#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৩]
রান্না বান্নার কাজে মোটেও পটু নয় রুমু।ডিম ভাজা,নুডুলস করা, চা বানানো এই যা এর বেশি কিছু তার ধারনাতেও নেই।উজ্জ্বলের আজ ভীষণ জ্বর যে ছেলেটা সারাদিন বানরের মতো ছুটাছুটি করে সে আজ বিছানায় লেগে গেছে
যদিও এই জ্বরের ঘোরেও তার আবল তাবল বকবক বেশি বেড়েছে।ছেলেটাকে এই অসময়ে স্যুপ খাওয়ালে বেশি ভালো হতো কিন্তু রুমু তো স্যুপ রান্না করতে পারে না।সব মিলিয়ে আজকের দিনটা ভীষণ চিন্তায় চিন্তায় কাটছে তার।
“উজ্জ্বল শুনছেন?”
“হু।”
” কি খাবেন কিছু রান্না করবো?”
” কিছু রাঁধতে পারিস তুই?আমার চুল টানতে থাক বেশি কথা বলিস না।”
রুমু পুনরায় উজ্জ্বলের মাথায় হাত বুলালো।জ্বরে ছেলেটার গা পুড়ছে এসব দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না তার।কিন্তু কি করবে?একা বাসায় একা হাতে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
কিয়ৎক্ষণ বাদে উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ালো।
” উজ্জ্বল আপনার কিছু লাগবে?”
উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করলো না বরং সারাটা রুমে কাঁথা মুড়িয়ে ঘুরপাক খেতে শুরু করলো।
” আপনি এমন করছেন কেন?”
এবারেও সে কোন জবাব দিল না।কাথা মুড়িয়ে এদিক সেদিক ছুটতে লাগলো।রুমু জানে উজ্জ্বলের এই অভ্যস নতুন নয় ছোট বেলা থেকেই জ্বর হলে পাগলের ন্যায় সারা বাড়ি ছুটতো আর আবোল তাবোল বকবক করতো এসবে তাকে একমাত্র সামলাতে পারতো তার মা।
“আপনার এই অভ্যস এখনো আছে!”
” কথা বলিস না।আমাকে খুঁজতে দে।”
” কি খুঁজছেন?”
” মুরগিগুলো খড়ে ভরতে হবে।”
” কি!মুরগি?কি বলছেন?”
” কাজের কাজ কিছুই করিস না আমার মুরগিগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে।
উজ্জ্বল পুনরায় ছুটতে লাগলো।সে তার মুরগিগুলো হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করছে।এসব দৃশ্য দেখে রুমুর বেহুশ হওয়ার অবস্থা মনে মনে অবশ্য ভয় লাগলো।ছোট বেলায় দাদীর কাছে শুনেছে নতুন বউদের নাকি জ্বীনে ভর করে, আচ্ছা রুমুর জ্বীনটা কি উজ্জ্বলকে ধরেছে?
একা বাসায় এসব ভেবে রুমুর ভয় বাড়লো উজ্জ্বলের কাছে ঘেষার সাহস করলো না সে।
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আমার মুরগি ধরছিস না কেন?”
উজ্জ্বল ধমক লাগাল।মেয়েটা ভয়ে উজ্জ্বলের সাথে ছুটতে লাগল।হঠাৎ মেঘলা আকাশে ঠাসঠাস বাজ পড়তে শুরু করে।রুমু ভয়ে জড়িয়ে ধরলো উজ্জ্বলকে।অথচ উজ্জ্বলের মাঝে কোন ভয় নেই ছেলেটা রুমুকে সরিয়ে বলে,
” কৈ মাছ উঠবে।রুমু চল কৈ মাছ ধরি।”
“উজ্জ্বল এসব কী বলছেন?”
” তুই তো কৈ মাছ পছন্দ করিস।”
” হু।”
” চল তাহলে।”
উজ্জ্বল পুনরায় কাঁথা মুড়িয়ে সারা ঘর ছুটলো।ফ্লোরে হাত দিয়ে কৈ মাছ ধরার চেষ্টা চালাল।
রুমুর এসব আর সহ্য হলো না মেয়েটা ফোন করল উর্মিকে। ভিডিও কলে উজ্জ্বলের এসব কান্ড দেখে উর্মি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” রুমু তুমি ভয় পেও না।জ্বর উঠলে উজ্জ্বলের এসব পাগলামো নতুন কিছু নয়।একমাত্র আম্মাই ওঁকে এই পরিস্থিতিতে সামলাতে পারে।”
” এটা কেমন অভ্যস আপা।সেই ছোট বেলায় দেখেছি এখন দেখি বড় হয়েও একই অভ্যস আছে।”
” আমার আব্বার এই অভ্যসটা উজ্জ্বল পেয়েছে।বাদ দাও ওঁকে ওষুধ খাইয়ে শুয়ে থাকতে বলো।”
রুমু ফোন রাখলো উজ্জ্বলকে হাতে পায়ে ধরিয়ে বিছানায় শোয়ালো।অনেকক্ষণ যাবৎ তার মাথায় রুমু বিলি কেটে দিতে ঘুমিয়ে পড়লো।সময় কেটে গেল প্রায় তিন ঘন্টা।সন্ধ্যা নেমেছে ইউটিউবের সাহায্যে উজ্জ্বলের জন্য গরম গরম স্যুপ তৈরি করেছে রুমু।উজ্জ্বল ঘুম থেকে উঠতে স্যুপ খাইয়ে রেস্ট নিতে বললো।উজ্জ্বলের পাগলামি এখন কমেছে একদম ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ শুয়ে আছে সে।
” রুমু।”
” হুম।”
” টক খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।রান্না ঘরে আচার আছে যা নিয়ে আয়।”
ঠোঁটটা কুচকে তাকিয়ে রইল রুমু।এসব কী বলছে এই ছেলেটা?আচার খাবে!রুমু কথা না বাড়িয়ে আচারের বয়াম আনলো সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার উজ্জ্বল এক সেকেন্ডও দেরি না করে রুমুর হাত থেকে বয়াম নিয়ে আচার খেতে লাগলো।আমের আটির অংশ যে ভাবে চিবিয়ে খাচ্ছে রুমুর জিহ্বে লোল পড়ে যাচ্ছিল।
” রুমু এসব কী হচ্ছে?”
” কোন সব?”
” ভেবেছিলাম জ্বর হবে তোর।মেন্টালি প্রিপারেশ নিয়ে রেখেছিলাম ওমা এখন দেখি উলটা আমার জ্বর হয়ে গেল!”
রুমু মুখে ওড়না গুজে হাসলো।
” আরেকটা লজিক আছে টক খেতে কেন মন চাইছে?টক খাওয়ার কথা তোর আমি কেন খাচ্ছি?”
” নিশ্চয়ই আপনার মধ্যে কোন মহিলা জ্বীন ভর করেছে উজ্জ্বল ভাই।”
” কে ভাই?প্রেক্টিক্যালি আবার বুঝাতে হবে?মানে যখনি তোর প্রেক্টিক্যালি বোঝার ইচ্ছে জাগে তুই আমাকে ভাই ডাকিস যাতে আমি রেগে যাই।বুঝিনা ভাবছিস?বাই দা ওয়ে সেই মহিলা জ্বীনটা কি তুই নয়?”
” একদমি না।”
উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করলো না।থম মেরে বসে রইল।এক বয়াম আচার শেষ করে চলে গেল বারান্দায়।বজ্রের দরুনে আকাশ যেন ভেঙে নিচে নামবে অথচ উজ্জ্বল ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।মাঝারি আকারের বৃষ্টিতে ভিজে গেল সে।জ্বরের মধ্যে এই ঠান্ডা বৃষ্টিতে ভিজে তার কাঁপুনি বাড়লো।এমন সাংঘাতিক কর্মকান্ড দেখে রুমুর ভয় বাড়লো।উজ্জ্বল ভাই এত পাগলাটে কেন?মাথায় যখন যা আসবে তাই করতে হবে!রুমু প্রচন্ড রোমান্টিসিজম মেয়ে, বিয়ের আগে কত কি ভেবে রেখেছিল অথচ যেদিন থেকে উজ্জ্বলের সাথে তার বিয়ে হলো এরপর থেকে কোথায় পালালো রোমান্টিকতা।উজ্জ্বলের সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠে না মনে হয় যেন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।
” রুমু এদিকে আয়।”
” আমার ভয় লাগছে।”
” লাগবে না।”
” বললেই হলো।আমার ভয় লাগছে।আপনার রুমে আসা উচিত ভিজে যাচ্ছেন তো।”
” বললাম তো ভয় লাগবে না। কি করে লাগবে না দেখাচ্ছি এদিকে আয়।”
রুমু ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে গেল উজ্জ্বল তার হাত টেনে বারান্দার গ্রিলে ঠেসে দাঁড় করালো।
” উজ্জ্বল ভয় লাগছে তো।বাজের শব্দে কি আপনার ভয় লাগছেনা?”
” না লাগছে না”
” আমি ভিজে যাচ্ছি।”
” ভেজাতেই তো আনলাম বউ।দেখবি তোর মাঝে এখন বাজ পড়ার ভয় কমে যাবে।”
” কি করে?”
” ওয়েট।”
উজ্জ্বল রুমুর চোখে চোখ রাখলো।ভেজা চোখের পাতায় অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।রুমু মাথা নাড়ালো অথচ উজ্জ্বল কী তার বারণ শুনলো?মোটেও না।তিরতির করে কাঁপতে থাকা ভেজা ঠোঁট দুটো উজ্জ্বলের আয়ত্তে চলে এলো।রুমুর দু’হাত টেনে নিল তার ঘাড়ে।তৃষ্ণার্ত উজ্জ্বল এলোপাতাড়ি চুমুতে খেল।তার অবাধ্য ঠোঁট ঘাড়ে নামতে রুমু চোখ খিঁচে রইল।দুটি দেহ ভিজে একাকার এসবে কারো হুশ জ্ঞান নেই।উজ্জ্বলের ছোঁয়া বেপরোয়া হতে রুমু উজ্জ্বলকে টেনে সরায়,
” কি হচ্ছে কি রুমে চলুন।ঔষুধ খেতে হবে।”
” খাচ্ছি তো ঔষুধ।প্রতিদিন ছয় বেলা করে এই ঔষুধ না খেলে বাঁচবো নারে।”
” উজ্জ্বল…”
” এই ঔষুধ, কথা বলে না চুপ।”
উজ্জ্বল ধমকে উঠল।রুমু চাপা হেসে জড়িয়ে ধরল।
হঠাৎ পাশের বিল্ডিং থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা টচ ধরলো উজ্জ্বলের বারান্দায়।বারান্দার দরজা খুলতে আলোর দেখা পেয়ে দুজনে অবশ্য অনেক আগেই সরে গেছে।বৃদ্ধা চেচিয়ে বলল,
” এই তোমরা বৃষ্টিতে ভিজতাছো কেন?”
” ঔষুধ খাচ্ছি দাদী।”
” মশকারা করো?বৃষ্টিতে ভিজা কিসের ঔষুধ খাও?”
” আরেহ মশকারা না দাদী।এটা স্পেশাল ঔষুধ সৈয়দ বাড়ি থেকে আনা হয়েছে।একপিসি আছে তাও সেটা আমি নিয়ে এসেছি।এক ডোজে মন ভরে না দাদী প্রতি ডোজে অমৃত।”
রুমু দাঁত কিড়মিড়িয়ে চলে গেল।উজ্জ্বল যে কতটা বেয়াদব ছেলে তা তার কথার ধরণেই বোঝা যায়।এই লোকটা কি মুখ সামলাতে পারে না?উজ্জ্বলের কথায় বৃদ্ধা কিছুই বুঝলেন না তিনি চলে গেলেন।উজ্জ্বল রুমে এসে জড়িয়ে ধরল রুমুকে।
” লক্ষ্মী বউ রোমান্সে ডিস্টার্ব হয়েছে বলে রাগ করেছো?আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি?এই তো, আমি আছি তো।”
চলবে…
[আমার মাথায় একটা পোকা ঢুকেছে পোকাটার নাম আরশাদ পোকা।তাকে নিয়ে আবার নতুন করে গল্প লিখবো।পড়বেন কে কে?হাত পা ঠ্যাং তুলুন]