুখে শ্যামলিমায় ঢাকা কলপাড়। যার পাশে দাঁড়িয়ে বিরাট সৃষ্টি গাছ। নীরব সাক্ষীর মতো প্রভাতের আবহকে গভীরতর করে তুলেছে এই গাছ। তার ছায়ায় ঢেকে থাকা ভেজা মাটি গত রাতের শিশিরকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। জলবিন্দুর মতোই স্পন্দনশীল। এই নির্জন ভোরে নিলুদের প্রতিবেশী রমিসা বেগমের ব্যস্ততা শুরু হয়। তার সন্তান গার্মেন্টসে চাকরি করে। তাই ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই তাকে রান্নার কাজে হাত দিতে হয়। ছাই হাতে দাঁত ঘষতে ঘষতে রমিসা কলপাড়ের দিকে এগিয়ে আসে। বাতাসের স্নিগ্ধ শীতলতা তার গায়ে ধূলির মতো লেগে আছে। রমিসা থু ফেলে চারপাশে একবার তাকাতেই তার চোখে পড়ে ফিকে হতে থাকা কুয়াশায় ঢাকা গ্রাম্য দৃশ্য। দূরের কয়েকটি মসজিদে এখনো আজানের মায়াময় ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোথাও একটা নেড়ি কুকুরের করুন সুর আকাশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রমিসা কুলি করে ওযু সারল। তবে বাড়ি যাওয়ার পথে হঠাৎ কি ভেবে যেন সৃষ্টি কাছের দিকে চোখ যায় তার। কি যেন একটা ঝুলছে গাছে। চোখ সরু করে ভালো ভাবে তাকাতেই রমিসা চিৎকার করে উঠেন। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে একটা শব্দ, “নিলুফা!!!!”
চলবে?