#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_৩
{ সর্তকবার্তা: সহিংসতা আছে }
ফারাজ এলাহী গা থেকে শার্ট খুলে চিত্রার শাড়ির ওপর হাত বাড়াতে গেলেই চিত্রা ছিটকে দূরে সরে যায়।ফারাজ বেপরোয়া হাসল।
‘এই বউ আমি তোমার সঙ্গে ছোটদের নয় বড়দের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে এসেছি।কাম ।আচ্ছা তোমার বয়স কত?মানে আমি ভার ছেড়ে দিলে আমার লোড সামলাতে পারবে তো?
চিত্রা আরেকটু পিছিয়ে জবাব দিলো,
‘আ..আঠারো’
‘একটু বেশি ছোট হয়ে গেলে না?হাইট এত কম কেনো তোমার?ছোট বেলায় বুঝি চেটে চেটে হরলিক্স খাও নি?’
হাসতে হাসতে ফারাজের হাত কখন যে চিত্রার শরীর অব্দি চলে এসেছে তা চিত্রা বুঝতেও পারে নি।সামনে যেই মানুষটা আছে সে তার স্বামী।তার স্ত্রীর প্রতি একটা হক আছে।তা চিত্রা ভালো করেই জানে।এখানে চিৎকার চেঁচামেচিও করা যাবে না।নিষেধাজ্ঞা করলেও অভিশাপ জুটবে কপালে।চিত্রা চোখ মুখ খিঁচে গাপটি মেরে বিছানার চাদর খামছে ধরে।ফারাজ চিত্রার কাঁপা ঠোঁটের স্পর্শে নিজেকে সঁপে দিতেই এগিয়ে আসে।তবে ঠোঁটে ঠোঁট রাখার আগ মুহুর্তে ফোনের শব্দে তার মেজাজ বিগড়ে যায়।কপাল কুঁচকে সে বেডসাইড টেবিলের ওপর থেকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে।মুহুর্তেই তার মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। গায়ে শার্ট জড়িয়ে জলদি সে উঠে পড়ে।চিত্রা বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হলো?তবে খারাপ কিছু একটা যে হয়েছে তা সে হারে হারে উপলব্ধি করছে।যদিও খুশী খুশী লাগছে কারন ফারাজ এলাহীর হাত থেকে তো নিস্তার পাওয়া গেছে।
‘এত খুশী হওয়ার প্রয়োজন নেই।আমি ছাড় দিয়েছি এর মানে ছেড়ে দেইনি। সময় হলে আরো নির্মমভাবে তোমায় ধরবো।তখন তুমি ঝরে পড়বে যেমনি ঝরে ভোরের শিউলি। আন্ডারস্ট্যান্ড?
ফারাজ রুম থেকে বেড়োনোর আগে চিত্রাকে আরেকবার হুঁশিয়ার করে।
‘যেমন ভাবে রেখে যাচ্ছি তেমন ভাবেই যেন এসে পাই। আই রিপিট।যেমন ভাবে রেখে যাচ্ছি তেমন ভাবেই যেন এসে পাই।হাতে আমার সময় নেই। এসে তো আমাকে বাসরটাও সারতে হবে তাই না?আসার সময় তোমার জন্য পেইন কিলার নিয়ে আসবো।বুঝতেই তো পারছো আমার ৩০ বছরের কামনা একরাতে সহ্য করা তোমার পক্ষে অত সহজ হবে না ।কিন্তু চিন্তার কিছুই নেই আমি আবার মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারদর্শী।জানোই তো মানুষ আবার অভ্যাসের দাস।অভস্ত্য হলে সব সহ্য করতে পারে।’
–
অন্ধকার রাত।মিহি চাঁদের আলো।ট্রলার ধীর গতিতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দিকে ভেসে যাচ্ছে।নদী থেকে পানির কেমন যেন একটা উৎকো গন্ধ নাকে আসছে।ভোর হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি ।রাতের অন্ধকারে নদীর জলকে দেখতে কেমন কালো আর ভয়ংকর দেখাচ্ছে। ট্রলারে আধমরা একটা লোক পড়ে আছে।দু’জন যুবক তাকে আবার শক্ত করে ধরে রেখেছে।লোকটার ডান হাত আর বা পা দু’টো কেটে দু’টুকরো করে তার সামনেই বিছিয়ে রাখা হয়েছে।শরীরে শক্তি নেই।এত বছর ধরে কামাই কড়া র*ক্ত গুলো চোখের সামনে গলগল করে বেড়োচ্ছে । তবে লোকটার চোখ ফেলে সেই দৃশ্য দেখার শক্তি নেই।শক্তপোক্ত একটা তাগড়া পুরুষ লোকটার সামনে এসে দাঁড়ায়।সাদা একটা পাঞ্জাবি পরহিত সে।গলায় তার কালো রঙের মাফলার ঝুলানো। লম্বা চওড়া আকর্ষণীয় সুঠাম দৈহিক গঠন। লোকটি তার বা পা আধমরা ব্যক্তির ডান হাতের কাটা অংশে কোষে একটা চাপ দেয়।আহত লোকটার মুখ থেকে ভোঁতা গোঙানির শব্দ বেড়িয়ে আসে।চিৎকার করার মতো শক্তি তার শরীরে আর বেঁচে নেই।
‘কোন হাত দিয়া মাল চুরি করছোস রে শা*লা? ডান হাত দিয়া?কিন্তু ওইডা তো আমি কাইটা ফেলাইছি।না না মনে হয় বাম হাত দিয়া মাল চুরি করছোস। শুনছি তুই নাকি আবার বা হাত দিয়া গিলোস?নিশ্চয়ই মালডাও বা হাত দিয়াই সাবার করছোস।’
মাফলার পড়া লোকটি তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাতাশ-আটাশ বছরের যুবক বিল্লালের দিকে হাত বাড়ালে সে একটা রাম দা এগিয়ে দেয়।লোকটি এবার উঠে দাঁড়ায়।চারিদিকে একবার চোখ বুলায়।কি অদ্ভুত সুন্দর হয় রাতের পরিবেশ।স্মিত হেসে ঘাড়ে হাত বুলায় সে।তারপর এক ঝটকায় রাম দা দিয়ে লোকটির বাম হাতে একটা কোপ বাসায়।আহত লোকটি এবার আল্লাহ বলে একটা চিৎকার করে।কিন্তু তাতে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।লোকটা একটা সিগারেট ধরিয়ে বড় করে টান দেয়। ধোঁয়া ছেড়ে দেয় নদীর বুকে।নিজের সাদা পাঞ্জাবিটা র*ক্তে গটগট করছে।সেই র*ক্তের দিকে লোকটি তাকিয়ে বলল,
‘বাহ তুই আমার মাল চুরি করোস,তোর কইলজাডা না দেখলে কি চলে?তোর কইলজাডা দেখনের খুব শখ আমার।বিল্লাল,লম্বা রাম দাওডা দে তো।যেইডা নতুন আনছি।আমি তার কইলজাডা দেখমু,কত বড় কইলজা তার। না দেখলে কি চলে ক?দে,জলদি দে।’
লোকটা হাতের সিগারেটটা অন্ধকার নদীতে ছুঁড়ে ফেলে আধমরা লোকটির দিকে তাকায়।লোকটাকে চেপে ধরে রাখা ছেলেদের মধ্যকার একজন তার চুলের মুঠি চেপে ধরল।তারপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করল,
‘আগে কইলজা বের করবেন নাকি খোদার নামে জবাই দিবেন?’
‘ছি ছি চোররে কেউ খোদার নামে জবাই দেয়?পাপ লাগবো শা*লা।আর এত সহজে জবাই দিয়া মুক্তি দিমু কেন রে?আমি তো ওরে আদর কইরা বুক ছিঁইড়া কলইজাডা বাইর করমু। আর তারপর….’
‘আমি চুরি করি নাই..জীবন ভিক্ষা দেন।’আকুতি করল আহত আধমরা লোকটি।
‘তুমি শা*লা ম*রার আগেও মিছা কথা কেন কও?খোদার ভয় নাই?শা*লা বা*লপাকনা ভন্ড।”একমুহূর্তেই লোকটার গলার স্বর বদলে যায়।সে ধমকে বিল্লাল নামক লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘জা*নোয়ার তোরে রাম দাওডা দিতে কইছি না?কানের ছিদ্র দিয়া কথা ডুকেনা বা*ল?’
–
আকাশের কৃষ্ণ যবনিকা অপসারিত হয়ে স্বর্ণাভ কিরণরাজি ধরিত্রীর বুকে পতিত হলো।কিন্তু চিত্রার অন্তর্জগতে কাল রাতে যে প্রলয়ংকরী ঝড় বয়ে গেছে, তার কৃষ্ণছায়া এখনও কাটেনি।ভোর হয়েছে। চিত্রা বিছানা ছেড়ে ওযু করে নামাজ পড়ল। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে একরাশ অশ্রুভেজা অভিমান নিয়ে হাজির হলো। অজানা সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইল।
চিত্রার গায়ে কাল রাতের সেই লাল শাড়িটা।লাল র*ক্তের মতো টকটকে।র*ক্ত দেখলে চিত্রার ভয় হয়।র*ক্তের সাথে তার তিক্ত সম্পর্ক, প্রতিবারই কোনো না কোনো ক্ষতি বয়ে আনে, সবকিছু কেড়ে নেয়। এই লাল শাড়িও যেন র*ক্তের প্রতিচ্ছবি, এক রাতে তার জীবনটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বেলকনির দিকে। বাতাসে তার এলোমেলো চুল দুলছে। ঠিক যেন তছনছ হয়ে যাওয়া এক ঝড়ের পর স্থবিরতা। বেলকনির রেলিং আঁকড়ে ধরে দাঁড়ায় সে।পেছনের দিকে বিস্তৃত এক নিঃশব্দ জলরাশি, আতশযৌলা দীপ্তিতে মোড়া।ভোরের আবছা আলোয় তার কালো জলে ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যময় নৈঃশব্দ্য। যেখানে বাস্তবতা ও বিভ্রমের সীমানা ধূসর হয়ে গেছে। চারপাশের জঙ্গল নিঃশব্দ প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে।বাঁশবাগানের দীর্ঘ, সরু দেহগুলি কুয়াশার আবরণে অর্ধেক দৃশ্যমান, অর্ধেক অদৃশ্যঠিক।বাতাসের স্নিগ্ধ স্পর্শে পাতাগুলো কেঁপে উঠছে। আবার থমকে যাচ্ছে।চিত্রা এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে শোনার চেষ্টা করে দূর থেকে ভেসে আসা কোনো অশরীরী আহ্বান।হুতুম পেঁচা ডাকছে।ভোরের অস্পষ্ট আলোয় পুকুরের জলে আলোর রেণু পড়ে। দক্ষিণের খোলা হাওয়ায় হঠাৎ চিত্রার এলোমেলো খোলা চুল গুলো আবারো দোল খেয়ে নেচে উঠে।কতক্ষণ যে একধ্যানে চিত্রা সেই কালো পুকুরের দিকে তাকিয়েছিল সেদিকে তার খেয়াল নেই।
‘আপা।’
কারো গলার শব্দে চিত্রা দরজার দিকে তাকাল।কামিজ পড়া একটা মেয়ে।পটলচেরা চোখ।শ্যামবর্নের গায়ের গড়ন।চিত্রা রুমের ভেতরে এসে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকায়।
‘আপা ছোট সাহেব কইছিল আপনার দিকে নজর রাখতে।আপনে কন কি খাইবেন, আমারে কন।’
‘আপনি কে?’
‘এই বাড়িতে কাম করি।এনেই থাকি।কি খাইবেন কন।আমি তৈয়ার করতাছি।’
‘না না আমি কিছু খাবো না।ভালো লাগছে না।ফারাজ কোথায়?সে এসেছে?’
‘না।’
‘বাড়িতে আর মানুষ নেই?’
‘অভাব নাই।একটু পরেই দেখবেন বাড়ি কেমন জমজমাট হইয়া উঠে।’মেয়েটি থামল।’আপনে আসলেই কিছু খাইবেন না?সাহেব শুনলে রাগ হইবো।’
‘কিছু হবে না।আচ্ছা আমি রান্না ঘরে যাই?কোনো সাহায্য লাগলে আমি করে দিবো।’
‘ আস্তাগফিরুল্লাহ! এত জলদি আমার মরার ইচ্ছা নাই।আপনে কেন কাম করবেন? আমরা আছি না?
মেয়েটি জলদি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।চিত্রা অদ্ভুত ভাবে তার দিকে চেয়ে রয়।মরার ইচ্ছা নেই দ্বারা মেয়েটি কি বুঝানোর চেষ্টা করছে?বিছানায় গিয়ে বসল চিত্রা।মাথায় তার একগাদা প্রশ্ন।এখনো তো তার জানাই হলো না ফারাজ এলাহী কে?কেনো সে তাকে বিয়ে করেছে?হঠাৎ সোহাগের কথা মনে পড়ে যায়।একটা কল…একটা কল সে সোহাগকে করতে চায়।
–
বেলা দশটার দিকে বাড়ি ফিরল ফারাজ।রুমে ডুকে দেখল চিত্রাকে যেমন ভাবে সে রুমে রেখে গিয়েছিল তেমন ভাবেই বসে আছে সে।গায়ে সেই শাড়িটাই।বিছানায় গুটি মেরে বসে আছে।ফারাজের ঘরটা বাকিদের থেকে অন্যরকম ভাবে সাজানো।তার যেসব জিনিস বেশ পছন্দ তাই দিয়ে নিমজ্জিত। বিছানার ওপর একটা শাড়ি পড়ে আছে।ফারাজ সেদিকে একবার তাকিয়ে চিত্রাকে প্রশ্ন করল,
‘শাড়িটা দেওয়া হয়েছিল তাহলে পড়ো কি কেন?’
চিত্রা নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,
‘আপনি না বলেছিলেন যেভাবে রেখে যাবো সেভাবেই যেন এসে পাই?তাই নিজেকে বদলাই নি।দেখুন… চেয়ে দেখুন বিক্ষিপ্ত চিত্রাকে।’
‘ডালিং তুমি কথাও বলতে জানো?’
‘আমি নিচে যেতে চেয়েছিলাম।যেতে দেওয়া হয় নি আমাকে।কেনো জানতে পারি?’চিত্রার গলায় অভিমান।
‘আরে এমন কড়া কড়া প্রশ্ন করছ কেন?তুমি না নতুন বউ?লজ্জা পাও একটু।পাও না।লজ্জা পেতে বুঝি লজ্জা লাগে?এতক্ষণ পর তোমার স্বামীটা বাড়ি এলো। তোমার তো লজ্জায় রংধনু হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু তুমি তো সোনা একটা জংলী বিড়াল।লজ্জা কি ছোটবেলায় দুধের সঙ্গে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছিলে নাকি?’
ফারাজ আলমারি খুলে নীল রঙের একটা শার্ট আর সাদা প্যান্ট বের করে বিছানার ওপর রাখল।হঠাৎ চিত্রার চোখ যায় ফারাজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলির দিকে।সেখানে ব্যান্ডেজ করা।চিত্রা উঠে এসে ফারাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,
‘হাতে ব্যাথা কি করে পেলেন?যাওয়ার সময় তো হাতটা কাটা ছিল না?’
ফারাজ তার হাতের দিকে তাকায়। পরক্ষণেই মুচকি হেসে জবাব দেয়,
‘এগুলো ছোটলোকি ব্যাথা।এসব ব্যাথা আমার কিচ্ছু নাড়াতে পারে না। আমার আবার বড় সব আঘাত নিয়ে খেলার অভ্যাস।’টান টান কন্ঠস্বর ফারাজ এলাহীর।
‘দুনিয়ার সব জিনিসকেই দেখছি আপনার ছোটলোকি মনে হয়। তো আমার ছোটলোককে বউ করেছেন কেনো?ভালোবাসার জন্য?নাকি উদ্দেশ্য ভিন্ন?’
ফারাজ খানিকটা অবাক হয় চিত্রার কথায়। কথার ধরনে কয়েক ঘন্টায় এতো পরিবর্তন? মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার।সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। শান্ত থাকার চেষ্টা করে। ক্ষনশ্বর থমকে থেকে জবাব দেয়,
‘কি বললে?ভালোবাসার জন্য?তোমাদের মতো মেয়েদের ভোগ করা যায়। ভালোবাসা নয়।’
( ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।বানান রিচেক দিতে পারে নাই।সবাই কমেন্ট করবেন কিন্তু। হ্যাপি রিডিং। ধন্যবাদ।)