#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_৯
“ভাই জলিলের কিচ্ছা খতম।”সিফাত চেয়ারে বসে থাকা লোকটির দিকে চেয়ে বলল।লোকটির হাত তখনও র*ক্তাত্ব।একটু আগেই একটা ছেলেকে নিজ হাতে দফারফা করেছে সে।লোকটি হাতের র*ক্তের দিকে গভীর মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে।চেয়ারে বসে পা দু’টো তুলে দিয়েছে টেবিলের ওপর।জাতীয়তাবাদীর পার্টি অফিস এটা।লোকটির বাবা সোহেল পালোয়ান এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।তবে বাবা কাউন্সিলর হলেও ছেলের রাজত্বে সব চলে বোধহয়।
“হাত ধুইমু।পানি দে। শালার হাতটা নোংরা হইয়া গেলো বাল।নতুন পাঞ্জাবিটা পইড়া আসছি ওইটাও লাল হইয়া গেছে।বালডারে কেন যে এখন ধইরা আনলি?যা পার্টি অফিসের লকারে আমার পাঞ্জাবি আছে।সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামাটা আন জলদি।”
লোকটা হাত মুখ ধুয়ে পোশাক পরিধান করল।গায়ে একটা দামী ব্যান্ডের পারফিউম লাগিয়ে আবারো এসে বসল চেয়ারে। এতক্ষণে খু*নের সব প্রমাণ তার লোকেরা গায়েব করে ফেলেছে।লোকটির নাম সোহান পালোয়ান। গায়ের রং কালো।তৈলাক্ত চেহারা।দেখলে মনে হয় কেউ যেন গায়ের মধ্যে একগাদা সরিষার তেল ঘোষে রেখেছে। সোহানের গলায় বেশ অনেকগুলো ভারী মোটা স্বর্ণের চেইন।হাতেও স্বর্ণের বেসলাইট। বামহাতের পাঁচ আঙুলে পাঁচটা মোটা স্বর্ণের আংটি।দেখেই আন্দাজ করা যায় এই লোক বেশ শৌখিন। স্বর্ণের ওপর তার আলাদা একটা টান আছে।একটা গাভীর আর্কষণ আছে।বয়স ত্রিশের ঘরে।গালে চাপদাড়ি।বাম চোখের নীচ বরাবর হতে একটা কাটা দাগ আছে।দীর্ঘদেহী লম্বাটে কালো তাড়গা শরীরে সাদা পাঞ্জাবিটা কি অদ্ভুত ভাবে ফুটে আছে।
“এই বার ক সিফাত।”
“জলিল মইরা গেছে।তারে সহ আর বউ-বাচ্চারে জিন্দা চিতায় পুড়াইছি।”
“তুই আসলেই কামের একটা পোলা।এই কারনেই তো তোরে আমার এত পছন্দ।”
“ভাই কি যে কন?আপনার লইগা জানটা বাহির কইরাও দিতে পারমু।আপনিই তো সব আমাগো।”
সোহানের মুখে সন্তুষ্টিজনক হাসি।তার নদীপথে ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট ব্যবসা। তবে তার সঙ্গে? সঙ্গে আরেকটা ব্যবসাও আছে।যেটা তার ভিতরের বিষয়। নিজের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে কাউকে জানাতে কিংবা কেউ অনুমতি ছাড়া জানুক তাও সোহানের পছন্দ নয়।পরশু রাতের কথা।জলিল তখন নৌকা নিয়ে তীরে বসে ছিল।সোহানের লোকেরা তাকে ট্রলার থেকে খেয়াল করেছে।তবে অন্ধকারের মধ্যে ঘটা কাহিনি যে জলিল বহুদূর গড়াতে পারবে তা নিয়ে ছেলেগুলোর ধারণা ছিল না।সোহানের মানুষ পাচারের ব্যবসা।মানুষ হলেই হলো।তবে নারীদের ডিমান্ড বেশী।রাতে যখন ধরে আনা নারী-পুরুষ আর শিশু কিশোরদেরকে সোহানের লোকেরা ডিলারদের ট্রলারে উঠিয়ে দিচ্ছিলো তখন সেই দিকে চোখ পড়ে যায় তীরে বসে থাকা জলিলের।জেলেপাড়ার মানুষগুলোর মধ্যকার বেশিরভাগ লোকই সোহানের হয়ে কাজ করে।তবে জলিলটা পাড়ায় নতুন।তার উপর সাহস কত বড়! মূর্খটা রাতের সেই ঘটনা আবার জেলে পাড়ার আরেক মাঝিকে গিয়ে জানায়।তবে সে কি আর জানে?ওই মাঝিও যে সোহানের লোক?যাক এমনিতেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।দু-চারটে মরলে দোষ নেই।সোহান উঠে যায়।তার অনেক কাজ আছে।দেশের পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো না।তার ওপর আজকাল চালান বেশ মুশকিল হয়ে গেছে।ট্রলারে কি সব চেকিং-ফেকিং শুরু হয়েছে।
“ভাই?কথা আছিলো।”
“কইয়া লা।”
“নতুন মালগুলা কোনখানে পাঠামু?”
“সব গুলা মাইয়া মানুষ না?”
“জে ভাই।ওই যে বড় প্রজেক্টটা।”
“মালগুলা আগে খুলনা পাঠা।তারপর ওইখান থ্যাইকা বেনাপোল। “
সিফাত গাইগুই করছে।কিছু একটা বলতে গিয়েও আমতা আমতা করছে।
“কিরে কিছু কইবি?”
“না মানে ভাইজান মাইয়া একটা শর্ট পড়ছে।মাল তো আজকের মধ্যেই ডেলিভারি করতে হইব।রাইত হইছে।এখন এমন সময় মাইয়া কই থাইকা জোগার হইবো?”
“জানোস সিফাত আমি না ভুল মাফ করি না।দ্বিতীয়বার কাউরে সুযোগ অব্দিও দেই না।তুই তো জানোস?”
সিফাত ফাঁকা একটা ঢোক গিলল।কাঁপছে সে।এত সাহস কই হারিয়ে গেলো?সোহান উঠে দাঁড়ায়। পাঞ্জাবির কলার ঠিক করে চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“আয় আমার লগে তুই। তোর লগে কাম আছে।”
–
অন্দরমহলের মেঝেতে পড়ে নিরুপমা কাঁদছে। ওরনা বুক থেকে পড়ে গেছে।গায়ে কালো রঙয়ের একটা কামিজ।গলা ফাটিয়ে কাঁদছে সে।এমন কান্নার স্বর শুনে আশপাশের বাড়ি থেকেও মানুষ চলে আসার কথা ছিল।তবে তাদের কথা বাদ, বাড়ির মধ্যে এতগুলো মানুষ থাকতেও কেউ এলো না।নিরুর কান্না হয়তো তাদের কাছে বিরক্তিকর বিষয় মনে হচ্ছে।চিত্রা শাড়ি ঠিক করে রুম থেকে ছুটে আসে।ফারাজ তার পেছন অনুসরণ করে নিচে নামে।নিরুর সঙ্গে এখন অব্দি চিত্রার কোনো কথা হয় নি।তবে সে শুনেছে নিরু ফারাজের চাচাতো বোন।জোহানের ছোট বোন।তবুও চিত্রা দৌড়ে তার কাছে যায়।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে।
“কি হয়েছে দেখি।”
নিরু জবাব দেয় না।হঠাৎ তার চোখ যায় নিরুর কোলে পড়ে থাকা বিড়ালটির দিকে।বিড়ালটি মারা গেছে।কাঠ হয়ে গেছে একেবারে।চিত্রাকে দেখে নিরু আরো ক্ষেপে যায়।গর্জে উঠে বলে,
“ধরবি না আমাকে।তুই এই বাড়িতে আসার পর সব কেমন যেন হয়ে গেছে।আমার মিনিকে তুই মেরেছিস তাই না?আমার মিনিকে আমি ছোট থেকে পেলে বড় করছি।আমার সব ছিল ও।মে*রে ফেলেছিস।তুই মেরেছিস।আমার রুহুটা তো আগেই বের করে নিয়েছিলি,ও তো বোবা প্রানী ছিল,কি ক্ষতি করছে ও তোর?কেন মারলি?বল?”
নিরু চিত্রাকে ধাক্কা দেওয়ার আগেই ফারাজ তার হাত ধরে ফেলে।তীক্ষ্ণ চোখে বলে,
“বি কেয়ারফুল।সি ইজ মাই ওয়াইফ।ওর গায়ে একটা টোকা লাগলে বিড়ালটার সঙ্গে তোকেও কবর দিব।”
নিরুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।এটা কি সেই ফারাজ এলাহী যাকে সে চিনে?যাকে সে ভালোবাসে?এত পরিবর্তন? তাও হুট করে আগত একটা মেয়ের জন্য?যার পরিচয়ের ঠিক ঠিকানা নেই?
চিত্রা বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে?সকালেও নিরুর কোলে এই বিড়ালটাকে দেখেছিল সে।কি সুন্দর বাদামি রঙা একটা বিড়াল।নাম মিনি।তবে এখন মৃত।শখের জিনিস হারানোর কষ্ট চিত্রা জানে।তারও একটা বিড়াল ছিল।বিড়ালটা যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিন চিত্রার কি যে কান্না! কিন্তু নিরুর এমন আচরণ, তার প্রতি হিংসাত্মক আচরণের কারন চিত্রার মাথায় ঢুকছে না।আর ফারাজকে দেখো?তার চোখে কিছু তো একটা ছিল।না হলে এভাবে কেউ বলে?চিত্রা নিজেকে সামলে বলল,
“আপনি এভাবে বলবেন না।বিড়ালটা মরলো কি করে?”
“চলো রুমে চলো।ওর বিড়াল নিয়ে ও জাহান্নামে যাক।”
“কিন্তু… “
ফারাজ চিত্রার দিকে তাকায়।সেই চাউনিতে কোনো রাগ কিংবা ক্রোধ ছিল না।তবে কোমলতা ছিল অশেষ।ফারাজ চিত্রার হাত ধরে চিত্রাকে উঠায়।নিরু তার দিকেই তাকিয়ে আছে।চিত্রাকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই নিরু জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।চিত্রা ফারাজের থেকে হাত ছাড়িয়ে আবারো নিরু বলে চিৎকার করে উঠল।তবে ফারাজের কেন জানি অরুর দিকে নজর ছিল না।তার নজর ছিল কেবলই চিত্রার দিকে।
“আরে ও তো বেহুশ হয়ে গেছে।ফারাজ আপনি ওকে একটু কোলে তুলে রুমে নিয়ে চলুন না?”
“আমাকে কি চরিত্রহীন মনে হয় নাকি?আমি কেন অন্যের ভবিষ্যৎ বউকে কোলে নিবো?তুমি অজ্ঞান হও,তোমাকে নিচ্ছি।”
“ফারাজ মেজাজ খারাপ করাবেন না।”
” মুড়ি খাও।”
চিত্রার মাথা ব্যাথা করছে।দোতলার দিকে একবার সে তাকায়। একটা মানুষও রুম থেকে বের হচ্ছে না।চিত্রা গলা ফাটিয়ে নিলুফার মাকে একবার ডাক দেয়। মহিলা রান্নাঘরে নেই।কি হচ্ছে এসব?সবাই একসঙ্গে কোনো মিছিল ফিছিলে গিয়েছে নাকি?চিত্রা করুণ দৃষ্টিতে ফারাজের দিকে তাকায়।ফারাজ চোখ ফিরিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে শিস বাজায়।চিত্রার রাগ হয়।বাধ্য হয়ে সে একাই যায় নিরুকে তুলতে।তবে তার আগেই আরেকটা কন্ঠ এসে কানে বাজে,
“নিরু!!!”
জোহান এসেছে। বাহিরে কোথাও একটা গিয়েছিল সে।বাড়িতে মাত্রই এলো।পড়ে থাকা নিরুকে দেখে দৌড়ে আসল সে।জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে চিত্রা ওর?”
চিত্রা জবাব দেওয়ার আগেই পাল্টা জবাব আসে,
“ভাবী হয়,ভাবী বলেই ডাকবি।ফারদার চিত্রা নামটা মুখে আনলে জিভটা ছিঁড়ে তোকেই রান্না করে খাওয়াবো।”
জোহান সেই বিষয়ে জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভাই নিরু এভাবে পড়ে আছে তুমি কিছু করো নি কেন?”
“তুই এসে তোর বোনকে উদ্ধার করবি যে তাই।”
ফারাজ চিত্রার হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সঙ্গে যাওয়ার জন্য টান দিতেই সে হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে উঠল।ফারাজ ভ্রু কুঁচকে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“স্থির থাকতে পারো না?এত নড়াচড়া করলে তো ভবিষ্যতে ঠিক ভাবে মানবসেবাও করতে পারবো না মনে হচ্ছে।”
ফারাজ চিত্রাকে পাঁজা কোলে তুলে হাঁটা শুরু করে।যাওয়ার আগে জোহানকে উদ্দেশ্য কে বলে,
“অভিনেত্রীকে নিয়ে রুমে যা।কালকে একটা বিড়ালের বাচ্চা এনে দিস।”
চিত্রা চুপ হয়ে রয়। শুধু তাকিয়ে থাকে ফারাজের দিকে। ফারাজ তাকে দেখে মুচকি হেসে হিসহিসিয়ে বলে উঠে,
“আজকে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজটা বোধহয় করতেই হবে। ডু ইউ নো, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ ইজ গুড ফর হেলথ..আগুন সুন্দরী?”
–
রুমের ছিটকিনি লাগিয়ে ফারাজ চিত্রার দিকে এগিয়ে আসে।চিত্রা হাঁটুর ভাঁজে মুখ গুজে বসে আছে।কথা বলছে না,তেজী রুপে ফারাজের সঙ্গে তর্কও করছে না।ফারাজ এসে তার পাশে বসল।বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি চিত্রা।অনেক বেশি ভালোবাসি। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের কি করে হতে দিতাম বলো?তাই জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।জানি আমি তোমার চোখে খারাপ।জঘন্য একটা মানুষ। তোমাকে তোমার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছি।হ্যাঁ সব মেনে নিচ্ছি আমি।তবে আমি তোমার সোহাগের মত বেইমান নই।আমার ভালোবাসায় ছলনা নেই।”
চিত্রা মুখ তুলে তাকায়।
“কি বলতে চাইছেন আপনি?আপনাকে তো আমি ওই রাতের আগে দেখিও নি।তাহলে কিসের ভালোবাসা?আর সোহাগকে বেইমান বলার রাইট কে দিয়েছে আপনাকে?আর আপনি না বিদেশে ছিলেন?বিদেশে থাকা একটা ছেলে বাংলাদেশের একটা মেয়েকে ভালোবাসে,যেই মেয়ে তাকে চিনে অব্দি না।তাও যেই মেয়ের কোনো মূল্য নেই,যে মেয়ে মামীর হাতের মার খেতে খেতে শরীর কালো বানিয়ে ফেলেছে তাকে ফারাজ এলাহী ভালোবাসে?”
‘জানতে যাও?তাহলে শুনো আজ থেকে আরো তিন বছর আগে তোমাকে দেখেছিলাম আমি।জরুরি একটা কাজে দেশে ফিরতে হয় আমাকে।কাজটা বাজিতপুরেই ছিল।সেদিন বাজিতপুরেই একটা আগুন সুন্দরী আমার নজর কাড়ে।বিদেশের সাদা চামড়াও যেই ফারাজের দৃষ্টি দখল করতে পারে নি।তার চিত্ত চেতনা দখল করে বসে ছিল ওই যে মেরুন কামিজ পড়া সেই চিত্রাঙ্গনা নামক মেয়েটি।তবে কাজ শেষে আমাকে তাড়াহুড়োয় আবারো ডেনমার্ক চলে যেতে হয়।তবে মন থেকে কিছুতেই তো তোমাকে মুছতে পারছিলাম না।বার বার চোখের সামনে সেই নারীর ছবি।বাড়ির সামনের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে মেয়েটা।সেদিন থেকেই তুমি আমার নজরে ছিলে।মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম বিয়ে করলে তোমাকেই করব। আমার তোমাকেই চাই।শুরু হয় তোমার ওপর নজর রাখা।লোক লাগিয়েছিলাম নজর রাখার জন্য। তবে যখন জানতে পারি এক বছরের মাথায় সোহাগের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক শুরু তখন যেই কষ্টটা আমি পেয়েছিলাম তা তোমার কষ্টের কাছে নিতান্ত তুচ্ছ।”
চিত্রা এবারো অবাক হলো না।কারন সে আগেই জানত ফারাজ এলাহী সেদিন রাতে এমনিতেই তো আর বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় নি।
“সোহাগকে বেইমান বলার কারনটা?”
“বলতে খারাপ লাগছে,তুমি যেই সোহাগকে এত বিশ্বাস করতে,ভালোবাসতে সেই সোহাগই তলে তলে মিজান সাহেবের কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল।মিজানের কাছে তোমার খবরটা সেই পৌঁছে দেয়।আরেকটা বিষয় সোহাগ তোমাকে কখনো ভালোবাসে নি।কেবলই ফেলনা পুতুল ছিলে তুমি তার কাছে।সোহাগ অন্য কাউকে ভালোবাসে। মেয়ের পরিবার অনেক বড়লোক। শুত্রুবার ওদের বিয়ে হবে।”
ফারাজ প্যান্টের পকেট থেকে একটা নিমন্ত্রণ পত্র বের করে চিত্রার হাতে দেয়।
“সোহাগের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র।দ্রুতই আমরা তোমার মামার বাড়ি যাবো।সোহাগকে তো আমার একটা বড়সড় ধন্যবাদ দেওয়া বাকি।সে বাটপারি না করলে আমি তোমাকে কি করে পেতাম?আর মজার বিষয় হচ্ছে মিজান সাহেবকে যখন আমার লোকেরা সোহাগের সঙ্গে দেখে তখন থেকেই সন্দেহ আমার বেড়ে যায়।কারন লোকটা কে এবং কি করে তা আমার ভালো মতোই জানা ছিল।তাই তার উদ্দেশ্য বুঝতে এলাহীর সময় লাগে নি।”
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কি করে জানলেন আমার বিয়ে মাজরাতেই হবে?কারন এই বিষয় তো আমি নিজেই জানতাম না।”
“কারন মিজান সাহেবের বিয়ের সাক্ষী হিসাবে যেই লোক ছিল সেও আমার লোক।তোমার বিষয়ে ওদের পরিকল্পনা জানা মাত্রই আমি ইমারজেন্সি ফ্লাইটে দেশে ফিরি।এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তোমার কাছে যাই।এখনো প্রশ্ন বাকি আছে?থাকলে করতে পারো।তবে মনে রাখবে বিগত তিন বছরে যারা ফারাজ এলাহীর কলিজাটার দিকে নজর দিয়েছে, তাকে কষ্ট দিয়েছে তাকে ফারাজ এলাহী কিছুতেই ক্ষমা করবে না।চরম শাস্তি পাবে একেকজন। “
–
রাত দশটা বাজে। নিলুর ছোট ভাই হাফিজ এখনো বাড়ি ফেরেনি। সাধারণত মাদ্রাসা শেষে মা নিজেই তাকে নিয়ে আসেন। কিন্তু আজ এলাহীর বাড়িতে কাজে ব্যস্ত তিনি। রুমানা তাকে কী একটা কাজ দিয়েছে, ফিরতে দেরি হবে।রান্না শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল নিলু। মা-ও নেই, ভাইয়েরও কোনো খবর নেই। সময় যত গড়াচ্ছে, তার ভেতরের অস্থিরতাও তত বাড়ছে। বাধ্য হয়েই হাতের পুরোনো বাটন ফোনটার টর্চ জ্বালিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পরনে কালো বোরকা।তাদের পাড়ায় দিনে লোকজন থাকলেও রাতে একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। বড় রাস্তা পার হয়ে সরু, অন্ধকার পথটায় পা রাখতেই নিলুর গায়ে কেমন যেন শিহরণ খেলে গেল। মনে হলো, কেউ তাকে অনুসরণ করছে। ঠিক পেছনেই যেন কারো উপস্থিতি।পেছনে তাকানোর সাহস পেল না সে। বরং হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল। কিন্তু যত দ্রুত চলতে লাগল, পেছনের অনুভূতিটাও ততটাই প্রবল হয়ে উঠল। বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে গেল।
হঠাৎই থমকে দাঁড়াল নিলু। এভাবে ভয় পেয়ে দৌড়ালে চলবে না। এটা যদি তার কল্পনা হয়, তাহলে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যদি সত্যি কেউ থাকে?
সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে টর্চের আলো তুলল সামনের দিকে। মুহূর্তেই তার শরীর জমে গেল। আলোয় ফুটে উঠল এক অচেনা ছায়ামূর্তি।গলা শুকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিলু জিজ্ঞেস করল, “কেডা আপনি?”
(আপনাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর ছিল এই পর্বে।আর কথা দিয়েছিলাম বড় পর্ব দিবো।দিয়ে দিলাম।আজকে যদি কমেন্ট না করেন তাহলে খবর আছে।)