আমাদের বাসায় কোনো ফ্রিজ নাই। গরমের সময় ঠান্ডা পানি খেতে খুব ইচ্ছে করে কিন্তু খেতে পারি না! বড়ো আপার সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পানি লাগে।
কলেজ থেকে ফিরে আমাকে বলবে,” রুনু বাড়িওয়ালার বাসা থেকে এক বোতল ফ্রিজের পানি নিয়ে আয়।”
আমি পানি আনতে আমাদের বাড়িওয়ালা আনোয়ার চাচার বাসায় যাই। আনোয়ার চাচা আমাকে খুব পছন্দ করেন। কেন করেন তা অবশ্য জানি না।
আমি বাসায় গেলেই আনোয়ার চাচা ডাক দেন।” কে রুনু? কেমন আছিস রে মা?”
আমি চাচার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি কখনো ওনার প্রশ্নের জবাব দিই না। উনি প্রশ্নের উত্তর চান বলেও মনে হয় না।
“আয় ভিতরে আয়। কি পানি নিবি?”
আমি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিই না। ফ্রিজ খুলে পানির বোতল বের করি। আমাদের জন্য ফ্রিজে এক বোতল পানি থাকে। আমি যখনই আসি এক বোতল পানি পাই। এটা আনোয়ার চাচা নিজেই রাখেন বলে আমার ধারণা।
এ বছর শীতের সময় আমরা ফ্রিজ কিনবো। শীতকালে ফ্রিজের দাম কম থাকে। তখন মানুষজন ফ্রিজ কিনে না। গত দুই বছর ধরে মা টাকা জমাচ্ছে। কত টাকা হয়েছে তা আমি জানি না। আমার বাবা একটা অফিসে গার্ডের চাকুরি করে। খুব সামান্য বেতন পায়। আমাদের দুই বোনের পড়ার খরচ, বাড়ি ভাড়া দিয়ে হাতে কিছু থাকে না।অবশ্য বাড়াটাও যা দেই তা বাড়ির তুলনায় সামান্য। দশ বছর আগে যা ভাড়া ছিল এখনো তাই আছে। এক টাকাও বাড়েনি। মা কী করে যে টাকা জমায় তা জানি না!
চাইলে কিস্তিতে ফ্রিজ আনা যায়। আমাদের এলাকায় অনেকেই কিস্তিতে টিভি,ফ্রিজ কিনেছে। এখন নাকি খুব সহজেই এ সব নেয়া যায়। আমার বাবা ধার-দেনা পছন্দ করেন না। আমরা কখনো দোকানে বাকি খাই না।
“রুনু এই রুনু”
বড়ো আপা কলেজ থেকে ফিরেছে।
“জি আপা।”
“যা তো এক বোতল ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়। আজ যা গরম পড়েছে! “
আপার ফর্সা মুখ ঘামে ভিজে গেছে। পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, হালকা পাতলা দেহের গড়ন আপাকে কী যে সুন্দর লাগে!
আমি আনোয়ার চাচার বাসায় যাই। উনি দোতলায় থাকেন। আমাদের বাড়িটা দুইতলা। অনেক আগের পুরানো বিল্ডিং। সম্ভবত আনোয়ার চাচার দাদা এ বাড়িটা বানিয়েছেন। আনোয়ার চাচা একাই থাকেন। একজন কাজের মহিলা আছে। চাচার একজন মেয়ে আছে শুনেছি কখনো দেখিনি। সম্ভবত আমেরিকায় থাকে।
“কে রুনু?” আনোয়ার চাচা বললেন।
আমি কিছু বললাম না। ঘরের ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে একটু হাসি দিয়ে বললেন, “এসে ভালো করেছিস। এক কাজ কর তো মা। চট করে চা বানা। সকালে চা খাওয়া হয়নি। রহিমার মা আজ আসেনি।”
“আপা কে পানিটা দিয়ে আসি।”
“আচ্ছা যা। মিলিকেও আসতে বলিস একসাথে চা খাওয়া যাবে।”
পানির বোতালটা নিয়ে ফিরে এলাম। আপা কলেজ ড্রেস খুলে একটা নীল শাড়ি পরেছে। আপা কে পরীর মতো লাগছে! দিনে দিনে আপা সুন্দর হয়ে উঠছে আর বিপদ বাড়ছে। বাসা থেকে বের হলেই ছেলেরা হা করে চেয়ে থাকে। বড্ড বিরক্ত লাগে আমার!
ইদানিং আবার লিটন নামে এক ছেলে আপার পিছনে লেগেছে। একটা মোটর সাইকেল নিয়ে সারাদিন ঘুরে। আমাদের বাড়ির সামনের চায়ের দোকানটায় বসে থাকে। আমি খেয়াল করেছি এ লিটন ছেলে আপার পিছু নেয়।
কয়েকদিন আগে আমি আর আপা নিউমার্কেট গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাদের থেকে একটু দূরে লিটন ছেলে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অবশ্য আপা কে কিছু বলিনি।
আমি আপাকে বললাম, ” আপা চল আনোয়ার চাচা চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন।”
“রুনু তুই যা আমার এখন যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি এখন ঘুমাব।”
আপার মতিগতি আমি খুব একটা বুঝি না। কলেজে থেকে ফিরে গোসল না করেই ঘুমাবে! আপা ঘুমালে ওকে কেউ ঘাটে না। দুপুরে হয়ত খাবেও না। বিকাল পর্যন্ত ঘুমাবে।
মা কী করছে কে জানে? মনে হয় রান্না ঘরে আছে। এখনো আমাকে ডাক টাকে নাই। একবার রান্না ঘরে যাওয়া যায়। না থাক যেতে ইচ্ছে করছে না। আনোয়ার চাচার বাসায় চা বানাতে যাব কি-না বলতে পারছি না। আচ্ছা যাই। আমারাও চা খেতে ইচ্ছে করছে।
আনোয়ার চাচার রান্নাঘরটা বেশ বড়ো। সবকিছু সুন্দর করে গোছানো। উনি ময়লা একাবারেই পছন্দ করেন না।
আমি দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলাম।
“চাচা এই নিন আপনার চা।”
চাচা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললেন, “বিস্কুট খাবি? দ্যাখ আলমারিতে বিস্কুট আছে।”
“না, চাচা এখন বিস্কুট খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“আচ্ছা এখানে এসে বস।”
আমি চাচার পাশের চেয়ারটাতে বসলাম।
“রহিমার মা তো আসেনি, আপনি দুপুরে আমাদের সাথে খাবেন।”
“ফ্রিজে রান্না করে রেখে গেছে মনে হয়।”
“বাসি ভাত খেতে হবে না। আমি ভাত দিয়ে যাব।”
আমি এক কাপ চা নিয়ে নিচে চলে এলাম। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি মা তরকারি কাটছে। “মা চা খাবা? আমি তোমার জন্য চা নিয়ে এসেছি। “
মা চায়ের কাপটা নিয়ে বলল, “মিলি কী করে করে?”
“ঘুমাচ্ছে। “
“অসময় ঘুমাচ্ছে!”
“মা তুমি চাল বাড়িয়ে দিও। আনোয়ার চাচা কে ভাত দিবো। আজ রহিমার মা আসেনি।”
ফ্রিজ পর্ব ১
® নাবিল মাহমুদ
চলবে—
সবগুলো পর্বের লিংক একসাথে