#প্রেমাতাল পর্ব ১৪
লেখিকাঃ মৌরি মরিয়ম
গেস্ট হাউজটা আসলে একটা কটেজের মত। চারদিকে ঘিরে আছে একটা বারান্দা। কটেজে মোট ৪ টি ঘর। প্রত্যেকটি ঘরে দুটো করে বিছানা। আর দুই বিছানার মাঝেও অনেক যায়গা। ফ্লোরিং করার প্ল্যান ছিল বাকিদের। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। কোথায় চলে গেল সাফিরা। এতজন একসাথে থাকলে তো কোথাও কোন বিপদ হওয়ার কথা না। ওদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে মুগ্ধর। ৪ টা ঘরের একটাতে তিতির, একটাতে মুগ্ধ। আরেকটাতে যায়গা হলো মংখাই আর লোকমানের। যে যার ঘরে চলে গেল। মুগ্ধ ভেজা শার্টটা খুলে ফেলল। নদীতে গোসল করতে যাবে। গামছা আর টাউজার কাধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে বের হলো। হঠাৎ পিছন থেকে সেই মিষ্টি ডাক,
-“এইযে শুনছেন?”
মুগ্ধ ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-“হুম শুনছি তো, বলো।”
তিতির হেসে বলল,
-“গোসলের কি ব্যবস্থা এখানে?”
-“নদীতে গোসল করতে হবে।”
তিতির অবাক হয়ে বলল,
-“নদীতে!”
-“কেন সাঁতার জানোনা?”
-“তা জানি।”
-“তাহলে?”
-“মানে খোলা যায়গায় সবার সামনে গোসল করতে হবে?”
-“খোলা যায়গায় তবে সবার সামনে নয়। কারন, এই গেস্ট হাউজের পাশ দিয়ে নদীতে নেমে পড়বে। গ্রামের কেউ তো আর এই সাইড টাতে আসবে না। ওইযে টয়লেট টা দেখতে পাচ্ছো ওটা বড় ভাগ্যের জোড়ে পেয়েছো। আমি আগের বার যখন এসেছিলাম তখন ওটা ছিলনা।”
-“ও। তাহলে কি করবো?”
-“গোসল করে আর কি করবে? গোসল তো রেমাক্রি ফলসে হয়েই গেছে।”
-“না, ওখানে তো শুধু ভেজা হলো।”
-“বাই দ্যা ওয়ে, সকালে না গোসল করে এলে?”
-“হুম, কিন্তু এই কালি গায়ে নিয়ে ঘুমাবো? স্কিন ভারী ভারী লাগছে। গোসল না করে বাঁচবো না। “
-“আচ্ছা, তাহলে যাও করে এসো। কেউ যাবেনা ওদিকে। আর গোসল করে চলে আসবে। ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করবে।”
-“আপনিও চলুন না আমার সাথে।”
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-“এই প্রথম শুনলাম কোনো মেয়ে গোসল করতে যাওয়ার সময় অপরিচিত কোনো পুরুষ মানুষকে সাথে ডাকে।”
-“উফ আপনি না একটা যাচ্ছেতাই।”
মুগ্ধ হেসে ফেলল। তিতির বলল,
-“আমি তো বলেছি শুধু আপনি পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন একটু। অপরিচিত যায়গা, তার উপর আলো কমে আসছে। আমার একা যেতে ভয় করছে।”
-“তাহলে বলছো যে মেয়েরা ছেলেদের উপর মাঝে মাঝে ডিপেন্ডেন্ট হয়?”
তিতির কপাল কুঁচকে বিরক্ত চোখে তাকালো। মুগ্ধ হেসে বলল,
-“ওহ সরি। তোমাকে তো আবার খোঁটা দেয়া যাবেনা। চলো চলো।”
-“আপনার কাধে দেখি কাপড়! আপনিও কি গোসলে যাচ্ছিলেন?”
-“হুম!”
-“ও। তাহলে তো হলোই।”
তিতির নদীর পাড়ে গিয়েই অবাক হয়ে গেল। এদিকটায় তীরটা একটু অন্যরকম। সিবীচে যেমন বালুর তীর থাকে এখানে ঠিক সেরকমই কিন্তু পাথরের তীর! অসংখ্য ছোট ছোট পাথর এখানে। পানিতে নেমেও পায়ের নিচে পাথর ছাড়া আর কিছু পেলনা। যায়গাটা কি যে ভাল লাগছিল তিতিরের! তিতির যখন গোসল করছিল মুগ্ধ তখন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে গেমস খেলছিল। কাজলের কালি উঠাতে বেশ কসরত করতে হলো তিতিরের। সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে তুলল। পায়ের কয়েকটা যায়গা আর ঘাড়ের পেছনের দিকটায় সামান্য জলছিল। জলপ্রপাতের পাথরের ধারে কেটে গেছে কিনা কে জানে! গেলে যাক। কি আর করা.. তিতির গোসল শেষে সেই শালটা গায়ে জড়িয়েই উঠলো। তারপর বলল,
-“তাড়াতাড়ি গোসল করতে যান। আমি কি দাঁড়াবো?”
-“পাগল! তুমি যাও চেঞ্জ করে নাও গিয়ে।”
তিতির চলে যাচ্ছিল। মুগ্ধ ডাক দিল,
-“শোনো..”
-“হ্যা বলুন।”
-“আমার মোবাইল আর ওয়ালেট টা একটু নিয়ে যাবে? তুমি না এলে পাড়েই রেখে নামতাম। কেউ তো আর আসবে না। তারপরেও তুমি যখন যাচ্ছোই তখন নিয়ে যাও।”
-“হ্যা, দিন।”
মোবাইল ওয়ালেট পকেট থেকে বের করে দিল। ওগুলো নিয়ে তিতির হাটা ধরলো। মুগ্ধ বলল,
-“দাড়াও দাড়াও..”
মুগ্ধ পকেটে কি যেন খুঁজছে। তারপর তিতির দেখলো মুগ্ধ কতগুলো ভেজা টাকা বের করলো। তিতির বলল,
-“রেমাক্রি ফলসে নামার সময় আপনি না মোবাইল ওয়ালেট সব মংখাই এর কাছে রেখে গিয়েছিলেন? তাহলে এগুলো ভিজলো কি করে?”
-“হ্যা, কিন্তু এই টাকাগুলো পকেটে ছিল খেয়াল করিনি।”
-“ও। ইশ কিভাবে আপনাকে ফেলে দিয়েছিলাম! ব্যাথা পেয়েছিলেন?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“নাহ, তুমি যাও। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।”
তিতির চলে গেল। ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়ে ভাবলো, ‘এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!’ এবার নিশ্চিন্তে “প্যারা” মেয়েটার মেসেজ পড়া যাবে। কত বড় সাহস মেয়েটার! মুগ্ধকে ওসব মেসেজ পাঠায়!
তিতির যত দ্রুত সম্ভব গা মুছে চেঞ্জ করে নিল। তারপর মেসেজ পড়া শুরু করলো। যেখানে রেখেছিল সেখান থেকেই শুরু করলো,
Mugdho: Biye to 100 miles dure.. tor moto behayar loge ami sex o korina.
Pera: Meyeder ke ektu to respect korbi mugdho!
Mugdho: Nijer somman nijeke dhore rakhte hoy. tui rakhte parish nai. prostitute der respect kori kintu toke na. cz ora nijer shorir sell kore r tui free te bilash.
Pera: Cox’s Bazar er ghotonar jonno I’m really sry.. Shotti amr matha thik chilo na. Maf kore de na, jibon thakte ei dhoroner kono kaj r ami korbo na.
তিতির বসে পড়লো! মুগ্ধ এই মেয়েটাকে নিয়ে কক্সবাজার গেছে! এই মেয়েটা কি ওর কোনো এক্স? কষ্ট হচ্ছিল! কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল তিতিরের। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলল তিতির। কয়েক সেকেন্ড পর মনে হলো বাংলা সিনেমার মত অর্ধেক টা পড়ে রিয়াক্ট করাটা কি ঠিক হবে? না পুরোটাই পড়বে তিতির। হয়তো ও যা ভাবছে তেমন কিছুনা। আবার ফোনটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
Mugdho: Campus er je tour e tui jabi oi tour e ami r jibon thakte jabo na..
Pera: Ami shotti toke valobashi re.. amr ekta second jayna toke na vebe!
Mugdho: Allah’r waste r msg dish na. onk koshte etokkhon natha thanda rakhsi. r partesi na.
Pera: Msg dibo na to ki korbo? Etobar call dilam ekbar to dhorli na!
এরপর মুগ্ধ কোন রিপ্লাই দেয়নি। বোধহয় ফোন করেছিল কারন অনেক্ষণ পর মেয়েটাই আবার আরেকটা মেসেজ দিয়েছিল,
Pera: Tui etota kharap bhv korbi vabte parini.
আর কোনো মেসেজ নেই। তিতিরের আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছিল। আহ আহ কি শান্তি!
চারপাশ পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেল। বারান্দায় একটা বাল্ব জ্বালানো ছিল। মুগ্ধ কটেজের বারান্দায় বসে লাল রঙের ছোট ছোট কিছু খাচ্ছিল। লোকমান আর মংখাই বাজারে গেছিল। দরজা খোলার শব্দে মুগ্ধ তাকাতেই দেখতে পেল ভেজা কাপড় হাতে বেড়িয়ে এল তিতির। ওর পড়নে সাদা লং স্কার্ট আর নীল টপস। বাল্বের হালকা আলোয় মুগ্ধ দেখছিল তিতিরকে। এই রঙ দুটো বেশ মানিয়েছে তিতিরকে। বারান্দার একপাশে দড়ি টানানো ছিল। সেটাতে ভেজা কাপড় মেলার জন্য হাত উঠাতেই টপস টা উঠে গেল, আর তাতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওর নাভি দেখা গেল। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল মুগ্ধ। ওর সারা শরীরে যেন ইলেক্ট্রিক শক লাগলো! কক্সবাজার ট্যুরে ইকরা যখন ওকে ইমপ্রেস করার জন্য ওর সামনে এসে কাপড় খুলে ফেলেছিল তখনও তো এরকম কোনো ফিলিং হয়নি। তিতির অবশ্য সুন্দরী কিন্তু ইকরাও তো তিতিরের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলনা। তবু তো ইকরার সৌন্দর্য ওকে টানেনি উল্টো অনীহা এসেছিল। তাহলে এখন ওর এরকম কেন লাগছে। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো ভালবাসা কি সত্যিই হয়ে গেল!
হঠাৎ ঘোর কাটলো সেই মিষ্টি স্বরে,
-“বসবো?”
-“হ্যা হ্যা বোসো।”
তিতির মুগ্ধর উল্টোপাশে মুগ্ধর দিকে ফিরে বসলো। মুগ্ধ তিরিরের দিকে না তাকিয়েই বলল,
-“খাবে?”
-“কি এগুলো?”
-“ডুমুর! পাহাডী ডুমুর, একদম পাকা। খেয়ে দেখো অনেক মজা।”
তিতির একটা ডুমুর হাতে নিয়ে বলল,
-“এটা কিভাবে খায়?”
মুগ্ধ দেখিয়ে দিল প্রথমে ডুমুরকে দুহাতের আঙুল দিয়ে টেনে দুভাগ করতে হয়। তারপর একেকটা ভাগ উল্টে চুষে চুষে খেতে হয়। তারপর তিতির ডুমুর নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তিতিরের দিকে চোখ পড়তেই মুগ্ধ আর চোখ ফেরাতে পারছিল না। তিতির বোধহয় ভাল করে চুল মুছতে পারেনা। তাই গোসলের পর ওর চুল থেকে টপটপ করে ফোটা ফোটা পানি পড়তে থাকে। তখনও তাই হচ্ছিল। তিতিরের বড় বড় চোখগুলো ছিল ডুমুরের দিকে। আর ওর আলতো আলতো গোলাপি ঠোঁট দিয়ে চুষে চুষে খাচ্ছিল সেই ডুমুর! সেই পরিবেশে সেই দৃশ্য যে কতটা ভয়ঙ্কর, মারাত্মক আর নেশাতুর হতে পারে তা যে না দেখেছে সে কোনদিনও বুঝবে না।
নাহ এটেনশন অন্যদিকে নিতে হবে! কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? তার চেয়ে অন্তত এই ডুমুর খাওয়াটা বন্ধ করা যাক। মুগ্ধ বলল,
-“বেশি খেয়োনা। পেট ব্যাথা করতে পারে।”
-“উম্মম্মম্মম্ম! অস্থির ফল একটা। এত মজা কেন? পেটে ব্যাথা হলে হবে। তাও আমি খাবো!”
-“নাহ। ঢাকা যাওয়ার সময় কিনে দিব। বাসায় গিয়ে খেয়ো।”
ঝুড়িটা সড়িয়ে রাখলো মুগ্ধ। তারপর বলল,
-“কদিন আমাকে অনেক জ্বালিয়েছো। এবার একটু সেবা করো তো।”
-“সেবা! কি সেবা?”
-“আমার পিঠে খুব জ্বলছে। বোধহয় ছিলে টিলে গেছে, একটু স্যাভলন লাগিয়ে দাও। মংখাই কে দিয়ে লাগাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই যে বাজারে পাঠালাম আর তো খবর নেই।”
-“আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। কোনো প্রব্লেম নেই।”
-“আচ্ছা, বোসো আমি স্যাভলন ক্রিমটা নিয়ে আসছি।”
তিতির এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আপনি চুপ করে বসুন। আমি নিয়ে আসছি। স্যাভলন আমার কাছেও আছে।”
তারপর চলে গেল ওর ঘরে। জীবনেও এটুকুতে স্যাভলন লাগায়নি মুগ্ধ। কিন্তু আজ লাগাতে চাইছে। ব্যাথা কমানোর জন্য না। তিতিরের একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্য!
তিতির স্যাভলন এর সাথে মুগ্ধর ফোন আর ওয়ালেটও নিয়ে আসলো। বলল,
-“এই নিন ফোন আর ওয়ালেট! ভেজা টাকাগুলো টেবিলের উপর শুকোতে দিয়েছি।”
মুগ্ধ ওগুলো নিল তিতিরের হাত থেকে। তিতির ওর পাশে বসে বলল,
-“ওদিকে ঘুরুন আর শার্টটা খুলুন।”
মুগ্ধ শার্টটা খুলে ঘুরে বসতেই তিতির ওর পিঠে হাত রেখে আঁৎকে উঠলো,
-“ওমাগো! পুরো পিঠ ছিলে গেছে! লাল হয়ে গেছে। ইশ এটা রেমাক্রি ফলসে আমার ওই বোকামির জন্য হয়েছে না?”
-“সুন্দরীর হাতের ছোঁয়া দেখছি স্যাভলনের চেয়েও বেশি কাজে দিচ্ছে! হাতটা সরিওনা কিন্তু।”
একথাটা মুগ্ধ শুধু মজা করে বলেনি। মন থেকে বলেছে। তিতির ফাজলামো ভেবে ওর পিঠে আলতো করে স্যাভলন লাগাতে লাগাতে বলল,
-“আপনি পারেনও।”
স্যাভলন লাগানো শেষ হতেই মুগ্ধ আবার ঘুরে বসলো। আর সাথে সাথে দেখতে পেল রিতিরের বাহুতে আর ঘাড়েও ছিলে গেছে। মুগ্ধ বলল,
-“এই পাক্নি! তোমার ঘাড়ে আর হাতেরও তো একই অবস্থা!”
-“তাই নাকি? এজন্যই বোধহয় জ্বলছিল গোসলের সময়!”
-“ওখানে স্যাভলন লাগাও।”
তিতির বাহুর ক্ষততে নিজেই স্যাভলন ক্রিম লাগালো। তারপর স্যাভলনের টিউবটা মুগ্ধর দিকে এগিয়ে দিয়ে হেসে বলল,
-“নিন এবার আপনি একটু সেবা করুন।”
মুগ্ধ ওটা তিতিরের হাত থেকে নিতেই তিতির সব চুলগুলোকে ভাল করে সরিয়ে নিল একপাশে। তারপর ক্ষতর সাইডটা মুগ্ধর দিকে ধরলো। মেয়েটা কি পাগল! এমনটা কেউ করে? ও কি জানে মুগ্ধর ইচ্ছে করছিল ওই ভেজা চুল সরানো ঘাড়ে একটা গাঢ় চুমু খেতে! কিন্তু মুগ্ধর বিবেক খুব সহজেই সে লোভ সংবরন করলো। অঙুলের মাথায় স্যাভলন নিয়ে তা তিতিরের ঘাড়ে লাগিয়ে দিল। তিতির আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কালও তো ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরেছিল মুগ্ধকে। কিন্তু তখন তো এমন অনুভূতি হয়নি! খুব স্বাভাবিক লেগেছিল তিতিরের। আর আজ এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কি অমূল্য সম্পদ যেন পেল। মনে মনে বলল, ‘কোন পুরুষের স্পর্শ আমি আজও লাগতে দিইনি আমার শরীরে। আপনিই প্রথম। আমি জানতাম আপনার স্পর্শ এতটাই মধুর হবে। আমি এ স্পর্শ সারাজীবনের জন্য চাই। ভাগ্যিস ঘাড়ে আঘাতটা পেয়েছিলাম।’
এর মধ্যেই মংখাই আর লোকমান চলে এলো। মংখাই বলল,
-“দাদা, হাঁস খুঁজতে খুঁজতে দেরী হয়ে গেল।”
কথা শেষ করে তিতরের দিকে তাকিয়েই মংখাই চমকে উঠলো,
-“আপু না কালা ছিলো?”
তিতির হেসে দিল। মুগ্ধও হেসে বলল,
-“ওইটা ছিল, প্রোটেকশন! বেশী রূপবতী মেয়েদের নিয়ে এই হলো প্রব্লেম। বুজলে মংখাই?”
-“জ্বী দাদা, বুজছি।”
তিতির লজ্জায় কি বলবে বুঝতে পারছিলনা। কথা ঘুড়িয়ে বলল,
-“আচ্ছা হাঁস কেন আনালেন?”
-“বার-বি-কিউ করবো। কাল মিস করেছিলাম মনে নেই?”
-“আপনার এত এনার্জি? এখন রান্না করবেন? কেন রেমাক্রি বাজারে না দেখলাম কত দোকান? ওখান থেকে কি খাওয়া যেত না?”
-“হ্যা, আমার এনার্জি একটু বেশি।”
গেস্ট হাউজের পাশেই আগুন জ্বালিয়ে বার-বি-কিউ এর ব্যবস্থা করেছে ওরা। হাঁস বার-বি-কিউ করতে করতে মুগ্ধ বলল,
-“এনার্জি কিন্তু তোমারও কোনো অংশে নেহাৎ কম না। এতদূর এসে পড়লে এখনো তোমার চেহারায় টায়ার্ডের ছাপ পড়েনি। এখনো কতটা প্রানোচ্ছল! ম্যাক্সিমাম মেয়েরা এই পর্যন্ত এসে হাল ছেড়ে দেয় আর মাফাখুম যাবেনা।”
তিতির হাসলো শুধু কিছু বলল না।
হাঁস বার-বি-কিউ টা এত টেস্টি হয়েছে! তিতির কখনো এত মজার বার-বি-কিউ খায়নি! খাওয়ার পর পরই সবাই শুয়ে পড়েছে।
মুগ্ধর ঘুম পাচ্ছিলনা। বার বার তিতিরের সেই ভেজা চুলের মুখটা ভেসে উঠছিল চোখের পাতায়। কি অদ্ভুত! কখনো কোনো মেয়ের জন্য তো ও এতকিছু করেনি। কখনো কোনো মেয়ের জন্য এতটা ফিলও করেনি ও। পাশের রুমেই আছে অথচ ওর জন্য কি অস্থিরতা! বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখলে হয়তো এ অস্থিরতা কমবে। ও কি তিতিরকে প্রোপোজ করবে নাকি আরেকটু টাইম নেবে! মাত্র দুদিনের পরিচয়ে এতো সিরয়াস একটা ডিসিশান নিয়ে নেবে! আগের সম্পর্কগুলোর মত কোনো ভুল সম্পর্কে আর জড়াতে চায়না ও। কারন এখন আর সময় নেই, মা ইমিডিয়েটলি ওর বিয়ে দিতে চান?
পাশের ঘরে কুম্ভকর্ণ তিতিরেরও কিনা ঘুম পাচ্ছিল না! ও খালি কাল থেকে মুগ্ধর সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবছিল। ইশ কাল রাতে এমন সময় ও আর মুগ্ধ পাশাপাশি শুয়ে ছিল। আর আজ দুজন পুরো দুঘরে! এটা কোনো কথা হলো! আচ্ছা ও কি করবে? ও কি মুগ্ধকে বলবে ওর ভালবাসার কথা? নাকি মুগ্ধর বলার জন্য অপেক্ষা করবে? মুগ্ধর ভেতর যদি ভালবাসা না জাগে মুগ্ধ কেন বলবে! ফোনের ওই প্যারা মেয়েটা প্রোপোজ করেছিল বলেই তো মুগ্ধ ওর উপর বিরক্ত। বেহায়া ভাবে। ও ভালবাসার কথা বললে যদি ওকেও বেহায়া ভাবে! ঘরের ভেতর পায়চারী করছিল। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো। প্রায় সাথে সাথেই মুগ্ধর গলা,
-“এই তিতির?”
তিতির দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। বলল,
-“কিছু বলবেন?”
-“ঘুমাওনি দেখলাম। মানে পায়ের আওয়াজ পেলাম। আমারও ঘুম আসছেনা। তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে একটু বারান্দায় বসি?”
-“গান শোনাবেন?”
-“সিওর!”
তিতির বারান্দায় এসে বসলো। মুগ্ধ বলল,
-“দেখেছো পাহাড়ের পূর্নিমা কত অসাধারণ!”
-“হ্যা এত সুন্দর পূর্নিমা আমি আগে কখনো দেখিনি। কাল তো জঙ্গলে এত ভাল দেখাও যায়নি। তাছাড়া এই পুরো যায়গাটাই অসাধারণ। বান্দরবান আসার পর থেকে যতগুলো যায়গায় গিয়েছি তার মধ্যে এটা বেস্ট।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“আর নিলগিরি?”
-“দুটোর তুলনা চলেনা। দুটোই দুটোর মত সুন্দর।”
-“এখানে আসতে আসতে তো প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছিল। আসল সৌন্দর্য দেখতে আলো লাগবে। কাল সকালে দেখো, তখন বুঝবে কি সুন্দর যায়গা!”
-“তা নাহয় দেখবো কিন্তু এখন গান শুনতে চাচ্ছি। মনটা আকুপাকু করছে গানের জন্য।”
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে গান ধরলো…
“আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…
ঝাউবনে হাওয়াগুলো খেলছে,
সাঁওতালি মেয়েগুলো চলছে।
লাল লাল শাড়ী গুলো উড়ছে,
তার সাথে মন মোর দুলছে।
ওই দূর আকাশের প্রান্তে,
সাতরঙা মেঘগুলো উড়ছে।
এই বুঝি বয়ে গেল সন্ধ্যা,
ভেবে যায় কি জানি কি মনটা!
পাখিগুলো নীড়ে ফিরে চলছে,
গানে গানে কি যে কথা বলছে!
ভাবি শুধু এখানেই থাকবো,
ফিরে যেতে মন নাহি চাইছে!
আবার এলোযে সন্ধ্যা, শুধু দুজনে।
চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে…”
To be continued…