#প্রেমাতাল
পর্ব ২১
লেখিকাঃ মৌরি মরিয়ম
মুগ্ধ চোখ খুলে রাখতে পারছেন। ঘুমের জন্য না। চোখদুটো প্রচন্ড জ্বলছে তাই। গতকাল তিতিরের সাথে কথা হওয়ার পর সারারাত আর ঘুমাতে পারেনি। ফোন না দিয়েই বা কোথায় যাবে? মন তো আর সবসময় এত বাধা মানতে চায়না। নিঃশ্বাসটা আটকে যায় মাঝে মাঝে। স্নিগ্ধ, পিউ আর মায়ের দায়িত্ব ওর উপর না থাকলে আল্লাহ কে বলতো নিঃশ্বাসটা যেন সারাজীবনের জন্য বন্ধ করে দেয়। এখন তাও পারেনা। কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে সাময়িকভাবে সবকিছু থেকে একটু দূরে থাকা যায়। কিন্তু দুদিন ধরে অফিসে কাজের চাপ কম। তাই এখন ব্যস্থতাও নেই তিতিরের স্মৃতির হাত থেকে রেহাইও নেই।
লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে। পিয়ন এসে লাঞ্চের জন্য ডেকে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মুগ্ধ উঠলো। ফোন ওয়ালেট পকেটে ঢুকালো। প্রায় সাথেই সাথেই ফোনটা বেজে উঠলো। তিতির! তিতির ফোন করেছে! কিন্তু এটা প্রায় অসম্ভব।গত ৭ মাসে তিতির একটাবারও ফোন করেনি ওকে। ফোন রিসিভ করলো। না তিতির নয় একাটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এল ওপাশ থেকে,
-“হ্যালো।”
-“হ্যালো।”
-“মুগ্ধ বলছেন?”
-“ইয়েস। আপনি কে? এটা তো তিতিরের নাম্বার।”
-“দেখুন ভাইয়া, আমি ওনার নাম জানিনা। উনি রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। তাই ওনার ব্যাগ ঘেটে ফোনটা বের করতে বাধ্য হয়েছি। ফোন লক করা আর ইমারজেন্সি কল লিস্টে কেবল আপনার নাম্বারটাই পেলাম তাই আপনাকে কল করলাম।”
তিতির রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে এই সেনটেন্সটাই যথেষ্ট ছিল মুগ্ধর ভেঙে পড়ার জন্য। কিন্তু মুগ্ধ ভেঙে পড়েনি। কঠিন সময়ে স্টেবল থাকার ক্ষমতা আল্লাহ ওকে দিয়েছে। স্বাভাবিক স্বরে
-“ওহ ওকে ওকে! কোথায় আছেন?”
-“বনানী, চেয়ারম্যান বাড়ি।”
-“ভাই, আমার ১০-১৫ মিনিট লাগবে। আপনি কি ততক্ষণ একটু থাকবেন ওর পাশে?”
-“শিওর। আপনি আসুন।”
অফিস থেকে বের হতে হতেই মুগ্ধ চিন্তা করছিল, তিতির এখানে কি করছে? ওর বাসা, ইউনিভার্সিটি সবই তো ধানমন্ডিতে। তবে কি মুগ্ধর কাছেই এসেছিল?
১৫ মিনিট লাগলো মুগ্ধর অফিস থেকে আসতে। দূর থেকেই দেখতে পেল তিতিরকে। দেখামাত্রই এক দৌড়ে চলে গেল ওর কাছে। একটা মেয়ের কোলে ওর মাথাটা রাখা। আশেপাশে কয়েকটা ছেলে আর একজন বুড়ো লোক দাঁড়িয়ে আছে। নার্ভাস লাগছে, তিতিরকে কখনো এভাবে দেখেনি ও। ওদের কাছে গিয়ে বলল,
-“স্কিউজমি, আমিই মুগ্ধ।”
একটা ছেলে বলল,
-“আমি শ্রাবন। আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম। এইযে ওনার ফোন।”
মুগ্ধ ফোনটা নিয়ে তিতিরের পাশে বসতেই ছেলেটি বলল,
-“ভাইয়া উনি পুরোপুরি সেন্সলেস হননি। অন্য কোনো প্রব্লেম হয়েছে তাকাতে পারছিলনা আর কথাও বলতে পারছিলনা। ওনার চোখেমুখে পানি দেয়া হয়েছে। পানি খাওয়ানোও হয়েছে। কিছু বলার চেষ্টা করেছিল। আমরা বুঝতে পারিনি। তারপর আর চোখ খোলেনি।”
-“ওকে আমি ওকে আশেপাশে কোনো হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।”
-“ইটস ওকে ব্রাদার! চোখের সামনে এরকম দেখে এটুকু না করে পারা যায়না। আপনার গার্লফ্রেন্ড?”
-“হ্যা।”
মুগ্ধ একটা সিএনজি ডেকে তিতিরকে নিয়ে উঠলো। শ্রাবন ছেলেটা বলল,
-“ভাইয়া আমরা ওনার খবর পাবো কিভাবে?”
মুগ্ধ ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল,
-“থ্যাংকস এগেইন।”
-“ইটস ওকে! টেক কেয়ার অফ হার।”
সিএনজি ছাড়তেই মুগ্ধ তিতিরকে নিজের বুকের সাথে হেলান দিয়ে শোয়ালো। তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বিদ্ধস্ত হয়েছে চেহারা। মুখটা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচটা কিছুটা কালো হয়েছে। ওর ফ্যামিলির মানুষগুলোর কি এগুলো চোখে পড়েনা? তিতির একটু তাকানোর চেষ্টা করলো। দুইতিন সেকেন্ড তাকিয়েই ওর চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল আবার। মুগ্ধ ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল কাছের একটা ক্লিনিকে।
ডাঃ তিতিরকে দেখে বলল,
-“ওনার প্রেশার লো হয়ে এরকম হয়েছে। আর উনি বোধহয় রাতে ঘুমায়না একদমই, খাওয়াদাওয়াও ঠিকমত করেনা। শরীর খুব দুর্বল। তবে চিন্তা করবেন না, ওনার জ্ঞান আছে। কে হন আপনি ওনার?”
-“বয়ফ্রেন্ড।”
-“ঝগড়া হয়েছিল নাকি?”
-“না।”
-“তাহলে ওনার ডিপ্রেশন টা কিসের?”
-“একচুয়েলি ওর ফ্যামিলি আমাদের সম্পর্কটা মানেনি। তাই নিয়েই বোধহয় ও আপসেট।”
-“বোধহয় মানে? আপনি ঠিকমতো জানেনও না? ফ্যামিলি বয়ফ্রেন্ড সবাই মিলে কেয়ারলেস হলে তো এমন হবেই।”
-“ডক্টর, আমাদের ৭/৮ মাস ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল, রাস্তার লোকজন ওর মোবাইলের ইমারজেন্সি কল লিস্টে আমার নাম্বার পেয়ে আমাকে ফোন করে তখন আমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসি। যোগাযোগ না রাখলে কি করে কেয়ার করবো বলুন?”
ডাঃ কতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কি ভাবছে বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর বলল,
-“আমি ওনাকে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিচ্ছি, দুএক ঘন্টা ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। আর কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি, ভিটামিন। রেগুলার খেতে বলবেন।”
ইনজেকশন দেয়ার সময় ও একটু ব্যাথা পেয়ে কুঁকড়ে গেল। একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। কোনো কথা বলতে পারল না। তিতিরের এমন নিথর দেহ আর নিস্তেজ মুখটা সহ্য করতে পারছিল না মুগ্ধ। বলল,
-“ডক্টর আমি ওকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।”
-“ওনার তো ঘুম দরকার।”
-“হুম বাসায় গিয়ে ঘুমাবে।”
-“আচ্ছা নিয়ে যান।”
পিউ দরজা খুলেই অবাক। বলল,
-“ভাবী! ভাইয়া, ভাবীকে কোথায় পেলি? কি হয়েছে ওর?”
মুগ্ধ তিতিরের ঘুমন্ত মাথাটা নিজের বুকে ঠেকিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। ওর হাতগুলো ঝুলছিল। এই দৃশ্যটা পিউ নিতে পারছিল না। মুগ্ধ ভেতরে ঢুকতেই পিউ আবার জিজ্ঞেস করলো,
-“বলনা ভাবীর কি হয়েছে? অজ্ঞান হয়ে গেছে?”
-“প্রেশার লো হয়ে রাস্তায় পড়ে গেছিল।”
-“তারপর? তুই পেলি কিভাবে?”
মুগ্ধ পুরো ঘটনাটা সংক্ষেপে বলল পিউকে। তারপর বলল,
-“ওকে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। তাই ঘুমাচ্ছে।”
মুগ্ধ তিতিরকে নিজের রুমে নিয়ে গেল। শুইয়ে দিল বিছানায়। পিউ গেল পিছন পিছন। মুগ্ধ পিউকে জিজ্ঞেস করলো,
-“মা বাসায় নেই?”
-“না।”
-“কোথায় গেছে?”
-“ইকরাপুদের বাসায় গেছে। চলে আসবে।”
-“স্নিগ্ধ?”
-“কলেজে।”
-“কলেজ ছুটি হয়েছে ২ টায়। এখন সাড়ে ৩ টা বাজে। এখনো কলেজে কি?”
-“ভাইয়া, ওদের কলেজে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছে তো তাই।”
-“ও। তুই কোথাও যাচ্ছিস নাকি?”
-“হ্যা ভাইয়া, ক্লাস আছে।”
-“যা তাহলে।”
-“ভাবীকে কি একটু পরেই বাসায় দিয়ে আসবি?”
-“ঘুম থেকে উঠলে দিয়ে আসব।”
-“ইশ! আমার ফিরতে ফিরতে রাত হবে। ওর সাথে একটু কথাও বলতে পারলাম না।”
-“কথা বলে আর কি হবে? যে সারাজীবন দূরে থাকবে সে দূরেই থাক।”
পিউ কি বলবে! শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা ওর নেই। তিতিরের অবস্থা দেখে ওর নিজেরই বুকটা ফেটে যাচ্ছে। পরীর মত মেয়েটা কেমন হয়েছে দেখতে! তার উপর বড় ভাই। চুপ করেই থাকলো। মুগ্ধ বলল,
-“ক্লাসে যা। দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আমি আছি, আজ আর অফিসে যাবনা।”
-“আচ্ছা। ভাইয়া তুই কি লাঞ্চ করেছিলি? নাহলে ভাত দেই তোকে?”
-“করেছি।”
-“আচ্ছা, যাচ্ছি। দরজাটা লাগিয়ে দে।”
পিউ চলে গেল। মুগ্ধ আবার এসে বসলো তিতিরের পাশে। তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। ঘুমের জন্য যাকে আদর করে ঘুমকুমারী ডাকতো আজ সে নাকি প্রয়োজনীয় ঘুমটুকুও ঘুমায় না। মুগ্ধর ইচ্ছে করছে তিতিরকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখতে। আচ্ছা এমন কোনো মন্ত্র যদি থাকতো বুকে জাপ্টে ধরে মন্ত্রটা পড়লেই প্রিয়জনের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।তাহলে ও আজ সারাদিন সেই মন্ত্রটা পড়তো।
কত সুন্দর করে কেটে গিয়েছিল ওদের ৪টা বছর। যেন স্বপ্ন! হঠাৎ করেই প্রপোজ করেছিল.. আর তিতির ইন্সট্যান্ট রিপ্লাই দিয়েছিল জড়িয়ে ধরে। তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল এই স্বপ্নটা। সকালে যখন মুগ্ধ অফিসে যেত তিতির তখনো ঘুমে। যেদিন ওদের সম্পর্কটা হয়েছিল তার পরের দিন সকালের ঘটনা,
তিতির ঘুমিয়ে আছে। ফোনটা বেজেই চলেছে। চোখ না খুলেই ফোন হাতরে কোনোরকমে কানের কাছে ধরে হ্যালো বলল। সেই হ্যালো টা মুগ্ধর বুকে একটা ফুলের টোকা দিয়েছিল। মুগ্ধ বলল,
-“আমার ঘুমকুমারী এখনো ঘুমাচ্ছে?”
-“হুম আমার স্কুল কলেজ সব সকালে ছিল। ঘুমাতে পারিনি। প্লিজ ঘুমাতে দাওনা।”
আবার সেই ঘুম মাখানো কণ্ঠস্বর। সবগুলো শব্দ যেন একটার সাথে আরেকটা ধাক্কা খেয়ে লুটিয়ে পড়ছে। বেশ লাগছে শুনতে। বান্দরবানে যখন ওকে রেমাক্রিতে সূর্যোদয় দেখাতে নিয়ে যাবে বলে ঘুম থেকে ওঠাচ্ছিল তখনও এভাবেই কথা বলেছিল তিতির। কিন্তু এখন একটু অন্যরকম লাগছে কেন? বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেছে বলে বেশি আহ্লাদ করছে নাকি? তারপর আচমকাই মুগ্ধর খেয়াল হলো তিতির ওকে তুমি করে বলেছে। এটাই ডিফারেন্স। বাহ! ওর মুখে আপনি তুমি সবই কেন এত ভাল লাগে! মুগ্ধ বলল,
-“এত সিডাক্টিভলি কথা বললে কিন্তু তোমার ঘরে চলে আসব।”
-“আচ্ছা আসো।”
মুগ্ধর হাসি পেল। ও কি ঘুমের ঘোরে থেকেই কথা বলছে এখনো! তা নাহলে তো এধরণের রিপ্লাই না দিয়ে উলটো লজ্জা পেত। মুগ্ধ বলল,
-“আসলে কিন্তু….”
মুগ্ধ কিছু বলার আগেই তিতির বলল,
-“আদর দিতে হবে কপালে বান্দরবানের মত করে। কিন্তু আমি উঠবো না।”
-“ওরে দুষ্টুটা! তুমি জেগে ছিলে?”
-“হ্যা তো। আমি তোমার কোলে চড়ার জন্য ঘুমের ভান করেছিলাম।”
-“ফাজিল মেয়ে, যাও তোমাকে আর কোলেই নিব না।”
তিতির নগদ কান্না করে দিল।
-“অ্যাআআআআ… আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে সারাজীবন কোলে নিবা। আমার ফ্রেন্ডরা ঠিকই বলেছিল। ছেলেরা বয়ফ্রেন্ড হওয়ার পর বদলে যায়।”
কান্না শুনে মুগ্ধ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বলল,
-“আরে না পাগলী। নিব নিব।”
-“না নিবানা। আমি বুঝে গেছি। প্রমাণ তো পেয়েই গেছি। কাল সন্ধ্যায় কোলে চড়ার লোভেই তো আমি তোমাকে রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে হেঁটে আমাদের নিউ বর্ন রিলেশনশিপ সেলিব্রেট করবে। কিন্তু তুমি করোনি। ফোন নাম্বার নিয়ে ভেগে গেছো। এখন আমার কি হবে! অ্যাআআআআআ।”
মুগ্ধ হাসতে হাসতে কুটিকুটি হলো। তিতির বলল,
-“আমি কাঁদছি আর তুমি হাসছো! তুমি পচা।”
-“সরি বাবা। তুমি কান্না করোনা প্লিজ। সত্যি আমার এমনটাই ইচ্ছে করছিল। আই সয়ার, যদি এটা তোমার বাসার সামনে না হয়ে অন্য যেকোনো যায়গা হতো আমি এটাই করতাম। দেখোনি বান্দরবানে আমি তোমাকে কারনে অকারনে কতবার কোলে নিয়েছি? কোলে নিতে তো আমার ভাল লাগে। কিন্তু কাল আমার ভয় করছিল যদি তোমার বাসার কেউ দেখে ফেলে!”
তিতির কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
-“না না না। এসব কথায় আমি ভুলবো ন।”
-“আচ্ছা যাও। আমাদের বিয়ের পর যখন তোমাকে বাসায় নিয়ে আসব। তখন গাড়ি থেকে নামিয়ে আর এক পা হাঁটাবো না তোমাকে। যত উপরেই হোক না কেন তোমাকে কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাব।”
-“প্রমিস?”
-“প্রমিস!”
-“যদি আমি মোটা হয়ে যাই তবু নিবে?”
-“হ্যা নিব। আমার তিতিরপাখিকে নিবনা কাকে নিব বলো?”
-“কেন তোমার বেবিদের নিবে না? কালকেই না বললে বেবিদের তুমিই কোলে কোলে রাখবে। আমাকে নিতে হবে না। দুইজনকে নাকি একসাথেই কোলে নিতে পারবে?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“হ্যা.. ওদেরকেও নিব। কিন্তু ২ টার পরের গুলোকে তোমার নিতে হবে সেটা কিন্তু ভুলে যেওনা।”
-“আচ্ছা, কিন্তু ওদের যখন নিবে তখন কি আবার আমাকে কোলে নেয়া বন্ধ করে দিবে?”
-“না তো। আমার তিতিরপাখিকে তো আমি সারাজীবন কোলে নিব। কিন্তু বেবিরা যখন ছোট থাকবে হাটতে পারবে না যতদিন ততদিন তো কোলেই রাখতে হবে তাই না? তো তখন হয়তো তোমাকে একটু কম নিতে পারবো।”
-“তাহলে তখন আমিই ওদের কোলে নিব। আর তুমি আমাকে কোলে নিও?”
মুগ্ধ বলল,
-“আচ্ছা আচ্ছা। তাহলে তুমি খুশি থাকবে তো?”
-“হ্যা.. খুউউউব।”
-“আচ্ছা, এখন বলোতো আমার ঘুমকুমারীর ঘুমটা কেন এত তাড়াতাড়ি ভাঙালাম?”
-“কেন?”
-“অফিসে যাওয়ার আগে মুখটা না দেখে যাই কি করে বলোতো?”
-“কিন্তু আমি তো এখন বের হতে পারবো না। কি বলে বের হব?”
-“বের হতে হবে না। তুমি শুধু বারান্দায় আসো। আমি তোমার বাসার সামনেই আছি। পুরোপুরি সামনে না, একটু লেফট সাইডে।”
তিতির লাফ দিয়ে উঠে পড়লো। দৌড়ে গেল বারান্দায়। মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে অপজিটের ফুটপাতে। ফুল ফরমাল, গ্রে কালারের শার্ট ব্ল্যাক প্যান্টের সাথে ইন করা, ব্ল্যাক টাই, সানগ্লাস, কানে ফোন। এই প্রথম ওকে ফরমাল দেখছে। উফফফ এত মারাত্নক লাগছে মুগ্ধকে। ওকে দেখেই সানগ্লাসটা খুলে হাসলো।
মুগ্ধও তিতিরকে দেখছিল মুগ্ধ চোখে। হোয়াইট স্লিভলেস টি-শার্ট পড়ে আছে। চুলগুলো মারাত্মকভাবে এলোমেলো। চোখে ঘুম। কানে ফোন। মুগ্ধকে দেখেই হাসলো।
মুগ্ধ বলল,
-“ম্যাম আপনি এলোচুলে আমার সামনে দয়া করে আসবেন না। আমার প্রব্লেম হয়।”
-“কি প্রব্লেম?”
-“ওহ.. ভুলেই গিয়েছিলাম তোমাকে তো আবার সব ডিরেক্টলি বলতে হয়। আচ্ছা পরে বলবো। আজ বেশি সময় নেই।”
-“আচ্ছা।”
-“থাক এখনি শোনো, এলোচুলে তোমাকে অনেক আবেদনময়ী লাগে।”
-“আবেদনময়ী মানে যেন কি? আমি বাংলায় একটু উইক আছি।”
-“হায়রে! তোমাকে সেক্সি লাগে। যতই চাইলাম সেক্সি ওয়ার্ডটা স্কিপ করতে তুমি বলিয়েই ছাড়লে।”
কি লজ্জাটাই যে তিতির পেয়েছিল! আর কোনো কথা বলতে পারেনি। তারপর দুপুর ১২ টায় ফোন করে বলল,
-“এই আপনি কি সকালে আমার বাসার সামনে এসেছিলেন? নাকি আমি স্বপ্নে দেখেছি? কল লিস্টে দেখলাম ২০ মিনিটের মত কথা বলেছি কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছি না।”
-“স্বপ্ন না, গিয়েছিলাম।অফিসে আসার আগে বউয়ের মুখটা একবার দেখে না আসলে হয়? আজ তো ক্লাসও আছে, ফিরতে ফিরতে রাত!”
-“ও। আমি কি খুব উল্টোপাল্টা কিছু বলেছি? আসলে ঘুমের ঘোরে আমি অনেক হাবিজাবি বকি।”
মুগ্ধ হাসলো। তারপর বলল,
-“না উল্টোপাল্টা কিছু বলোনি। যা বলেছো ভালই বলেছ। মনে না থাকলে আমি রাতে ফিরে তোমাকে বলব।”
-“আচ্ছা। অফিসে থাকতে ফোন করা যাবেনা?”
-“হুম যাবে। বাট অনেকক্ষণ কথা বলা যাবে না। আমি তোমাকে লাঞ্চ টাইমে ফোন করবো। এখন রাখি?”
-“আচ্ছা।”
রাতে বাসায় ফিরে সব বলতেই তিতির খুব লজ্জা পাচ্ছিল আর অস্বীকার করেছিল যে ও এসব বলেনি। মুগ্ধ তাতেও মজা পেয়েছিল। তিতিরের সব খুঁটিনাটি বিষয়কে ঘিরেই ছিল মুগ্ধর আনন্দ।
To be continued…