#অবন্তিকা_তৃপ্তি
পর্ব ৫
‘শুভ্র, তুলি তৈরি।’
ইয়াসমিনের কথায় জোবায়েরকে কোলে রেখে শুভ্র একটু পাশ ফিরে সামনে তাকালো। শাড়ি পড়া তুলি লজ্জায় অবনত হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তুলির গায়ে শাড়িটা খুব সুন্দর করে জড়ানো। শুভ্র প্রথম দফায় থমকে গেলো। শাড়ি পরিহিত তুলি শুভ্রর কাছে অন্যরকম লাগে। সব মেয়েদেরকেই শাড়ি পরলে সুন্দর লাগে। তাই হয়তো তুলিকেও শুভ্রর কাছে সুন্দর মনে হচ্ছে। শুভ্র ভাবলো। পরপরই মাথা ঝাড়া দিয়ে জোবায়েরকে কোলে তুলে উঠে দাঁড়ালো। শুভ্র নার্ভাস। শাড়ি পরা তুলি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাবলেই লজ্জা লাগছে শুভ্রর। তুলির দিকে সেভাবে তাকাতেই পারছে না শুভ্র। বারবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। শুভ্র সামলে বললো,
‘আমাদের এখন যাওয়া উচিত। আন্টি আপনিও চলেন আমাদের সাথে নাহয়। ভালো লাগবে আম্মুর।’
তুলি সঙ্গেসঙ্গে মায়ের হাত চেপে ধরলো। ইশারায় কাকুতি মিনতি করে ইয়াসমিনকে সঙ্গে যেতে বললো তাদের। ইয়াসমিন অগোচরে মেয়ের হাতে চেপে ধরে ভরসা দিলেন। তারপর শুভ্রকে বললেন,
‘না বাবা তোমরা যাও। আমি পরে একদিন যাবো তোমার মায়ের সঙ্গে।’
শুভ্র আর জোড়াজোরি করলো না। বুঝতে পারল, এখন ইয়াসমিনকে হাজারবার বললেও তিনি তাদের সঙ্গে যাবেন না। মেয়ে আর মেয়ের হবু জামাইকে প্রাইভেসি দেওয়া দরকার। শুভ্র হাসলো মনেমনে। ওদের আবার প্রাইভেসি। একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে ভালো করে কথাটাই বলতে পারে না। টুকটাক যা কথা হয়, সেসবের জন্যে প্রাইভেসির দরকার নেই কোনো। শুভ্র তুলিকে বললো,
‘চলো তাহলে। আন্টি যাই!’
তুলি সামনে এগুলো। শুভ্র জোবায়েরের গালে চুমু খেয়ে কোল থেকে নামাতে চাইলে জোবায়ের নামে না। শক্ত করে শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে হঠাৎ-ই বায়না করে বসে,
‘দুলাভাই আমিও যাবো তোমার আর আপুর সঙ্গে। নিয়ে যাও না আমায়।’
আবারও শুভ্রর সামনে ‘দুলাভাই’ কথাটা শুনে থমকে গেলো তুলি। শাড়ির কুচি বেজে আবারও পড়ে যেতে নিলে শুভ্র দ্রুত অপরহাতে ধরে ফেলল ওকে। তুলি সঙ্গেসঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। তারপর রাগ নিয়ে তাকাল জোবায়েরের দিকে। বারবার এই ছেলে শুভ্রকে এভাবে ডাকছে কেন? একবার হাতের কাছে পেলে তুলি ধরে দিবে একটা। বোনের গরম গরম চোখ দেখে জোবায়ের ভয় পেয়ে লেপ্টে গেলো শুভ্রর গায়ের সঙ্গে। সে বুঝতে পারছে না, হুটহাট তার আপু এত রেগে যাচ্ছে কেনো? সে কী বারবার ভুল করছে কিছু? শুভ্র ভাই-বোনের নিরব যুদ্ধ দেখে হালকা হাসলো। তারপর তুলির উদ্দেশ্যে হালকা স্বরে বলল,
‘থাক, বাচ্চা মানুষ। এতকিছু বুঝে ডাকেনি। ওর উপর চোখ রাঙিও না।’
তুলি শুভ্রর কথায় লজ্জা পেয়ে গেলো। শুভ্রর সামনে এমন একটা কারণে রেগে যাওয়া তুলির ঠিক হয়নি। তুলি নিজেকে সামলালো। শুভ্র জোবায়েরের কথা শুনে ইয়াসমিনকে বলল,
‘ওকেও নিয়ে যাই আন্টি। ঘুরে আসুক, ভালো লাগবে।’
ইয়াসমিন সঙ্গেসঙ্গে মানা করলেন। বললেন,
‘না না। ওর হোমওয়ার্ক আছে। তোমরা যাও শুভ্র।’
জোবায়ের মুখ কালো করে ফেললো। শুভ্রর দিকে করুণ চোখে তাকালো। শুভ্র বললো,
‘সকালে হোমওয়ার্ক করে ফেলবে। তাইনা জোবায়ের?’
জোবায়ের দ্রুত দুদিকে মাথা নাড়াল। ইয়াসমিন আর কী বলবেন। তুলির দিকে তাকালেন। তুলিও তাকালো তখন। হয়তো তুলিও চাইছে জোবায়ের যাক ওদের সঙ্গে। মেয়েটা এখনি এত ঘামছে। শুভ্রর সঙ্গে আর কয়েকটা মিনিট থাকলে এখানেই ঢলে পড়বে। ইয়াসমিন তাই সম্মতি দিলেন।
বেরিয়ে যাবার সময় ইয়াসমিন তুলির কানেকানে বললেন,
‘তোর পার্সে কিছু টাকা আছে। এটা দিয়ে শুভ্রকে গিফট কিনে দিবি কিছু। ছেলেরা যা পছন্দ করে তেমন কিছু কিনে দিস।’
___________________________
নিচে নামলে, শুভ্র চলে যায় পার্কিং থেকে গাড়ি বের করতে। জোবায়ের আর তুলি একা গ্যারেজে দাঁড়িয়ে আছে। একা পেয়ে তুলি এবার জোবায়েরের কান টেনে ধরলো। জোবায়ের রীতিমত ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। বারবার বললো,
‘কান ছাড়ো আপু, ব্যথা লাগতেসে তো। আপু-‘
তুলি কান ছাড়লো। তারপর রাগ দেখিয়ে বললো,
‘উনাকে বারবার দুলাভাই ডাকছিস কেন? মা ই র দিবো তোরে? আরেকবার যেন আমার সামনে এই নামে না ডাকিস।’
জোবায়ের কান চেপে ধরে উপরে মাথা তুলে তুলির দিকে তাকালো। বললো,
‘দুলাভাইকে তাহলে কী ডাকব আপু?’
তুলি সঙ্গেসঙ্গে জবাব দিলো,
‘ভাইয়া বলে ডাকবি।’
জোবায়ের মাথা নাড়লো। শুভ্র গাড়ি নিয়ে আসলে তুলি শেষবারের মতো জোবায়েরকে চোখ দিয়ে শাসালো। যেন আরেকবার জোবায়ের দুলাভাই বলে ডাকলে তার গ র্দা ন তুলি এসপার ওসপার করে ফেলবে। জোবায়ের পেছনের সিটে বসল। তাকে টেনেও সামনে বসানো যায়নি। তাই না চাইতেও তুলি শুভ্রর পাশের সিটে বসলো।
গাড়ি চলল সামনে। জোবায়ের এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে শুভ্রকে। শুভ্র উত্তর দিচ্ছে। তুলি এখানে নীরব। জ্যাম লাগার পর, জোবায়ের বিরক্ত হয়ে গেলো বসে থাকতে থাকতে। শুভ্রকে বললো,
‘দু- না। ভাইয়া তোমার মোবাইলে গেইম আছে? দিবা আমাকে মোবাইলটা?ভালো লাগতেসে না আমার।’
শুভ্র জোবায়েরের মুখ দুলাভাই না শুনে ভাইয়া ডাক শুনে তুলির দিকে তাকালো। তুলিও তাকাল তখন। শুভ্র দেখছে তুলিকে,সেটা দেখে তুলি মুখ লুকিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে ফেললো।তুলি জানে শুভ্রর মনে এখন কী চলছে। শুভ্র মাথা নিচু করে হালকা হাসলো। তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে লক খুলে জোবায়েরকে দিয়ে দিলো। জোবায়ের গেইম খেলছে। জ্যাম ততক্ষণে ছেড়েও দিয়েছে। শুভ্র একফাঁকে তুলিকে বললো,
‘ওকে ভাইয়া ডাকার জন্যে ফোর্স করলে কেন? বাচ্চা মানুষ। ভালোবেসে ডেকেছিল আমাকে।’
তুলি শাড়ির আঁচল খুটতে খুটতে বললো,
‘বিয়ের আগে এত দুলাভাই ডাকা ঠিক না।’
শুভ্র সঙ্গেসঙ্গে জবাব দেয়,
‘বিয়ে তো হচ্ছেই। আগে থেকে তাহলে ডাকলে সমস্যা কি?’
নিজের প্রশ্নে নিজেই অবাক হয়ে গেলো শুভ্র। সে কবে থেকে এমন প্রশ্ন করা শুরু করলো? তুলিও অবাক চোখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি তাকিয়ে আছে দেখে শুভ্র আর তুলির দিকে তাকাল না। অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলো।
_____________________
মার্কেটে শুভ্রর পুরোটাসময় জোবায়েরকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হলো।মেয়েদের সঙ্গে মার্কেটে আসার ফলাফল জোবায়ের জানে না। কিন্তু শুভ্র জানে। মায়ের সঙ্গে মমার্কেটে এলেই শুভ্রর পা ব্যথা হয় হেঁটে, আর হাত ব্যথা হয় শপিং ব্যাগের বোঝা বয়ে। তবে আজ তেমন হাঁটতে হচ্ছে না। তুলিই মাকে নিয়ে শপিং করছে। তুলিই ব্যাগ বইছে আজ। শুভ্রর কোলে জোবায়ের থাকায় সে এ কাজ করতে পারেনি। শুভ্র একসময় তুলিদের কাছে এগিয়ে এলো। আফরোজাকে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমাদের আর কতক্ষণ লাগবে আম্মু?’
আফরোজা একটা হ্যাঙ্গারে শাড়ি দেখতে দেখতে বললেন,
‘লাগবে আরো কিছুসময়। তুই কী বাসায় চলে যাবি?’
শুভ্র বলল,
‘না।’
তারপর তুলিকে শুভ্র বললো,
‘শোনো, আমি খাবারের দিকটায় আছি। তোমাদের শেষ হলে কল করো।’
তুলি মাথা নাড়লো। শুভ্র জোবায়েরকে কোলে নিয়ে খাবারের দিকে চলে গেলো। আসলে জোবায়ের অনেকক্ষণ ধরে ওদের সঙ্গে ঘুরছে। ক্ষুধা লেগেছে হয়তো তার। তবে বলছে না। তুলি বকবে সেজন্য।
শুভ্র জোবায়েরকে খাবার দিয়ে বসিয়ে রাখলো। নিজে ফোনে দরকারি কাজও সারল এসময়ে। তারপর তুলিরা এলে বেরিয়ে গেলো শপিং মল থেকে।
গাড়িতে উঠে শুভ্র দু প্যাকেট খাবার তুলি আর মায়ের দিকে এগিয়ে দিল। বললো,
‘এখানে চিকেন আর ফ্রেন্স ফ্রাইজ আছে। তুমি আর আম্মু খেয়ে নাও।’
তুলি প্যাকেট হাতে নিলো। প্যাকেট নেবার সময় দুজনের আঙুলে আঙুলে ছোয়া লাগলো। তুলি সঙ্গেসঙ্গে ছিটকে প্যাকেট নিয়ে সরে গেলো। শুভ্রও অপ্রস্তুত হয়ে সোজা হয়ে বসলো। দুজনেই তারপর চুপচাপ। শুভ্র লুকিং গ্লাসে একবার তুলির দিকে তাকালো। খানিক চেয়ে থাকার পর, তুলিও তাকাল লুকিং গ্লাসে। দুজনের চোখে চোখ পরে গেলো। লজ্জায় দুজনেই চোখ সরিয়ে নিলো।
শুভ্র তুলিকে বাসায় পৌঁছে দিলো। বাসার নিচে নেমে শুভ্র দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো তুলিকে। তুলি ভেতরে যাবার আগে কিছুসময় থামলো। হাতে একটা ছোট্ট ব্যাগ। সেটা শুভ্রর জন্যে কিনেছে তুলি। একটা ঘড়ি।
শুভ্রকে কীভাবে দিবে সেটাই ভাবছে। শুভ্র তুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
‘বাসায় যাবে না?’
তুলি থামল এবার। অন্যদিকে চেয়ে ছোট্ট করে নিশ্বাস ছেড়ে আবার শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র প্রশ্নবোধক চোখে চেয়ে আছে তুলির দিকে। তুলি নিজেকে সামলালো। হাতের ব্যাগটা শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘এটা নিন। আপনার জন্যে।’
শুভ্র চোখ বড়বড় করে প্যাকেটের দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর হালকা হেসে প্যাকেট হাতে নিলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘তুমি কিনেছ?’
তুলি মাথা নাড়ালো,
‘হু।’
শুভ্র এবার হাসল। প্যাকেটটা আঙ্গুলের ভাজে শক্ত করে চেপে ধরলো।মুখে বললো,
‘থ্যাংক ইউ ফর দিস।’
তুলি মৃদু হাসল উত্তর স্বরূপ। তারপর সালাম করে ভেতরে চলে গেলো। তুলি যেতেই শুভ্র আনমনে প্যাকেটের দিকে চেয়ে থাকলো। তারপর কী মনে করে প্যাকেট খুললো। একটা ঘড়ি আছে প্যাকেটে। বেশ সুন্দর ঘড়ি। শুভ্রর পছন্দ হয়েছে। শুভ্র হেসে ঘড়ি আবার প্যাকেটবন্দি করে গাড়িতে উঠে বসলো।তুলি আড়ালে গেইটের গ্রিলের ফাঁকে চেয়ে রইল শুভ্রর যাওয়ার দিকে। শুভ্র যেতেই,তুলি নিজের ডান হাতটা চোখের সামনে ধরলো। আঙুলে যে জায়গায় শুভ্রর ছোয়া লেগেছে, সেই জায়গা আনমনে দেখে গেলো অনেকক্ষণ। বুকটা এখনও কাপছে। মনে হচ্ছে, শুভ্রর আঙুল এখনো তুলির আঙুল ছুয়ে আছে।হুশ ফেরে তুলির খানিক পর। পরপর অস্বস্তিতে জমে গিয়ে হাত সরিয়ে দ্রুত ভেতরে চলে যায় ও।
#চলবে
শুধু নাইস নেক্সট কমেন্ট আসলে গল্প দিতে ভালো লাগে না। আলসেমি লাগে।তাই ভালো ভালো বড় বড় কমেন্টস করবেন, ঠিকাছে? ভালো থাকবেন