#সপ্তদশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
মেঘা প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো পানির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো, এতোক্ষণ পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে তার ফর্সা চেহারাটা একদম রক্ত বর্ণ যেনো ধারণ করেছে। ঘরে এসে সে চোখ বুঝে শুয়ে ছিলো চোখ দুটো একদম ফুলে গেছে। অনেক কান্না করার ফলে চেহারাটা একদম মলিন দেখাচ্ছে। আজকে সাহিলের মিটিং ছিলো ফরেইনার ক্লাইন্টদের সাথে যার কারণে সে খুব তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এসেছে।
সে এসে দেখে দুপুর হয়ে গেছে কিন্তু মেঘা বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। কপালের উপর হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে। মেঘার কিছুই ভালো লাগছে না সে সকাল থেকে কিছুই খায় নি। জিনিসটা সাহিল জানে না, সাহিলের মা ও এসে মেঘাকে ডেকে গেছে খাওয়ার জন্য মেঘা খেতে আসে নি।
সাহিল মেঘাকে দেখে কিছু না বলেই বাথরুমে চলে যায়, ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মেঘা যেরকম ভাবে শুয়ে ছিলো এখনো তেমনিভাবে শুয়ে আছে।
সাহিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলে,
-মেঘা….
-…….
– মেঘা? শুনছো?
– হুম
– লাঞ্চ করেছো?
– না
– চলো খেতে
– তুমি খাও
– শরীর খারাপ?
– হুম
সাহিল কিছু না বলেই খেতে চলে যায়। মেঘার শরীর খারাপ থাকলে মাঝে মাঝেই ও শুয়ে থাকে অথবা ওর মন খারাপ থাকলেও তাই করে। সাহিল ভাবলো মনে হয়ে শরীরটাই খারাপ
-মা, হিমা খেয়েছে?
– হ্যাঁ আয়া খাইয়ে দিসে ও টিচারের কাছে পড়তেসে
– খেয়ে নে বাবা
– তুমি বসো মা।
– হ্যাঁ বাবা
সাহিল খাচ্ছে ওর মা পাশেই বসে আছে,
– বাবা বউয়ের সাথে কোনো সমস্যা হয়েছে?
ভ্রু কুচকে সাহিল জিজ্ঞেস করে,
– কেনো মা? কি হয়েছে বলো তো?
– বউ সকাল থেকে কিছুই খায় নি, ওর মনটা খারাপ মনে হচ্ছে।
– আমার সাথে কিছুই হয়নি ওর। মনে হয় কোনো কিছু পছন্দ হয়েছে বাট স্টক আউট হয়ে গেছে মার্কেটে তাই মন খারাপ
কথাটা বলে হেসে দিলো সাহিল। খাওয়া শেষে উঠে ঘরে গেলো ও মেঘার জন্য খাবার ও নিয়ে এলো।
টেবিলের মধ্যে রেখে বললো,
– খেয়ে নাও। আর কি লাগবে বলো?
আনায় দিবো নে।
কথাটা বলে ও আবার ল্যাপটপ নিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো।
মেঘা আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো একবার সাহিলের দিকে, এমন অসহ্যকর ব্যাবহার কেনো ওর?
সাহিলের সবসময় এমন ব্যাবহার ভালো লাগে না মেঘার, সাহিল এমন কেনো? ইরাদ তো এমন ছিলো না। ও তো মেঘার হাত ধরে পাশে এনে বসাতো এরপর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে জিজ্ঞেস করতো,
– বলেন তো আমার মহারানীর মনটা কেনো খারাপ? কার এতো সাহস আমার মহারানীর মনে কষ্ট দিয়েছে?
আর সাহিল? ও তো শুরু থেকেই এমন ভাবলেসহীন।
মেঘার আরো কান্না পাচ্ছে, খুব রাগ হচ্ছে। আচ্ছা এই রাগটা কার প্রতি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে মেঘার জানা নেই তবে সে জানে কোনো একটা অজানা কষ্ট হচ্ছে মনের ভিতরে। যা ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। মেঘা উঠে চলে যায় ঘর থেকে সাহিল একবার ফিরেও তাকায় নি, মেঘা দরজার সামনে যাওয়ার সময় ফিরে সাহিলের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলো। সে এখনো ল্যাপটপের দিকেই তাকিয়ে আছে একটা বার নিজের স্ত্রীর দিকে তার ফিরে দেখার ও সময় নেই। এমনকি ব্যাস্ততা থাকে ওর? কেনো ও এমন? জানে না মেঘা তবে এতটুকু জানে এখন কিছুদিন ওর শান্তি দরকার। আজকের ঘটনার পরে ও এই বাসায় থাকলে কোনো না কোনো অশান্তি হবে। সাহিলের সাথে কিছুদিন না থাকলে হয়তো কিছুটা ভালো লাগবে। মেঘা উঠে নিচে গেলো, গিয়ে দেখে হিমা খেলছে
– আমি নানু বাসায় যাচ্ছি যাবে?
– না মাম্মি, আমি দাদুর কাছে থাকি?
– আমি কয়েকদিন থাকবো, তুমি পারবে থাকতে?
ছোট্ট হিমা হাসি দিয়ে বলে,
– পারবো, ফুপ্পি ও এসেছে।
-আচ্ছা।
মেঘার কথা পেছন থেকে দিবা শুনে, এবং ওকে এই অবস্থায় দেখে কিছু আর জিজ্ঞেস করে না।
মেঘা নিজেই ড্রাইভ করে বাবার বাড়ি এসে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ও গান ছেড়ে দেয় রেডিও তে তখন গানটা বেজে উঠে,
সবাই তো সুখী হতে চায়
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়… কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে… সত্যি কিনা
জানিনা বলে যা লোকে… সত্যি কিনা
কপালে সবার নাকি সুখ সয়না
সবাই তো সুখী হতে চায়
আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি
যদি আসে কোন দিন সেই সুখ পাখি
আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি
যদি আসে কোন দিন সেই সুখ পাখি
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয়না
সবাই তো সুখী হতে চায়
ভালোবেসে সুখী হতে বল কে না চায়?
রাধা সুখী হয়েছিল এই শ্যামরায়
আমিও রাধার মত ভালোবেসে যাবো
হয় কিছু পাবো নয় সবই হারাবো
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয়না
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়… কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে… সত্যি কিনা
কপালে সবার নাকি সুখ সয়না
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়… কেউ হয়না
গানটা শুনে খুব করে রাগ উঠছে, মেজাজ ও খারাপ লাগছে। এসব আর ভালো লাগছে না, সবকিছুতে ও একটু ছুটি চায়।
একটু শান্তি চায়, বাবার বাড়ি ফিরে একটু ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এতো বড় একটা বোঝা কিছুটা কমে গেছে। তবে কেনো যেনো ইচ্ছা করছে ইরাদের বউকে দেখতে মেঘা ডিসিশন নিয়ে নিলো ও আজকেই রাতারগুলের উদ্দ্যেশ্যে বের হবে। দেখে নিবে ইরাদ কেমন মেয়ে বিয়ে করেছে? যার জন্য তাকে আজকে একটা অপরিচিতা এতোটা অপমান করে কথা বলেছে। মানুষের কথা বলার তো একটা ধরন থাকে, আজ যা নয় তাই তো শুনলো মেঘা। আর যাই হোক এসবের পড়ে আর চুপ করে থাকা যায় না। নিজের মনের সাথে অনেক বেশি যুদ্ধ করে ফেলেছে মেঘা।
এদিকে দিবা বুঝতে পেরেছে ভাবীর কোনো না কোনো সমস্যা অবশ্যই হয়েছে, কি হয়েছে তা জানা লাগবে কারণ এভাবে কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। এদিকে রুহিটাও নেই থাকলে ভাবীর ব্যাপারটা ঠিকভাবে জানতে পারতাম। আর রুহিকেই বা কিভাবে বলি? ইরাদ স্যার আর মাত্র ১৫ দিন আছেন পুরো ৪ মাস উনি বাংলাদেশে ছিলেন কলেজ থেকে সেদিন ডাঃ তাহের কথায় কথায় বললেন ইরাদ স্যারের শিডিউল ফ্রি নেই আর বাংলাদেশের জন্য। অন্তত ৩ মাসের জন্য উনি চলে যাবেন অন্যান্য দেশ গুলোতে। আর এর মাঝে এটুকু সময় রুহির সাথে যদি তার কাটে তাহলে তো রুহি খুশি থাকবে। রুহি মেয়েটা যে ইরাদ স্যারকে কতো ভালোবাসে এটা যদি কেউ না দেখে তাহলে তো জানতেই পারবে না। আর এইজন্যই তো দিবা নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে এভাবে সাপোর্ট করছে। দিবা চায় কোনোভাবে ইরাদ আর রুহির বিয়েটা হয়ে যাক। ইরাদ রুহিকে গ্রহণ করবে কি না এটাও দিবাকে খুব করে ভাবায় কারণ রুহি একদম চঞ্চল একটা হাস্যজ্জল মেয়ে আর ইরাদ একটা ব্যাক্তিত্ববান কম কথা বলার মতো পুরুষ। তবে রুহিএ প্রতি ইরাদ যত্নবান, এটাও দিবার নজরে পড়েছে। এখন সে আশায় আছে যে কোনোভাবে হোক রুহি আর ইরাদকে মিলিয়ে দিলে ভালো হবে।
দিবা ভেবে নিয়েছে ভাবীর সাথেই কথা বলতে হবে এই ব্যাপারে। মেঘা ভাবী তো রুহির বড় বোন উনি নিশ্চয়ই চাইবেন ইরাদ স্যারের মতো একজন মানুষ রুহির জীবনে আসুক। তবে আগে ভাবীর মুড টা ঠিক হতে দিতে হবে, তাই দিবা বাদ আসর আজকে মেঘাকে ফোনে সবটা জানাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। ইরাদ স্যার যাওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ততই তাড়াতাড়ি করতে হবে। কারণ রুহির আশায় থাকলে ও আর নিজে থেকে কিছুই বলতে পারবে না।
.
পড়ন্ত বিকেলে সোনালী রোদের ছোয়ায় সবকিছুই ঝিকঝিক করছে, এতো সুন্দর চারিদিকে সব কিছু। ইরাদ তো কোনোদিন খুব হাসি না পেলে বেশি হাসে না সে মুচকি হাসে আর খুব দুষ্টুমি দেখলে রুহির তখন নিজের মুক্তা দানার মতো দাতঁ গুলো বের করে হাসে। মেয়েটার একটু জ্বর ছাড়ায় সে আবারো দুষ্টুমিতে মেতে উঠেছে। কি বলে, কি করে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ইরাদ আর রুহি আজকে এসেছে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে…
রুহি আর ইরাদের জীবনে এমন কিছু ঘটবে আজকে তা কোনো দিন ও ওরা কল্পনা করে নি।
( গল্পটার নাম যেমন শেষটাও তেমনি হবে তাই যেভাবে চলছে চলুক, আমার গল্প যারা পড়েছেন এই পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ তারা জানেন শেষটা নামের সাথে মিল থাকে। তাই, যারা জানতে চাচ্ছেন আগে থেকে যে কি হতে যাচ্ছে তাদের বলবো একটু সবুর করে সামনে জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ)